পয়লা অক্টোবর ২০২৫ইং, ছোট একটা পোস্ট সামহোয়্যার ইন ব্লগের সবার দৃস্টি আকর্ষণ করল, পোস্ট টা ছিল এরকম –
সাম্প্রতিক সময়ের সবচাইতে আলোচিত লেখকের একটি গল্পের জন্য নাম আবশ্যক। উপযুক্ত নাম দাতাকে এক লক্ষ টাকা পুরুস্কার দেয়া হবে।
আমি জানি এরকম পোস্টে অনেকেই আগ্রহী হবে। এত সহজে এক লক্ষ টাকা পুরুস্কার কেউই হারাতে চাইবে না।
পরবর্তী এক সপ্তাহে কয়েক হাজার নাম পড়ল। এর মধ্যে একটা নাম খুব পছন্দ হোল আমার – “নীলাম্বরী”, কেমন মায়াবী নাম। মন উদাস করে দেয়।
পুরুস্কার দেবার ধারে কাছেও গেলাম না। শুধু ব্লগের একাউন্টটা ডি-অ্যাক্টিভেট করে নতুন আরেকটা একাউন্ট খুললাম।
মাস খানেক পর আরেকটা পোস্ট ছাড়লাম –
গল্প প্রতিযোগিতা !!!
শর্তঃ
১। গল্পের নাম “নীলাম্বরী” হতে হবে,
২। নামের সাথে গল্প মানানসই হতে হবে,
৩। গল্প .............................. – এই ইমেইল অ্যাড্রেসে লেখকের যোগাযোগের ঠিকানা সহ মেইল করতে হবে।
৪। প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের গল্প আগামী বইমেলায় প্রকাশ করা হবে,
৫। গল্প পাঠাবার শেষ তারিখ আগামী ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৫ ইং।
প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান অধিকারীকে নগদ দশ লক্ষ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা এবং পরবর্তী তিন জন প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে পুরুস্কার দেয়া হবে।
এরকম সুযোগ কোন লেখক হাতছাড়া করতে চাইবে বলেন? ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমার ওপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে গেল! মানুষ পারেও বাবা! গল্প লিখেই লাখ লাখ টাকা? এরা এত পরিশ্রম না করে আমার সাথে যে কেন যোগাযোগ করে না? যাক্ বাবা, অতসব চিন্তা করার দরকার নেই আমার। সামনে অনেক কাজ আমার।
একটা গল্প খুব পছন্দ হল আমার। দূর্দান্ত প্রেমের গল্প। এক কথায় হিট। আমার একাউন্ট আবার ডি-অ্যাক্টিভেট করে গল্পটার পান্ডুলিপি নিয়ে ছুটলাম আমার প্রকাশক বন্ধুর কাছে।
“নাহ্ দোস্ত, তোর মাথায় বুদ্ধি আছে। এই গল্প হিট হবেই” – পান্ডুলিপি পড়েই আমার প্রকাশক বন্ধু আমাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিল।
- দশ হাজার কপি ছাপা, ৫০০ কপি বইমেলায় ছাড়বি আর বাকি ৯৫০০ কপি ছাড়বি ব্ল্যাক মার্কেটে – বলে দেই আমি।
“তুই কি বলতেছিস? বুঝে শুনে বলতেছিস তো? মিস্ হলে কিন্তু আমি শেষ!” – আমার অতি অভিজ্ঞ প্রকাশক বন্ধুও ঘাবড়ে যায়।
- যা বলতেছি তা-ই কর, সব রিস্ক আমার – বলে আমি আর অপেক্ষা করি না, বের হয়ে আসি। জাতীয় দৈনিক পত্রিকা অফিসের রিপোর্টার দোস্তের সাথে দেখা করতে হবে।
পয়লা ফেব্রুয়ারী ২০২৬ ইং। বই মেলা শুরু। আমি আমার পছন্দের গেরুয়া রঙয়ের পাঞ্জাবি পরে ছুটলাম বইমেলার দিকে।
সারা দিনে একটাও “নীলাম্বরী” বিক্রী হোল না। আমার প্রকাশক বন্ধু শুধু আমার দিকে আড়চোখে চায়, আমি আলস্যে হাই তুলি।
৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২৬ ইং। এ পর্যন্ত মোট একটা “নীলাম্বরী” বিক্রী হয়েছে। আমার প্রকাশক দোস্তের অবস্থা এখন অনেকটা তেলাপিয়া মাছের মত। কিছুক্ষণ পর পর বড় করে শ্বাস নিচ্ছে। আমার ভয় হচ্ছে স্ট্রোক না করে বসে ব্যাটা।
১০ই ফেব্রুয়ারী ২০২৬ ইং। আরো একটা “নীলাম্বরী” বিক্রী হোল আজ, এ পর্যন্ত মোট দু’টা। আমার প্রকাশক দোস্তকে বোধ হয় ডাক্তারের কাছে নিতেই হবে। ছোট ছোট বাচ্চা বেচারার, ওর কিছু হলে এই বয়সে বাচ্চা গুলির কি হবে? নাহ্ আমার কাজ শুরু করে দিতে হবে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফোন দেই সেই নামদাতা আর লেখককে। আচ্ছা, ওদের কথা মনে আছে তো আপনাদের?
২০শে ফেব্রুয়ারী ২০২৬ ইং। জাতীয় দৈনিক পত্রিকার হেড লাইনে একটা খবর সবার দৃস্টি আকর্ষণ করল –
জোচ্চুরি করে গল্প প্রকাশ !! লেখকের বিরুদ্ধে মামলা !! বই মেলা থেকে “নীলাম্বরী” প্রত্যাহার করার জন্য আদালতের নির্দেশ !!
সেই দিন আর বইমেলায় গেলাম না। মান ইজ্জতের ব্যাপার! সারা দিন আমার প্রকাশক বন্ধুর ফোনও আসল না, আমিও ফোন করলাম না। যাক্ এতদিন পর হয়ত বেচারা শান্তি পাচ্ছে!
সন্ধ্যায় ওর ফোন আসল – “দোস্ত তুই করছস কি? মানুষে পাগলের মত নীলাম্বরী খুজতেছে। ৫০০ কপি শেষ । কি করমু অহন? ঐ ৯৫০০ কপি আনামু?”
- নাহ্, ওগুলি অহন ব্ল্যাক মার্কেটে ছাড়। দাম ২৫% বাড়ায়া দে।
আমি এবার নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যাই। আমি এখন সবচাইতে আলোচিত লেখক !!!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৬ রাত ৩:৩০