somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

০৯ ই অক্টোবর, ২০০৮ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঢাকা, ৯ অক্টোবর (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) --- নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়, কিন্তু এখানেই এর গুরুত্ব থেমে যাচ্ছে না। বিশ্বকাপের পর গত দেড় বছরে টেস্ট খেলা কোনো দেশের বিপক্ষে জয় নেই, টানা হারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত নিযেই যখন শঙ্কা তখনই এই জয়। এবং এই জয় এই সময়ও যখন আইসিএল বিতর্কে বাংলাদেশের ক্রিকেট কোনঠাসা। ভারতের বিদ্রোহী ক্রিকেট লিগ আইসিএল-এর অর্থের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে জাতীয় দলকে অবজ্ঞা করার মতো ঘটনাও যখন ঘটে গেছে তখন এমন একটা জয় বড় দরকার ছিল। মঙ্গলবার মিরপুরে সেই সব প্রয়োজনই মেটাল আশরাফুলের দল। আর সামনেই থাকলেন আশরাফুল। দলের মতোই টানা ব্যর্থতা আর আইসিএল বিতর্কে জড়িয়ে যার নিজের ক্যারিয়ারও পড়ে গিয়েছিল প্রশ্নের মুখে।

বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, কিন্তু সেটা ছিল আনঅফিসিয়াল ম্যাচ। অফিসিয়াল ম্যাচে কিউইদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়। আর এই জয়ে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের হারানোর বাকি থাকল আর দুটো মাত্র দল। ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে গত টোয়েন্টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা ধরলে অফিসিয়াল ম্যাচে শুধুমাত্র ইংল্যান্ডই বাকি থাকল।

শুরুতে তামিম ইকবালের উইকেটটা দ্রুত হারানোর পর আর কোনো বিপর্যয় হতে দেননি অন্য ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিকী এবং মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় উইকেটে তাদের ৬৭ রানের পার্টনারশিপের পরপরই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ। এরপর ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করা জুনায়েদকে নিয়ে অধিনায়ক আশরাফুলের গড়া ১০৯ রানের জুটিতে নিশ্চিত হযে যায় জয়। সেই জুটিই ৮ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত, কিন্তু শেষ মুহূর্তে মনসংযোগ হারিয়ে জয় থেকে ৮ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যান জুনায়েদ। ৮৫ রান করেছেন তিনি, ১৩৯ বলে ৮টি বাউন্ডারির সহায়তায়। তার বিদায়ের পর সাকিবকে নিয়ে শেষ কাজটা করেন আশরাফুল, তখনও বল বাকি ছিল ২৭টি। ৫৬ বলে ৬০ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলা আশরাফুলের ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল ৫টি, সঙ্গে একটি ওভার বাউন্ডারি।

বাংলাদেশের রান তাড়ার শুরুটা হয়েছিল ইনিংসে প্রথম বলেই বাউন্ডারি দিয়ে। কাইল মিলসকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করা তামিম (১২) অবশ্য নিজের ভুলেই টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। একই বোলারের অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে স্লিপে স্কট স্টাইরিসকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। এরপর দেখেশুনেই খেলেছে জুনায়েদ-মুশফিক জুটি। ৮৭ বলে ফিফটি পার্টনারশিপ গড়া এই জুটি শেষপর্যন্ত ভেঙ্গেছে দলের সংগ্রহে ৬৭ রান জুড়ে দেওয়ার পর। স্কট স্টাইরিসকে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে রাইডারের ক্যাচ হয়েছেন মুশফিক (৩০)।

এর আগে একই সঙ্গে মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং বাংলাদেশ দলকে বঞ্চিত করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মাশরাফির করা শেষ ওভারের পঞ্চম বলে তিনি ডিপ স্কয়ার লেগে ফেলেছেন টিম সাউথির ক্যাচ। যেটি না ফেললে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়ার মতো কৃতিত্বের মুখ দেখা হয়ে যেত দলের মূল স্ট্রাইক বোলারের। সেই সঙ্গে কিউইদেরও দুইশোর কমে অলআউট করা যেত। কিন্তু এর কিছুই হয়নি, নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে তুলেছে ২০১ রান।

