somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ মুখোশের আড়ালে

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
আইজুদ্দিন! নামটা শুনলেই সেই বিখ্যাত লাইনটা মনে পড়ে। "কষ্টে আছে আইজুদ্দিন"।আমাদের গল্পের নায়কও আইজুদ্দিন। তবে আমাদের আইজুদ্দিন কষ্টে থাকেনা। সে থাকে মৌজ মাস্তিতে। পায়ে একটা কাঁটা ফুটলেও সে মজা করে কাঁটা বের করে। তারপর রক্ত মাখা কাঁটা দিয়ে নখ খোচায়।

এই হল আইজুদ্দিন। ছোটকালে ওর বাম চোখ ছিল ছোট, তের বছর বয়সে সেই ছোট চোখ গেলে দিয়ে গেল রহিমবক্স। সেইজন্য অবশ্য রহিমবক্সের উপর তার বিশেষ কোন রাগ নেই। কারণ রহিমবক্সের দুটি চোখ ই গেলে দেওয়া হয়েছে। কাজটা করে প্রচুর মজা পেয়েছিল আইজুদ্দিন। বিশেষ করে যখন রহিমবক্সের সেই ভয়ার্তমুখ আর তড়পানি মনে পড়ে, তখন নারীসঙ্গমের মতই মজা পায় সে।

আইজুদ্দিনের বয়স যখন পনের তখন প্রথমবারের মত খুন করে সে। ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃ্ত নয়। কাজেই তাকে দোষ দেওয়া ঠিক হবেনা। এর আগের তিনটা মেয়েই ছিল ভীতু। কাউকে কিছু বলে দেওয়ার মত সাহস তাদের হবেনা জানত আইজুদ্দিন। কিন্তু রেশমা ছিল আচ্ছা ত্যাদড়। সে যে রকম হাত পা ছোড়াছুড়ি করেছিল, মনে পড়লে এখনো মুখ লাল হয়ে ওঠে আইজুদ্দিনের। হাত পা ছোড়াছুড়ি করছিস ভাল কথা, কিন্তু ঘটনার পরও তেজ কমলনা রেশমার। হ্যান করবে ত্যান করবে, চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দিবে বলে তড়পাতে থাকে। বিরক্ত হয়ে গেল আইজুদ্দিন। পরেরদিন দুপুরে নদীর ওইপাড়ে ফুলে ঢোল হওয়া রেশমার লাশ ভেসে উঠেছিল।

গ্রামে বেশিদিন থাকতে পারিনি আইজুদ্দিন। এইসব করে থাকা সম্ভবও না।শইরে চলে আসল। এ্সেই বুঝল,কূপের ভেতরে ছিল এতদিন সে। শহর নামের সাগর টেনে নিল তাকে।

দুই.
আফজাল খুব ই মেধাবী ছেলে। লাজুক ও মেধাবী এই ছেলেটাকে পছন্দ করেনা এমন কেউ নেই। শুধু মেধাবীই না ভদ্রও। এলাকার চায়ের দোকানটাতে একবারের জন্যও কেউ বসতে দ্যাখেনি তাকে।

এলাকার এই খ্যাতি শহরজুড়েই ছড়িয়ে পড়ল ম্যাট্রিকের পর। সেকেন্ড বোর্ড স্ট্যান্ড করল সে। স্থানীয় পত্রিকায় পরদিন সাক্ষাৎকার ছাপা হল তার। সেটা ছিল শুরু।এরপর আর আফজালকে ধরতে পারেনি কেউ। কি আচারব্যবহার, কি পড়ালেখা। বলতে নেই, চেহারাটাও ছিল তার মাশাল্লাহ।

ছেলেদের নিয়ে কত শত দুঃশ্চিন্তা থাকে বাবা মার। কিন্তু আফজালকে নিয়ে এসবের কোন কিছুই করতে হয়নি ইয়াকুব সাহেবের। মাথায় বিশাল টাক আর শৌখিন ভুড়িটা নিয়ে পান চিবুতে চিবুতে অফিস যেতেন তিনি। মানুষজন দূর থেকে বলত ওই যে আফজালের বাপে যায়। ছেলে তার বিদেশে গেছে পিএইচডি করতে। অফিসের বড় সাহেবও অন্য চোখে দেখতেন তাকে।ছোট চাকরি করেও তাই বুক ফুলিয়ে চলতে পারতেন ইয়াকুব সাহেব। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটা তার এমন।

ছেলে তো নয়, যেন দেবশিশু।

এই ছেলের জন্যি রাহেলা বেগমকেও অন্যরকমভাবে দেখা শুরু করেছিলেন তিনি। যে মায়ের পেট থেকে এই ছেলে বেরিয়েছে, সেই মাও তো আর যেন তেন কেউ না। সুযোগপেলে হয়ত আজ সে হত ড. রাহেলা বেগম। মাঝে মাঝে এইসব চিন্তা পেয়ে বসে ইয়াকুব সাহেবকে।

আর ছেলের বিয়ের কথা মনে করতেই এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে ইয়াকুব সাহেবের। শুধু মণ্ত্রীই এসেছিল তিনজন। হবেনা? বেয়াইসাহেব যে তার মণ্ত্রীপরিষদ সচিব!

তিন.
শীততাপ নিয়ণ্ত্রিত ঘর। টেবিলের ওপাশে রিভলবিং চেয়ারে বসে আছে আফজাল। সামনে বসে আছে আইজুদ্দিন।হাতে টাকার একটা বান্ডিল। বিনা কারণে দেওয়া হয়নি তাকে। খুন করতে হবে একটা। পরকীয়া সংক্রান্ত জটিলতা।

এত ছোট্ট একটা করণে খুন করতে হবে কেন বিষয়টা সে ধরতে পারছেনা। সামনে বসা লোকটিও কি তার মত? খুন করে মজা পায়?নিজে করতে পারছেনা বলে তার ডাক পড়েছে? আফজালের চোখের দিকে তাকাল আইজুদ্দিন। কিছু একটা খুঁজছে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ চোখ। প্রবল সিক্সথ সেন্স।

নিজের প্র্তিবিম্ব খুঁজে পেতে দেরী হলনা তার।

চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকল দুই হায়েনা।
পার্থক্য একজন অন্ধকারে থাকে।
আরেকজন আলো্য়।

ঠিক আমাদের মতই! বাইরে থেকে দেবশিশু!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:২৭
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×