পর্ব ১
পর্ব ২
কিন্তু বাস্তবে ঘটনা ঘটলো উল্টো। যার জন্য মেয়েটি মোটেও প্রস্তুত ছিল না। মনন এসে বলল "আমি তোমার কথায় রাজি"। আকাশ থেকে পড়লো সন্ধি। টাসকি খেল একচোট। তার পরেই স্বস্তি পেল এই ভেবে যে, যাক বাঁচলাম। মাকে তা হলে বলবে না। প্রথম ধাক্কা কাটতে না কাটতেই আবার ধাক্কা। মনন জানালো বি আই টিতে পড়ার সময় সে নিয়মিত ফেন্সিডিল খেত। কিন্তু এখন আর খায় না। সন্ধি খুব বেশী দুঃখ পেল। কারণ তার কল্পনায় যে পবিত্র- শুচি-শুদ্ধ ছেলেটিকে সে ভালোবাসতো মনন ঠিক সে রকম না ভেবে। কিন্তু সে মেনে নিল আর প্রমিস করিয়ে নিল ভবিষ্যতে মনন আর কোনদিন ও সব ছোঁবে না। সন্ধি সে দিন জানতেও পারলোনা যে জীবনের একটা কত বড় ভুল ডিসিশন নিল।
শুরু হয়ে গেল মনন-সন্ধির প্রেমপর্ব। অফিসের এত কড়া নজরদারিতে থেকেও ছুটি পাক বা না পাক পালিয়ে মনন প্রায়াই ঢাকায় চলে আসতো। আর সন্ধিও যেমন করেই হোক দেখা করবেই। বিভিন্ন কথা হতো ওদের। মনন ঘুরে ফিরেই একটি কথা বলতো-"আমি তোমার যোগ্য না। তুমি চাইলে অনেক ভাল ছেলে পেতে। তুমি আমাকে নর্দমা থেকে তুলে এনেছো।" মননের এসব কথা শুনে সন্ধির খুব খারাপ লাগতো। ভাবতো- এত ভালোবাসি যাকে সে কেন মনে মনে এত ছোট হয়ে থাকবে? মননের বাবা অনেক আগে ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে। অনেক অপমান-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল পুরো পরিবারটিকে। মনন সেসব কথা বলতো খুব মন খারাপ করে। সন্ধির তখন মনে হতো-"হে আল্লাহ্! মননের কেন এত কষ্ট? ওকে শান্তি দাও"।
একদিন হঠাৎ করেই ফোনে কথা বলতে বলতে মনন বললো একটা মেয়ের সাথে ওর প্রায়ই সারা রাত ফোনে কথা হয়। মনে মনে খুব রেগে গেলেও ঠান্ডা গলায় সন্ধি বলে-"দেখা করেছো"?
মনন: নাহ
সন্ধি: কেন? কাঠ-খোট্টা নাকি?
মনন: না....। অনেক র..সা..লো..।
সন্ধির কাছে মননের এই কথার ধরন খুব বাজে লাগে। সেদিন সে আর কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দেয়। পরদিন ক্যামেস্ট্রি পরীক্ষা দেয় একদম না পড়ে। মনন আসে তার ক'দিন পর। সন্ধি মনের ঝড় মননকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে জানতে চায়- দেখা করেছো?
মনন: হু।
সন্ধি: কি কথা হলো?
মনন: মেয়েটা খুব ভাল। নাম নিপুণ। নাচে দারুন। আমি ওকে বলেছি তুমি শিখবে ওর কাছ থেকে নাচ আর ও শিখবে তোমার কাছ থেকে ঝগড়া। হা..হা..হা । এক অসৎ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে মেয়েটা একটা ভুল করে। কিন্তু প্রমাণসহ সিডি থেকে যায় বন্ধুর কাছে। সে এখন সিডিটা নিয়ে ব্ল্যাকমেলিং করছে। তাই আমার কাছে সাহায্য চায়।
জানোনা তো এত মজার আবার লাজুক। যাবার সময় আমি বললাম-ফোন করো। ও বলল তুমি করো। যেই না আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলেছি -কি করবো? কি যে লজ্জা পেয়েছে তুমি যদি দেখতে।
সন্ধি: এতক্ষণ তোমার অনেক কথা শুনলাম। আমি ঝগড়া ভাল পারি। গুড। কিন্তু আমার গান বন্ধ করেছো কিন্তু তুমি। মা-বাবা চাইছিল আমি গানটা চালিয়ে যাই। রেডিওতে অডিশন দিব শুনে তুমিই বলেছিলে ওসব জায়গার লোকজন শিল্পীদের ( মেয়েদের) কাছ থেকে বিভিন্ন ফায়দা নিতে চায়। আমাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হবে ভেবে আমি পড়াশুনার দোহাই দিয়ে মা-বাবাকে বুঝিয়েছি। আর আজ আমার শিখতে হবে নাচ? আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। নিপুনের সাথে তোমার যেসব কথা হয়েছে আমি সেগুলো কোনদিনই চাইলেও মানতে পারবো না। আজ থেকে আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ করো না, প্লিজ। গুড বাই।
সাথে সাথে মননের অন্য চেহারা।
মনন: আমাকে ছেড়ে যেও না। পায়ে ধরি তোমার। আমি তোমার যোগ্য না। তার পরেও বলছি তুমি যেও না। তুমি গেলে আবারো আমি নর্দমার কীট হয়ে যাব। ... ... ...
