somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিন্তার অসততা কাউকে সাহায্য করে না

১৩ ই মার্চ, ২০১০ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই পোষ্ট লিখার উৎস মনজুরুল হকের Click This Link এই পোষ্ট পড়ার পর প্রতিক্রিয়া হিসাবে লেখা; লেখা বড় হওয়াতে এখানে আলাদা পোষ্টে দিলাম।

মনজু,
আপনার এই পোষ্টে -
১১ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১১:৫৪ খারেজি বলেছেন:
আর আসলেই অবাক হৈছি, পি মুন্সীর মত লোক বদমাইশদের প্রচারণার সাথে সুর মিলায়া পাহাড়িরা আদিবাসী কিনা সেই ধোয়াসা তুইলা সেইখানে দরিদ্র বাঙালিদের বসতি গড়ারে জাস্টিফাই করে!

এর জবাবে ১২ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১২:২৯ আপনি বলেছেন:
এদের হিপোক্র্যাসি দেখে অবাক হওয়ারও সময় পাবেন না, তার আগেই দেখবেন আরো নতুন নতুন অবাক হওয়ার মত তত্ত্বের জন্ম হয়ে গেছে!
এদের মানবিকতা বা অধিকার সবই নিজের জন্য রক্ষিত। অপরের বেলায় কাচকলা!
========

পাহাড়ীরা আদিবাসী নয় - এই তর্ক করতে আমাকে কোথায় দেখলেন?
পাহাড়ীরা আদিবাসী কি না - এটা আমার তর্ক নয়, তর্কের পক্ষ বিপক্ষে আমি কেউ নই; কারণ এটা আমার বলার কথার সাথে অপ্রাসঙ্গিক। অথচ আমি যেন "পাহাড়ীরা আদিবাসী নয়" - এটা প্রমাণের পক্ষে কেউ একজন এটা ধরে নিয়ে স্পষ্ট করে সায় দিয়েছেন শুধু তাই নয় সেই সাথে একটা গালাগালি বিশেষণ লাগিয়ে হিপোক্র্যাসি বলেছেন।
এরপর, "পাহাড়ীরা আদিবাসী নয়" - এটা আমার কথা কী না এটা আর প্রমাণের দায় না নিয়ে, আমি হিপোক্র্যাট - এটাই মুল বিষয় করে ফেললেন; আমার গায়ে কালি লাগানোর সুযোগ করে নিলেন, শুরু করলেন কাদা ছোঁড়াছুড়ি। কেন?
আমার লেখা পড়ে, সৎভাবে বুঝে এরপর আপনার অভিযোগের কাঠগড়ায় আমাকে নিবেন - এটাই কাম্য। এরপর "হিপোক্র্যাসি" বলে গালাগালি করার কোন সুযোগ নাই, দরকারও নাই। কারণ, আমাকে ডিফেন্ড করতে আপনাকে দিতে হবে। আমি পারি কী না আপনার জানা নাই। যদি পারি তাহলে "হিপোক্র্যাসি" বলে যে গালাগালি করলেন এর কী হবে? আমি আপনাকে এর বদলে দশবার হিপোক্রাট বলবে নাকি আপনাকে আরও শক্ত গালাগালি দিব? আমি ডিফেন্ড না করেও কেবল পাল্টা গালাগালি শুরু করতে পারি। আমরা কে কত ভাল গালাগালি করতে পারি কত নীচে নামতে পারি এর প্রতিযোগিতা করব? আপনি সত্যিই কী চান, আমি বিস্মিত হয়ে ভাবছি!
আপনার কী মনে হয়না আমাদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে এগুলো আমাদের সাজে না। আপনার কাছে এতটুকু পরিপক্কতা কেউ আশা করুক আপনি কী তা চান না?

