somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাইকেল

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রজেক্টের কাজের জন্য সার্ভে করতে গত দু সপ্তাহ ধরে আসতে হচ্ছে লোপা আর পর্ণী কে।
শহর থেকে কিছুটা দূরে।
একটা নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন এর কাজ। ভালো রিপোর্ট হলে আরও আডভেঞ্চারাস কিছু প্রোজেক্ট হয়ত পাবে।
যতবারই এসেছে লোপা দেখেছে দুটো বাচ্চা মেয়ে তাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।এদের মাঝে একজনের বয়স বড়জোর সাত হবে,চেহারা দেখলে মনে হয় ওদের কিছু বলতে চায়।
সখের বশে দু চারটা ছবি তুলেছে লোপা।কাছ থেকে ছবি তুলতে গেল আর এক বয়স্ক মহিলার হেড়ে গলায় ডাক “এই ওইখানে কি করস? খাড়ায় খাড়ায় মজা দেখস? আয় এদিকে এক্ষুনি”
বাচ্চা দুটো উধাও হয়ে গেলো।
এলাকা থেকে এক্টূ বেরিয়ে সামনে গেলো তাদের গাড়িটা,দেখতে পেল ছোট ছেলের দল সাইকেল চালাচ্ছে। ভাড়ায় সাইকেল পাওয়া যায় এক ঘণ্টার জন্য।
“ইন্টারেস্টিং না ব্যাপারটা? সব্বাই সুযোগ পাচ্ছে, সাইকেল চালাবার”- পর্ণী বলল।
“ঘোড়ার ডিম!! যার টাকা নেই সে চড়তে পারবেনা” খানিকটা অভিমান নিয়েই বলল লোপা।
একটা ছোট ছেলে পাশ দিয়ে জাচ্ছিল,অকে ডেকে লোপা জিজ্ঞেস করল “মুনিরা তাহেরাকে তোমরা খেলায় নাও না?
ওরা আসেনা এদিকে?”
না,ওদের নানি খেলতে দেয় না!
কেন?
জানিনা! ওদের নানি অনেক রাগি মানুষ।
অকারনেই সাইকেলের বেল বাজাতে বাজাতে চলে গেলো ছেলেটা।
লোপা আর পর্ণী এক জনারেকজনের দিকে তাকাল, এ চাহনির অর্থ অনেক গভীর।
কেমন জেন এলমেল লাগছিল লোপার ,সাফকেটেড লাগছিলো।
“আপা আজ থাক আর পারছিনা, চলেন ফিরে যাই”
গাড়ীর দরজাটা আটকে দিলো লোপা।

রিপোর্টের কাজ ২৫% ও শেষ হয়নি অথচ জমা দেয়ার দিন ঘনিয়ে আসছে।হতাশ হয়ে পরছিল ও।
মুনিরে আর তাহেরার ছবি গুল বারবার দেখছিল ও।
ভাবছিল কি করে বাছহে দুটোকে অই নরক থেকে বের করে আনবে।

মুনিরা আর তাহেরা কে নিয়ে তাদের নানি সুফিয়ার অনেক আশা। ওদের পেলে পুষে কনভাবে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত নিতে পারলেই হল।নামি কোন সোসাইটিতে পাচার করতে পারলেই মটা অঙ্কের টাকা পাবে সে। প্রায় দশ বছর আগে এভাবেই এক কিশোরী কে পাচার করতে যেয়ে মেয়টি হাত ফসকে পালিয়ে যায়।

এরপর বেশকিছুদিন আত্মগোপন করে ছিল এখন আবার নতুন করে লেগেছে।তাই এতো কড়া শাসন !!

বাচ্চাগুলোর মায়ায় লোপা আবার ছুটে গেলো ।আজ তাদের সাথে কথা বলবেই।
ধির পায়ে হেটে হেহেটে যাছে লোপা,সাবু সাইকেল চালাছহে।মুনিরা খানিকটা হা করে তাকিয়ে আছে সাইকেলের দিকে।
‘এই মুনিরা এদিকে এসো!”
খুসি হয়ে গেলো ওকে দেখে সে,তাহেরা নেই আশে পাশে।
তোমার বাসায় কে কে থাকে?
নানি,আমি আর তাহেরা!
সাইকেল চালাতে ইচ্ছে হয় না তোমার??
হুম।কিন্টু সাইকেল চালাতে টাকা লাগে আর আমাদের নানই আমাদের হাতে টাকা দেয় না।
নানি বলসে মেয়ে মানুশের সাইকেল চালাতে হয়না। মেয়েরা ছোট বয়সে সাইকেল চালালে ওদের নাকি...কথা শেষ হওয়ার আগেই কোথাথেকে যেন নানির করকশ গলার হাঁক বেরিয়ে এল আর মুনিরা কেপে উঠলো খানিকটা।
লোপার বুঝার বাকি রইলনা মুনিরা কি বলতে চেয়েছিল, সে বলল দাঁড়াও, তোমাদের জন্য চকলেট এনেছি নিয়ে যাও আর নানি কে দেখিয় না আর কাল তোমাদের আমি আবার দেখতে আসব ঐ যে যেখানে সাবু খেলছে ওখানে থেকো কেমন??হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ল মুনিরা।মুনিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলল লোপা।