সন্ধির কি যে হলো। মননকে আরো ভালোবাসতে ইচছা করলো। মাফ করে দিল। আবারো শর্ত নিপুণের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। মনন সাথে সাথে রাজি।
এভাবে ঘোরাঘুরিতে কখন যে দিন চলে গেল। ফলে এইচ এসসি তে রেজাল্ট খুব বেশী ভাল হলো না। কাঙ্খিত বুয়েটে পড়া হলো না। অবশেষে খুয়েটে স্থান হলো। মনন-সন্ধি দু'জনেরই মন খারাপ।
সন্ধি চলে গেল খুলনায়। মনন মাঝে মাঝে দেখা করতে যায়। খুলনা ভরা সন্ধির আত্নীয়। তাই দেখা করার সময় সন্ধি সারাক্ষণ ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকে। মননের এটাতে খুব বিরক্ত ।বলে-“ তাহলে হোটলে আমি যেখানে উঠেছি, সেখানে চল”। সন্ধি যাবে না। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সন্ধি বিরক্ত হয়েই হঠাৎ করেই কোন কিছু চিন্তা না করে বলে "চল বিয়ে করি"। এক কথাতেই রাজি। ঠিক হলো সেদিন সন্ধাতেই বিয়ে। ঝোকেঁর মাথায় হয়েও গেল। কিছুদিন পর বাসায় জানাজানি হয়ে গেল। দুই বাসা থেকেই ভীষন রাগ। অনেক চরাই উতরাই পেরিয়ে মনন এবং ওর বাবার অসম্ভব ধৈর্য্যের কারণে শেষ পর্যন্ত সামাজিক ভাবে আবারো বিয়ে হলো ওদের।
টুকটাক ঝগড়া ছাড়া ভালোই চলছিল। সন্ধি তখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। শ্বশুর বাড়ির সবাই অনেক হেল্পফুল। মনন তো বটেই। শ্বশুর সবসময় বলতো-"আম্মা তোমাকে অনেক ভাল রেজাল্ট করতে হবে। তা না হলে তোমার আব্বার কাছে মুখ দেখাতে পারবো না"। বিয়ের পর সন্ধির রেজাল্টও ভাল হতে লাগলো। মননের বাবা বেশ অসুস্থ ছিলেন। কিছুদিন পরই উনি মারা যান। ইন্না লিল্লাহে.........।
সন্ধি বেশ ভাল রেজাল্ট করেই পাশ করলো। ওরা ঠিক করলো ওনেক হয়েছে । এবার আগে কিছুদিন সংসার করি। এরপর চাকরি খুঁজবো। ৫/৬ মাস হয়ে গেল। কিন্তু সংসারে নতুন অতিথি আসার কোন আলামতই পাওয়া গেল না। অল্পতেই অধৈর্য হওয়া সন্ধি অস্থির হয়ে গেল। ছোট বেলা থেকেই মননকে গুরু মানতে মানতে সন্ধির অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের পর থেকে সেটার সাথে যোগ হয়েছে নির্ভরতা। যে কোন বিপদেই মনে হতো মনন পাশে থাকলেই হলো। আর কোন সমস্যা নেই। মনন সুযোগটা নিল। বললো ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছে। সন্ধির কিছু শারীরিক সমস্যাই এই জন্য দায়ী। সন্ধি খুবই ভেঙে পড়লো। মনন এবার বললো-ওর নিজেরই সমস্যা । ট্রিটমেন্ট শুরু করেছে। সন্ধি কিছুই বুঝলো না। এর ১/২ মাস পরেই কনসিভ করলো।খুশী যেন আর ধরে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