পাহাড়িরা আদিবাসী নয় - এটা প্রমাণ বা অপ্রমাণ আমার কাছে যে ইস্যু নয় এটা অনেকবার অনেক পোষ্টে বলেছি। এরকমই এক পোষ্টে স্পষ্ট সারকথাগুলো এরকম: (আমার শেষ পোষ্টে Click This Link ১৮ নম্বর মন্তব্যের জবাব থেকে)
"আমার অবস্হান হলো, আদিবাসী বলি কী না বলি এতে অবস্হানের উপরে এর কোন প্রভাব নাই। যে যেটা পছন্দ বলতে পারেন।
লক্ষ্য করবেন আমি আদিবাসী বলি কী না বলি এই বিতর্ক না তুলেই আমার কথা বলে গিয়েছি। আমার কথার মধ্যে এটা সবসময়ই অপ্রাসঙ্গিক থেকে আছে"।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, আদিবাসী তর্কে আমি আদৌও কোন পক্ষ না। এটা আপনি খুজে না দেখে, নিজের বুদ্ধি বিবেচনা শিকায় তুলে রেখে আপনিও সায় দিলেন একটা গালাগালি বিশেষণ শব্দে - হিপোক্রাট বলে; এটাই আপনার পছন্দের হাতিয়ার হলো। এটাকে আমি চিন্তার অসততা মনে করি।

মনজু,
আপনার সাথে আমার রাজনৈতিক চিন্তাগত বিরোধ আছে, এটা আমরা জানি। সে বিরোধগুলো নানা পোষ্টে কথা বলার সময় প্রকাশিত হয়েছে; আমি স্পষ্ট করে কিছু কিছু বিরোধের মুল জায়গা কী তা চিহ্নিত করে রাখতে চেষ্টা করেছি - যাতে ওসব নিয়ে পরে আরও কথা বলতে পারি। অনেকর সাথে আমাদের এরকম চিন্তার বিরোধ থাকাটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক। আবার এটা স্বাভাবিক বলে একে পাশে ফেলে না রেখে আরও এক কদম আগে বেড়ে পরস্পরকে win করতে যদি নাও পারি অন্তত উভয়ের অবস্হানটা কী, অন্যে কী বলতে চায় সেটা পরিস্কার জানা থাকাটা জরুরী মনে করি আমি। এখানে চিন্তার সততা খুবই দরকার। আমি আপনার চিন্তা পছন্দ করি না, তাই বলে কী আমি অসততা করে ভুলভাবে একে উপস্হাপন করে গালাগালি করব? গায়ে একটু কালি লাগিয়ে দিব -এটা চিন্তার অসততা।
বহু জায়গায় আপনাকে স্পষ্ট করে বলেছি - "আমার চিন্তার অবস্হান আপনাকে মানানোর জন্য নয়, বরং ঠিক ঠিক বুঝার, জানানোর জন্য কথা বলছি"। আমাদের বিরোধের মুল জায়গাটা কী তা জেনে রাখা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ মনে করি আমি; এরপর আমাদের বিরোধ নিরসিত করতে পারি, কী না পারি সে একেবারেই আলাদা কথা। সারা জীবনেও নাও হতে পারে। কিন্তু সৎভাবে বিরোধী বা শত্রু চিন্তাকে জানতে হবে (মানতে নয়) – এটাই এখানে মুল কথা।
কারও চিন্তা ভুল, খারাপ, ক্ষতিকর এমন বহু কিছুই আমরা মনে করতে পারি। কিন্তু ওর চিন্তাটা কী সেটাই ঠিকঠাক না বুঝে, জানার চেষ্টা না করে এমন প্রচারে নামা শুধু তাঁর প্রতি অবিচারই নয়, এটা মারাত্মক অসততা।

আপনি এই অসততার পথে যাবেন এটা আমি ভাবতেই পারিনি; তবে ভাল হয়েছে আপনি আমার ভুল ভাঙ্গিয়ে দিলেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২. (আমার Click This Link পোষ্টে ১৮ নম্বর মন্তব্যের জবাব থেকে)

