somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ইরেজার

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
পার্কের এই দিকটা বেশ নির্জন। মূলত সে জন্যেই এদিকটা বেছে নিয়েছে নুসরাত। ভীষণ একা হতে ইচ্ছে করছে ওর। জনাকীর্ণ এ শহরে একা হওয়া বেশ কঠিন। রাস্তায় হাটলেই দু’একজন পরিচিতের দেখা হয়ে যায়। এমন যদি হতো যে ওর কেউ নেই; মা, বাবা, ভাই, বোন, বন্ধুবান্ধব কেউ না তাহলেই এখন বেশি ভালো লাগত। তাহলেই অনায়াসে মরে যেতে পারতো, কারো কথা ভাবা লাগতো না। দু’হাতে মুখ ঢেকে চোখের পানি সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে ও। কিভাবে পারলো এটা তাসনিম! ওকে ছাড়াও আরো একজনের সাথে রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছিলো। ছি! আগেও শুনেছিলো কিন্তু বিশ্বাস করেনি। তাসনিমকে জিজ্ঞেস করলে সরাসরি অস্বীকার করতো। কিন্তু আজ হাতে নাতে প্রমাণ পেয়েছে। অন্য যে মেয়েটার সাথে রিলেশন ছিলো সে-ই খবর দিয়েছিলো নুসরাতকে। ধরা খেয়েও শিক্ষা হয়নি তাসনিমের এখনো ফোন করে যাচ্ছে। ঐ মেয়েটার নাকি দোষ, সে-ই ওকে জোর করে ঐ রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলো। কতোটা নির্লজ্জ। এমন ছেলের সাথে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলো ভাবতে এবার নিজের উপর রাগ হয় ওর। আবার আসে তাসনিমের কল। বাধ্য হয়ে ফোন অফ করে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে চুপচাপ।
‘এক্সকিউজ মি। আমি আপনার পাশে একটু বসতে পারি।’ হঠাৎ ডাকে চমক ভাঙ্গে নুসরাতের।
একটা ছেলে। কেমন আলাভোলা চেহারা। যেন কি হারিয়ে ফেলেছে। তাসনিমের কথা ভাবতে ভাবতে পুরো ছেলে জাতির উপরেই ভয়ানক বিতৃষ্ণ হয়ে ছিলো ও। সামনেই একটাকে পেয়ে তাই সব রাগ জমা হলো এর উপর। সব ছেলেই এক। মেয়ে দেখলেই ছোক ছোক! পার্কে কি জায়গার অভাব? এখানেই বসতে হবে কেনো? ধমক দিতে যাবে কিন্তু ছেলেটার চোখের দিকে তাকাতেই থমকে গেলো। ভয়ানক দুঃখী একজোড়া চোখ। বর্ষার টলটলে দীঘি যেন! ছুয়ে দিলেই বাধ ভেঙ্গে ছুটবে প্লাবন। কিছু না বলেই তাই মুখ ফিরিয়ে নিলো ও। ছেলেটা এবার অনুমতি ছাড়াই বসে পড়লো বেঞ্চিটায়।
‘আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব কষ্ট পাচ্ছেন। শেয়ার করার মত কেউ নেই। সে জন্যেই সম্ভবত একা একা বসে আছেন।’
নুসরাত কিছুই বলে না। ভ্রু কুচকায় শুধু। দুঃখী বলেই ছেলেটাকে পাত্তা দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
‘আমাকে বলতে পারেন, আমি নিতান্তই অপরিচিত একজন। আপনার গোপন কষ্ট আমি কাউকে জানাবো না।’ আবার বলে ছেলেটা।
এবার আর বিরক্তি চাপতে পারে না নুসরাত।
‘প্লীজ নিজের চরকায় তেল দিন। আমার কষ্টের ভাগ আপনাকে নিতে হবে না।’
‘শেয়ার করলে কষ্ট কমে। বলেই দেখুন আমাকে। আমি আপনার কষ্ট কমিয়ে দিতে পারবো।’
