somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারবালার ইতিহাসের তাৎপর্য ও কারবালার শিক্ষা নিয়ে আলোচনাঃ (নসিহত নং-৪৬)

১৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হযরত ওসমান (রাঃ) এর শাহাদাতের জন্য সিরিয়ার শাসনকর্তা মোয়াবিয়া ও তাহার নেতৃত্বাধীন কিছু লোক হযরত আলী (কঃ) কে মিথ্যাভাবে দোষারোপ করিতে থাকে। তাহাদের কারসাজিতে মুসলিম সাম্রাজ্যে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় হযরত আলী (কঃ) মদীনা হইতে কুফায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। তাহার উদ্দেশ্য ছিল ক্ষিপ্র হস্তে বিদ্রোহ দমন করা। মোয়াবিয়া হযরত আলী (কঃ) এর রাজধানী কুফা আক্রমণ করিলেন তাহাদের দাবী হইল হযরত ওসমান (রাঃ) ও হযরত রাসুলে করীম (সাঃ) এর বিশিষ্ট ছাহাবা হযরত তালহা (রাঃ) ও হযরত জুবায়ের (রাঃ) এর হত্যার বিচার করিতে হইবে। হযরত আলী (কঃ) এর অনুগত বাহিনী ও সিরিয়ার শাসনকর্তা মোয়াবিয়া ও মিশরের শাসনকর্তা উমাইয়া বংশীয় আমর বিন আসের সম্মিলিত বাহিনী সিফফিন নামক স্থানে পরস্পরের মুখোমুখি হইলো। এই স্থানও ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত। যুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানদের রক্তপাত বন্ধের জন্য হযরত আলী (কঃ) শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে মীমাংসার প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু মোয়াবিয়া বলিলেন, তিনি হযরত ওসমান (রাঃ) ছাহেবের হত্যার প্রতিশোধ নিতে আসিয়াছেন। এই হত্যার জন্য যাহারা দায়ী বলিয়া তিনি দাবী করিতে লাগিলেন, তাহাদের না পাওয়া পর্যন্ত তিনি দামেস্কে প্রত্যাবর্তন করিবেন না। এমন সকল ব্যক্তিকে তিনি হযরত ওসমানের (রাঃ) হত্যার জন্য দায়ী করিতে লাগিলেন, যাহারা এই হত্যার জন্য প্রকৃত পক্ষে দায়ী ছিলেন না। হযরত আলী (কঃ) উহাতে তাই রাজী হইতে পারিলেন না। সুতরাং যুদ্ধ শুরু হইল। ক্রমে মুহাররম মাস আসিয়া গেল। এই মাস পবিত্র বিধায় মুসলমানগণ এই মাসে যুদ্ধ করিতেন না। যুদ্ধ মুহাররম মাস উপলক্ষে স্থগিত হইল। হযরত আলী (কঃ) এই সুযোগে আবারও যুদ্ধ বন্ধের জন্য মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করিলেন। কিন্তু মোয়াবিয়া এইবার হযরত ওসমান (রাঃ) এর হত্যার বিচারের মূল দাবী ত্যাগ করিয়া নতুন প্রস্তাব দিলেন। তিনি বলিলেন, বিনা রক্তপাতে যুদ্ধ বন্ধ হইতে পারে, যদি নতুনভাবে খলিফা নির্বাচন হয়। আর সেই উদ্দেশ্যে হযরত উমর (রাঃ) এর মৃত্যুকালে যে রূপ খলিফা নির্বাচনের জন্য একটি সাধারণ সভা আহ্বান করা হইয়াছিল, ঐ রূপ সভার আহ্বান করা হউক। মোয়াবিয়া এ কথাও জানাইয়া দিলেন যে, ঐ সভায় তিনি নিজেই হযরত আলী (কঃ) এর সহিত প্রতিদ্বন্দিতা করিবেন। হযরত আলী (কঃ) বলিলেন, খেলাফতের দাবী আর হযরত ওসমান (রাঃ)-এর হত্যার বিচারের দাবী-দুইটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। দুইটিকে এক করিলে চলিবে না।

