ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি ফিরছে সবুজ।আর তের দিন পর ঈদ।তার আগেই একটা কাজ পেয়ে গেছে।ঈদে টাকাটা কাজে লাগবে।ছোট কাজ, দেশী কোম্পানীতে- ডাক্টিং করতে হবে।ছোট কাজ বলে ওর অবশ্য কোন সমস্যা নেই।বছর খানেক হলো এই কাজ করছে।ছোট কাজই কপালে জোটে ওর।কাজ ভালো করতে পারলে এক সময় বড় কাজ পাওয়া যাবেই, জানে ও।
কোম্পানীর ডিরেক্টরের সাথে কথা হলো, কাজের শুরুতে অগ্রীম ছয় হাজার টাকা দেওয়া হবে আর কাজ শেষে নির্ধারিত হারে কাজের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে যত টাকা হয় তা দিয়ে দেওয়া হবে।দুইজন ইঞ্জিনিয়ার সাইটে থাকবে, তাদের নির্দেশমত সে কাজ করে দেবে।ঈদের আগেই কাজ শেষ করতে হবে।সময়মত কাজ শেষ করার জন্য নিজ গ্রামেরই আরও আরও চারজন ছেলেকে সাথে নিল।সাত আট দিনে পাঁচ জনের খাওয়া আর হাত খরচ বাবদ বাড়ি থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিল।যদিও কাজের আগেই কিছু টাকা অগ্রীম দেওয়ার কথা, কিন্তু আগের কাজের অভিগ্ঞতা থেকেই ও জানে যে প্রায়ই ঐ টাকাটা আগে পাওয়া যায় না, কাজের শেষ দিকে হয়তো কখনও কখনও পাওয়া
যায়।
এখানেও ব্যতিক্রম ঘটলো না।প্রথম দিন ইঞ্জিনিয়ারদেরকে টাকার কথা বলতেই তারা সাফ জানিয়ে দিলো যে টাকা পয়সার ব্যপারে তারা কিছু জানে না।সবুজদের কাজ বুঝিয়ে দেয়া আর কাজ তদারকি করে অফিসে রিপোর্ট করাই তাদের কাজ।
পুরো সাতদিন টানা কাজ করে সবুজরা যখন কাজ শেষ করে ফেলেছে, তখন ইঞ্জিনিয়াররা সবুজের উপর বেশ সন্তুষ্টই।ও কাজও ভালো করে, অন্যদের মতো চুরির ধান্দাও নেই।উল্টা পাল্টা ভুলভাল কাজ যে একেবারেই করেনি তা না।কিন্তু বয়সই বা কত আর পড়ালেখাই বা কতদূর করেছে, এই বিবেচনা করে দুই জনই শেষ পর্যন্ত সবুজদের উপর খুশি।তাই তারা সবুজদের আশ্বাস দিলো যে অফিসে ওদের সম্পর্কে ভালো রিপোর্টই দেবে, কোনো সমস্যা হবে না।
কিন্তু পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে ওরা ডিরেক্টরের সাথে দেখা করতে চাইলে ওদেরকে জানানো হলো যে এখন দেখা করা যাবে না।ফোন করলে ফোন রিসিভও করলোনা।ইঞ্জিনিয়ারদের ফোন করলে তাদের একই উত্তর, টাকার ব্যপারে তারা কিছু জানেনা।বিকেলে, কি করবে বুঝতে না পেরে যখন হতাশ, তখন একজন ইঞ্জিনিয়ার ফোন করে জানালো যে ডিরেক্টর সাহেব সাইট দেখতে গিয়েছিলেন এবং কয়েকটি জায়গার কাজে তিনি খুশি নন, তা ঠিক করে দিতে হবে।তারা ঐদিনই আবার সাইটে গেলো এবং কাজটুকু করে আসলো।তবে যে সামান্য খুঁতের জন্য তাদের আবার আসতে হলো তা দেখে হতাশ হওয়ার চেয়ে অবাক হলো বেশি।কারণ ওরা জানে যে এর চেয়ে বেশি খুঁত থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না এবং ইঞ্জিনিয়ার দুইজনও ঐ কথাই বলাবলি করছিলো।
পরেরদিনও ডিরেক্টর সাহেবকে পাওয়া গেলো না।তারপর দিন শুক্রবার ছিলো এবং শনিবার জানতে পারলো যে তিনি দিনাজপুর গিয়েছেন, ঈদের আগে আর দেখা হবেনা।
-----------------------------------------------------------------
(ঈদের প্রায় দশদিন পরে সবুজ তার টাকাটা পেয়েছিলো, কিন্তু তার ঈদটা জঘন্য কাটলো।)
-----------------------------------------------------------------
এরপরে কেটে গেছে আরও বেশ কিছু সময়।এখনও আগের কাজই করে ও।কিন্তু আগের মতো ভুল সে আর করে না।চুরি করার কোন সুযোগই সে ছাড়েনা।কখনও ধরা পরে না তা না, তখন ঐ সাইটের ইঞ্জিনিয়ারকে চুরির প্রায় পুরোটাই দিয়ে রক্ষা পেতে হয়।কদাচিৎ যদি খুব সৎ কোন ইঞ্জিনিয়ার এর হাতে ধরা পরে যায় বা বখরা যদি ইঞ্জিনিয়ার এর মনোঃপুত না হয়, তখন খানিকটা লস দিয়ে ফিরতে হয় আর কি।আর ভদ্দরলোকেরা সবুজদের উদ্দেশ্যে বলে, 'ওরা ছোটলোকের জাত, মায়ের পেটে থাকতেই চুরি শেখে।'
(গল্পের প্রথম অংশ শতভাগ সত্য ঘটনা)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১:২৯