somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

WWF রেসলিং , স্মৃতিকথা আর শরীর গঠনের নিয়মকানুন। কিস্তি-৩

০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্বে মাসলের স্ফীত করন মানে আসলে কি, সিস্টেম কে সিগ্ন্যাল দেয়া বলতে কি বুঝায়, ওয়ার্ক আউটের দুটো গুরুত্বপূর্ন কন্সেপ্ট - সেট ও রেপ এই ব্যপারগুলো পরিস্কার করার চেষ্টা করেছি। এই পর্বে ওয়ার্ক আউট নিয়ে কথা বলবো। পাঠক কে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে আমরা কথা বলছি শরীরের কোন একটা পেশী নিয়ে গোটা শরীর নিয়ে নয়। এখানে ধরে নেয়া হচ্ছে কোন এক মাসল বা মাসল সমষ্ঠিকে বিল্ড আপ করার কায়দাটা রপ্ত করে নিতে পারা মানে শরীরের বাকী পেশী গুলোকে একই পদ্ধতিতে বিল্ড আপ করে নিতে পারার বিদ্যাটা অর্জন করা। যেমন যে গুন করার প্রক্রিয়াটা রপ্ত করে নিল, সে জগতের সকল সংখ্যাকে গুন করার দক্ষতা অর্জন করলো।

গত পর্বে দেখেছি,কোন এক মাসল কে বিল্ড করা মানে শরীরকে সিগ্ন্যাল দেয়া।এই বলে সিগন্যাল দেয়া যে ইদানিং এই মাশলের উপর যে স্ট্রেস স্ট্রেইন আসছে তা সহ্য করা বর্তমান ফাইবার গুলোর জন্য যথেষ্ট নয়। ফাইবার বা সুতো গুলো মোটা কর। উদাহরণ হিসাবে চেস্ট মাসল এর কথা বিবেচনা করি। উদাহরন হিসাবে এটা নিবার কারণ হলো এই ছাতি নিয়ে যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাই বেশ সচেতন। কলেজে আমার এক বন্ধু ছাত্রীদের সামনে দিয়ে যাবার সময় বুক ভরে দম নিয়ে আটকে রাখতো যাতে সিনা চওড়া দেখায়। মাসল বিল্ড আপ করে ফেললে আপনার এতো কসরতের আর দরকার নাই। মেডিকেল সায়েন্সে এর নাম পেক্টোরেলিস মেজর। এই মাসল বিল্ড করার সর্বোত্তম ওয়ার্ক আউটের নাম বেঞ্চ প্রেস। নীচে ছবি দেয়া হলো।



কিভাবে শুরু করবো?প্রথমে নিজের ওজন বা ওয়েট নেবার ক্ষমতাকে খুব ভাল করে বুঝতে হবে। কোন তাড়াহুড়া চলবেনা। মনের মধ্য থেকে আশে পাশের সকলকে দেখিয়ে দেয়া বা শো অফ করার যে কোন ধরনের কমপ্লেক্স ঝেড়ে মুছে পরিস্কার করে ফেলুন। ছবিতে লোকটি যেটা উত্তোলনের চেষ্টা করছে তার নাম বারবেল। শক্ত রডের দুপাশে লোহার চাক্তি জোড়া দিয়ে ওয়েট কমানো বা বাড়ানো হয়। প্রথমে রডের দুইপাশে ৮ কেজি করে ১৬ কেজি চাপান। ছবিতে দেয়া পদ্ধতিতে উত্তোলনের চেষ্টা করেন। বেশ কষ্টকর মনে হয়? থামুন। ওজন কমান। যেটাতে আপনি কমফর্ট ফিল করেন সেই পরিমান ওজন নেন। কিংবা হালকা মনে হলে ওজন কিছু বাড়িয়ে নেন। কিন্তু কমফর্টনেশের বাইরে যাওয়া যাবেনা, আবার খুব হালকা যেন না হয়,তুলতে গিয়ে পেশীতে একটা প্রেসার যেন অনুভূত হয়। এভাবে কমিয়ে বাড়িয়ে আপনার ইনিশিয়াল ওয়েট ঠিক করে নেন। প্রথম দিন ৪সেট ৪রেপ করেন। প্রতিটি সেটের মাঝে পর্যাপ্ত রেস্ট নেন, ৫ কিংবা ১০ কিংবা ১৫ মিনিট। একদিন পর পর চলুক এই ৪ সেট ৪ রেপ। সপ্তাহ তিনেক পরে দেখবেন আপনি এই ওজনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। দুইপাশে হাফকেজি করে টোটাল এক কেজি বাড়িয়ে নিন। চলুক একই ভাবে সপ্তাহ তিনেক। এভাবে সপ্তাহ তিন বা ৪ এর পর ধীরে ধীরে ওয়েট বাড়ানোর প্রক্রিয়া জারী রাখেন। সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে প্রতি পর্যায়ে নিজের সক্ষমতাকে বুঝা আর সে অনুযায়ী ওয়েট এড করা। খবরদার তাড়াহুড়া করবেননা। এতে সিস্টেমে রঙ সিগন্যাল পাবে। মাস ছয়েক পর দেখবেন আপনি এখন অনেক বেশী ওয়েট নিতে পারছেন। এখন ৫ সেট ৫ রেপ করে ফেলেন। একই ভাবে ওজন ধীরে ধীরে বাড়ান সপ্তাহ তিন চার পর পর। কোয়ার্টার, হাফ কেজি, এককেজি, সাধ্যানুসারে। মনে রাখবেন কে কত বেশী ওয়েট নিতে পারছে তা দিয়ে মাসলের স্ফিতী রেট নির্ধারিত হবেনা, বরং আপনি কত এফিসিয়েন্টলি আপনার সিস্টেমকে সিগন্যাল দিতে পারছেন তার উপর সাকশেস অনেকটাই নির্ভর করছে। তাছাড়া বিল্ড আপ রেট ম্যান টু ম্যান ভ্যারি করবে। প্রত্যকের বেসিক মেটাবলিক রেট ভিন্ন।বয়সও একটা বড় ফ্যাক্টর।

কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ - এমন পরিমান ওজন নিবেননা যেটা তুলতে গিয়ে দম বন্ধ করে লাংসের উপর অনেক চাপ প্রয়োগ করতে হয়। ধীরে ধীরে, পিসফুলি। জিমে গেলে প্রায়ই দেখবেন বীর পালোয়ানেরা ওজন নেবার সময় চোখ বড় বড় করে, বুক ভরে দম আটকে নিয়ে লাংসের উপর প্রবল চাপ তৈরি করে ওয়েট লিফট করছে। সাবধান। একটু অপেক্ষা করেন। ধীরে ধীরে ওয়েট বাড়ান আপনিও সেই লেভেলে যাবেন তবে খুব আরামের সঙ্গে।

কি হয় দম বন্ধ করে লাংসের (ফুসফুসের) উপর নিয়মিত প্রবল চাপ ফেললে? এতে লাংসের বায়ুপূর্ণ যে প্যাকেট গুলো থাকে দিনের পর দিন প্রবল চাপে তার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়। মানে তার চুপসে যাবার ও সম্প্রসারিত হবার ক্ষমতা লোপ পায়। এক পর্যায়ে তখন শুরু হয় শ্বাস কষ্ট। একবার এই হার্ডওয়ার নষ্ট হলে সারা জীবন ভুগতে হবে। বিশ্বজয়ী গামা থেকে শুরু করে অনেক পালোয়ানের শেষ জীবনটা তাই হয় অনেক কষ্টের। তাই ওয়েট নেবার ব্যাপারে খুব সাবধান। ধীরে ধীরে আরামের সঙ্গে বাড়ান আপনার সক্ষমতা। আর সঙ্গে পারলে একজন সাহায্যকারি নিতে পারেন। ওজন তোলার ব্যপারে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করুন।কোন সমস্যা হবেনা।

এখন দেখাযাক এই ওয়ার্কাউটে আপনার মাসল কিভাবে স্ফীত হচ্ছে। যখন আপনি ওয়েট লিফট করছেন তখন সংস্লিষ্ট মাসল গুলোর কিছু ফাইবার আপনার অজান্তেই ছিঁড়ে যাচ্ছে। যতক্ষন আপনি ওয়ার্ক আউট করছেন ততক্ষন কিন্তু আপনার মাসল গুলো এভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যদিও এটা আপনার আমার বুঝের মধ্যে আসছেনা। তো ওয়ার্ক আউটে পেশীর ফাইবার যদি এভাবে ছিঁড়তে থাকে তবে বিল্ড হয় কখন। বিল্ড হয় পরে, যখন আপনি আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন। সিস্টেম তখন হিসাব করতে বসে। সে হিসাব করে দেখে এভাবে ত আর চলেনা, এই পেশির উপর ইদানিং বেশ স্ট্রেস আসছে, ফাইবার ছিঁড়ে যাচ্ছে, ফাইবার গুলোর ক্রসসেকশান এখন বাড়ানো দরকার সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য । ব্যাস । এখন আপনার সেই পেশীর ফাইবার গুলো মোটা করে বুনা হবে, মানে আপনার পেশী স্ফীত হতে শুরু করলো, যদি আপনি উপরের প্রক্রিয়া ধরে রাখতে পারেন।

কিছু কাজ থেকে বিরত থাকলে উত্তম। সময় বাঁচবে। জিমে প্রায় দেখা যায় এক সেট দেবার পর আয়নাতে পালোয়ান নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতেই হয়রান। সে এক কঠিন নার্সিসাস কমপ্লেক্স। এক সেট দেয় আর আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। যদি জানতো যে জিমে ওয়ার্ক আউট মানে পেশীর ক্ষয়, তবে এক সেট দিয়ে দিয়ে কতটুকু উন্নতি হয়েছে মাপতে আসতোনা।

প্রতি মাসে কতটুকু পেশী বিল্ড করা যায়? এখানে পেশী মানে পেশী (মাংশ), ফ্যাট সেলে জমা ফ্যাট বুঝাচ্ছেনা। দেখা গেছে গোটা শরীরে খুব হার্ড ওয়ার্ক আউটে মাসে এভারেজ ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম পেশী তৈরী হতে পারে। এখানে পেশী মানে পেশী, নো ফ্যাট, নো বোনস। আর যদি দেখেন ওজন প্রতিমাসে এক দুই কেজি করে বাড়ছে তার মানে হচ্ছে খাওয়া বেশী হচ্ছে, ফ্যাট জমা শুরু হয়েছে। এখনি সাবধান হয়ে যান। আপনি ফ্যাটের জন্য এত কসরত করছেননা আপনার দরকার মাংশ পেশী,মানে সলিডপেশী। এর জন্য সময় দিতে হবে। এক মাস দুই মাস কোন ব্যাপারই না। মাস ছয়েক পরে কেবল বুঝতে শুরু করবেন কিছু একটা ঘটছে। এর আগে ঘন ঘন আয়না দেখা আর ছোটো হাতের শার্ট কিনা এক্কেবারে বেফায়দা। আজ আপাতত এই পর্যন্ত। পরের পর্বে আসছি বাকী গুরুত্বপূর্ন বিষয়াদি নিয়ে।

কিস্তি-৫
কিস্তি-৪ কিস্তি-২ কিস্তি-১
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:২৯
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×