somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্যাতিত সংখ্যালঘু বাউল সম্প্রদায়!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মতে বাউল সম্প্রদায় একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তাই তারাও নিয়মিত শিকার হচ্ছে মৌলবাদী আক্রমণের। যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃষ্টানরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু? অনেক পার্থক্য সত্ত্বেও বাউলরাও তেমনই একটি সম্প্রদায়! এক্ষেত্রে মূল পার্থক্য হচ্ছে, বাউল সম্প্রদায় অনেক বেশি প্রগতিশীল। ধর্মীয় অনেক গোঁড়ামী এবং কুসংস্কার থেকেও তারা মুক্ত বা নিজেদের মুক্ত করতে তারা সর্বদা সচেষ্ট। অনেকে জন্মগতভাবে মুসলমান হলেও বাউল বলে তাদের ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসাবে গণ্য করা হয় না। আরো বড় কারণ সামনে নিয়ে আসা হয়। বলা হয়, বাউলদের গান-বাজনা,নৃত্য, পোশাক-আশাক, নারী-পুরষ সমন্বয়ে অবস্থান বা গঞ্জিকা সেবন কোনটাই ইসলামী জীবনধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।তবে মাইজভান্ডারীদের নিয়ে ইসলামে বেশ বিতর্ক আছে। সুফিবাদের সাথে ভান্ডারীর মতবাদের অনেক সামঞ্জস্য থাকায় এই বিতর্কের সৃষ্টি। বাউলদের মতো ভান্ডারীর মুরিদরাও লম্বা চুল রেখে গান-বাজনা ও গঞ্জিকায় মত্ত্ব থাকে। কিন্তু বাউলদের সাথে ভান্ডারীর মতবাদেরও পার্থক্য ওই একই যায়গায়। বাউলরা প্রগতিশীল, কুসংস্কার মুক্ত, আর ভান্ডারীদের সহবাস ওই কুসংস্কার ও মৌলবাদের সাথেই।তাই কেউ কেউ ভান্ডারীর মতবাদকে সহি ইসলামী মতবাদ হিসাবে মনে না করলেও তাদেরকে বাউলদের মতো আলাদা সম্প্রদায়ে ঠেলে ফেলে দেয়া যায়নি। আর সেই একই কারণে ভান্ডারীরা সহিংস হামলা থেকে মুক্ত।
হিন্দু ধর্মেও বাউলদেরকে যথাযথ ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসাবে গণ্য করা হয় না। জন্মগতভাবে হিন্দু বাউলদের আস্তানা যেমন ভিন্ন ধরণের মঠ,মন্দির বা আশ্রমে হয়ে থাকে, তেমনি বাউলদের ধর্মচর্চা এবং সনাতন ধর্মীয় রীতির মধ্যেও অনেক পার্থক্য দেখা যায়। বাউলদেরকে বরং দেহতাত্ত্বিক ভাববাদী বা ধর্মীয় গানের দল হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। বাস্তবে লালন না মুসলমানের, না হিন্দুর। তাইতো বিমানবন্দরের প্রবেশপথের লালন ভাস্কর্য ভেঙে দিয়েছিলো মুসলমান মৌলবাদীরা। সরকারও তার প্রতিবাদ করেনি। বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সন্তুষ্ট করতে সেখানে এখন আল্লা লেখা ভাস্কর্য বানিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশ করেই একজন বিদেশী মানুষ যাতে সহজেই বুঝতে পারে বাংলাদেশ একটি মৌলবাদী মুসলমানের দেশ। এটা জারি-সারি-বাউল-ভাটিয়ালীর দেশ কক্ষোনই নয়!
বাংলাদেশে বাউলদের উপর যে নিয়মিত হামলা হচ্ছে এর মূল কারণটা বোধ হয় এখানেই। বাউলরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সংখ্যার হিসাবে হয়তো সবচেয়ে ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায়। দেশে এখনও বাউলদের সংখ্যা হাতে গোনা। উদার, মানবিক, ভাবুক অথচ প্রগতিশীল এই সম্প্রদায়ের উপর সরকারী বাহিনীর বর্বোরোচিত হামলাও আমরা দেখেছি। ছেউড়িয়ার বাৎসরিক লালন আখড়া পন্ড করতে সেদিন কাঠমোল্লাদের সাথে যোগ দিয়েছিলো সরকারী পুলিশও। আমরা দেখেছি রাজবাড়ির র্বরোচিত বাউল নির্যাতন। এবার যশোরে হত্যা করা হলো বাউলকে!
প্রশ্ন হচ্ছে বাউলদের উপর মৌলবাদী বর্বরোচিত এই হামলা কি বন্ধ করা সম্ভব? সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর জঙ্গিবাদী সংখ্যাগরিষ্ঠদের পাশবিক হামলা কি বন্ধ হবে কখনও?? উত্তর একটাই! হ্যা! কিন্তু এখনও অনেক পথ যেতে হবে! যেদিন বাংলাদেশ একটা মানুষের দেশে পরিণত হবে! সত্যিকারের মানবিক, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে পরিণত হবে, সেদিন সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করা তো দুরের কথা, হামলার কথা কেউ কল্পনাও করবে না!
মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে, হিন্দুর সংখ্যাও বাড়ছে, যদিও দেশত্যাগের কারণে সেই সংখ্যাটা হিসাবের মধ্যে আনা যাচ্ছে না। মুসলমানের মতো না হলেও বেশ দ্রুতহারেই বাড়ছে বৌদ্ধ এবং খৃষ্ঠানের সংখ্যাও। কিন্তু মানুষের সংখ্যাটা তেমন বাড়ছে না। যাও বাড়ছে, তার বেশিরভাগ কেবল থেকে যাচ্ছে গোপনে, চুপিচুপি। ‘আমি মানুষ’- এই পরিচয়টা সামনে নিয়ে আসার শক্তি বা সাহসও নেই বেশিরভাগ মানুষের।কিন্তু আশার কথা, ধীরে হলেও মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
সত্যিকারে যেদিন দেশে মানুষের সংখ্যাটা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে? ‍মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান যেদিন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত হবে? নিশ্চয়ই হবে একদিন! সেদিন মানুষেরা নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় নয় ‘মানুষ’ হিসাবে পরিচয় দেয়ার সাহস পাবে। সেদিন ধর্মের নামে অধর্মের চর্চা করতেও কেউ আর সাহস পাবে না। মানুষের মতোই বাঁচতে পারবে মানুষ এমনকি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ধর্মগাধারাও!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×