somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Not For Sale

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নিস্তব্দ কনফারেন্স রুম। আশফাক আলীর শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছে। স্ত্রী আয়েশা পাশেই বসে আছে। আজকের এই পার্টির কাছে মাল বেচঁতেই হবে যে করেই হোক। এর আগেও কয়েকটা পার্টি দেখে গেছে, পড়ে জানাবে বলে আর জানায়নি। ফোন দিলেও ধরে না হারামজাদারা। একবার তো এক পার্টি প্রায় ফেঁসে গিয়েছিলো। আশফাক আলী ভালো জাল বিছিয়ে ছিলো। পার্টিও কথা দিয়েছিলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর কেনেনি বদমাইশের বাচ্চা। আশফাক আলী বারবার ঘড়ি দেখছে। স্ত্রীর দিকে চিন্তিত মুখে তাকাচ্ছে। বারবার পানি খাচ্ছে। ম্যানেজার এসে খবর দিলো পার্টি এসে গেছে। আশফাক আলী তরতরিয়ে ঘামতে লাগলো। স্ত্রী রোকেয়া আর ছেলে সমসের কে নিয়ে উছমাত মোল্লা কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করলেন। আশফাক আলী ও তার স্ত্রী তাঁদের সদরে আমন্ত্রণ জানালো। এক গাল হেসে কর মর্দন করলো। পথে আসতে কোন অসুবিধা হয়েছে কিনা জীজ্ঞেস করতেও ভুললো না। উছমাত মোল্লা হাসতে হাসতে বসলেন। ধীরে সুস্থে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। একটিও ভুললেন না। তিনি বললেন "চলুন দেরী না করে প্রডাক্ট দেখি। প্রডাক্ট পছন্দ হলে বাকী কথা হবে।" আশফাক আলী স্ত্রীর দিকে ইশারা করলো। স্ত্রী উঠে গেল। খাবারের ট্রে হাতে ম্যানেজার ঢুকলো। আশফাক আলী হাসতে হাসতে বললো " সামান্য কিছু নাস্তা এনেছিলাম, নিন নাস্তা নিন।" উছমাত মোল্লা, সমসের, স্ত্রী সবাই টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা খাবার নিয়ে খেতে লাগলো। বেরিয়ে এলো রূপ-লাবণ্যে ভরা আশফাক আলীর সাতাশ বয়সী কন্যা ইলমা। নড়েচড়ে বসলো সমসের। উছমাত মোল্লা খুব নজর করে দেখতে লাগলেন। বললেন "একটু হেটে দেখাও তো মা।" দাঁত দেখতে লাগলেন। না, কোন খুঁত চোঁখে পড়ল না। প্রডাক্ট ভালো আছে। একটু বয়স বেড়েছে, পুরোনো দেখায় এই আর কি। উছমাত মোল্লা ছেলের দিকে তাকালেন ছেলে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো, স্ত্রী রোকেয়ার দিকে তাকালেন স্ত্রী মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।

আশফাক আলী বলতে লাগলো "একে দিয়ে আপনি ২৪ ঘন্টা কাজ করাতে পারবেন।" স্ত্রী আয়েশা বলল "আমি সব রকম ঘরের কাজ শিখিয়েছি।" আশফাক আলী আবার বললো "সুতরাং আপনাদের আর কাজের মেয়ে লাগবে না।" উছমাত মোল্লার স্ত্রী রোকেয়া একগাল হেসে বললেন "তাহলে তো খুবি ভালো, এমনিতেও কাজের লোকের প্রতি আজকাল আর ভরসা রাখা যায় না।" আশফাক আলী সমসেরের দিকে একবার তাকালো, তারপর উছমাত মোল্লার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো "একে আমরা গান, নাচ সব শিখিয়েছি। সুতরাং আপনাদের বিনোদনের ভার এর উপর। যখন মন চাইবে গান শুনবেন, নাচ দেখবেন।" সমসের হাসলো, সঙ্গে উছমাত মোল্লাও। উছমাত মোল্লা বললেন "দেখি প্রডাক্টের সঙ্গে কথা বলে।" উছমাত মোল্লা জীজ্ঞেস করলেন "তুমি কতদূর পর্যন্ত পড়েছো?" ইলমা উত্তর দিলো "ইন্টার।" উছমাত মোল্লা বললেন "পড়াশোনা ছাড়লে কেন, ছাত্রী ভালো ছিলে না?" সঙ্গে সঙ্গে আশফাক আলীর স্ত্রী আয়েশা বলল" ছাত্রী খুবি ভালো ছিল। এস,এস,সি এবং ইন্টার, দুটোতেই গোল্ডেন এ প্লাস।" ইলমা বলতে লাগলো "বাবা মা ছাড়িয়ে দিলো। বললো, পড়াশোনা করে কি হবে! ঠেলতে তো হবে সেই হেসেল। হেসেল ঠেলার জন্য তো আর পড়াশোনা লাগে না।" উছমাত মোল্লা আশফাক আলীর দিকে তাকিয়ে বললেন "বাহ্, বেশ ভালো শিক্ষা দিয়েছেন তো।" সঙ্গে সঙ্গে আশফাক আলী বললো "বেকার ঝামেলাতে যাবোই কেন!" তারপর গর্ব করে বলল "মেয়েকে আমরা উচ্চ শিক্ষা দেইনি, সুতরাং সে কখনোই ইন্ডিপেন্ডেট হতে পারবে না। আপনাদের কোন চিন্তা নেই।" উছমাত মোল্লা আবার মেয়েকে জীজ্ঞেস করলেন "ধরো কাপ, পেল্ট, গ্লাস ভাঙলে কিংবা কোন কারণ ছাড়াই হাত নিসপিস করছে- দু-চারটে চড়/ থাপ্পড় খেতেই পারো, এটাই স্বাভাবিক। কোন আপত্তি নেই তো?"

