somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নদীর উপর ডিজিটাল রাস্তা

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে’। নদীর প্রতি আমাদের ভালবাসা অনন্ত কালের। নদীমাতৃক আমাদের এই বাংলাদেশের বিশাল জনসংখ্যাকে বাঁচিয়ে রেখেছে নদীগুলি। এই নদীগুলিকে উপর নির্ভর করে নানান পেশার মানুষ বেচে আছে। অর্থনৈতিক দূরবস্থা কিংবা প্রকৃত মুল্যবোধের অভাবের কারনে আমরা আমাদের এই নদীগুলির পরিচর্য্যা করতে ব্যার্থ হয়েছি। এই অবস্থা থেকে যে আমরা সহজে মুক্তি পাব তারও কোন ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি না। কলকারখানা বেড়েছে – তার বর্জ্য ফেল কোথায়(?)- নদীতে, শহরের ময়লা আবর্জনা ফেল কোথায়(?) – নদীতে। এত কিছুর পরেও আমরা চুপ করে কেন থাকি জানি না। হয়ত অনিয়ম নিয়ম দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। এই লাইনটা লিখতে গিয়ে মনে আশংকা হচ্ছে – তবে কি তিতাসের ফাঁসির পর অন্যসব নদীর গলায় দড়ি দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্থ হয়ে যাব!

ব্লগে কিছুদিন আগে তিতাস নিয়ে একটি চমৎকার পোষ্টের পর আর বেশি কিছু বলার থাকে না। কিন্তু নদী ও নৌকার প্রতি আমার ভালবাসার কারনে সামান্য খোজ খবর নেবার তাগিদ অনুভব করলাম। অজানা কিছু চমৎকার তথ্যও পেলাম। যেমন মেঘনা থেকেই তিতাসের উৎপত্তি আবার মেঘনাতেই এসে শেষ হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার চাতলপুরে মেঘনার কোলে জন্ম নিয়েছে তিতাস। এর পর পূর্ব মুখে প্রবাহিত হয়ে চান্দোরা গ্রামের উত্তরে-পশ্চিমে-দক্ষিণ মুখে অগ্রসর হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ-পূর্ব মুখে প্রবাহিত হয়ে আখাউড়া রেল জংশনের দক্ষিণে পশ্চিম-উত্তর মুখে গিয়ে নবীনগরের পশ্চিমে লালপুরের কাছে আবার মেঘনায় কোলেই ফিরে গেছে সে। নদীটি ইংরেজী বর্ণ এম (m) আকার প্রবাহিত হচ্ছে। চাতলপুর থেকে লালপুরের দূরত্ব ১৬ মাইল হলেও সমগ্র নদীটি প্রায় ১২৫ মাইল দীর্ঘ।



আবহমান গ্রামবাংলার শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রয়েছে নদীর নিবিড় প্রভাব। ভাটি অঞ্চল খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নানান লোকজ ক্রীড়ার মধ্যে বেশীর ভাগই এই নদীকে ঘিরে। এমনই একটি লোকজ ক্রীড়ার নাম নৌকাবাইচ। ঐতিহ্যবাহি তিতাস নদীতে প্রতি বছর নৌকা বাইচ উৎসবে মেতে উঠে এলাকার প্রায় লাখো মানুষ। বাদ্য যন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালী গান আর পানিতে বৈঠার ফেলার শব্দ যেন একাকার হয়ে উঠে তিতাস নদীর পাড়ের মানুষেরা। নীরব নিস্তব্দ তিতাস পাড় হয়ে উঠে হাজার হাজার মানুষের কোলাহলে মুখরিত।

অতি প্রাচীন এই তিতাস নদীর নামে ‘তিতাস গ্যাস’ নামকরণ করা হয়। মানুষের জীবন যাত্রা ও ভূমি গঠনে এ নদীর বিশেষ প্রভাব রয়েছে। তিতাস নদীর ধারা যদিও পরিবর্তিত হয়েছে একাধিকাবার। তথাপি এর বিভিন্ন উপ-শাখা নদী সহজেই মানুষের চোখে পড়ে। জেলার নদী-তীরবর্তী এলাকাগুলোর মাঝে মাঝেই জেলে সম্প্রদায়ের বাস। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন মৎস্য শিকার করা। তাছাড়া কৃষকেরাও নিজেদের খাদ্যের জন্য তিতাস থেকে মাছ ধরেন। এই নদীএ বাধের কারনে মাছেদের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হবারই কথা। লিখতে লিখতে চোখের সামনে ভেসে আসছে জেলে পাড়ার মাঝিদের ব্যথিত মুখমন্ডল। তাদের দুঃখিত পরিবারের ছবিসব।


কেন এই বাঁধ (??)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথের তথ্য অনুযায়ি বাংলাদেশ ও ভারতের চুক্তি মতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এই ভারী যন্ত্রাংশ নৌপথে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে সড়ক পথে আখাউড়া হয়ে ত্রিপুরার পালাটায় যায়। ভারতের আসাম বেঙ্গল কেরিয়ার (এবিসি) পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ পরিবহন করছে। এই পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশের কোন সেতু ব্যবহার করতে পারবে না বলে চুক্তিতে উল্লেখ আছে। এই কারণে ভারতের তত্ত্ববধানে সেতুর পাশে নদীর উপর বিকল্প সড়ক তৈরী করা হয়। পানির প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য রাস্তার নীচ দিয়ে কংক্রীটের পাইপ বসানো হয় যাদের ব্যাস ৩ ফুট। নদীর মধ্যে দিয়ে বানানো রাস্তার নীচে ৩ ফুট ব্যাসের কয়েকটি কংক্রীটের পাইপ কখনওই নদীর স্বাভাবিক চ্যানেলের বিকল্প হতে পারেনা’।

তিতাস এখন একটি খুন হয়ে যাওয়া নদীর নাম। মাসির দেশকে ট্রানজিট দিতে গিয়ে বাংলাদেশের নতজানু শাসকশ্রেণী বহু আগেই তাকে হত্যা কার্য্য শুরু করেছে। ট্রানজিটের শুরুতেই নদী হত্যা, কৃষি জমি ধ্বংস, কৃষিকাজ, মৎস চাষ সহ গোটা এলাকার জনগণের জীবন ও পরিবেশ ধ্বংসকে আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। প্রতিবেশিদের সাথে আমরা সুসম্পর্ক বজায়া রাখার পক্ষে। তাই বলে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নিশ্চয়ই নয়! তাছাড়া ভারতইবা কেমন রাষ্ট্র যে কিনা বন্ধু প্রতিবেশি রাষ্ট্রের এত বড় ক্ষতিকে সমর্থন করছে! প্রকৃতিকে আঘাত করলে তা সইবে না। তাই এর আশু সমাধান চাই। এই বাঁধ তুলে আমার তিতাসকে মুক্ত করা হোক। এক্ষুনই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×