আজ ১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। প্রত্যেকে অন্যদের শুভেছ্ছা জানাবে, কেউ অন্তর থেকে, কেউ রীতি অনুসারে, কেউ নিজেকে প্রমাণ করার জন্য। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, বেশির ভাগ মানুই এই দিনটিকে গ্রহণ করেছুটির দিন হিসেবে। কর্মময় যান্ত্রিক জীবনে ছকে বঁাধা ছুটির (শুক্র ও শনি) বাইরে এটা যে আকর্ষণীয় এক অবকাশ যাপনের সুযোগ হবে তা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। বিশেষত স্বাধীনতার চেতনা যখন ক্রমশ অস্তায়মান।
আবার কেউ কেউ এই দিনে স্মৃতিসৌঢে যাওয়া, রাস্তায় বের হয়ে মিটিং মিছিলে অংশ নেওয়াকে অর্থহীন বলে এই যুক্তিতে যে, বছরে মাত্র একদিন এই দিন উদযাপনের কোন অর্থই নেই। তার উপর প্রায় সকল সভাই যখন অন্তঃসারশূন্য।
কিন্ত একটু ভেবে দেখবেন কি এমন নিষ্ক্রিয় অবস্হানে থেকে আসলে কাকে সুযোগ দেয়া হছ্ছে? আমরা নিষ্ক্রিয় থাকলেও স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি কিন্তু থেমে নেই, তারা এগিয়ে চলেছে বিপুল উদ্দমে। তাদের ভুল ব্যখ্যার যখন কোনো জোরালো প্রতিবাদ নেই, তখন তার বক্তব্যই প্রতিষ্ঠিত হছ্ছে। তদুপরি নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলতে চলতে আজ তারা আরো আত্যপ্রত্যয়ী। পুনর্বার বেরিয়ে পড়ছে তাদের দুর্গন্ধযুক্ত নখর ও দঁাত। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের জীবদ্দশাতেই এদের বিজয়োল্লাস দেখে যেতে হবে নিশ্চয়ই।
তাই আসুন, সক্রিয় হই। রাস্তায় নামি, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি, জানান দিই আমাদের অস্তিত্বের, বুঝিয়ে দিই যে একতরফা আস্ফালনের দিন শেষ, জাগছে মানুষ, জাগছে বাংলাদেশ। যত বেশী মানুষ বিজয়োৎসব করবে, তত কমে যাবে ওদের আত্মবিশ্বাস। আমরা সভা সমিতিতে যাই, ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। তারা না শুনলে অন্যদের কাছে যাই অ থবা নিজেরাই নেতা হই, সকলকে একতাবদ্ধ হওয়ার ডাক দিই। ডাকার মত ডাকতে পারলে সেই ডাক শোনার লোকের অভাব হবেনা, এই বিশ্বাস এ দেশের মানুষের প্রতি রাখেন, সুদিন দূরে নয়। মরতে যদি হয়ই, কিছু না করে বসে থেকে হায় হায় করার চেয়ে চেষ্টা করে মরি।
আমরা আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের আশায় বসে আছি। ভাবছি কবে সেই দৈত্য এসে সব কিছু বদলিয়ে দেবে, আর আমিও ভালো মানুষটি হয়ে যাবো। কিন্তু ভুলে যাই যে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ আরব্য রজনীর উপন্যাসেই পাওয়া যায়। ভারতবর্ষ স্ব্বাধীন হয়েছে দুইশত বছরের অক্লান্ত চেষ্টায়, আমার দেশ স্ব্বাধীন হয়েছে চব্বিশ বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এমন কি রাজাকার আল-বদররা আংশিকভাবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, তাওসময় নিয়েছে সাঁইত্রিশ বছর। তাহলে আমাদের অপেক্ষা করতে দোষ কি? আসুন আমরা ইমারতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে চঁাদ ছঁোয়ার স্বপ্ন না দেখে ইমারতের এক একটি ইট গাঁথার শপথ নিই, যার উপর দাঁড়িয়ে আরেকটি ইঁট গাঁথতে পারে অন্য কেউ।