somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাফায়েতুল ইসলাম
জ্ঞান হবার পর থেকে নিজের পরিচয় খুঁজে বেড়াচ্ছি। প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করি—আমি কে? আমি কী? কোথা থেকে এসেছি? কিছুই জানি না। কখনো নিজেকে শূন্য মনে হয়। মাঝে মাঝে ভাবি, এই জগৎ সংসার কেমন করে শূন্য থেকে শূন্যে মিলিয়ে যায়।

আত্মার মুক্তি লাভের উপায়

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিটি মানুষের জীবন আলাদা। একেবারেই নিজস্ব, একান্ত ব্যক্তিগত কিছু অনুভব, কিছু যন্ত্রণার অধ্যায়, কিছু অপূর্ণতা আর কিছু আকাঙ্ক্ষার মিশেলে গঠিত এক বিচিত্র যাত্রাপথ। এই গল্পগুলো কোনো উপন্যাসের পাতায় লেখা থাকে না, থাকে হৃদয়ের গহীনে — যেখানে বাহ্যিক চোখে দেখা যায় না, কেবল অনুভবেই ধরা পড়ে। যখন আমরা সত্যিকারের আন্তরিকতায় কারো জীবনের খুব কাছাকাছি পৌঁছাই, তখনই অনুধাবন করতে পারি সে মানুষটি আসলে কতটা স্বতন্ত্র। আমরা দেখি — একই পৃথিবী, একই আকাশের নিচে থেকেও কত ভিন্নভাবে মানুষ প্রতিক্রিয়া জানায়, কত ভিন্নভাবে উপলব্ধি করে, কত নিজস্ব নিয়মে তার জীবনের গল্প করে চলে।

আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটছে — চেনা-অচেনা ঘটনা, সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয় — সবই একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন, এলোমেলো মুহূর্ত নয়। বরং এগুলো হলো একটি বৃহত্তর ছকের টুকরো, যার ভেতরেই আমরা সবাই বয়ে চলেছি, অনুভব করছি, শিখছি, এবং নিজ নিজ পথে বিবর্তিত হচ্ছি। যারা হৃদয়ে অনুভব করার শক্তি অর্জন করেছেন, এবং যাদের দৃষ্টিভঙ্গি পর্যবেক্ষণে দক্ষ — তারা খুব সহজেই দেখতে পান: এই জীবন, এই সম্পর্ক, এই ঘটনাবলি কত অসাধারণভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িত। এটি শুধুই ঘটনাক্রম নয়, বরং দৈব রচনা। এক ধরণের সিঙ্ক্রোনাস ছন্দ যা চলমান, সচল এবং কখনো থেমে না থাকা একটি অভ্যন্তরীণ সুরের মত।

আসলে আমরা যতই বাহ্যিক জীবনে হিলিঝিলি, হাংকি-পাংকি, ফ্যান্টাসি কিংবা বাহ্যিক বিলাসিতায় লিপ্ত থাকি না কেন — পরিশুদ্ধ ক্বলব বা অন্তরের বিশুদ্ধতা ছাড়া এই মনুষ্য খাঁচা থেকে মুক্তি নেই। সত্যিকার আত্মজ্ঞান কেবল তখনই আসে, যখন অন্তরের দরজাটি খোলা যায় — যেখানে অহংকার, লোভ, ক্ষোভ বা মোহ প্রবেশ করতে পারে না।


সুফিবাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে, ক্বলব শুধু হৃদয় নয়, বরং আত্মার এমন একটি স্তর যেখানে আল্লাহর নূর ধরা দেয়। এটি লাতায়েফ-ই-সত্তার (আত্মার ছয়টি পবিত্র কেন্দ্র) এর দ্বিতীয় অবস্থান — যা আত্মিক উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ক্বলব পরিচর্যার জন্য আত্মাকে নির্দিষ্ট কয়েকটি অভ্যাস ও নৈতিক মানদণ্ডে অভ্যস্ত করতে হয়।
এর মধ্যে রয়েছে:
-সন্ন্যাসব্রত (Asceticism) — যেখানে ব্যক্তিগত ভোগবিলাসকে পরিহার করে আত্মিক পরিশুদ্ধির দিকে যাত্রা শুরু হয়।
-তাকওয়া — নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির বাইরে কিছু থেকে সংযত রাখা।
-তাওয়াক্কুল — প্রাপ্তিতে কৃতজ্ঞতা ও অপ্রাপ্তিতে ধৈর্য ধারণ করা।
-ইখলাস — কাজের পিছনে নিঃস্বার্থ নিয়ত রাখা, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
নেয়ামতের প্রতি সন্তুষ্টি — মানুষের জীবনে যা এসেছে, তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখা।
-ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ — অন্তরের সবচেয়ে ক্ষতিকর আগুনকে শান্ত রাখতে শেখা।

