somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতঃপর...চোর

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি ফিরছে সবুজ।আর তের দিন পর ঈদ।তার আগেই একটা কাজ পেয়ে গেছে।ঈদে টাকাটা কাজে লাগবে।ছোট কাজ, দেশী কোম্পানীতে- ডাক্টিং করতে হবে।ছোট কাজ বলে ওর অবশ্য কোন সমস্যা নেই।বছর খানেক হলো এই কাজ করছে।ছোট কাজই কপালে জোটে ওর।কাজ ভালো করতে পারলে এক সময় বড় কাজ পাওয়া যাবেই, জানে ও।

কোম্পানীর ডিরেক্টরের সাথে কথা হলো, কাজের শুরুতে অগ্রীম ছয় হাজার টাকা দেওয়া হবে আর কাজ শেষে নির্ধারিত হারে কাজের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে যত টাকা হয় তা দিয়ে দেওয়া হবে।দুইজন ইঞ্জিনিয়ার সাইটে থাকবে, তাদের নির্দেশমত সে কাজ করে দেবে।ঈদের আগেই কাজ শেষ করতে হবে।সময়মত কাজ শেষ করার জন্য নিজ গ্রামেরই আরও আরও চারজন ছেলেকে সাথে নিল।সাত আট দিনে পাঁচ জনের খাওয়া আর হাত খরচ বাবদ বাড়ি থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিল।যদিও কাজের আগেই কিছু টাকা অগ্রীম দেওয়ার কথা, কিন্তু আগের কাজের অভিগ্ঞতা থেকেই ও জানে যে প্রায়ই ঐ টাকাটা আগে পাওয়া যায় না, কাজের শেষ দিকে হয়তো কখনও কখনও পাওয়া
যায়।

এখানেও ব্যতিক্রম ঘটলো না।প্রথম দিন ইঞ্জিনিয়ারদেরকে টাকার কথা বলতেই তারা সাফ জানিয়ে দিলো যে টাকা পয়সার ব্যপারে তারা কিছু জানে না।সবুজদের কাজ বুঝিয়ে দেয়া আর কাজ তদারকি করে অফিসে রিপোর্ট করাই তাদের কাজ।

পুরো সাতদিন টানা কাজ করে সবুজরা যখন কাজ শেষ করে ফেলেছে, তখন ইঞ্জিনিয়াররা সবুজের উপর বেশ সন্তুষ্টই।ও কাজও ভালো করে, অন্যদের মতো চুরির ধান্দাও নেই।উল্টা পাল্টা ভুলভাল কাজ যে একেবারেই করেনি তা না।কিন্তু বয়সই বা কত আর পড়ালেখাই বা কতদূর করেছে, এই বিবেচনা করে দুই জনই শেষ পর্যন্ত সবুজদের উপর খুশি।তাই তারা সবুজদের আশ্বাস দিলো যে অফিসে ওদের সম্পর্কে ভালো রিপোর্টই দেবে, কোনো সমস্যা হবে না।

কিন্তু পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে ওরা ডিরেক্টরের সাথে দেখা করতে চাইলে ওদেরকে জানানো হলো যে এখন দেখা করা যাবে না।ফোন করলে ফোন রিসিভও করলোনা।ইঞ্জিনিয়ারদের ফোন করলে তাদের একই উত্তর, টাকার ব্যপারে তারা কিছু জানেনা।বিকেলে, কি করবে বুঝতে না পেরে যখন হতাশ, তখন একজন ইঞ্জিনিয়ার ফোন করে জানালো যে ডিরেক্টর সাহেব সাইট দেখতে গিয়েছিলেন এবং কয়েকটি জায়গার কাজে তিনি খুশি নন, তা ঠিক করে দিতে হবে।তারা ঐদিনই আবার সাইটে গেলো এবং কাজটুকু করে আসলো।তবে যে সামান্য খুঁতের জন্য তাদের আবার আসতে হলো তা দেখে হতাশ হওয়ার চেয়ে অবাক হলো বেশি।কারণ ওরা জানে যে এর চেয়ে বেশি খুঁত থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না এবং ইঞ্জিনিয়ার দুইজনও ঐ কথাই বলাবলি করছিলো।

পরেরদিনও ডিরেক্টর সাহেবকে পাওয়া গেলো না।তারপর দিন শুক্রবার ছিলো এবং শনিবার জানতে পারলো যে তিনি দিনাজপুর গিয়েছেন, ঈদের আগে আর দেখা হবেনা।
-----------------------------------------------------------------

(ঈদের প্রায় দশদিন পরে সবুজ তার টাকাটা পেয়েছিলো, কিন্তু তার ঈদটা জঘন্য কাটলো।)

-----------------------------------------------------------------
এরপরে কেটে গেছে আরও বেশ কিছু সময়।এখনও আগের কাজই করে ও।কিন্তু আগের মতো ভুল সে আর করে না।চুরি করার কোন সুযোগই সে ছাড়েনা।কখনও ধরা পরে না তা না, তখন ঐ সাইটের ইঞ্জিনিয়ারকে চুরির প্রায় পুরোটাই দিয়ে রক্ষা পেতে হয়।কদাচিৎ যদি খুব সৎ কোন ইঞ্জিনিয়ার এর হাতে ধরা পরে যায় বা বখরা যদি ইঞ্জিনিয়ার এর মনোঃপুত না হয়, তখন খানিকটা লস দিয়ে ফিরতে হয় আর কি।আর ভদ্দরলোকেরা সবুজদের উদ্দেশ্যে বলে, 'ওরা ছোটলোকের জাত, মায়ের পেটে থাকতেই চুরি শেখে।'

(গল্পের প্রথম অংশ শতভাগ সত্য ঘটনা)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১:২৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×