somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাফায়েতুল ইসলাম
জ্ঞান হবার পর থেকে নিজের পরিচয় খুঁজে বেড়াচ্ছি। প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করি—আমি কে? আমি কী? কোথা থেকে এসেছি? কিছুই জানি না। কখনো নিজেকে শূন্য মনে হয়। মাঝে মাঝে ভাবি, এই জগৎ সংসার কেমন করে শূন্য থেকে শূন্যে মিলিয়ে যায়।

ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে ইসলাম ধর্মের সাংঘর্ষিকতা

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইভল্ব: সৃষ্টির রহস্য ও বিকাশের ইতিহাসের শিকড়ে ফিরে যাওয়া
"ইভল্ব"—এই শব্দটি যতটা ছোট, এর তাৎপর্য ও প্রভাব ততটাই বিস্তৃত, জটিল ও গভীর। এটি একটি বৈজ্ঞানিক শব্দ, যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ‘বিকশিত হওয়া’, ‘ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হওয়া’। কিন্তু এই শব্দটিকে আমরা কেবল জৈব-জেনেটিক বা প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সীমানায় আটকে রাখতে পারি না; এটি আমাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি, জ্ঞান ও আত্মপরিচয়ের বহুমাত্রিক আলোচনার দুয়ার খুলে দেয়। ইভলিউশন বা বিবর্তন কেবল প্রাণীর শারীরিক পরিবর্তনের ইতিহাস নয়, বরং মানবচিন্তার পরিপক্বতার, বিশ্বাসের সংকট আর সংশয় থেকে উত্তরণের এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার নামও বটে।

জীববিজ্ঞান অনুযায়ী, বিবর্তন একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা—যেখানে সময়ের ধারায়, প্রজন্মান্তরে জীবদের মধ্যে গঠনগত, বৈশিষ্ট্যগত এবং জিনগত রূপান্তর ঘটে। এই ক্রমাগত পরিবর্তনের মাধ্যমে এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে, যার শিকড়ে রয়েছে এক ‘সাধারণ পূর্বপুরুষ’। আজ আমরা যেসব প্রাণী দেখতে পাই—মানবজাতিসহ—তারা কেউই একটি নির্দিষ্ট রূপে হঠাৎ সৃষ্টি হয়নি; বরং লক্ষ লক্ষ বছরের জিনগত রূপান্তরের মাধ্যমে তারা আজকের অবস্থানে এসেছে বলে বিজ্ঞানের অভিমত।

তবে এখানেই শুরু হয় আমাদের আত্ম-পরিচয়ের প্রশ্ন। কারণ, এই বিবর্তনের ধারনা যখন মানবজাতির উত্থানের বর্ণনার সাথে মিশে যায়, তখন তা সংঘর্ষে পড়ে বহু ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের সাথে। বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে যেভাবে হযরত আদম (আ.)-কে প্রথম মানুষ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে "ইভলিউশন" শব্দটি অনেকের কাছেই বিভ্রান্তিকর বা ধর্মবিরোধী বলেও মনে হতে পারে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে, ইভলিউশনের জৈবিক ব্যাখ্যা ও ধর্মীয় আখ্যানকে একে অপরের বিরোধী না ভেবে যদি আমরা পরিপূরক হিসাবে দেখতে শিখি, তবে আমাদের চিন্তার জগতে এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে পারে।

ধর্মীয় বিশ্বাসে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত—অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি তাঁর অগণিত সৃষ্টি থেকে মানুষকে বেছে নিয়েছেন চিন্তা, বিবেক ও বিবেচনার যোগ্যতা দিয়ে। ইসলামী বর্ণনায়, হযরত আদম (আ.) হলেন মানবজাতির আদি পিতা, যাঁর মাধ্যমে মানব ইতিহাসের সূচনা। কুরআনের আখ্যান অনুযায়ী, আদম ও হাওয়া (আ.) বেহেশতে ছিলেন, যেখানে তাঁরা নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার কারণে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। এর পেছনে উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের ‘পরীক্ষা’ এবং মানবজাতির মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে পরিচালনার মহান দায়িত্ব অর্পণ করা।

এই আখ্যান আমাদের বলে যে মানুষ একদিন বেহেশতে ছিল এবং তারপর পৃথিবীতে এসেছে—কিন্তু এর মাঝখানে যে গভীর প্রতীক ও দার্শনিকতা রয়েছে, তা কেবল সরল পাঠে ধরা পড়ে না। অনেকে একে একটি আধ্যাত্মিক বিবর্তন হিসেবেও দেখেন—যেখানে মানুষের আত্মা, জ্ঞান ও নৈতিকতা ধীরে ধীরে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়। এখানে 'ইভলভ' মানে কেবল শারীরিক রূপান্তর নয়, বরং চেতনার এক অভিযাত্রাও হতে পারে।