"পাহাড়ের অবাংগালীরা কি এটা দাবি করতে পারবে যে তারা রাষ্ট্রিয়ভাবে বৈষম্যের স্বিকার হচ্ছে যার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হবে?" - অবশ্যই তাঁরা বৈষম্যের স্বীকার।
আপনি "পাহাড়ের অবাংগালীরা" বলতে নিশ্চয় পাহাড়ীদের বুঝিয়েছেন আমি ধরে নিচ্ছি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে তাঁদের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ত্ব হচ্ছে না, নাই - এটাই তো মুল সমস্যা। সময় থাকতে এই সমস্যার দিকে মনোযোগ দিয়ে সমাধান করতে হবে। নইলে আন্তঃজনগোষ্টির মধ্যে এটা শত্রুতার দিকে মোড় নিবে, বাইরের সুযোগ সন্ধানীরা এর সুযোগ নিয়ে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে ইত্যাদি।
যে কোন জনগোষ্ঠির রাষ্ট্রে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ত্ব থাকাটা সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ। এর উপরই নির্ভর করে তাঁরা ঐ রাষ্ট্রের আনুগত্যে থাকবে কী থাকবে না। এতে কোন সমস্যা থাকলে কালক্রমে তা ঐ রাষ্ট্র থেকে তাদের বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাবেই।"
=====
যে কোন জনগোষ্ঠির রাষ্ট্রে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ত্ব থাকাটা সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ। - উপরের একথাটাই আমার মৌলিক অবস্হান। এটা বুঝা ও করা সম্ভব হলে সমতলী ও পাহাড়ী শুধু নয়, সম্ভবত পৃথিবীর সব জনগোষ্ঠিকে সাথে নিয়ে এক রাষ্ট্র কায়েম করা, একসাথে থাকা সম্ভব। কাজটা অসম্ভব না হলেও অন্যান্য আরো কিছু ফ্যাক্টরের কারণে সহজ নয়।

অনেকবার বলেছি কিন্তু কখনই আপনার চোখে ফেরাতে পারি নাই, তবু শেষবার বলি; আমার নিজের কথা লিখতে বা বাক্যগঠনে - ওতে কখনই জাতি, জাতিগত বা জাতিসত্ত্বা অথবা জাতি-রাষ্ট্র এমন কোন ধারণা নাই। এককথায় "জাতি" এই শব্দ কোথাও কোন পোষ্টে কখনও ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করিনি, করি না, কারণ "জাতি" শব্দ ব্যবহার করে আমার অবস্হান, কথা প্রকাশ করা যায় না। এজন্য "জাতি" আমার কথা বলবার ভাষা নয়, বরং পরিত্যায্য।

