somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যাপ্টেনস্ ডায়েরি ২০০৬ - রিকি পন্টিং

১১ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দশম অধ্যায় - একের পর এক টেস্ট

শুক্রবার, এপ্রিল ১৭
ফেব্রুয়ারীর গোড়ার দিকে আমি লন্ডনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় একটি সাক্ষাতকার দিয়েছিলাম। গতানুগতিক, ধারালো, সিরিয়াস টাইপের প্রশ্নের পরিবর্তে, আমাকে অস্ট্রেলিয়ান টিম, ক্রিকেট খেলা সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, আমার মনে হয়, ক্রিকেটের প্রতি আমার আগ্রহের গভীরতা পরিমাপ করা। তাই ইন্টারভিউয়ের শুরুটা হয়েছিল এবিএন আমরো ওয়ান-এ ভ্রমন নিয়ে, যা কিছুদিন আগে আমরা উপভোগ করেছিলাম। তারপর আমার প্রথম স্পোর্টস স্মৃতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল (স্কুলে আমার বন্ধুদের সাথে খেলা, অথবা মওব্রি-তে বাড়ির ব্যাকইয়ার্ডে খেলা), তারপর স্পোর্টসের স্মরণীয় মূহুর্ত নিয়ে (তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনালের দুটিতে বিজয়ী দলের সদস্য হওয়া), সবচেয়ে বাজে সময় (গত গ্রীষ্মে এ্যাশেজ হারা), কোন খেলা দেখতে আমি সবচেয়ে বেশী খরচ করব (ইউএস মাস্টার্স) এবং কোনটি মিস করব (ফ্রেঞ্চ ক্লে কোর্ট টেনিস, টেনিস ঘাসেই ভালো মানায়) ইত্যাদি। ব্রিটেন তখন এ্যশেজে "যা খুশি তা করা"-র মেজাজে আছে এবং অনুমান করি, তারই অংশ হিসেবে তারা আমাকে নিয়ে একটু বেশী মাত্রায় কৌতুহলী।

সবকিছুই ঠিকমতো চলছিল, তখন পর্যন্ত, যখন আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এই মূহুর্তে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় কোন পরিবর্তন আমি দেখতে চাই। "আমার মনে হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সূচী বেশ টাইট, এক বছরে ৩০ টি ওয়ানডে আর ১৫টি টেস্ট"। আমি উত্তর দিলাম। "যা আমি দেখতে চাই না, তাহলো বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুর্বল শক্তির দেশগুলোকে, সেইসাথে বর্তমানে বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়েকেও টেস্ট খেলতে দেখতে চাই না।"

শীঘ্রই আমি শেষ প্রশ্নের উত্তর দিলাম - "কাকে আমি ডিনারে আমন্ত্রণ করতে চাই এবং কেন" ? (টাইগার উড্স, আমি তাঁকে তাঁর মেধা নিয়ে কথা বলতে এবং তাঁর সাথে কয়েকটা লেসন বুক করতে চাই। নেলসন ম্যান্ডেলা - তাঁর বলার মতো একটি সুন্দর জীবন কাহিনী আছে। ডন ব্রাডম্যানকেও আমন্ত্রণ জানালে ভালো হবে, যেমনটা স্যার এন্থনি হপকিন্সকে, যাঁর ছবি আমি উপভোগ করি।) ফেব্রুয়ারীর ১৪ তারিখে এই সাক্ষাতকার প্রকাশিত হবার পর, বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়েকে নিয়ে করা আমার মন্তব্য বিশেষ মনোযোগ পেল। বিশেষত বাংলাদেশে। একটা উদাহরণ - পাকিস্তানের গ্রেট ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম ঢাকার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ লিখেছিলেন, "মিস্টার পন্টিং, আপনাকে অবশ্যই মুখ বন্ধ করতে হবে, এবং ফিরে দেখতে হবে গত বছর কার্ডিফে আপনার বিপক্ষে তারা কি করেছিল।"

আমি ভূল করেছিলাম এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও আমি একটি যৌথ বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিলাম - "যদি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল টেস্ট দলের দক্ষতা বাড়াতে অস্ট্রেলিয়া তাদের বিরুদ্ধে খেলে, তবে তাতে আমি আছি। আমি আসন্ন বাংলাদেশ সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে লিড দেয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন অপেক্ষা করছি"। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাতে সিরিজ খেলতে যাওয়ায় বিতর্কটা স্তিমিত হয়ে গেল। কিন্তু আমি জানতাম, বাংলাদেশে যখন আমরা প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে যাবো, সেখানে নামামাত্র আমাকে আবার আমার মন্তব্য ব্যাখ্যা করতে হবে।