তদুপরি, আদম (আ.)-এর পর হাবিল ও কাবিলের মধ্যে সংঘর্ষ এবং তৎপরবর্তী মানব ইতিহাস একটি ধারাবাহিক বিকাশের ইঙ্গিত দেয়। এ ঘটনাগুলো মানব আচরণের বিবর্তন, সামাজিক রীতি, আইন ও ন্যায়বিচারের ধারণা তৈরির ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেছে। একদিকে আমরা দেখি—ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ পৃথিবীতে এসেছে, অন্যদিকে তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে হিংসা, লোভ, ক্ষোভ ও অহংকারের মতো দুর্বলতা। এই দ্বৈত চরিত্রই মানুষকে "ইভল্ব" করতে বাধ্য করেছে—নিজেকে উন্নততর করতে, শুদ্ধ করতে এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধিত্বের উপযুক্ত হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রাখতে।

ইভল্ব শব্দটি শুধু আমাদের প্রজাতিগত পরিচয়ের আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি আমাদের আত্মপরিচয়, বিশ্বাস, সমাজ, সংস্কৃতি, এমনকি নৈতিক অবস্থান সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলে। কেন আমরা আজো নৈতিকতা ও বর্বরতার দ্বন্দ্বে জর্জরিত? কেন আধুনিক মানুষ হয়েও আমরা পুরনো ভুলগুলো বারবার করি? এর উত্তর হয়তো লুকিয়ে আছে আমাদের ‘অপূর্ণ ইভলিউশন’-এর মধ্যে।

বিজ্ঞান আমাদের শেখায় কীভাবে আমরা গঠনগতভাবে পরিবর্তিত হয়েছি, কিন্তু ধর্ম আমাদের শেখায় কেন এই পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল—কোন নৈতিক দায় এবং ঈশ্বরীয় আদেশ পূরণে আমরা পৃথিবীতে এসেছি। এই দুইয়ের সম্মিলনেই হয়তো তৈরি হতে পারে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে বিশ্বাস ও যুক্তি পরস্পরকে প্রতিহত না করে, বরং একে অপরকে সম্পূর্ণ করে তোলে।

এখনও অনেক কিছু বলা বাকি, কারণ এই আলোচনা সবে শুরু হয়েছে মাত্র। মানবসভ্যতা, ধর্ম, জ্ঞান, বিজ্ঞান, বিশ্বাস এবং বিবর্তনের যে সূক্ষ্ম ও বিস্তৃত যাত্রাপথ—সেই পথে আমরা ধীরে ধীরে আরও এগিয়ে যাব। কেননা, মানুষের ইতিহাস নিজেই একটি ‘ইভল্ভিং টেক্সট’, প্রতিটি অধ্যায়ই আগের চেয়ে জটিল, পরিণত এবং গভীর।

আরও একটি আধ্যাত্মিক আলোচনা উপস্থাপন করছি। এই যেমন—জীবিত ও মৃত ব্যক্তির আত্মা যে একত্র হয়, এর প্রমাণ হলো, জীবিত ব্যক্তি স্বপ্নে মৃত ব্যক্তিকে দেখে, অতঃপর জেগে সে তা বর্ণনা করেন, মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিকে এমন সংবাদ দেয়, যা জীবিত ব্যক্তি আগে জানত না। অতঃপর মৃত ব্যক্তির প্রদত্ত সংবাদ অতীতে বা ভবিষ্যতে প্রতিফলিত হয় যেভাবে সে সংবাদ দেয়। এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত আছে। রুহ, এর বিধান ও এর অবস্থা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া কেউ এ ব্যাপারটি অস্বীকার করে না।

আমাদের রুহ সর্বপ্রথমে বেহেশতে ছিলো, পাপের ফলে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। ভালো কর্মের ফলে মানুষের জীবন পূর্ণতা পাবে, আর খারাপ কাজের ফলে দোজখে যাবে। মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থান জান্নাত-জাহান্নাম। নেক আমল দিয়ে আমরা আবার বেহেশতে যেতে পারবো।


আচ্ছা, এতগুলো ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ শব্দের মধ্যে বিবর্তন খুঁজে পাচ্ছেন না! তাই তো? আমি সজ্ঞানে এই গল্পটি উপস্থাপন করেছি যা আপনারা ইতিমধ্যে জানেন। বিবর্তনের সাথে আমাদের আধ্যাত্মিক চিন্তার যোগসূত্র অনেক গভীর, এই আলোচনাটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। যদিও বিবর্তন বলতে অধিকাংশ মানুষ যা বোঝে তা হলো বানর থেকে মানুষ হয়ে যাওয়া, আর পিছনের লেজ খোঁজা পর্যন্তই তাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ।

কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে পৃথিবী ঘূর্ণায়মানের সাথে প্রাণিকুলের প্রতিটি বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে প্রতিটি ক্ষণে আমরা সবাই বদলে যাচ্ছি—চিন্তা-ভাবনায়, অনুভবে, দৃষ্টিভঙ্গিতে, এমনকি আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে। আমাদের চেহারা, রূপ-লাবণ্য, চারপাশের পরিবেশের সমস্তকিছু রীতিমত বদলাচ্ছে। এই বদলগুলো কেবল বাহ্যিক নয়, অভ্যন্তরীণও। আত্মার গভীর স্তরে, আমাদের বিশ্বাস, মনোভাব ও মানসিকতা নিয়ত রূপান্তরিত হচ্ছে।

যেমন একজন মানুষ শিশুকাল থেকে কৈশোর, এরপর যৌবন, বার্ধক্য এবং মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়, তেমনি আত্মাও অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে বিকশিত হয়। এই বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে তার নৈতিকতা, চিন্তা, কর্ম ও সাধনা। আর তাই আত্মার বিবর্তন শুধু শারীরিক জীবনের পরিবর্তন নয়, এটি একধরনের গুণগত উত্তরণ। ঠিক যেমন আলো আস্তে আস্তে অন্ধকারের গভীর থেকে উঠে আসে, আত্মাও আস্তে আস্তে প্রবাহিত হয় প্রকৃত সত্যের দিকে।

আমরা যদি লক্ষ্য করি, তাহলে দেখবো—আমাদের প্রতিটি সম্পর্ক, প্রতিটি উপলব্ধি, প্রতিটি দ্বন্দ্ব এবং প্রতিটি প্রার্থনা আমাদের আত্মাকে নতুনভাবে গঠিত করছে। ঠিক এখানেই আত্মিক বিবর্তনের নিরব অথচ দৃঢ় ছাপ পড়ে থাকে।

প্রকৃতির সবকিছুই পরিবর্তনশীল — এই সত্যই আমাদের জীবনের গভীরতম শিক্ষা। একটি বৃক্ষের মতো, যা প্রতিদিন একটু একটু করে বেড়ে ওঠে, ঠিক তেমনি আমাদের চেতনাও প্রতিনিয়ত বিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু এই বিবর্তন মানেই কি আপনি একজন্মে ছাগল ছিলেন আর হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে দেখলেন আপনি মানুষ হয়ে গেছেন? না — বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব এমন সরল বা হাস্যকর কিছু নয়। তার তত্ত্ব বলে, একটি প্রজাতি ধীরে ধীরে, লক্ষ-কোটি বছরের পরিবেশগত ও জেনেটিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কীভাবে রূপান্তরিত হয়। এই তত্ত্ব প্রাণীকুল ও উদ্ভিদ জগতের বৈচিত্র্য বুঝতে আমাদের একটি অসাধারণ জানালা খুলে দিয়েছে।

মানুষ আজ যে আধুনিক জীবনে অভ্যস্ত — প্রযুক্তিনির্ভর, বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী — এর পেছনে হাজার হাজার বছরের সংগ্রাম, জ্ঞান আহরণ ও পরিশ্রমের ফল রয়েছে। গুহাবাসী মানুষ কাঁচা খাদ্যে বেঁচে থাকত, আর আজ আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে মহাকাশে পৌঁছাতে পারছি। এই উত্তরণ হঠাৎ করে হয়নি — এটি বিবর্তনের ফল।

তবে শুধু বাহ্যিক বিবর্তন নয়, আত্মিক বিবর্তনই মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি। যারা গভীর অনুভূতিপ্রবণ, তারা জানেন — শরীর আর মন একসঙ্গে কাজ করে। শরীর যদি হয় এই পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র, তবে মন বা আত্মা হচ্ছে সেই যন্ত্রের দিকনির্দেশক। এই আত্মা বা রুহ পরিষ্কার ও উন্নত করতে পারলেই মানুষ সত্যিকারের বিবর্তনের পথে এগোতে পারে।

একজন ব্যক্তির মুখাবয়ব, চোখের গভীরতা, চেহারার ভাঁজেও অনেককিছু বলে দেয়। কারো পেশা, জীবনযাপন, চিন্তাধারা, এমনকি তার আত্মিক অবস্থাও প্রকাশ পায় মুখাবয়বে। এইসব বৈশিষ্ট্য দেখে আমরা বুঝতে পারি—কে কতটা আত্মদর্শনসম্পন্ন, পরিশ্রমী, আর বিবর্তনের পথে অগ্রসর।

আমাদের উচিত নিজের ভিতরের দিকটিকে শাণিত করা, নিজেকে জিজ্ঞেস করা:
-আমি কি প্রতিদিন একটু একটু করে বদলাচ্ছি?
-আমি কি সৎভাবে নিজের পথ তৈরি করছি?
-আমি কি অন্যকে ভালোবাসতে শিখছি?

