somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওমর - একটি অসাধারন চলচিত্র (মুভি রিভিও)

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যখন সে বলেছিল সে আমাকে ভালবাসে আমি অনুভব করছিলাম যেন আমি উড়ছি। মনে পড়ে ওর থেকে বিদায় নিয়ে আমি যখন হাটছিলাম মনে হচ্ছিল আমি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছি। এমনি বোধ হয় সবারই হয়। একটি মায়াময় কন্ঠ যখন বলে ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ - যেন আমি বিরাট কোন মানুষ , যেন বিখ্যাত কেউ, যেন পৃথিবীতে আমার মত গুরুত্বপুর্ন মানুষ আর দ্বিতিয় আর কেউ নাই। প্রেম এমনই এক শক্তি, ভালবাসা এমনই এক অনুভুতি

দেখছিলাম একটি প্যালেষ্টাইনি চলচিত্র – ওমর। এক অসম্ভব ব্যাক্তিত্বের সম্ভার ঘটিয়েছেন হানি আব আসাদ। একাধারে তিনি চলচিত্রটির লেখক ও পরিচালক। প্রেক্ষাপটটি এমন – ওমর, তারেক আর আমজাদ, ছোটবেলার বন্ধু। ওমর ভালবাসে তারেকে বোন নাদিয়াকে। নাদিয়াও ভালবাসে ওমরকে। ওয়েষ্ট ব্যাংক ও গাজা উপত্যকায় ভাগ হয়ে যখন দেয়াল দেয়া হল, নাদিয়া আর ওমরে বাড়ি আলাদা হয়ে দুই দেশে পড়ল। ওমর প্রতিদিন দেয়াল টপকে নাদিয়ার বাড়ি যায়। তাদের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়, লোকচক্ষুর আড়ালে তাদের প্রেম গড়াতে থাকে। প্রেমের সে’কি এক্সপ্রেশন কি আহ্বান, না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ছবিটি দেখতে দেখতে মনে পড়ে – তাকে চিঠি দিতাম পাশের বাড়ি দেয়ালের ইটের নীচে। সেটাই ছিল আমাদের মেইল বক্স। মনে পড়ে কোন সময় মেইল বক্সে চিঠি না পেলে মনটা ভরে যেত কষ্টের কান্নায়।

এর মধ্যে তিন বন্ধু ইসরায়েলি সৈনিকদের আক্রমন করে। রাতের অন্ধকারে স্নাইপার এটাক। এই আক্রমনের গোপন তথ্য ফাস হয়ে যায়। কেমন করে ফাস হল কেউ জানে না। অথচ তিনজন ছাড়া অন্য কেউ জানার কথা না। ইসরায়েলি মিলিটারিরা ওমরকে ধরে নিয়ে যায়। প্রচন্ড নির্যাতন করেও তার কাছ থেকে তথ্য আদায় করতে ব্যার্থ হয়। তখন তারা নাদীয়াকে জব্দ করার ভয় দেখায় এবং তারেককে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করতে বলে। দোটানায় পরে ওমর চালাকি করে। সে সাহায্য করবে সম্মত হয় এবং ছাড়া পেয়ে প্যালাষ্টাইনে ফিরে যায়। শুরু হয় নতুন খেলা। বন্ধুরা তাকে বিশ্বাস করে না। এমনকি তার প্রিয়তমা নাদিয়াও তাকে সন্দেহের চোখে দেখে। অন্য দিকে আমজাদ গোপনে নাদিয়াকে ভালবাসে। শুরু হয় সন্দেহ ভুলবুঝাবুঝির আর বিশ্বাসঘাতকের খেলা। এক পর্যায়ে তারেক আর আমজাদের মাঝে সংঘর্সে তারেক মারা পরে। ওমর আর নাদিয়ার মাঝে আমজাদ বিভেদ তৈরি করতে সক্ষম হয়। ওমরকে বাধ্য হয়ে নাদিয়াকে ছেড়ে যায়। আমজাদ বিয়ে করে ফেলে নাদিয়াকে। মনে পড়ল আমাদের মাঝে যে দেয়াল তৈরি হয়েছিল সেই তৃতিয় ব্যাক্তির কথা। মনে পড়ল মানুষ স্বার্থের কারনে কতটা নীচু হতে পারে।

ছবিতে হানি আবু-আসাদকে নির্মানকালে দেখা যাচ্ছে



যাই হোক, দু বছর পরের কথা। ওমরকে আবারও ইসরায়েলি গোয়েন্দা ব্যাবহার করতে চায় নতুন এক প্যালাষ্টাইনি কমান্ডারকে হত্যা করতে। ওরা তাকে আবারও ভয় দেখায় নাদিয়াকে তারেকের মৃত্যুর রহস্য ফাস করে দেবার। এই অবস্থায় ওমর নাদিয়াদের বাড়িতে যায় এবং বুঝতে পারে আমজাদ চালাকি করে নাদিয়াকে বিয়ে করেছে। ওমর এও বুঝতে পারে সরল নাদিয়া এসবের কিছুই জানে না। আমজাদ বলেছিল নাদিয়া তার সন্তানের মা হতে চলেছে। অথচ নাদিয়া একমুহুর্তের জন্যও ওমরকে ছাড়া কাউকে ভালবাসে নাই। ওমর বুঝতে পারে ইসয়েলি সেই গোয়েন্দাই তার জীবনকে বিষিয়ে দিয়েছে। তাই ছবিটির শেষ দৃশ্যে গোয়েন্দাকে হত্যা করতে দেখা যায়।

যুদ্ধ, দেশভাগ, দীপালি, শেফালি আর অঞ্জলিদের হারানোর মাঝে কত প্রেমে তলিয়ে গেছে আমরা কে তার হিসাব রাখি। হাজার বছরে মানুষের তৈরি কৃত্রিম এই খেলায় পৃথিবির বাতাস বিষাক্ত। ওমর আর নাদিয়ার মিষ্টি প্রেমের সাথে সাথে দেশভাগ, যুদ্ধ, মানব চরিত্রের নিচুতা আর এই ছবিটিকে করেছে একটি মাইল স্টোন। প্রতিটি মুহুর্তের চমক আর বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে কঠিন জটিল জীবনের অন্য একরুপ ফুটিয়ে তুলেছেন চলচিত্রকার হানি আবু-আসাদ। এখানেই ছবিটির স্বার্থকতা। বলতে ভুলে গেছি ছবিটির একটি ডায়লগে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয়েছে। নাদিয়া ও ওমর হানিমুনের স্বপ্ন দেখে। ওমর বলে হানিমুনে তারা মোজাম্বিক যাবে। নাদিয়া বলে – হোয়াই নট বাংলাদেশ! অস্কার নমিনেটেড ছবিটি অস্কার না পেলেও আন্তর্জাতিক মনোযগ পেয়েছে যথেষ্ট।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৪৭
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×