এবার আর সামলাতে পারে না নুসরাত। উঠে হাটা দেয়। একটু একা থাকাও সম্ভব না এই দুনিয়ায়!
‘প্লীজ রাগ করে যাবেন না। একবার বলেই দ্যাখেন। আমি আপনার কষ্ট কমিয়ে দেবো।’
ছেলেটার দিকে ঘুরে চিৎকার করে নুসরাত, ‘কিভাবে কমাবেন শুনি? আপনি কি মহাপুরুষ? তাবিজ দেবেন? নাকি পানি পড়া? যত্তসব! মেয়ে দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে, না?’
‘মহাপুরুষ না, আমি ইরেজার।’
‘খুব ভালো মি. ইরেজার। আমি একটু একা থাকতে চাচ্ছিলাম। আপনার জন্যে তাও হলো না। তারপরও আপনার সহানূভুতির জন্যে ধন্যবাদ। আমার কষ্ট আপনাকে কমাতে হবে না।’
‘ইরেজার আমার নাম না। আমি ইরেজার। আমি ইরেজ করতে পারি।’
‘ইরেজ তো আমিও করতে পারি। ছোটবেলায় পেন্সিল দিয়ে লিখতে গিয়ে ভুল হলেই রাবার দিয়ে মুছে ফেলতাম। তার মানে আমিও ইরেজার।’
‘আপনি খাতার লেখা মুছতে পারেন। আমি জীবনের লেখা মুছতে পারি। এই যেমন আপনি যে কারণে কষ্ট পাচ্ছেন, সেটাকে আমি মুছে দিতে পারবো।’
এবার বেশ মজা পায় নুসরাত। বেশ চাপাবাজতো ছেলেটা। এমন কনফিডেণ্টলি বলছে যে, সে আসলেই পারে। আবার গিয়ে বেঞ্চে বসে ও।
‘দিন, তাহলে আমার কষ্ট মুছে দিন। দেখি আপনার কেমন ক্ষমতা।’
নুসরাতকে অবাক করে দিয়ে পকেট থেকে নোটবুক আর পেন্সিল বের করে দেয় ছেলেটা। আরে, এ দেখি সত্যিই পকেটে এসব নিয়ে ঘুরছে!
‘দিন তারিখ সহ এখানে লিখুন আপনি কোন ঘটনাটা মুছতে চান। আমি মুছে দিচ্ছি। তবে মনে রাখবেন আমি একটা ঘটনাই মুছতে পারবো, তাই একটু ভেবে চিন্তে ঠিক করবেন।’
‘এতো ভাবতে হবে না। আপনি আমার লাইফ থেকে তাসনিমকে মুছে দিন।’
‘আমি কোনো মানুষকে মুছতে পারবো না। তবে সে যদি আপনার রক্তের সম্পর্কের কেউ না হয় তাহলে তার সাথে পরিচয়ের ঘটনাটা মুছে দিতে পারি। তাহলেই হয়তো সে আর আপনার জীবনে আসবে না।’
‘হুম। ওর সাথে পরিচয় ফেসবুক চ্যাটিংয়ে। প্রথম দিনের চ্যাটিংটা না হলে হয়তো আমাদের রিলেশনটা হতো না।’
‘ঠিক আছে, তারিখ সহ ঘটনাটা লিখুন। আমি মুছে দিচ্ছি।’
ফেসবুক ঘেঁটে দিন-তারিখ বের করে নুসরাত। তারপর কাগজে লেখে, ‘তাসনিমের সাথে চ্যাট।’
‘আপনি শিওর এই ঘটনাটা না ঘটলেই আপনার সব কষ্টের সমাধান হবে?’
‘হুম’
ছেলেটা হাত দিয়ে ঘষে ঘটনাটা মুছে দিলো। একেবারে ইরেজারের মত। তারপরেই ‘আমার কাজ শেষ। আসি।’ বলেই হাটা দিলো। নুসরাত কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না।
ছেলেটা ধাপ্পাবাজ বা যা-ই হোক নুসরাতের এখন আগের চেয়ে ভালো লাগছে। আর সত্যিই যদি তাসনিম ভ্যানিশ হয়ে যায় তাহলেতো আরো ভালো হয়।
বাসার দিকে রওনা দেয় ও।
বাসায় পৌছে ফোন অন করতেই দ্যাখে তাসনিম অনেকগুলো মেসেজ পাঠিয়েছে। কিছুক্ষণ পর ফোনও এলো। ইরেজার মিয়াতো আস্ত ধড়িবাজ। সব মুছে দিলে তাসনিম এখনো ফোন দেয় কিভাবে?
ধুর! ফোনটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে যায় ও। আজ কিছুই ভালো লাগছে না।