অথচ মাশরাফির বিধ্বংসী বোলিংয়ে শুরুর বিপর্যয়ে পড়া নিউজিল্যান্ডকে আরো চেপে ধরেছিলেন বাঁ হাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। সুবাদে ৭৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা কিউইদের ত্রাণকর্তা হিসেবে জ্যাকব ওরামের আবির্ভাবও হয়েছে বাংলাদেশের সৌজন্যে। নির্দিষ্ট করে বললে মুশফিকুর রহিম। ক্রিজ থেকে প্রায় গজদুয়েক বাইরে থাকা ওরামকে রানআউটের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয় মুশফিকের লক্ষ্যভ্রষ্ট থ্রো। তখন ৪ রানে থাকা ওরামই (৫৭) পরে অধিনায়ক ডেনিয়েল ভেট্টোরিকে (৩০) নিয়ে সপ্তম উইকেটে গড়েন ৭০ রানের পার্টনারশিপ। এবং সেই সঙ্গে সামাল দেন বিপর্যয়।

মাশরাফি তার ৮ ওভারের প্রথম স্পেলে (৮-২-১৯-৩) মাত্র ১৯ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। শেষপর্যন্ত তার বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড়িয়েছে ১০ ওভারে ৪৪ রানে ৪ উইকেট। প্রথম স্পেলে মাশরাফির দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেওয়া বাঁ হাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের জোড়া সাফল্যই কিউইদের পরিণত করেছিল ৭৯ রানে ৬ উইকেট হারানো দলে। পরে নিউজিল্যান্ডের ত্রাণকর্তা ওরামকেও ফেরানো রাজ্জাক তার ১০ ওভারে ৩৩ রান খরচায় নিয়েছেন ৩ উইকেট।

রাজ্জাক তার প্রথম ওভারেই এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান স্কট স্টাইরিসকে (৪)। এর একটু আগে একইভাবে জেমি হাউ (৭) হয়েছেন মাশরাফির তৃতীয় শিকার। তবে শুরু থেকে অন্য দু'জনকে নিয়ে বাংলাদেশ দলের ভীতিতে থাকার যথেষ্ট কারণ ছিল। এমনিতেই মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি আছে জেস রাইডারের। আর ব্রেন্ডন ম্যাককালামও কম যান না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডেতে তার ঝড়ো ব্যাটিংই লজ্জায় ডুবিয়েছিল বাংলাদেশকে। কিউইরা বাংলাদেশের ৯৩ রান টপকে জয় তুলে নিয়েছিল মাত্র ৬ ওভারেই।

তবে ভীতিকর এই দুই ব্যাটসম্যানকেই দুই ওভারের মধ্যে ফিরিয়ে দিয়ে দলকে শুরুর সাফল্যের পাশাপাশি দারুণ স্বস্তিও দেন মাশরাফি। রাইডার শুরু থেকে তোপ দাগলেও তুলনায় ম্যাককালাম এগুচ্ছিলেন ধীরে-সুস্থেই। মাশরাফির অফস্টাম্পের বাইরের বলে স্ল্যাশ করে থার্ডমানে সৈয়দ রাসেলের ক্যাচ হয়ে ফিরে যান ম্যাককালাম (১৪)। ওই সময় অবশ্য রাইডারকেই থামানো বেশি জরুরী ছিল। শাহাদাতকে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকানো রাইডারের বাউন্ডারিও মেরেছেন চারটি। মাশরাফির বলে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যাচে শেষ হয় রাইডারের ৩৫ বলে ৩৪ রানের ইনিংসটি।

ভোর রাতে বেশ খানিকক্ষণ বৃষ্টি এবং সকালের আকাশ গোমড়ামুখো হওয়ার পরও যথাসময়েই খেলা শুরু হওয়ার কৃতিত্ব মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের সমন্বিত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার। বৃহষ্পতিবার ব্র্যাক ব্যাংক ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে যে সিদ্ধান্তটা নেওয়ার কথা, সেটিই নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। কন্ডিশনের সুবিধা নিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠান তিনি। কন্ডিশনের সুবিধা নিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠান তিনি। সেই সুবিধা নিয়েই কিউইদের চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন মাশরাফি-রাজ্জাকরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে এটাই নিউজিল্যান্ডের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এর আগে তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিল ২২৪ রান। তবে ২০০৪এর ২ নভেম্বর চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে কিউইরা জিতেছিল ১৩৮ রানের বিশাল ব্যবধানে।


বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমপি/এএআর/এমএম/১৬৪৫ঘ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×