শুভ্র এর বয়স যখন ৪বছর ৮ মাস তখন স্কুলে যায়। বাচ্চাকাল থেকেই হারামি টাইপের ছিলো। বাঁদরামি করাই যার কাজ। বন্ধু বলতে কেউ ছিলোনা। ৩য় তে উঠার পর নাহিদ নামের একজনের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়। গলায় গলায় ভাব। মাঝখানে যোগ দেয় ফয়সাল। তিনজনে একসাথে ফাইজলামি। স্যারদের মাইর। সব ভাগাভাগি করে নিতো। ৫ম তে থাকতে একবার ক্লাস ফাঁকি দিয়েছিলো তিনজন। কারন বিরতির পরের ক্লাস ম্যাডামের । সেই রাগী ম্যাডাম। পড়া পারেনা তাই পালিয়েছে। পুরোটা শহর তারা ঘুরছে ওইদিন। এইদিকে বাসার সবাই শেষ । সংবাদ পত্রে খবর ও দেওয়া হয়েছিলো। মাইকিং শুরু হয়েছিলো। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরার পর আম্মুদের কান্নাকাটি। সেই অবস্থা। বলা হয়নি তারা একপাড়ায় থাকতো। অবশ্য তাদের হাসি পাচ্ছিলো এইসব দেখে।
স্কুল ব্যাগ গুলো আনা হয়নি স্কুল থেকে। ম্যাডাম সেগুলি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলো। পরের দিন মাইর গুলা সেই হইছে। পেয়ারার ডাল দিয়ে ইচ্ছামত মাইর খাইছে তিনটায় । একটা আরেকটারে দোষ দিলো। তোর কারনে,এইটা বললো না তোর কারনে।
দুই ঘন্টা আলাদা ছিলো তারা। পরে আবার একসাথে।
এতোকিছুর মধ্যে সবার প্রিয় মুখ ছিলো এই তিনজন। হয়তো পড়ালেখায় ভালো তার জন্যই। তবে দুষ্টামির জন্য তাদের খ্যাতি ছিলো। উচ্চতা কম থাকায় মেয়েরা ভালোই নির্যাতন করতো দৌড়ানি দিতো দেখলেই। পানি মেলাইতো
৫ম তে তখন সেন্টার পরীক্ষা ছিলো। তিনজন খুব খারাপ করলো। ১ম বিভাগ আসলেও শিক্ষকরা খুশী না।
বৃত্তি পরীক্ষায় বোর্ডে শুভ্র ৮ম,ফয়ায়াল ১৯তম এবং নাহিত ৫ম হয়েছিলো। স্কুল থেকে সংবর্ধনা, ওই ফাউন্ডেশন থেকে সংবর্ধনা এর অভাব নেই। সাথে একবস্তা ভালোবাসা।
তখন মাত্র ৬ষ্ঠ তে ভর্তি হলো তিনজন। একদিন বৃষ্টির মধ্যে তিনজন ভিজে বাসায় ফিরতেছিলো। রাস্তার পাশ দিয়ে গল্পগুজব করে যাচ্ছিলো। হঠাৎ একটা ট্রাক এসে নাহিদকে কে চাপা দিয়ে চলে গেলো। শুভ্র আর ফয়সাল দাঁড়িয়ে রইলো। তাদের পাশ থেকেই একজনকে চাপা দিয়ে গেলো অথচ তাদের কিছুই হয়নি। মারা যায় নাহিদ। বন্ধুত্ব টা কি সেই বয়সেই টের পায় ফয়সাল আর শুভ্র। তারাও এলোমেলো হয়ে যায়। একসাথে হয়না চলা, বাসায় বন্ধি। এইভাবেই দিন কেটে যায়।
নাহিদ ভালো লিরিক লেখতে পারতো।
একটা লিরিক লেখে গেছে, যা আজ অনেকেই শোনে। গানটা ফয়সালের গাওয়া। প্রায় ১৩ ঘন্টা লেগেছে রেকর্ডিং করতে। বারবার কান্নায় গলা ভিজে আসতো তার। শুভ্র টা পাথর। কান্না করে কিন্তু জল পড়েনা চোখ দিয়ে।
হয়তো নাহিদ থাকলে তাদের একটা ব্যান্ড থাকতো "অভিলাষ"।
মজার ফ্যাক্ট টা হলো গানটা প্রায় সবার প্রিয় হয়ে গেছে। একটা গান গেয়ে ফয়সাল গিটার ভেঙ্গে দিয়েছে। শুভ্র ও আর গায় না। গলা দিয়ে আসেনা।
জীবন চলছে নিজ গতিতে। কিন্তু নাহিদ এখনো বেঁচে আছে ফয়সাল আর শুভ্র এর মনে।
তাদের জীবনের সবথেকে ভালো সময়টা চলে গেছে আর আসবেনা।
নাহিদ টা হয়তো উপর থেকেই মুচকি হাসে আর বলে আয় তাড়াতাড়ি। আবার জমিয়ে আড্ডা দিবো।
মুচকি হাসলে নাহিদকে ভালোই লাগতো।