কোন জনগোষ্ঠির আপন প্রতিনিধিত্ত্ব নিয়ে রাষ্ট্র হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে চাইলে "জাতি" (জাতিসত্ত্বা, জাতীয়তাবাদের রাজনীতি) হওয়া অপ্রয়োজনীয়; ওটা জাতিরাষ্ট্র হতেই হবে বা হয়ে যাবেই এমন কোন কথা নাই; তবে এসব ভাবনার বিষয়ে অসচেতন থাকলে এতে কারও "জাতিসত্ত্বা", "জাতি"র মুক্তি ঘটছে - বলে একে মনে করে বসব; ওরা নিজেদেরও তাই মনে করতে পারে।
তবে এখানে মুল গুরুত্ত্বপূর্ণ কথা - রাষ্ট্র মানেই ওর পিছনে একটা "জাতি" আছে এটা আগাম (presuppose) ধরে নেবার আমাদের স্বভাব আছে - এই ভাবনাটা ভুল। রাষ্ট্র মানেই জাতিরাষ্ট্র নয় (ইনএভিটেবল নয়)। জাতি ও রাষ্ট্র সমার্থক নয়। এনিয়ে বিস্তারে আরও কথা বলতে হবে জানি। হয়ত পরের পোষ্টেই বলব। আপাতত সার কথা হলো, জাতি ও রাষ্ট্র সমার্থক নয়।
ভাবনার এই ভুল এড়ানোর জন্য "জাতি" না বলে সাধারণভাবে আমি “জনগোষ্ঠি” শব্দ ব্যবহার করি। অর্থাৎ কোন জনগোষ্ঠি "জাতি" না হয়েও নতুন রাষ্ট্রে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করাতে পারে, ঘটানো সম্ভব। কাজেই বিশেষ "জাতি" শব্দ ব্যবহার না করে সাধারণ বা কমন শব্দ "জনগোষ্ঠি" ব্যবহার করি। কিন্তু আমি জানি আমার পুরানো সব পোষ্টে এনিয়ে বিস্তর লিখেও এটা আমি আপনার নজরে ফেলতে পারিনি।
তবু, আপনি আপনার বন্ধুদের নিয়ে দল বেঁধে, আমি "উগ্র জাতীয়তাবাদী" - এই প্রচারে মত্ত।
আমি যেখানে স্পষ্ট করে আমার পোষ্টে বলছি "জাতীয়তাবাদী" শব্দের আগে "উগ্র" বিশেষণ লাগানোর কারণে এটা খারাপ বা ফ্যাসিষ্ট, আর না লাগালে "জাতীয়তাবাদী" ভালো - এই কথা সত্যি নয়। "জাতীয়তাবাদী" ধারণা মাত্রই একটা ফ্যাসিষ্ট পোটেনশিয়াল অনুষঙ্গ এর ভিতরে, সম্ভাবনার একটা আড়ত হয়ে আছে, থাকে। কোন একটা তৈরী জাতির জাতীয়তাবাদের ভিতরে অন্য একটা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠির জন্য দরজা সবসময়ই বন্ধ তো বটেই এমনকি ঐ সম্ভাবনা জাতিগর্ব সবার বিরুদ্ধে অহঙ্কারী দানব হয়ে উঠতে পারে। দানব ফ্যাসিষ্ট হয়ে উঠবে কি না এটা নির্ভর করে একধরণের পপুলার গণসমর্থন সে নিজের পিছনে জোগাড় করে ফেলতে পেরেছে কি না। এত গেল জাতি, জাতিসত্বা বা জাতীয়তাবাদের দিক থেকে কথা।

