somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষমা করো মেহেদী ভাই, তোমার জন্য কিছুই করতে পারছি না

২২ শে মে, ২০১১ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৫-২০০৮। দৈনিক আমার দেশ অফিস। সকাল ১১টায় অফিসে ঢুকেই লেখা শুরু। পরের দিনের পাতা রেডি করতে হবে। নিউজ কোথায়? তড়িগড়ি করে লেখা নিয়েই প্রূফ সেকশনে জমা দেয়া। কাছের মানুষ বলতে ছিল কামাল ভাই আর মেহেদী ভাই। ‌'মেহেদী ভাই, প্লিজ একটু দেখে দেন না।' মুখের কোনে চোরা হাসি নিয়ে বলতেন তিনি-'আর কতো বিনোদিত হবো বলেন?' কষ্ট করে তাতক্ষনিকভাবে নিউজটা প্রুপ কারেকশন করে দিতেন মেহেদী ভাই। মেহেদী ভাইয়ের হাত থেকে নিউজটা নিয়ে এক ছুটে মেকাপ সেকশনে। আবারও পাতা রেডি। যথারীতি মেহেদী ভাইয়ের কাছে আবদার। 'আবার একটু দেখে দিতেন যদি'। আবারও সেই চোরা হাসি। দেখতেন তিনি। খুব মনোযোগ সহকারে। বানান কোথাও ভুল হলো কি না? কাজের অবসরে চায়েরর দোকানে একটু অবসাদ দুর করতে ছুটে যাওয়া। সঙ্গে মেহেদী ভাইসহ আরও কলিগরা। চাযের বিল খুব কমই দিতে পেরেছি মেহেদী ভাইয়ের জন্য। তিনিই সবার আগে বিল মিটিয়ে দিতেন। ২০০৮ এর শেষের দিকে আমার দেশ ছেড়ে দিলাম। মাঝে সাঝে অফিসে যেতাম বটে তবে সবার সাথে দেখা হতো না। ভুলো গেলাম মেহেদী ভাইয়ের কথা।

২২ মে, ২০১১। দৈনিক যুগান্তর অফিস। আবারও পেইজ রেডি করে ক্লান্ত হয়ে এক কাপ চা খেতে ছুটে যাওয়া অফিসের বাইরে। গেইটের অদুরে যেতেই হঠাত জীর্ন শীর্ণ এক লোক পা জড়িয়ে ধরলো। 'বস, আমারে মাফ করে দেন। আমি আর কাউকে বিরক্ত করবো না।' ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে গেলাম। 'এই করছেন কি? করছেন কি? কে আপনি?' অবাক হলাম বেশ। তাকিয়ে চিনতে পারলাম না। 'বস আমারে চিনতে পারলেন না। আমি মেহেদী, আমার দেশ পত্রিকায় প্রুফ সেকশনে চাকুরী করতাম। আপনি আমারে কত চা খাইয়েছেন।' এবার ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। নোংরা কাপড়, এলোমেলো চুল। চেনাই যাচেছনা একদম। এই আমাদের মেহেদী ভাই! দু কাধ ধরে উঠে দাঁড় করালাম তাকে। কি হয়েছে মেহেদী ভাই? চোখের কোনে ততক্ষনে অশ্রুর সম্মিলন। বললেন, 'আগে আমারে মাফ করে দেন। আমি আর কারো কাছে যাবো না।' কিন্তু কি হয়েছে? আমাকে বলুন। আপনার এ দশা কেন?-সুধালাম তাকে। কিন্তু মেহেদী কিছুই বললেন না। শুধু বললেন, 'অনেক রক্ত গিয়েছে। আমি শেষ হয়ে গেছি। আমাকে শুধু মাফ করে দেন।'

পকেট হাতড়ে কিছু টাকা বের করলাম। লুকিয়ে দিতে চাইলাম তাকে। হাতের মুঠোয় গুজে দিতেই লজ্জায় জিব কাটলেন মেহেদী ভাই। 'বস আমি কারো কাছে ভিক্ষে চাচিছ না। আমি শুধু মাফ চাইতে রাস্তায় ঘুরে বেড়াই।'

আমি চিতকার করে কাঁদতে চাইলাম। বলছে কি মেহেদী ভাই! কি এমন অসুখ বাঁধিয়েছেন তিনি যে কারও কাছে লজ্জায় বলতে পারছেন না। চাকরী হারিয়েছেন অনেক আগেই। চিকিতসার জন্য নিজের জমানো সব সম্বল খুইয়ে আজ রাস্তায় ঘুরছেন একবেলা আধবেলা খেয়ে না খেয়ে। অথচ কারো কাছ থেকে সাহায্য নিবেন না। 'আমার কোন সাহায্যের দরকার নেই, বস। আমিতো চিকিতসা বন্ধ করে দিয়েছি। টাকা দিয়ে আর কি করবো। আমি শুধু রাস্তায় ঘুরছি পরিচিতজনদের কাছে মাফ চাইতে। সময়তো আর বেশিদিন নাই। খুব শিগগিরই চলে যাব।'

কষ্টে আমি পালিয়ে আসতে চাইছিলাম। পারছিলাম না। তবুও আসতে হলো। পিছন ফিরে তাকানোর কোন শক্তিই আমার তখন ছিল না। চা আর খাইণি। অফিনস ঢুকে নিরবে কাঁদলাম কিছুক্ষন। কেন এমন হলো? মেহেদী ভাইয়ের কোন সাহায্য লাগবে না। অথচ ধুকে ধুকে তিনি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। পথে পথে ঘুরছেন পরিচিতদের কাছে মাফ চাইতে। আমাকে ক্ষমা করো মেহেদী ভাই। তোমার জন্য কিছুই করতে পারছিনা আমি।
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×