somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাফায়েতুল ইসলাম
জ্ঞান হবার পর থেকে নিজের পরিচয় খুঁজে বেড়াচ্ছি। প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করি—আমি কে? আমি কী? কোথা থেকে এসেছি? কিছুই জানি না। কখনো নিজেকে শূন্য মনে হয়। মাঝে মাঝে ভাবি, এই জগৎ সংসার কেমন করে শূন্য থেকে শূন্যে মিলিয়ে যায়।

জাতীয়তাবাদ বনাম আন্তর্জাতিকতাবাদ: এক নতুন মননচর্চার দিক

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতীয়তাবাদের মূল উৎস মানবজাতির স্বাভাবিক গোষ্ঠীকেন্দ্রিকতা ও সংঘবদ্ধ হবার প্রবণতা। বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি এক ধরনের আত্মরক্ষামূলক কৌশল—গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার মাধ্যমে টিকে থাকার সংগ্রাম। রাজনৈতিকভাবে জাতীয়তাবাদ এমন একটি আদর্শ যা জাতিকে সামাজিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করে, যেখানে অন্যান্য নৈতিক, ধর্মীয় বা আন্তর্জাতিক চিন্তাধারা পেছনে পড়ে যায়।

স্বদেশপ্রেমও এই জাতীয়তাবাদের একটি প্রকাশ—যেখানে নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক পরিচয়কে ঘিরে আত্মপরিচয়ের এক কেন্দ্রবিন্দু গড়ে ওঠে। এটি একদিকে যেমন সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে, অন্যদিকে অন্ধ ও সংকীর্ণ স্বজাতিগর্বের জন্ম দেয়। এর ফলে জাতিগত বৈষম্য, উগ্রতা এবং গোঁড়ামির মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়, যা বিশ্ব মানবিকতা, সহমর্মিতা ও শান্তির আদর্শকে হুমকির মুখে ফেলে।

বিশ্বের বহু জাতি ঐতিহাসিকভাবে জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসন ও সাম্রাজ্যবাদী নিপীড়ন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছে—ভারত, ভিয়েতনাম বা আমাদের বাংলাদেশই তার উদাহরণ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় ও ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ছিল মুক্তির এক মহান প্রেরণা। তবে সেই সংকট পেরিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পর যখন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করা হয়, তখন একই জাতীয়তাবাদ যদি অন্য জাতি, গোষ্ঠী বা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে শ্রেষ্ঠত্বের অহমিকা তৈরি করে—তবে তা আর আদর্শ থাকে না, বরং বিভাজনের অস্ত্রে পরিণত হয়।

আজকের প্রেক্ষাপটে আমরা দেখতে পাই, কিভাবে পুঁজিবাদী শ্রেণি ও বাণিজ্যিক মিডিয়া জাতীয়তাবাদকে পণ্য করে তুলেছে। ক্রিকেট কিংবা বিনোদনের অঙ্গনে জাতীয়তাবাদ এখন এক ধরনের বিপণন কৌশল। যেখানে খেলাকে খেলার জায়গায় না রেখে সেটাকে উগ্র দেশপ্রেমের প্রতীক বানিয়ে তাতে বাম্পার বিজ্ঞাপন লাগিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। এই মিথ্যা উন্মাদনা দিনে দিনে জাতিগত ঘৃণা ও আত্মকেন্দ্রিকতা বাড়িয়ে তুলছে।

তবু, একটি সত্য অস্বীকার করা যায় না—রাষ্ট্রহীন পৃথিবী এখনো একটি অলীক কল্পনা। তবে সেই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যেও যদি আমরা সীমান্তের দেয়ালকে মননে ও মানসপটে ঝাপসা করে ফেলি, যদি আমরা সবাইকে শুধুই "আমার দেশের লোক" না ভেবে "আমার পৃথিবীর মানুষ" ভাবতে পারি—তবে জাতিগত বিভাজনের চেয়ে মানবিক ঐক্য অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

ভিয়েতনামের সংবিধান একটি বড় উদাহরণ—তারা স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতীয়তাবাদ ব্যবহার করলেও, আজ তাদের সংবিধানে ‘জাতীয়তাবাদ’ শব্দটির উপর জোর দেওয়া হয়নি; বরং দেশব্যাপী বহুজাতিক সম্প্রদায়ের স্বকীয়তাকে মর্যাদা দেওয়ার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সুতরাং, আমাদের উচিত একদিকে যেমন স্বদেশপ্রেমের প্রকৃত মানবিক দিকগুলো রক্ষা করা, তেমনি জাতি বা ভূখণ্ডের গণ্ডি ছাড়িয়ে নিজেকে বিশ্বমানব ভাবার অভ্যাস গড়ে তোলা। স্বদেশপ্রেম যেন অন্য জাতি বা গোষ্ঠীকে হেয় করার মাধ্যমে গর্ব নয়—বরং নিজের সংস্কৃতিকে ভালোবেসে অন্যের সংস্কৃতিকে সম্মান করার এক নৈতিক ভিত্তি হয়ে ওঠে।

একটি পরিণত ও দায়িত্বশীল সমাজের মানুষ হিসেবে আমাদের দরকার ঐক্যের রাজনীতি, বৈচিত্র্যের মধ্যে সম্প্রীতি এবং সর্বোপরি এমন একটি মননশীলতা, যা ‘জাতি’ নয়, ‘মানবতা’কে সভ্যতার শ্রেষ্ঠ পরিচয় মনে করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×