এবার রাষ্ট্র। আগেই নাকচ করেছি - রাষ্ট্র মানেই জাতিরাষ্ট্র নয়, জাতিও নয়। এটা ফ্যাক্টস, যে আমি শক্তিশালী রাষ্ট্রের পক্ষে, তবে শক্তিশালী গর্বধারী জাতিরাষ্ট্রের পক্ষে নই; শক্তিশালী গর্বধারী না হলেও কোন জাতিরাষ্ট্রের পক্ষেও নই। শক্তিশালী রাষ্ট্র মানে? মানে, শক্তিশালী রাজনৈতিক জনগোষ্ঠির রাষ্ট্র; জনগোষ্ঠির সব অংশের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্র; এটাই মুল তর্কের বিষয়। জনগোষ্ঠির সব অংশের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক রাষ্ট্র না হলে তা দুদিনে ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। আবার “রাজনৈতিক” বলার পিছনে আরও কারণ আছে সেকথা আমার অন্য পোষ্টে বিস্তারে আছে এখানে আবার বলব না। শক্তিশালী রাজনৈতিক রাষ্ট্র – এত বিশেষণ লাগিয়ে খটমটে করে ফেলেছি জানি; তবে করেছি আজকের গ্লোবাল ক্যাপিট্যালিজম যেভাবে রাষ্ট্রের বদলে “গুড গভর্নেস” বা সুশাসনের আওয়াজ তুলে ধেয়ে আসছে এই ভয়ে; রাষ্ট্র মানে কখনই নেহায়েতই একটা “গুড গভর্নেস” বা “সুশাসন” ব্যবস্থা নয় – এই তফাত যেন আমাদের মনে থাকে, গুলিয়ে না ফেলি সেজন্য। কোন শক্তিশালী রাজনৈতিক রাষ্ট্রকে গ্লোবাল ক্যাপিট্যালিজম নিজের বিস্তারের পথের বাধা মনে করে, সে চায় একটা “গুড গভরনেস” বা “সুশাসন” সুশীলদের ব্যবস্থা, রাষ্ট্র নয়। আমি মনে করি একে মোকাবিলা করতে শক্তিশালী রাজনৈতিক রাষ্ট্র গড়ার পথে হাঁটা আমাদের রাজনৈতিক কর্তব্য।
যারা “জাতিসত্ত্বা’, ‘জাতীয়তাবাদ’ বা “জাতিরাষ্ট্র” ভাবনায় মশগুল তাদের ভাষাতে তাদের মনে এক আত্মজিজ্ঞাসা জাগিয়ে তুলতে চাই। শক্তিশালী রাজনৈতিক রাষ্ট্র গড়ার রাজনৈতিক কর্তব্য, তা সে পাহাড়িদের হবু রাষ্ট্রই হোক আর সমতলীদের বাংলাদেশ অথবা মিলিত জনগোষ্ঠির সব অংশের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্র যাই করতে চাই না কেন - ইম্পেরিলিজমের প্রসঙ্গ, প্রভাবের কথা বাদ রেখে বা ভুলে গিয়ে আলাদা করে কেবল জাতিসত্ত্বার মুক্তি, বা স্বাধীন রাষ্ট্রের ভাবনা ভাবা কি সম্ভব? ভাবলেই বা এর মানে কতদুর কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? এটা তাদের ভেবে দেখতে বলব।
ফলে যারা "পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার” (জনগোষ্ঠির নয়) মুক্তির পক্ষে দাঁড়িয়ে নিজেদের প্রগতিশীল বা মার্ক্সবাদী বাহবা নিচ্ছেন আর আমাকে তকমা দিচ্ছেন "উগ্র জাতীয়তাবাদী” বলে - তাঁরা সম্ভবত খেয়াল করেননি, আলাদা করে কেবল "পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার” মুক্তি - এটা নিজেই তো আর এক কিসিমের বিপদজনক জাতীয়তাবাদী ধারণা! যারা "জাতি" ধারণার সমস্যাই বুঝেন না - আলাদা করে কেবল "পাহাড়ি জাতিসত্ত্বা" বা পাহাড়ি জাতীয়তাবাদী ফেরি করছেন; অথচ এই না বুঝার জন্য তাদের কাঠগড়ায় আমি হলাম "উগ্র জাতীয়তাবাদী” - যে কী না "জাতি" ধারণাই ওন করে না; আর এক জাতিরাষ্ট্রের নতুন জাতীয়তাবাদ হওয়া ছাড়াই কোন নতুন রাষ্ট্র কায়েম, গঠন (constitute) সম্ভব মনে করে। এমনকী পাহাড়ী জনগোষ্ঠি যদি এমন কোন রাজনৈতিক সাহসী প্রস্তাবনা থাকে, সক্ষম হয় তবে আমি সেই পাহাড়ী প্রস্তাবের সাথে মিলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ভেঙ্গে নতুন সেই কল্পিত রাষ্ট্রের পক্ষে সবলে খাঁড়া হতে প্রস্তুত।

সার কথায়ঃ পাহাড়িদের হবু রাষ্ট্রই হোক আর সমতলীদের বাংলাদেশ অথবা মিলিত জনগোষ্ঠির সব অংশের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্র যাই হোক – আমি শক্তিশালী রাজনৈতিক রাষ্ট্র গড়াকে রাজনৈতিক কর্তব্য জ্ঞান করি। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পাহাড়ী সমতলী বর্তমান বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির রাজনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে, জনগোষ্ঠির সব অংশের প্রতিনিধিত্ত্বের শক্তিশালী রাজনৈতিক রাষ্ট্র গড়াই আমাদের রাজনৈতিক লাইন; এই বাক্যের ভাষা আমার না, কেবল ভাবটা আমার। প্রগতিশীল বা মার্ক্সবাদী বন্ধুদের ভাষা ধার করে ওদের বুঝবার জন্য আমার ভাবে এই বাক্য রচনা করেছি।
কিন্তু রাষ্ট্র মানেই জাতি – এই তালগোল পাকানো ধারণা থাকলে আমার শক্তিশালী রাষ্ট্র কথাকে “উগ্র জাতীয়তাবাদী” মনে করে দই ও চুনের মত সব একাকার মনে হবে। "শক্তিশালী রাষ্ট্র" এই শব্দের শক্তির জায়গায় উগ্র, আর রাষ্ট্রের জায়গায় জাতি বসানো - এভাবে গোলমালে পড়ে, "শক্তিশালী রাষ্ট্র" এর মানে “উগ্র জাতীয়তাবাদী” মনে করে সম্ভব।