২।
পরদিন সকালে...
রাতে বেশ ভালো ঘুম হয়েছে নুসরাতের। কি সব স্বপ্ন দেখেছে! কয়টা বাজতে দেখার জন্যে ফোন হাতে নিতেই দ্যাখে বন্ধ। রাতে ফোন বন্ধ করেছে কখন মনে করতে পারে না।
ঝটপট রেডি হয়ে নেয় ও। আজ ভার্সিটিতে ফাংশন আছে। তাসনিম ভাই গান গাইবেন। এক ইয়ার সিনিয়র ওর। অসম্ভব সুন্দর গান করেন। ভার্সিটির হার্টথ্রব। অন্য আরো অনেকের মতো নুসরাতেরও উনাকে খুব ভালো লাগে। প্রায়ই ইচ্ছে হয় উনার সাথে কথা বলতে। ফেসবুক ফ্রেণ্ড লিস্টে আছেন। চাইলেই নক দেওয়া যায় কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে কখনোই সেটা পারে না ও। এমনকি বহু বার মেসেজ লিখেও কেটে দিয়েছে।
ফাংশন শেষ হলে নুসরাতের বান্ধবি মিতু গেলো তাসনিম ভাইকে শুভেচ্ছা জানাতে। ফাটিয়ে দিয়েছেন উনি আজকে। সাথে নুসরাতকেও নিয়ে গেলো। কথা বার্তা শেষে ফোন নাম্বার দিলেন তাসনিম ভাই। যে কোনো প্রয়োজনে ফোন দিতে বললেন। নুসরাত অবশ্য একটা কথাও বলতে পারলো না।
রাতের বেলা ভয়ে ভয়ে ও ফোন দিলো ও তাসনিমকে। কি না কি মনে করেন উনি। অকে অবাক করে দিয়ে বেশ সহজভাবেই কথা বলতে লাগলেন। নুসরাতকে নাকি আর সবার চেয়ে আলাদা লেগেছে উনার। কথাটা বিশ্বাস হতে চায়না ওর। হড়বড় করে কত কথাই না বলে ফেললো ও।
তারপর থেকে নিয়মিতই কথা হতে থাকে ওদের। আস্তে আস্তে প্রণয়। বছর খানেক বাদে নুসরাত আবিস্কার করলো যে শুধু ও একা নয় এরকম আরো কয়েকজনের সাথে সম্পর্ক তাসনিমের। জিজ্ঞেস করলে সরাসরি অস্বীকার করে কিন্তু একদিন হাতেনাতে ধরে ফেলে।
জগত সংসারের সবকিছু মিথ্যা লাগে নুসরাতের। ভীষণ একা হতে ইচ্ছে করে ওর। পার্কের নির্জন কোণে বসে কান্না লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকে।
‘এক্সকিউজ মি। আমি আপনার পাশে একটু বসতে পারি।’ হঠাৎ একটা ছেলের ডাকে চমক ভাঙ্গে ওর......
...
...

ইরেজারের নোটবুকে ও এবার লেখে, ‘মিতুর সাথে ভার্সিটির অ্যানুয়াল ফাংশনে যাওয়া।’
‘আপনি শিওর এতেই আপনার সব কষ্টের সমাধান হবে?’
‘হুম’
...