কারণ, বিবর্তনের সবচেয়ে সুন্দর রূপ তখনই প্রকাশ পায়, যখন একজন মানুষ নিজের ভেতরের আলোকিত রূপ খুঁজে পায় — নিজের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে, অহংকার ত্যাগ করে, মানবিক গুণাবলিতে নিজেকে সাজায়। এটি কোনো ধর্ম, জাতি, বা দেশেই সীমাবদ্ধ নয় — এটি সার্বজনীন, মানবতার চূড়ান্ত রূপ।

উপসংহার: বিবর্তনের এক অমোঘ আহ্বান
বিবর্তন কখনোই কেবল শারীরিক পরিবর্তনের নাম নয়। এটি একটি অন্তর্গত, আত্মিক এবং মানবিক বিকাশের অবিরাম ও চিরন্তন যাত্রা। আমাদের চুল পাকে, ত্বকে বলিরেখা পড়ে, কিন্তু প্রকৃত পরিবর্তন ঘটে আমাদের চিন্তায়, হৃদয়ে, বিশ্বাসে এবং আচরণে। আমরা যখন একটি ভুল স্বীকার করি, ক্ষমা চাইতে শিখি, কারো ব্যথা অনুভব করি, তখনই আমরা সত্যিকারের বিবর্তনের পথে এগোতে থাকি।

আত্মিক বিবর্তন মানে নিজেকে জানার একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা—আমি কে? কেন এসেছি এই পৃথিবীতে? কী কাজ আমার অপেক্ষায়? এ প্রশ্নগুলো যার মনে জাগে, সে-ই ধীরে ধীরে আত্মজ্ঞান, মানবিকতা এবং সত্যের পথে এগোয়। এই পথ বন্ধুর হতে পারে, ধোঁয়াশায় ভরা হতে পারে, কিন্তু এটিই একমাত্র পথ—যা মানুষকে প্রকৃত মানুষে রূপান্তরিত করে।

আজকের পৃথিবী প্রযুক্তিতে দ্রুত এগোচ্ছে, কিন্তু মানবিকতায় কোথায় যেন ছন্দপতন ঘটছে। এত জ্ঞান, তবু মানুষ বিভক্ত—ধর্মে, ভাষায়, বর্ণে, সীমান্তে। অথচ বিবর্তনের মূল শিক্ষা হলো একতা, সহমর্মিতা ও সাম্যের চেতনা। এই শিক্ষাকে আমাদের গ্রহণ করতে হবে—মাথায় নয়, হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।

আমরা যদি সত্যিকারের বিবর্তনের পথে হাঁটতে চাই, তবে আমাদের চাই—
-পরিশ্রম, কারণ আত্মার নির্মাণ অলসের পক্ষে নয়;
-বিনম্রতা, কারণ অহংকার বিবর্তনের শত্রু;
-ভালোবাসা, কারণ ভালোবাসাই আত্মার প্রকৃত ভাষা;
-প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, কারণ প্রকৃতি আমাদের আয়না।

নিজেকে জানার মধ্যেই জ্ঞানের জন্ম, আর নিজেকে ভালোবাসার মাধ্যমেই শুরু হয় মানুষে মানুষে সম্পর্কের পরিপূর্ণতা। অন্যকে সম্মান করা, ভিন্নমতকে সহ্য করা, ভিন্ন ধর্ম বা বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করা—এগুলো কোন বিলাসিতা নয়, বরং বিবর্তনের প্রয়োজনীয় স্তর।

তাই আসুন, আমরা যেন শুধু সময়ের প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিই, বরং সচেতনভাবে বিবর্তনের সঠিক অর্থ বুঝে তা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করি।
নিজেকে জানি, নিজের সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করি, আত্মার আলোয় নিজেকে আলোকিত করি—কারণ প্রতিটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হয় নিজেকে বদলানোর মাধ্যমে।
-পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, কারণ সময় কখনো থেমে থাকে না।
-কিন্তু বিবর্তন—তা চেতনায় ঘটে, সিদ্ধান্তে ঘটে, হৃদয়ের গভীরে ঘটে।
এটি কোনো বাহ্যিক চাপ নয়, এটি একটি অন্তরঙ্গ বেছে নেওয়া পথ, যা মানুষকে একধাপ নয়, হাজারধাপ উন্নত করে তোলে।

এই পৃথিবী তোমার চেহারায় নয়, তোমার চিন্তায় পরিবর্তিত হোক। বিবর্তন শুরু হোক তোমার মধ্য থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৫ দুপুর ১:৩২
১৯টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×