চশমার দোকানে যেয়ে অনেক বড় ফ্রেমের একটা চশমা কিনল লোপা ,ওর পুর মুখটাই ঢেকে যায়, চুল টাকে এত্ত সুন্দর কালার করেছে একদম ই মনে হবেনা বাঙালি যদি কেও দূর থেকে দেখে।
দারুন লাগছে ওকে।
কিন্তু ও কেন করছে এসব??
সাইকেলের দোকান ঘুরে দরদাম করে নিল লোপা।কাগজে কি সব লিখল সারারাত ।তার ভিতর এক অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করছে।
৩ দিন পরের কথা। সে জায়গায় খানিকটা পথ সাইকেল চালিয়ে এল লোপা।
নিজেকে একটু আড়াল করে নিয়ে মুনিরা আর তাহেরা কে ইশারা করল।
ছুটে এল দুইজন।
“আপনাকে তো বিদেশী বিদেশী লাগতেসে আপা”,তাহেরার নিস্পাপ মন্তব্যে মুচকি হাস্ল লোপা।
চল ঘুরতে যাই।
সাইকেলের সামনে দুইজঙ্কে নিয়ে চালান বেশ কষ্ট হচ্চিল লোপার।
কিছুটা পথ এভাবে জেতে যেতে জিজ্ঞেস করল তমাদের নানি কথায় আজ?
সগির মামার সাথে কি কাজে গেসে”
কি কাজ?
জানিনা!
তোমাদের মা বাবা কোথায়?
“মারা গেসে” দুইজনের সম্মিলিত উত্তর।
তোমরা দুই বোন?
“না আমারা বান্ধবী”
“তোমাদের যদি আমি শহরে নিয়ে যাই? সাইকেল কিনে দেই ,স্কুলে ভরতি করি,সুন্দর বাসায় নিয়ে রাখি যেখানে অনেক বন্ধু পাবে,গান শিখবে ,নাছ শিখবে। তাহ্লে কেমন হয় বলত??
খুব ভালো হয় বলল তাহেরা কিন্তু
“আমাদের নানি আপনাকে কাইটা নদীতে ভাষায় দিবে”- মুনিরার মন্তব্য।
ওরে বাবা খুব ভয় পেলাম!!
এভাবে নানা কথার ছলে কেটে গেল খানিকটা সময়,বিপদ সীমানা আগেই পার করে এসেছে তারা। আর ভয় নেই।। খুশির জোয়ারে ভাস্মান দুতি নিস্পাপ শিশুর খেয়ালে ই নেই কখন তারা নিজের ঘর এলাকা ছেড়ে এতদূর এসেছে।
মাঝে মুনিরা কে নিয়ে একবার আর একবার তাহেরা কে নিয়ে এক চক্কর মেরে এল সাইকেলে লোপা।
আজ যেন ওদের জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন।

লোপা ভালো করি জানতো আজ নানি এলাকায় থাকেবেনা।
অফিসের গাড়ী বেশ দূরে অপেক্ষা করছে ওদের জন্য।
হথাত লোপা বলল অনেক হয়েছে এবার বলত তোমাদের মাঝে কে বেশি জোরে দৌড়াতে পারে?
আমি বলল মুনিরা
না না আমি বলল তাহেরা।
ওকে লেত’স স্টার্ট !
দুটো বাচ্চা মেয়ের পিছনে ধির গতিতে দৌড়ুচ্ছে লোপা ওদের দেহরক্ষী হয়ে। বলছে “আরও জোড়ে দৌড়ুতে হবে।থামা যাবেনা।!
মুনিরা তাহেরা সরবসক্তি দিয়ে যেন দৌড়ুচ্ছে।
লোপা ভাবতে চায়না সে কাজটা কতটা ঠিক করেছে,কতটা দুঃসাহসিক কাজ সে করেছে কিংবা এর ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
শুধু জানে দুটো নিষ্পাপ শিশু কে সে বাঁচিয়েছে ।

আজ থেকে দশ বছর আগে ঠিক এই জায়গায় পাচার হবার সময় সগির মামার হাত ফসকে প্রান নিয়ে ছুটে পালিয়েছিল যে শুমি আজ সে সাহসি লোপা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×