৩।
পরদিন সকালে...
ঘুম থেকে উঠে মিতু দ্যাখে ওর ফোন বন্ধ। কখন করেছে মনে করতে পারে না।
অন করতেই দেখে বান্ধবি মিতুর অনেকগুলো মেসেজ। কি নাকি জরুরি কথা আছে। মিতুকে ফোন দেয় ও। মিতুর বয়ফ্রেণ্ড তাসনিমের সাথে মিতুর ভীষণ ঝগড়া হয়েছে। মিতু ঠিক করেছে আর রিলেশন রাখবে না। তাসনিম ওদের ভার্সিটির সিনিয়র ভাই। গত এক বছর ধরে মিতু আর তাসনিমের সম্পর্ক। ভার্সিটির এক ফাংশনে পরিচয়, তারপর থেকেই। নুসরাতেরও এনাকে ভালো লাগতো। মিতুকে তাই কিছুটা হিংসাও হয় ওর। ঐ ফাংশনে নুসরাতেরও যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু অজানা কোনো কারণে যাওয়া হয়নি।
যাই হোক, মিতু আবার কি নিয়ে বাধিয়েছে কে জানে? হাত মুখ ধুয়ে মিতুর বাসার দিকে রওনা হয় ও। আজ ওখানেই থাকবে।
মিতু ভালোই খেপেছে তাসনিমের উপর। ও নাকি কার কাছ থেকে খবর পেয়েছে তাসনিমের আরো একটা রিলেশন আছে। ওর সাফ কথা, তাসনিমের সাথে আর না। নুসরাত অনেক বোঝায়। তাসনিম এমন করতে পারে ওর এমনটা বিশ্বাস হয় না। মিতু ওর কথায় অনড়।
রাতে তাসনিম ভাই ফোন দেয় নুসরাতকে। কার কাছ থেকে নাম্বার জোগাড় করেছে। নুসরাতই মিতুর সবচে ভালো ফ্রেণ্ড, তাই ওকে বলে মিতুকে একটু বুঝাতে। তাসনিমের নাকি কোনো দোষ নেই। মিতু যা শুনেছে সব মিথ্যা। বলতে বলতে তাসনিম কেদে দেয়। নুসরাতের বুকটা ফাকা লাগে। ইশ! লোকটা মিতুকে কত্ত ভালোবাসে! আর মিতু কিনা এমন করছে। ও কি মানুষ না ডাইনী। মিতুকে বোঝাবে এই আশ্বাস দেয় নুসরাত তাসনিমকে। পরদিন চেষ্টাও করে। কিন্তু মিতু কিছুতেই বোঝে না। এদিকে তাসনিম ফোন করে কাদতে থাকে নিয়মিত।
মানুষটার কষ্ট আর সহ্য হয় না নুসরাতের। সে সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে স্বান্তনা দেওয়ার। মিতুর বিরহে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেয় তাসনিম। নুসরাতই ধরে ধরে সব করাতে লাগলো। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয় তাসনিম। এখন আর মিতুকে লাগে না। কিন্তু ততোদিনে নুসরাত তাসনিমের কেয়ার না নিয়ে আর থাকতে পারে না। শেষে লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই দিলো, সারাজীবন তাসনিমের কেয়ার নিতে চায়।
তাসনিম ভয় পায়। যদি নুসরাতও মিতুর মত করে? নুসরাত আশ্বাস দেয় সেরকম কিছুই হবে না। কসম কাটে বারবার। অবশেষে তাসনিমও রাজি হয় নুসরাতের হাতে নিজেকে সপে দিতে। মিতু কিন্তু এসবের কিছুই জানে না।
বছরখানেক ভালোই গেলো।
একদিন শহরের এক ডার্ক রেস্টুরেণ্টে তাসনিমকে ঢুকতে দ্যাখে নুসরাত। পিছু নিয়ে রেস্টুরেণ্টে ঢুকে যা দেখলো তাতে নিজে চোখকে বিশ্বাস হয়না ওর। আরেকটা মেয়ের সাথে তাসনিম। কয়েকদিন আগে ওকেও এখানে নিয়ে এসেছিলো!
তাসনিমও অবাক! দৌড়ে নুসরাতকে আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু তাঁর আগেই নুসরাত ঝড়ের বেগে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
ভীষণ একা লাগে নুসরাতের। এতো বড় ভুল ও কি করে করলো?
মিতুই ঠিক ছিলো।
সব ছেড়ে একা হতে চলে যায় পার্কের নির্জন কোণে। কিছুক্ষণের জন্যে জগৎ সংসার ভুলে যেতে চায় ও।
‘এক্সকিউজ মি। আমি আপনার পাশে বসতে পারি কিছুক্ষণের জন্যে?’ একটা ছেলের ডাকে সম্বিত ফেরে ওর।
...
...