জোহার্ন্সবার্গ থেকে ১৭ ঘন্টার ফ্লাইটে ঢাকায় পৌছে, তার ২৪ ঘন্টা পর, আজ সকালে, একটা মিডিয়া কনফারেন্সে, এই প্রশ্ন উত্থাপিত হবার সাথে সাথে আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করলাম। ফেব্রুয়ারীতে আমি যা বলেছিলাম তা অপ্রাসঙ্গিক কোন ভাবনা অথবা কোন ভূল ব্যাখ্যা ছিল না। আমি বিশ্বাস করি আইসিসি-র উচিত বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে চিন্তা করা। তাদের ভাবা উচিত এলিট প্রতিযোগীদের নিয়ে, যাতে তারা অনেক বেশী টিম, যাদের জেতার কোন সম্ভাবনা নাই, তাদের চাপে বেসামাল না হয়ে পড়ে। আমি আরও বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন জিম্বাবুয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, যারা সাম্প্র্রতিক সময়ে কেবল পড়তির দিকেই যাচ্ছে। আমার আশঙ্কা, হয়তো কখনো দ্বিতীয় গ্রেডের উদ্ভব হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, যেখানে কিছু টিম টেস্ট আঙ্গিনায় প্রবেশের তালিম নেবে। এই গ্রেডের শীর্ষ টিমের প্রমোশন হবে টেস্ট ক্রিকেটের কুলীন সারিতে প্রবেশের। কিন্তু বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেয়ার পরামর্শ দেয়া আমার জন্য ভূল হবে। আমার উচিত হবে না বাংলাদেশকে হেয় করা, যা আমি করেছি।

আমি যখন টেলিগ্রাফ-এ মন্তব্য করেছিলাম, তখন আমি কেবল একটি আদর্শ ক্রিকেট বিশ্বের কথাই চিন্তা করছিলাম। ক্রিকেটকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তখন আমার মাথায় আসেনি। আমি আনন্দের সাথে স্বীকার করছি, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি বিশ্বময় ক্রিকেট সম্প্র্রসারণের একটি ভালো উদ্যোগ, ঠিক যেমন শ্রী লংকাকে করা হয়েছিল ১৯৮০ সালে, পাকিস্তানকে ১৯৫০ এ, ভারত, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে করা হয়েছিল যুদ্ধের মাঝখানে (প্রথম ও দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধ - অনুবাদক)। আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি বাংলাদেশ একদিনের ক্রিকেটে উন্নতি করেছে - ছয় সাপ্তাহ আগে, দেশের উত্তরাঞ্চল বগুড়ায় একটি খেলায় তারা শ্রী লংকাকে পরাজিত করেছে। এবং মার্চে কেনিয়াকে চার ম্যাচ সিরিজে পরাজিত করেছে - এবং এটা টেস্ট ক্রিকেটেও ঘটতে পারে, যদি মানুষ (আমাকে সহ) ধৈর্য্য ধারণ করে।

পরে সেই মিডিয়া কনফারেন্সে, আমাকে বর্তমান বাংলাদেশকে ২০০৩ এ ডারউইন ও কেয়ার্নস-এ দেখা বাংলাদেশের সাথে তুলনা করতে বলা হল।

আমরা দেখছি যে তারা প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। বিশেষত ওয়ানডে খেলায়। আমি বললাম। আমরা মনে করি তাদের ক্রিকেট ও অবকাঠামো উন্নতি করতে থাকবে, যা ভবিষ্যতে তাদেরকে একটি শক্তিশালী দলে পরিণত করবে। ভালো দলের বিপক্ষে ভালো খেললে তারা অবশ্যই বেশী এক্সপোজার পাবে। যত বেশী এক্সপোজার পাবে, তত বেশী তারা উন্নতি করবে।

আমরা জানতাম, সামনের ম্যাচগুলো আমাদের জন্য কঠিন হবে। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে খেলছি। শেষ ছুটি পেয়েছি বলতে গেলে জুলাই - আগস্ট ২০০৪ এ, ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফির আগে। তারপর থেকে আমরা খেলছি ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং এখন এখানে। এখানকার উইকেট হবে দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় শুষ্ক, ধুলিযুক্ত এবং তাদের আক্রমন হবে মূলত স্পিনারদের দিয়ে। অস্ট্রেলিয়া এই ট্যুরে জিততে এসেছে এবং সত্যি বলতে প্রতিপক্ষকে ডমিনেট না করা পর্যন্ত আমরা খুশি হব না। কিন্তু আমি চিন্তিত আমার ক্লান্তি নিয়ে। এটা হাস্যকর যে, ঢাকায় টেস্ট খেলার ঠিক পাঁচদিন আগে আমি আত্মপ্রাসাদে ভুগছিলাম জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে নিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্টে তাকে খেলার শেষভাগে খেলা থেকে বিরত রাখতে পেরেছিলাম, বেশী বিশ্রাম দেবার সুযোগ দিতে।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×