somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারা গোণা প্রহর গুলো নিরবে কাঁদায়

০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বেশ কয়েকদিন থেকে একটা ছেলে খুব ডিস্টার্ব করছে ফোনে । আমার সবকিছু নাকি সে জানে । কিন্তু তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে বাপ রে , কি ডং দেখায় । কিছু জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যাবেন তিনি । আমার ফেসবুক নাম , কোথায় পড়ি , কি করি তা সবই উনার মুখস্ত । সে যাই হোক, কিন্তু সে কে তা তো বলবে ?

কথা বলতে খুব যে খারাপ লাগে তা না কিন্তু খুব ভালো ও লাগে না । কারন সবসময় বেশি চালাকি দেখায় যাতে তাকে চিনে না ফেলি । ছেলেদের চালাকি দেখানো আমার অসহ্য লাগে । বেশিরভাগ সময় উনার চালাকি দেখানো শুরু হলে আমি ফোন অফ রেখে দেই ।

একদিন কথা বলছি অনেকক্ষণ থেকে । কথা বলে বুঝতে পারলাম আজকে ওর মুড ভালো । হয়তো জিজ্ঞেস করলে কিছু বলতে পারে কোথায় থাকে কি করে।জিজ্ঞেস করলাম । সে বলল না । এতো রাগ হল যে সাথে সাথে ফোন অফ করে রেখে দিলাম । প্রায় তিন ঘণ্টা পর ফোন খুলে দেখি ম্যাসেজ রেখেছে । বলল আমরা আগে যেখানে থাকতাম সেখানে সে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকত । নাম অভি ।

আমরা সেখান থেকে চলে এসেছি বছর দুয়েক হবে । কিন্তু অভি নামের কাউকে চিনতাম বলে মনে হয় না । হয়তো দেখলে চিনবো ।
ফোনে কথা বলতে বলতে অনেকটা ফ্রেন্ডসিপ হয়ে গেল । আমার কিছু ভালো না লাগলেই তার ফোনের অপেক্ষায় থাকতাম । আমার জন্মদিনে সবার আগে তার কাছ থেকে উইস আসতো ঠিক ১২ টায় । ভালো লাগতো যখন বুঝতাম কেউ একজন আছে যে আসলেই আমাকে কেয়ার করে, আমার ভালো লাগা , না লাগা নিয়ে মাথা ঘামায় ।
কিন্তু সে ছিল অনেক আলাদা। কখনই আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করত না ।এমনকি আমার কোন বয় ফ্রেন্ড আছে কি না তা ও না । মাঝে মাঝে ভীষণ রাগ হতো ।

মাঝে মাঝে তাকে দেখতে ইচ্ছা করত । ফেসবুক এর কথা জিজ্ঞেস করতে বলে সে নাকি ইউজ করে না । মাথা নষ্ট । এই কথা কে বিশ্বাস করবে তোমার খোকা ?

সে নাকি গান গাইতে আর ছবি তুলতে পছন্দ করে । অনেক ভেবে একদিন বললাম আমাকে গান শুনাও ।সে বলে এখানে আসো একদিন , যতক্ষণ যত ক্ষন ইচ্ছা শুনাব । খারাপ বলে নি । একবার গেলে কেমন হয় ?

আমার ফাইনাল পরিক্ষা আসল । পরিক্ষার কয়দিন তার কোন ফোন এলো না । ভাবলাম হয়তো আমার পরিক্ষার জন্য আমাকে ডিস্টার্ব করতে চাচ্ছে না । কিন্তু না দেখলাম পরিক্ষার পরেও সে আর ফোন করছে না ।
অপেক্ষা করতে করতে পরে নিজেই করলাম । বললাম আমি আসতেছি আমার এক আংকেলের বাসায় সামনের সপ্তাহে । সেখানে এসেই তার সাথে দেখা করতে চাই । আমার আসার কথা শুনে সে অনেক খুসি ভাব দেখাল কিন্তু যখনই বললাম যে দেখা করবো তখনই সে যেন কোথায় হারিয়ে গেল । তাকে ততটা আগ্রহী দেখালো না ।

আমি কেয়ার করি না সে আগ্রহী কি না । যেহেতু সে আমাকে চেনে , এখন আমার তাকে চেনা উচিত । কে সে তা আমাকে দেখতেই হবে ।

আমি আসলাম আমার বাবার বন্ধুর বাসায় । তাকে বললাম দেখা করতে । আমাদের দেখা হবে দিঘি কফিশপে । ছোট বেলায় যখন এইখানে থাকতাম তখন এই জায়গাটা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা । আমার মনে হয় পৃথিবীতে এতো সুন্দর জায়গা আর কোথাও নেই । পাশে নদী । আর নদীর তীরে উঁচু রেলিং দেওয়া কফিশপ । এইখান থেকে বসে কফি খে্তে খেতে একসময় মনে হয় জাহাজে বসে আছি । আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে সুন্দর জায়গায়ই তার সাথে আমার দেখা হবে ।

