somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিমানে ভ্রমণ এবং আমার একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা!

১০ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যাদের নিয়মিত বিমানে চড়তে হয়, শুধুমাত্র তারাই হয়তো বিষয়টা অনুভব করতে পারবেন। বিমানে চলাচল বেশ ঝুকিপূর্ণ হলেও ঝুকির পরিমাণ নিশ্চয়ই বাংলাদেশের দুরপাল্লার বাস জার্নির থেকে বেশ কম। বিমানে চড়ার মূল সমস্যা হচ্ছে দুরপাল্লার বিমান জার্নি খুবই বিরক্তিকর। এমনকি বিজনেস ক্লাসে হলেও সেটা বিরক্তিকর। বিমান ভ্রমণের দ্বিতীয় সমস্যা হিসাবে আপনি ঝুকির বিষয়টা আনতে পারেন। এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, বাস দুর্ঘনা হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাটা থাকে, কিন্তু বিমানে সেই সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়।
বিমানে চড়ার একটা ভয়াবহ স্মৃতি আমাকে সব সময়ই তাড়া করে। মালয়েশিয়ার বিমান নিখোঁজের ঘটনা শুনে আমার সেই অভিজ্ঞতার কথাই মনে পড়ছে।
২০০৭ সালের কথা। যাচ্ছিলাম ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায়। ট্রানজিট ছিলো সিঙ্গাপুর। বেশ কয়েক ঘন্টা ট্রানজিট বিরতির পর ভোরে সিঙ্গাপুর ছেড়েছিলাম ম্যানিলাগামী বিমানে। পথে বেশ কয়েকবার ছোটখাটো টার্বুল্যান্স সিচুয়েশন পার করতে হয়েছিলো। কিন্তু বিমানযাত্রীদের কাছে সেগুলো ছিলো অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা। এরপর একটা সময়ে যথারীতি পাইলট ঘোষণা করলেন, অল্প কিছুক্ষণ পরেই বিমান ম্যানিলা নামবে। বেল্ট বেঁধে নিন, টেবিল উঠিয়ে রাখুন, সিট সোজা করুন, ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম বন্ধ করুন ইত্যাদি নিয়মিত ঘোষণাও হলো। সাধারণত বিমান অবতরণের আধাঘন্টা আগে এ ধরণের ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণার কয়েক মিনিট পরই আবার ঘোষণা হলো, ম্যানিলার আকাশের অবস্থা বেশ খারাপ। সবাই ভালভাবে বেল্ট বাধুন এবং সিট সোজা করে বসুন। টয়লেটে যাওয়াটাও এখন বন্ধু করুন!সাধারণত বিমান নামার প্রথম ঘোষণার পরে অনেকেই টয়লেট সেরে নেন। তাই তখন টয়েলেটের লাইনে দাঁড়ানোরাও দ্রুত ফিরে সিটে বসলেন। এরপর শুরু হয়ে গেলো ঝড়। প্রথম দিকে মনে হলো বিমান কোন উঁচু-নিচু জায়গার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় যেমন গাড়ি লাফাতে লাফাতে যায়? অনেকটা সেই রকম। কিন্তু এর কয়েক মিনিট পরেই শুরু হলো সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক ঘটনা। বিমান একবার সোজা উপরে উঠে যায়, আবার হঠাৎ করে সোজা নিচেয় নেমে যায়। উপরে উঠার সময় খুব সমস্যা হচ্ছিল না। শুধু অনুভব হচ্ছিল যে খাড়া হয়ে উঠছে বিমান। পিঠ খুব শক্ত করে ছিটে বেঁধে থাকছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে যখন নিচেয় নামছিলো, মনে হচ্ছিল এটাই শেষ! আমরা পড়ে যাচ্ছি সাগরে! এই বিমান আর উপরে উঠবে না! অনুভুতিটা হচ্ছিল অনেকটা শুন্যে ভেসে থাকার মতো। সবারই শরীর একটা ঝাকা দিয়ে সিট থেকে কিছুটা উপরে উঠে যাচ্ছিল। বেল্ট দেওয়া বলে মাত্র ইঞ্চি খানেক উঠছিল বোধহয়। এবং ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে বেশ কয়েক সেকেন্ড শূন্যেই বসে থাকতে হচ্ছিল। বিমান নিচেয় পড়া থেমে যেতেই ধপ করে শরীরটা বসে পড়ছিলো সিটের উপর। সে এক মহা-ভীতিকর