বিচারক কোমল গলায় বললেন, দেখেন ভাই, আমি রসিক মানুষ। আমি রসিকতা পছন্দ করি। শুধু পছন্দ করি বললে ভুল হবে, এটা আমার জীবন বলতে পারেন। মানুষের জীবন থেকে যদি হাস্যরস কেড়ে নেয়া হয় তবে কি আর বাকি থাকে বলেন। আমি শুনেছি, বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে আপনার মতো রসিক মানুষ আর একটাও নাকি নেই। নিজ কানে আপনার রসিকতা শোনার সুযোগ হয়নি। তাই সেই সুযোগটা নিতে চাচ্ছি, সেইসাথে আপনাকেও একটা সুযোগ দিতে চাচ্ছি। সহজ ব্যাপার। আপনি আমাকে একটা কৌতুক বলবেন। সেটা শুনে যদি আমি হেসে ফেলি, তাহলে আপনার ফাঁসির সাজা মওকুফ।
সাকা অলস ভঙ্গিতে শুয়ে ছিল। বিচারকের কথা শুনে ধড়মড় করে উঠে বসলো। নিশ্চিত হবার জন্য জিজ্ঞেস করলো, মশকরা করছেন না তো বিচারক সাহেব?
- না না, আমি মশকরা করছি না। তবে আপনি একটা মশকরা করবেন সেটাই চাচ্ছি। সেই মশকরার উপর আপনার জীবন মরণও নির্ভর করছে।
পাশ থেকে তার আইনজীবী ফিসফিস করে বলে, সাকা ভাই, ঐযে লালমিয়া সোনা মিয়া জোকটা বলেন।
সাকা উৎসাহের সাথে বলে যায়, ওই যে পঞ্চম সংশোধনী নিয়ে জোকসটা ছিল আরকি। পঞ্চম সংশোধনীর কথা আর কি বলব? সোনা মিয়ারে বানাইসে লাল মিয়া আর লাল মিয়ারে বানাইসে সোনা মিয়া। মিয়া কিন্তু ঠিকই আছে। সোনাডা খালি লাল হইয়া গেছে।
রসিকতা শুনে বিচারকের হাসিহাসি মুখটা শক্ত হয়ে যায়। পাশ থেকে তার সাকার আইনজীবী বলে,
সাকা ভাই। এইটা ঠিক জমে নাই। বিচারক স্যার তো ক্ষেপে যাচ্ছে মনে হয়। আপনি বরং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন নিয়ে ওই জোকটা বলেন।
সাকা ঢোঁক গিলে বলে যায়, না মানে জোকটা ছিল, বঙ্গবন্ধু এত বেশি স্বপ্ন দেখতেন যে মনে হয় উনার স্বপ্নদোষ আছিল।
এবারের রসিকতা শুনে বিচারকের শক্ত মুখ আরও শক্ত হয়ে যায়। ভুরু কুঁচকে যায়।
পাশ থেকে উকিল বলে যায়, ভাই জলদি অন্য কিছু বলেন। এইটা তো আরও ফ্লপ খাইল মনে হয়।
সাকা চটজলদি বলে যায়, না মানে ঐযে স্পীকারকে রসিকতা করে বলছিলাম। মাননীয় স্পীকার দেশে আজব এক্কান মেশিন আইছে। সেই মেশিনের নাম আওয়ামী লীগ যার একদিকে যুদ্ধাপরাধী ইনপুট দিলে আরেকদিকে মুক্তিযোদ্ধা বাহির হইয়া আসে।
বিচারকের মুখ এবার পাথর হয়ে যায়। উকিল ফিসফিস করে বলে যায়, সাকা ভাই আপনের ফর্ম তো আজকে খুবই খারাপ মনে হয়। আপনি কি মাননীয় স্পীকার, আমি তো চোদনা হয়ে গেলাম জোকটা একটু বলে দেখবেন কাজ হয় কিনা। না থাক বরং। ওইটা আরও ফ্লপ খাবে। বরং ঐযে ধর্ষণ উপভোগ করা নিয়ে ওই জোকটা বলে দেখেন। না না ওইটাও জমবে না মনে হয়। তারচেয়ে বরং আপনি বিরোধীদলীয় নেত্রীকে নিয়ে যেই কুকুরের জোকটা করেছিলেন সেটা বলে দেখেন।
সাকা বিড়বিড় করে বলে যায়, বিরোধীদলের নেত্রীর অবস্থা নিয়ে বলছিলাম আরকি। আগে কুকুর লেজ নাড়াত, এখন লেজ কুকুরকে নাড়ায়।
বিচারক হাই তুলতে তুলতে ঘড়ি দেখেন। ঘড়ি দেখিয়ে বলে, আপনাকে আর পাঁচ মিনিট সময় দিলাম।
সাকা প্রচণ্ড ঘামতে থাকে। পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ। হাসির কোন কিছুই মনে পড়ে না। পাশ থেকে তার উকিল ধরিয়ে দেয়। সাকা হড়বড় করে বলতে থাকে,
- আমরা নেতা হইছি বইলা এমন না যে নিজের পায়জামার ফিতা খুইল্লা জনগণের মশারী বাইন্ধা দিমু।