৫ টায় হবে আমাদের দেখা । আমি তার জন্য আমার প্রিয় ব্র্যান্ডের একটা ওয়াচ কিনলাম । সে বলেছে নীল রঙের শার্ট পরে আসবে । সেখানে গিয়েই দূর থেকে দেখতে পেলাম নীল রঙের শার্ট পরা একটা ছেলে বসে আসে একটা টেবিলে । পাশে গেলাম । না তাকে আমি আগে কখনও দেখি নি । দেখে থাকলে এমন মায়া কাড়া চোখ কখনও ভুলতে পারতাম না আমি ।

প্রেমে তো পড়েই ছিলাম তার আর অই চোখ দেখে কে আটকায় এখন । অনেক কথা হল । কি যে ভালো লাগলো তাকে ! হটাত মনে হল পৃথিবীটা অনেক সুন্দর । কি সুন্দর করেই না সে কথা বলছে । মনে হচ্ছে টাইটানিকের মধ্যে আমরা ভেসে যাচ্ছি । শুধু সে আর আমি । আর কেউ না । সে কথার ফাকে ফাকে আমার অনেকগুলু ছবি তুলল ।

আমাকে কি করে চেনে জিজ্ঞেস করতে বলে্ল আমার বান্ধবীর কাছে আমার কথা শুনেছে , ছবি দেখেছে তার পর একদিন আমার ফোন নাম্বার চুরি করে ।কি সুন্দর ভঙ্গিতেই না বলল । ভালই করেছ আমার ফোন নাম্বার চুরি করেছ মনে মনে বললাম ।

সে আমাকে গান শুনাল ......

স্মৃতি গুলু ক্ষনে ক্ষনে পিছু ডেকে যায়
এখনও মনে মনে ভাবি যে তোমার ......
এখনও কি নিঝুম রাতে নীল জোছনায়
তারা গোণা প্রহর গুলো নিরবে কাঁদায় .........

অসাধারন লাগলো । এতো সুন্দর সুর আমি আমার জীবনে আগে কখনও শুনি নি । কি করে সম্ভব এতো সুন্দর করে গান গাওয়া ?
মনে হল সময় থেমে আছে তার গানে । গুধুলির এই আলোতে তার এই গান যেন ছেয়ে গেল সারা পৃথিবী ।


কিভাবে যে ২ ঘণ্টা চলে গেল বুঝতেই পারলাম না । যাবার সময় চলে এসেছে । যখন সে উঠে দাঁড়াল আমি দেখলাম সে ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটছে । আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । হটাত যেন আমার বুকটা ফাকা ফাকা হয়ে গেল । আমার মাথা ঘুরছে ।
সব হিসেব মিলে গেল কেন সে আমার সাথে দেখা করতে চায় নি । কিন্তু আমার তো এতে কিছু আসে যায় না । সে দেখলাম মাথা নিচু করে ক্যামেরা দিয়ে গুধুলিতে ফোকাস করছে ।

আমি ওর কাছে গেলাম । তার কাধে হাত রাখতেই সে বলে উঠল " আমি জানি তুমি কি ভাবছ । তুমি যা ভাবছ তা কখনও হবার নয় । "
""আমি কিছুই ভাবছি না অভি, শুধু একটি কথা, তুমি কি পারবে না আমাকে সারা জীবন গান শুনাতে ? আমার দুজন পাহাড়ের উপর ঘর বাঁধবো । একটা খরগোশ পালবো , সাদা রঙের । "

"তুমি যেরকম ভাবছ জীবন সেরকম না ছুঁই । ভুল আমারই । আমি তোমাকে ফোন করে এই ভুল করেছি । আমাকে ক্ষমা করে দিও । বিশ্বাস করো তোমাকে ভালো লাগতো তাই ফোন করতাম কিন্তু কখনও ভাবি নি এতটা পথ এগিয়ে আসবো । আমাদের আর দেখা হবে না ছুঁই । ভালো থাকো তুমি "

চলে যায় অভি সেই পাখিদের নীরে ফেরা গুধুলির বেলায় । আমি অনেক ডেকেও তাকে ফেরাতে পারি নি । তার সাথে আমার আর দেখা হয় নি । কয়েক সপ্তাহ পরে আমার মেইল আসে । দেখি অভির তুলা আমার ছবি । এইটাই এখন আমার কাছে অভির একমাত্র স্মৃতি ।


আমার ফোন আর বেজে ওঠে না তার ডাকে । কেউ আমাকে আর জন্মদিনে ঠিক ১২ টায় উইস করে না । আমাকে চালাকি দেখিয়ে রাগ তুলে না কেউ । আদর করে কেউ ডাকে না "ছুঁই " বলে । কারো কাছে আজ আর সময় নেই । শুধু আমার সময় থেমে আছে সেই কবে থেকে ।

স্মৃতি গুলু ক্ষনে ক্ষনে পিছু ডেকে যায়
এখনও মনে মনে ভাবি যে তোমার ......
এখনও কি নিঝুম রাতে নীল জোছনায়
তারা গোণা প্রহর গুলো নিরবে কাঁদায় ......




সবাইকে হ্যাপি নিউ ইয়ার :)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৫:৪৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×