অনুভূতি। চারপাশে তখন কান্নার রোল। আমার পাশের যাত্রাটি একেবারে হাউমাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করলো। মহিলারা তো একেবারে চিল্লায়ে চিল্লায়ে কাঁদতে লাগলো। আমারও মনে হয়েছিলো, শেষ পর্যন্ত ম্যানিলায়ই জানটা খোয়াতে হচ্ছে! অতিরিক্ত চল্লিশ মিনিট উপরে ছিলাম আমরা। দশ থেকে বারো বার খুবই দ্রুত গতিতে নিচেয় পড়েছিলো বিমান। জানি না কতো উপর থেকে পড়ে কত নিচ পর্যন্ত এসেছিলো। ঝড়ের গতিতে ছুটে আসা ঘন মেঘ খন্ডই নাকি বিমান ধ্বসিয়ে দিতে পারে। তাই পাইলট সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলো ঘন মেঘ এ্যাভয়েড করে অপেক্ষাকৃত হালকা মেঘের মধ্যে দিয়ে চলার। কিন্তু যেহেতু অস্বাভাবিক ঘতিতে ঘন মেঘমালা সামনে চলে আসছিলো তাই তখন বিমান সোজা নিচেয় নামিয়ে দিচ্ছিলো বা সোজা উপরে উঠিয়ে দিচ্ছিল। প্রায় ১০ থেকে বারো বার সপাটে নিচেয় পড়েছিলো আমাদের ঐ বিমানটি।
ঝড় একটু কমতেই মুসলধারা বৃষ্টির মধ্যে সিঙ্গাপুর এয়ারয়েজের বিমানটি যখন ম্যানিলার রানওয়ে স্পর্শ করলো, বিমানের ভিতর সে কি অবস্থা! মনে হলো সবাই যেন বেহেস্তে এসে নেমেছে। কান্নাকাটির মধ্যেই কত কোলাকুলি, কত চুমোচুমি। আমাদের পাইলট তখন ঘোষণা করছিলেন, ঝড়ের গতিবেগ নিয়ে! এ ধরণের ঝড়ে অতিতে অনেক বিমানই দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের পাইলট সেদিন সামাল দিতে পেরেছিলেন সেই ঝড়।
তারপরও বর্তমান উন্নত বিশ্বে বিমানই প্রধান গণপরিবহন। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ বিমানে যাতায়াত করে। দুর্ঘটনা একেবারেই হাতেগোনা। বিমানের ভাড়াও যেমন কম, তেমনি গন্তব্যে পৌঁছানোও যায় খুব দ্রুত। তাছাড়া অনেক জায়গায় তো বিমান ছাড়া অন্য কোন গণপরিহন চলেও না। ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়াতে আভ্যন্তরীণ পরিবহন হিসাবে বিমানই সাশ্রয়ী। একটা উদাহরণ দেই। অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে সিডনি, আপনি বিমানে ৫০ থেকে ৬০ ডলারে সহজেই যেতে পারবেন। সিডনি পৌঁছাতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ দেঁড় ঘন্টা। কিন্তু এই জার্নিই যদি আপনি ট্রেনে করতে চান, সর্বনিম্ন টিকিট ১৩৫ ডলার। সন্ধ্যায় উঠলে নামতে হবে সকালে। বিমানে মাগনা খাবার পেলেও ট্রেনে আপনাকে পকেটের পয়সা দিয়েই কিনে খেতে হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এত সুবিধা ফেলেও হাতে একটু সময় থাকলেই মানুষ বিমান বাদ দিয়ে ট্রেনের টিকিট খোঁজে। প্লেনের টিকিট যখন-তখন পেলেও ট্রেনের টিকিট সাধারণত দু’তিনদিন আগে থেকেই শেষ হয়ে যায়। এর মূল কারণ বিমান জার্নি যথেষ্ট বিরক্তিকর জার্নি আর ট্রেন জার্নি বেশ আরামদায়ক।
দুনিয়ার অনেক নামিদামি বিমানে চড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। চড়েছি ট্রেন, বাস সহ অন্যান্য দুরপাল্লার ও উন্নত গণপরিহনেও। ক্রুজশিপ বা প্রমোদতরীতে উঠিনি কখনো। যদিও প্রমোদতরী ভ্রমনপরিবহন হলেও গণপরিবহন নয়! তবে দুনিয়ার সবচেয়ে আরামদায়ক ভ্রমণ আমার মনে হয়েছে, ঢাকা টু বরিশাল লঞ্চ ভ্রমন! এর চেয়ে আরামদায়ক এবং কম ঝুঁকির কোন গণপরিবহন দেশে বা বিদেশে আমি অন্তত এখনও দেখিনি। শুনেছি আন্দামান যাওয়ার জাহাজ যাত্রাও নাকি বেশ আরামদায়ক এবং রোমাঞ্চকর। যাওয়া হয়ে ওঠেনি এখনও তাই বলতে পারছি না।
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×