‘তাসনিমের ফোন রিসিভ।’ নোটবুকে এবার লেখে ও।
‘আপনি শিওর এতেই আপনার সব কষ্টের সমাধান হবে?’
‘হুম’
‘আচ্ছা। চলি। আপনার সাথে আবার দেখা হোক এটা আমি চাইনা।’
‘আমিও চাইনা। দিস ইস আওয়ার ফার্স্ট এন্ড লাস্ট মিটিং।’
ছেলেটা কেমন একটা বাকা হাসি হেসে বিদায় নিলো।

৪।
পরদিন সকাল...
আজব এক স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গেছে নুসরাতের। স্বপ্নে তাসনিম ভাইও ছিলো। মনে পড়তেই বেশ ফুরফুরে লাগে ওর। ভার্সিটি লাইফের পুরোটাই উনাকে পছন্দ করে কাটিয়েছে। কিন্তু কখনোই বলার সাহস করে উঠতে পারেনি। আজ ভার্সিটির শেষ দিন। তাসনিম ভাই পাশ করে বেরিয়ে গেছেন কিন্তু আজও তাকে ভুলতে পারেনি ও।
র‍্যাগ ডেতে অনেক সিনিয়র ভাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। তাসনিম ভাইও এসেছেন। এখনো আগের মতই সুন্দর আছেন।
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে তাসনিম ভাইকেও তাই গান গাইতে হলো। একটা ডুয়েট গানে উনি একজন ফিমেল সিঙ্গার আহ্বান করলেন। নুসরাত কিছু না ভেবেই দুম করে এগিয়ে গেলো। চমৎকার গাইলো দুজন।
পরিচয়টা বন্ধুত্বে গড়াতে সময় নিলো না।
তারপর...
...
...

তাসনিমকে ছাড়া নুসরাতের বাচা সম্ভব না। তাসনিমের সাথে রিলেশন না হলেও ওকে না পাওয়ার যন্ত্রণা নুসরাতকে সারা জীবন পোড়াবে। এর একমাত্র সমাধান তাসনিমের সাথে পরিচয়ই না হওয়া। সে জন্যে অকে এই ভার্সিটিতেই পড়া যাবে না।
‘মডার্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া।’ নুসরাত লেখে।
...

৫।
পরদিন সকাল...
আলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে নুসরাতের। চাকরির প্রথম দিন আজ। সে কারণেই আলার্ম দেওয়া। আলার্ম বন্ধ করতে গিয়ে দ্যাখে ফোন অফ। কিভাবে বন্ধ হলো কে জানে? তারপরেও আলার্ম বেজেছে। ভাগ্যিশ! ভার্সিটি লাইফ শেষ হওয়ার পর শেষ কবে সকালে উঠেছে মনে নেই।
সময় মতই পৌছল অফিসে। যেরকম ভেবেছিলো, সেরকম কিছুই না। সবাই বেশ ফ্রেণ্ডলি। বিশেষ করে ওর ইমিডিয়েট সিনিয়র তাসনিম সাহেবকে বেশ লেগেছে ওর।
...

...
ইরেজারে এগিয়ে দেওয়া নোটবুকে নুসরাত লেখে, ‘এবিসি লিমিটেডে চাকরি নেওয়া।’
...

৬।
পরদিন সকাল...
ঘুম ভাংতেই কেমন ঘাড়টা ব্যাথা করে ওঠে নুসরাতের। কাল বেশ টায়ার্ড ছিলো, কখন ঘুমিয়েছিলো টেরও পায়নি। ফোনটা দ্যাখে বন্ধ। গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়েছিলো। তাই বোধহয় বন্ধ হয়ে গেছে। নুসরাতের প্রিয় শিল্পী তাসনিম। ওর গান না শুনলে রাতে ঘুমই আসে না। গানের পাশাপাশি তাসনিম এবিসি লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ অফিসার। আজ নুসরাতদের অফিসে বায়ার হিসেবে আসার কথা আছে। নুসরাত তাই প্রায় জোর করে রিসেপশন কমিটিতে ঢুকে গেছে। অফিসের সবাই নুসরাতের তাসনিম প্রীতির কথা জানে, তাই কেউ কিছু বলেনি।
তাসনিমের ব্যবহারেতো নুসরাত পুরোই অবাক। স্টার মানুষ, তবুও কোনো অহঙ্কার নেই। নুসরাতের সাথে কি অমায়িক বুবহার করলেন। যাওয়ার সময় একটা কার্ড ও দিয়ে গেছেন নুসরাতকে।
...
....