- আমার নাম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরি থেকে যদি সাকা চৌধুরি হতে পারে তাহলে আমিও বলতে পারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বাল।
- সুশীল আবার কি? সু মানে সুন্দর আর শীল মানে নাপিত, তাহলে সুশীল মানে সুন্দর নাপিত।
- আমার নাম যদি সাকা চৌধুরী হয়, তাহলে আজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম শেমু রহমান।
- তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে কিসের সংলাপ? এটা তো গর্ভবতী মহিলার মত, সময় হলেই প্রসব করবে।
বিচারক বিরক্তমুখে ঘড়ি দেখেন,
- আপনার হাতে আর ত্রিশ সেকেন্ড সময় আছে।
সাকা আর কিছু না বলে হাউমাউ করে বিচারকের পা জড়িয়ে ধরে,
-স্যার আপনার পায়ে পড়ি। এইবারের মতো মাফ করে দেন। আমি যা করার করছি। কিন্তু আমি আর জীবনেও এরম করুম না।
বিচারকের মুখে এবার হাসি ফোটে। আস্তে আস্তে হাসি প্রশস্ত হয়। সাকা চিৎকার করে বলতে থাকে,
- স্যার তো হেসে ফেলছেন। এইবার তাহলে আমাকে মাফ করে দেন।
বিচারক হাসিহাসি মুখে বলেন,
- আচ্ছা যান, মাফ করে দিলাম।
- সত্যি?
- আরে না, মশকরা করলাম আরকি আপনার সাথে। আপনি দেশ, মুক্তিযোদ্ধা, সংসদ, প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু সবকিছু নিয়ে রসিকতা করতে পারেন আর আমি আপনাকে নিয়ে একটু রসিকতা করতে পারবোনা? হা হা হা হা।
সাকা এবার হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।
- স্যার প্লিজ। দয়া করেন। একবার রহম করেন।
- আচ্ছা যান দয়া করলাম। আপনি কথা দিয়েছেন তো আর জীবনেও এমন করবেন না?
- না স্যার, জীবনেও না।
- কি করবেন না?
- আর জীবনে কখনও হত্যা করবোনা। লুটপাট করবোনা। ধর্ষণ করবো না। তারচেয়েও বড় কথা মুখ সামলে রাখবো। জীবনে কখনও দেশ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রসিকতা করবোনা। রসিকতা তো দূরের কথা, কথাই বলবো না। বাকি জীবন বোবা হয়ে থাকবো।
- ঠিক আছে। আমরাও তাহলে আপনাকে আর কখনও ফাঁসি দিবনা।
- সত্যি?
- একেবারে কসম। কিন্তু এইবারের ফাঁসি তো আর বন্ধ করা সম্ভব না ভাই। এটা আরকি দিয়ে দিতেই হবে। তবে এই শেষ। ভবিষ্যতে আপনাকে আর কখনও ফাঁসি দিবনা। কথা দিলাম। হা হা হা হা।
নিজের রসিকতায় নিজেই ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকেন বিচারক। হতভম্ব হয়ে সেলের দেয়ালে হেলান দিয়ে পড়ে থাকে সাকা।
দিন যায় রাত যায়। সময়ের হিসাব গুলিয়ে যায়। তারপর সেই বিশেষ দিনটি আসে। জেলের দরজা খুলে হাসিমুখে ডিআইজি প্রিজন ঢুকেন।
- সাকা ভাই, একটা জোক শুনবেন?
সাকা উত্তর দেয়না। ডিআইজি বলে যায়,
- আগে কুকুর লেজ নাড়াত, পরে লেজ কুকুর নাড়ানো শুরু করে। সবশেষে মুগুর এসে লেজ আর কুকুর দুইটারই নাড়াচাড়া বন্ধ করে দেয়। হা হা হা হা।
শেষবারের মতো তাকে পরীক্ষা করতে ডাক্তার আসে। হাসিহাসি মুখে বলে,
- সাকা ভাই, একটা জোক শুনবেন?
সাকা উত্তর দেয়না। ডাক্তার বলে যায়,
- ফাঁসি যখন নিশ্চিত তখন উপভোগ করাই শ্রেয়। হা হা হা হা।
জল্লাদ এর মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। কিন্তু সেই কালো কাপড়ের ভেতরে তার মুখ যে হাসিহাসি সেটা কিভাবে যেন বোঝা যায়। হাসিমুখে জল্লাদ বলে,
- সাকা ভাই, একটা জোক শুনবেন?