আশফাক আলী উত্তেজিত হয়ে বললো "মেয়েকে সে শিক্ষাই দেই নি, সাত চড়েও রা করবে না, বিশ্বাস না হলে দিয়ে দেখতে পারেন একটা।" ইলমা বললো "না, আপত্তি করবো না। অকারণে বাবা,মা চড়/থাপ্পড় মেরে আমাকে প্রস্তুত করেছেন। একবার বন্ধুদের সাথে পিকনিকে যেতে চেয়ে চড় খেয়েছি। তখন থেকেই বুঝেছি অকারণে চড়/থাপ্পড় খাওয়া মেয়েদের ভাগ্য লিখন। আমার মাও খেয়ে এসেছে, আমিও পারব।" উছমাত মোল্লা আবার প্রশ্ন করলেন "এই বিয়েতে তুমি রাজি হলে কেন?" ইলমা উত্তর দিলো "আমার মতের কোন মূল্য নেই।" তারপর বাবা মাকে দেখিয়ে বললো "উনারা জ্ঞানী মানুষ, বিঙ্গ মানুষ। যা সিন্ধান্ত নিবেন ভালোর জন্যই নিবেন। তাছাড়া বাবা মায়ের বুকে বোঝা হয়ে কত দিন থাকবো।" উছমাত মোল্লা আনন্দিত হয়ে আশফাক আলীকে বললেন "আই এপ্রিশিয়েট ইউর এফোর্ড। প্রডাক্ট আমাদের পছন্দ হয়েছে। এখন প্রডাক্ট আর ইউজার নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিক।" আশফাক আলী মনটা যেন একটু খারাপ করলো।

অন্য একটি রুমে ইলমা ও সমসের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।
সমসের: তোমার ফিগারটা কিন্তু জোস, দারুন মেনটেন করে রেখেছো।
ইলমা: আসার পর থেকে তো ঐদিকেই তাকিয়ে আছো।
সমসের: অবশ্যই, দেখার জন্যই তো এসেছি। কোন হবি?
ইলমা: লাভ আছে? বিয়ের পর আমার কি কোন ইচ্ছা থাকবে?
সমসের: না, তা অবশ্যই থাকবে না। তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। টেস্ট ড্রাইভ ?
ইলমা: নো টেস্ট ড্রাইভ। মা বলেছে লজ্জা নারীর গয়না। একবার চলে গেলে আর আসে না। সুতরাং লং ড্রাইভ বিয়ের পরে। ইচ্ছা মত খাস মিটিয়ে নিও। এমনিতেও আমার কোন ইচ্ছা বলে তো কিছু থাকবে না।
সমসের: (খুশি হয়ে) তার মানে তুমি ভার্জিন?
ইলমা: হ্যা, প্রেম করার কোন সুযোগ ছিল না। মা বোরখা দিয়ে ঢেকে কলেজে নিয়ে যেত, বোরখা দিয়ে ঢেকে নিয়ে আসতো।
সমসের: তোমার মাকে আমার ধন্যবাদ দিয়ো।

এপর্যায়ে ইলমা ফেটে পড়ে। তুমুল এগ্রেসিভ হয়ে বলে "সিরিয়াসলি? তোমার কি একটুও লজ্জা বোধ নেই? তোমরা কি এখনো মেয়েদের বাজারে পণ্য ভাবো?
সমসের মৃদু হেসে বলে "বিক্রি তো হচ্ছ। "

ইলমা শুনতে পায়। তার বাবা আশফাক আলী ও উছমাত মোল্লা দেন মোহরের দাম, দামাদামি করছে। আশফাক আলী বলছে "না না ভাই, ৭০ লাখের নিচে এক টাকাও কম হবে না। আপনি প্রডাক্টের ফিচার দেখেন।" উছমাত মোল্লা বলছে "প্রডাক্টের বয়স বেশী, দেখতে পুরোনো লাগে। ৫০ এর বেশী আমরা পারবো না।

Inspired by a Bollywood Short Film
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:০৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×