‘তাসনিমের ভিজিটের দিন অফিস যাওয়া।’ লেখে নুসরাত। ওর হাতের কাপুনি দেখে বেশ অবাক হয় ইরেজার।
...
...

৭।
পরদিন সকাল...
স্বামীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে নুসরাতের। ওর জন্যে নাকি কি একটা সারপ্রাইজ আছে। ওর স্বামী মিজান বেশ ছেলেমানুষ। নুসরাতকে খুশি করতে প্রায়ই এটা ওটা করে। আজ কি করেছে কে জানে।
ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে এসে তো অবাক। নুসরাতের প্রিয় শিল্পী তাসনিম বসে। মিজান অবশ্য বলেছিলো যে তাসনিম ওর ফ্রেণ্ড কিন্তু নুসরাত পাত্তা দেয়নি। আজ নিজের চোখকেও বিশ্বাস হচ্ছে না। নুসরাতের অবাক হওয়া দেখে বাচ্চাদের মত খুশি হয়ে ওঠে মিজান।
সেদিন দুপুর পর্যন্ত ওদের বাসায় থাকে তাসনিম। আবার আসবে কথা দেয় এবং কথা রাখে, বেশ ঘনঘনই তাকে মিজানের অনুপস্থিতিতে ওদের বাসায় আসতে দেখা যায়।
...
...

‘মিজানের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়া।’ লিখতে গিয়ে দুফোটা অশ্রুও গড়িয়ে পড়ে নুসরাতের।
...

৮।
পরদিন সকাল...
বিল্ডিঙের নীচে হৈচৈএর শব্দে ঘুম ভাঙ্গে নুসরাতের। সদ্য মা হয়েছে ও। বাচ্চা সারা রাত কেদে মাত্র ঘুমিয়েছে। বিরক্ত হয়েই দেখতে যায় কি সমস্যা। গিয়ে দ্যাখে পাশের ফ্লাটের নতুন ভাড়াটিয়ার মালামাল উঠানো হচ্ছে। আরে এ যে বিখ্যাত গায়ক তাসনিম। এই বিল্ডিংটা নতুন। নুসরাতের হাজব্যাণ্ড রাকিব লোন নিয়ে কিনেছে ফ্লাট। রাকিবের ইচ্ছা ছিলো না। নুসরাত জোর করে কিনিয়েছে। আর এখন তাসনিমের মত সেলিব্রেটিকে প্রতিবেশী হিসেবে পেয়ে নুসরাত তো আহ্লাদে আটখানা।
আজতো মাত্র আসলো, কালই গিয়ে পরিচিত হয়ে আসবে।
...
...

‘উত্তরার ফ্লাট কেনা।’ ইরেজারের নোটবুকের এবারের এন্ট্রি।
...

পরিশিষ্ট

বিষন্ন চোখে পার্কের বেঞ্চে বসা মেয়েটার দিকে তাকায় ইরেজার। এই নিয়ে কত অসংখ্য বারই না মেয়েটার জীবন থেকে একটা ভুলকে মুছে দিলো ও। কিন্তু ঘুরে ফিরে একই ভুল সে বার বার করেই যাচ্ছে।
শুধু এই মেয়েটা না, এখন পর্যন্ত কারো কষ্টই ও মুছতে পারেনি। প্রথম যখন দায়িত্বটা পেয়েছিলো তখন ভেবেছিলো কতই না সহজ কাজটা। কিন্তু আজ পর্যন্ত সাফল্যের খাতায় ওর প্রাপ্তি শূণ্য। মাঝে মাঝে ভাবে, ইশ নিজের জীবন থেকে যদি ঐ মানুষকে সুখী করার দায়িত্ত্ব নেওয়ার ঘটনাটা মুছতে পারতো...
মেয়েটাকে আরেকটা সুযোগ দিয়ে দেখা যাক, ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যায় ও।
কিন্তু ইরেজার জানে না, মেয়েটা আবারো একই ভুল করবে।
নাহলে যে বেচে থাকার মজা-ই থাকবে না!
ভুল-ই মানুষকে মহান করেছে, জীবনকে করেছে রোমাঞ্চকর আর দিয়েছে বেচেথাকার আদিম স্বাদ!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×