সাকা উত্তর দেয়না। জল্লাদ বলে যায়,
- সাকা ভাই আপনি স্বীকার করে বলছিলেন, আমি রাজাকার। এখন কে কোন বাল ফালাবে। আপনার বাল কিন্তু কেউ ফালাইতে পারে নাই আসলেই। তবে আপনার কল্লা ফেলে দিতেছে আরকি। কল্লা ছাড়া বাল দিয়া এখন করবেনটা কি শুনি। হা হা হা হা।
সাকা হাঁটু গেড়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বলে,
- ভাই একটু রহম করেন।
ডাক্তার দাঁড়িয়ে ছিলেন পাশে। তিনিও হাসির দমকা থামাতে থামাতে বলে,
- মাননীয় স্পীকার, আপনার অবস্থা দেখে আমি তো চোদনা হয়ে গেলাম। হা হা হা হা।
সাকা কাঁদোকাঁদো গলায় বলে,
- ভাই একটু দয়া। আল্লার দোহাই লাগে।
অন্য পাশ থেকে জেলা প্রশাসক হাসি মুখে বলেন,
- সাকা ভাই, একটা জোক শুনবেন? এক দেশে ছিল এক মালাউন ... হা হা হা হা।
হতভম্ব দৃষ্টিতে সাকা তাকিয়ে থাকে। জেলা প্রশাসক হাসতেই থাকে হাসতেই থাকে।
- সাকা ভাই, এইটাই পুরা জোক। এর আগে পিছে আর কিছু নাই। এক দেশে ছিল এক মালাউন , হা হা হা হা।
বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে জেলা প্রশাসক তার ফোন খুলে দেখান,
- মালাউন নিয়ে তো আপনার বড় চুলকানি ছিল ভাই। মালাউন লিখে সার্চ দিলে উইকিপিডিয়াতে আপনার নাম উদাহরণ হিসেবে আসে। এই যে দেখেন, মালাউন শব্দের ব্যাবহার বুঝাতে এইখানে লিখা আছে,
১৩ই এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজে আর এক বিশিষ্ট বাঙালি হিন্দু দানবীর নূতনচন্দ্র সিংহকে নিজে গুলি করে হত্যা করেন। উপস্থিত মুসলমানরা নূতনচন্দ্র সিংহের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলে তাদের ভর্ত্সনা করে তিনি বলেন, সামান্য একটা মালাউনের মৃত্যুতে এত শোক প্রকাশ করার কি আছে।
কাণ্ডটা দেখেন, যেই মালাউন নিয়ে আপনার এত চুলকানি সেই মালাউন শব্দের সাথেই কিনা আপনার নাম সারা জীবনের জন্য জুড়ে গেল। হা হা হা হা।
আইজি হঠাৎ হাত তুলে সবার হাসি থামান। গম্ভীর গলায় বলেন,
- অনেক হাসাহাসি হয়েছে। বেচারার উচিৎ শিক্ষা হয়েছে। এইবার একে ছেড়ে দেন। এবারে মতো ফাঁসি মওকুফ করে দিলাম।
সাকা আনন্দে তোতলাতে থাকে। উঠে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে,
- স্যার, সত্যি? সত্যি আমাকে মাফ করে দিচ্ছেন?
আইজি হাসিতে ফেটে পড়েন,
- আরে ধুর মশাই। মশকরা করলাম আপনার সাথে। ফাঁসি কি এইভাবে মওকুফ হয় নাকি কখনও। আপনি এত রসিক মানুষ, আর এই সামান্য রসিকতা বুঝেন না। হা হা হা হা।
পাশ থেকে ডাক্তার বলেন,
- দুই পিস প্যারাসিটামল খেয়ে ঝুলে পড়েন ভাই। একটুও ব্যথা লাগবে না। কিছু বোঝার আগেই আপনি মাননীয় স্পীকার হয়ে যাবেন। হা হা হা হা।
টেনে হিঁচড়ে তাকে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয়। সাকা কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলেন, মাফ করেন, ক্ষমা করেন, রহম করেন। উত্তরে ডাক্তার হাসে, ডিআইজি হাসে, আইজি হাসে, জেলা প্রশাসক হাসে, জল্লাদ হাসে হা হা হা হা করে।
নূতন চন্দ্র হাসে, নেপাল চন্দ্র হাসে, সতীশ চন্দ্র হাসে
মোজাফফর হাসে, আলমগীর হাসে
নিজামউদ্দিন হাসে, সালেহউদ্দিন হাসে
জগৎমল্লপাড়া হাসে, ঊনসত্তরপাড়া হাসে, বণিকপাড়া হাসে
চার দেয়ালে তাদের হাসি বারবার ধাক্কা খেয়ে ত্রিশ লাখ প্রতিধ্বনি তৈরি হয়।
"রসিকলাল"
© চরম উদাস
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৯