আমাদের পরস্পরের চিন্তাকে জানা বুঝার (মানা নয়) ক্ষেত্রে ভুল বুঝা, অসম্পূর্ণতা হতেই পারে। সময় লাগতে পারে। কিন্তু সেসব পর্যায় শেষ করার আগেই বিতর্কের বদলে কাদা ছোঁড়াছুড়ি, গালাগালি, গায়ে কালি লাগিয়ে নিচা করার চেষ্টা আমার কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য পথ। স্বভাবতই এটা আমার পথ নয়।
উদাহরণ হিসাবে যেমন ধরেন, খারেজির যে মন্তব্য নিয়ে এই পোষ্ট লেখা শুরু করেছি ওখানে মন্তব্যের এই ষ্টাইলটা বলে চরিত্রহননের পথ। উনি যদি স্রেফ প্রশ্ন করতেন, আমি আমার পোষ্টের বক্তব্য দিয়ে পাহাড়ে "দরিদ্র বাঙালিদের বসতি গড়ারে জাস্টিফাই করছি" কি না - তাহলেই চলত। আমি জাষ্টিফাই করে থাকলে আমার জন্য চরম বিপদজনক প্রশ্ন হত সেটা। আমার লেখা পড়ে খারেজি আগেই নিশ্চিত হলেও এই বিপদজনক প্রশ্ন তুলার পথ নিতে পারত। কিন্তু খারেজির মনে হয়েছে, না চরিত্রহননের পথ নিতে হবে, শেষ করে দিতে হবে এই ঘৃণিত জীব পি মুন্সীকে।
এখন কোন কারণে খারেজির যদি বুঝতে ভুল হয়ে থাকে, আমি যদি আসলেই "দরিদ্র বাঙালিদের বসতি গড়ারে জাস্টিফাই" না করে থাকি - তখন কী হবে? আমার চরিত্রহনন, ফাঁসী সবই তো সম্পন্ন হয়ে গেছে আগেই।
অথচ খারেজির বিপদজনক প্রশ্ন মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে হয় আমাকে ভুল স্বীকার করে নিতে হত, আমার চোখ খুলত, ব্লগ পাঠকের সামনে আমি চরম হেস্তনেস্ত হতাম।

আমি কখনো কোথাও নিজেকে প্রগতিশীল বা মার্ক্সবাদী বলে দাবি করিনি; পি মুন্সী নামের ব্লগে, কোন পোষ্টে বা মন্তব্যে কোথাও আমার এমন কোন দাবি করা নাই। কেবল একবার মনে পড়ে এক পোষ্টে কার্ল মার্কসের পক্ষে তাঁরই চার লাইনের এক উদ্ধ্বতি হাতে নিয়ে দাঁড়াতে হয়েছিল। কারণ, (আজকের আমারই মত) মার্কস সম্পর্কে অন্যের কী বুঝেছে কী লিখেছে, অন্যের সেসব সেকেন্ড হ্যান্ড লেখার বরাতে মার্কসকে বুঝার চেষ্টা হয়েছিল সেখানে; তাঁকে অন্যায়ভাবে না জেনে দোষারোপ, হেস্তনেস্ত করার চেষ্টা হচ্ছিল। তবু নিজেকে সে পোষ্টে কোথাও প্রগতিশীল বা মার্ক্সবাদী বলে দাবি করিনি।
কেউ যদি আমাকে প্রগতিশীল বা মার্ক্সবাদী তকমা দেয় আমি বলি তথাস্তু; কেউ যদি আমাকে প্রগতিশীলতা বা মার্ক্সবাদের চরম বিরোধী বলে তকমা দেয় তবুও আমি বলি তথাস্তু।
নিজেকে প্রগতিশীল বা মার্ক্সবাদী বলে আমার কোন দাবি না থাকা সত্ত্বেও, তবু মনজু আমাকে আগে প্রগতিশীল বা মার্ক্সবাদী তকমা দিয়েছেন; এরপর প্রগতিশীল বা মার্ক্সবাদীতার নামে ‘হিপক্রাসি” করছি বলে গালি দিয়েছেন। অর্থাৎ আগে প্রগতিশীল বা মার্ক্সবাদী বলে উচুতে বেধে টাঙ্গিয়ে নেয়া হয়েছে যাতে এরপর নীচ থেকে বাঁশের লম্বা হাতল ধরে খুঁচাতে সুবিধা পাওয়া যায়। ফলে এটাও মনজু আপনার বে-বরাত, বে-বুনিয়াদি স্রেফ গালাগালি।