হযরত নবী করীম (সাঃ) এর সকল ছাহাবা মিলিয়া হযরত আলীকে (কঃ) খলিফা নির্বাচিত করিয়াছিলেন। তাই তাহার জীবদ্দশায় পুনবার খেলাফত পরিবর্তনের কথা উঠিতে পারে না। অথচ মোয়াবিয়া খেলাফত পরিবর্তনের দাবী তুলিল, ফলে সন্ধির সকল চেষ্টা ব্যর্থ হইল। কিন্তু এই ঘটনার দ্বারা ইহাই বোঝা যায় যে, মোয়াবিয়া যুদ্ধে আসিয়াছিলেন রাজত্বের লিলা লইয়া; হযরত ওসমান (রাঃ) বা হযরত যুবায়ের (রাঃ) এর বিচারের দাবী ছিল একটা মিথ্যা বাহানা মাত্র। তাই সন্ধির চেষ্টা ভাংগিয়া গেল। মুহাররম মাসের শেষে যুদ্ধ আবার প্রবল বেগে শুরু হইল। যুদ্ধে যখন মোয়াবিয়ার পরাজয় সুনিশ্চিত, তখন তিনি এক নতুন কৌশল গ্রহণ করিলেন। কিছু পক্ক কেশ বৃদ্ধ সৈন্য দিগের বর্শায় কুরআন শরীফ বাঁধিয়া সাদা পতাকা অর্থাৎ সন্ধি বের প্রতীক হিসেবে রণক্ষেত্রে পাঠাইলেন। বর্শার মাথায় কুরআন শরীফ বাঁধা দেখিয়া হযরত আলী (কঃ) এর সৈন্য দলের একটি অংশ আর যুদ্ধে যাইতে রাজী হইল না। হযরত আলী (কঃ) তাহাদের বুঝাইলেন, উহা মোয়াবিয়ার নতুন কৌশল মাত্র, যুদ্ধের শেষ মীমাংসা না হইলে নতুন বিপদ সৃষ্টি হইবে । তিনি শত চেষ্টা করিয়াও তাহাদের সৈনাদলের ঐ অংশকে আর যুদ্ধে পাঠাইতে পারিলেন না। যুদ্ধ স্থগিত করিতে তিনি বাধ্য হইলেন। নতুনভাবে সন্ধি স্থাপনের উদ্যোগ হইল। তিনি সৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধ বিমুখ মনোভাব দেখিয়া ভগ্ন মন লইয়া রণক্ষেত্র ত্যাগ করিলেন। সেনাপতি মুসার উপর মীমাংসার ভার দিয়া চলিয়া গেলেন। মোয়াবিয়ার পক্ষে আসিলেন তাহার কূট শাসনকর্তা আমর। আমর মীমাংসার প্রস্তাব হিসেবে বলিলেন, যেহেতু হযরত আলী (কঃ) এর খেলাফত আমলে কতিপয় এলাকায় বিদ্রোহ দেখা গিয়াছে, হযরত আলী (কঃ) তাহার প্রতিদ্বন্দ্বী মোয়াবিয়া-এই উভয়কে বাদ দিয়া ভিন্ন কোনো ব্যক্তিকে খেলাফতের ভার দিতে হইবে। মুসা আমরের কূট চালের সামনে টিকিতে পারিলেন না। তিনি শান্তি স্থাপনের জন্য হযরত আলী করমুল্লাহ্ ওয়াজহু-এর খেলাফতের দাবী প্রত্যাহার করিতে সম্মত হইলেন এবং অপেক্ষমান মুসলিম সৈন্যগণকে তাহা জানাইতে আসিলেন। সেনাপতি মুসা যখন বলিলেন মীমাংসার শর্ত হিসেবে হযরত আলী (কঃ) এর পক্ষ হইতে খেলাফতের দাবী রদ করা হইল তখনই মোয়াবিয়ার সহযোগী বলিয়া উঠিলেন, হযরত আলী (কঃ) এর প্রতিনিধি তাহার খেলাফতকে রদ করিয়াছেন, ফলে খেলাফতের আসন এখন শূন্য। আর তাই এক্ষণে মোয়াবিয়াকে খলিফা নির্বাচন করা হইল। মুসা ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, সন্ধির প্রস্তাব অনুযায়ী তৃতীয় কোনো ব্যক্তি খেলাফতের ভার গ্রহণ করার কথা, কিন্তু মোয়াবিয়ার সৈন্যদের উল্লাস ধ্বনিতে মুসার কণ্ঠ তলাইয়া গেল। তাহার কথা কেহ শুনিতে পাইল না। সন্ধির শঠতা সম্পর্কে সকলেই বুঝিতে পারিল। হযরত আলী (কঃ) কুফায় ফিরিয়া রাজত্ব করিতে লাগিলেন বটে, কিন্তু মোয়াবিয়া আর তাহার বশ্যতা স্বীকার করিল না।

হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) এর আশীর্বাদ-ধন্য ও পুণ্য স্মৃতিময় মদীনা হইতে আরবের উত্তরাঞ্চল রক্ষা করিবার উদ্দেশ্যে হযরত আলী (কঃ) কুফায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেন কিন্তু নবী (সাঃ) এর প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্র হইতে দূরে যাইয়া, তিনি বিদ্রোহতো দমন করিতে পারিলেনই না, বরং খেলাফতও হস্তচ্যুত হইল। শেষ পর্যন্ত কুফাবাসী একদিন নামাজরত অবস্থায় কুফার একটি মসজিদে হযরত আলী (কঃ) কেও হত্যা করিল ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৩৮
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×