আমি যা লিখি আমি তাই। নিজের কথা নিজের বরাতে বলি; ফলে আমি নিজেকে "ন্যায্য প্রগতিশীল বা মার্ক্সবাদী" বলে ওর আড়ালে ডিফেন্ড করার কোন তাগিদ আমার নাই। আমি দৃঢভাবে বিশ্বাস করি, আলটিমেটলি আইডিয়া রুলস।

রাষ্ট্র, কনষ্টিটিউশন প্রসঙ্গে আমার যে উদ্ধ্বতি মনজু আপনি টেনেছেন অথবা লেনিন, ষ্ট্যালিনের যেসব বয়ান, বরাত দিয়েছেন এসব নিয়ে হয়ত অনেক কথা প্রাণবন্ত আলোচনা করা যেত, কিন্তু সে তাগিদ বোধ আমার নাই। তবে যতটুকু বলব মনে করে এসেছিলাম এর চেয়ে মনে হয় বেশি বলে ফেলেছি। ফেলেছি কারণ আপনার পোষ্টের বিভিন্ন পাঠকের মন্তব্যে লক্ষ করলাম - মনজু আপনি আপনার বিভ্রান্তির কারণে অনেক পাঠককে অন্তত বিভ্রান্ত করে ফেলতে পেরেছেন। অথচ ওখানে পরিবেশ এমন করে রেখেছেন যে আমাকে নিজের অবস্হান ডিফেন্ড করা, পরিস্কার করার বদলে আমি
"হিপোক্রাট" নই - এটাই আমাকে ডিফেন্ড করতে হবে। ওদিকে সবার উপরে চিন্তার অসততার কারণে যা আমার বক্তব্যই না, আমার কথা না পড়ে বা না বুঝেই গায়ে কালি লাগিয়ে দিয়ে প্রচারে নামার চেষ্টা - সে তো আছেই।

কোন বড় চিন্তা করতে পারার সক্ষমতার পূর্বশর্ত হলো, চিন্তাকে স্বাধীন রাখা, অপর চিন্তার প্রতি সৎ থাকা, সৎভাবে তাকে বুঝবার চেষ্টা করা। নইলে ঐ অপরের প্রতি অসততার স্বভাব একসময় নিজের চিন্তার উপর ছড়িয়ে পড়বে।

সুস্হ সবল তবে চরম বিতর্ক কি করে আগিয়ে নিতে হয় সে ব্যাপারে সবাই পরিপক্ক হোক, পরিবেশ গড়ে উঠুক - এই কামনা করে শেষ করলাম।

পুনশ্চ: চলতি মাসের শুরু থেকেই নেটে আমি অনিয়মিত হয়ে আছি। আরও সপ্তাহ দুই এভাবে চলবে হয়ত; ফলে সব মন্তব্যের জবাব সময়ে দিতে না পারলেও, দেরিতে হলেও অবশ্যই দিব। এ ব্যাপারে আমার অপারগতার জন্য আগেই মাফ চাইছি। অনিচ্ছাকৃত আমার এই দশার জন্য কেউ যেন উপেক্ষিত বোধ না করেন।
৩৮টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×