এই অভ্যাসগুলো গড়ে উঠলে ক্বলব পরিশুদ্ধ হয়। আর পরিশুদ্ধ ক্বলবই পারে বাস্তবিক জগতকে ভিন্ন চোখে দেখতে — করুণা, প্রেম, সহনুভূতি আর মানবিকতার আলোয়। আমাদের সকল কর্ম, সকল অনুভব, সকল প্রতিক্রিয়া যদি কেবল দেহতত্ত্বের প্রভাবে পরিচালিত হয়, তবে আমরা কেবলই একটি প্রক্রিয়ার যন্ত্রাংশ হয়ে থাকবো। কিন্তু আত্মিক চর্চা যদি এই জীবনে প্রবেশ করে — তবে প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে ওঠে অর্থবহ, পূর্ণ, এবং পরিশুদ্ধ।

রূহ ও আত্মিক চেতনাজগতের প্রবেশদ্বার
রূহ — আত্মার প্রকৃত অর্থ বোঝার জন্য এর আভিধানিক অর্থের বাইরে গিয়ে অনুভব করতে হয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: “তারা তোমাকে আত্মা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, আত্মা হল আমার প্রভুর আদেশমাত্র; এবং তোমাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে খুবই সামান্য।” (সূরা ইসরা: ৮৫)

এই আয়াত থেকেই বোঝা যায়, রূহ বা আত্মা এমন এক ঐশী সৃষ্টি, যার ব্যাখ্যা আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে ধরা পড়ে না। তবে সুফিবাদের আলোকে রূহকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে আল্লাহর সঙ্গে সংযোগের মূল সেতু হিসেবে — যা লাতায়েফ-ই-সত্তার তৃতীয় স্তর। রূহ হল সেই অস্তিত্ব, যা দেহের বন্ধন ছাড়িয়ে সরাসরি নুরানী জগতে প্রবেশ করে। এই আত্মা সর্বপ্রথম ছিল ‘আলাম আল-আরওয়াহ’ বা আত্মার জগতে। সেইখানে তারা আল্লাহর সামনে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল — “আলস্তু বিরব্বিকুম?” (আমি কি তোমাদের প্রভু নই?) — তারা বলেছিল, “বালা!” (অবশ্যই!)

এই চুক্তির মাধ্যমেই রূহের দায়িত্ব শুরু। তারপর এই আত্মা এসেছে পৃথিবীতে — দেহের খাঁচায় আটকে — নিজেকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য, নিজের মূল উৎসের দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য।

রূহের গুণাবলি ও আত্মিক শ্রেষ্ঠত্ব
রূহের স্বভাব বিশুদ্ধ, আলোকিত, এবং ঐশী। দেহ এবং মন যদি হয় ছায়া, তবে আত্মা হল সূর্য — যার আলোয় মানুষের আসল রূপ প্রকাশ পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই রূহ চিরকাল এমনই বিশুদ্ধ থাকে না। দেহের চাহিদা, নফসের প্রভাব, শয়তানের প্ররোচনা — এসবের দ্বারা রূহ ঢেকে যায়, মলিন হয়ে পড়ে।

তাই সুফি সাধকেরা বলেন:
-রূহকে জাগ্রত করতে হলে দেহকে সংযত করতে হবে।
-রূহকে পরিশুদ্ধ করতে হলে চিন্তা ও অভ্যাসকে বদলাতে হবে।
-রূহকে আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে হলে অহংকার, লালসা, হিংসা, ক্রোধ, ঈর্ষা প্রভৃতি থেকে মুক্ত হতে হবে।

সিরর: আত্মার গোপন কক্ষ
সিরর হচ্ছে লাতায়েফের পরবর্তী স্তর — যার বাংলা মানে দাঁড়ায় "গোপন" বা "গূঢ় রহস্য"। এটি এমন এক অংশ, যেখানে আত্মা আল্লাহর সঙ্গে গোপনে সংলাপ করে। সাধারণত এখান থেকে উদ্ভূত হয় আধ্যাত্মিক উপলব্ধি, আলৌকিক বোধ, এবং আত্মিক ধ্যান। সিরর মানুষের অন্তরে এমন কিছু বিশ্লেষণী শক্তি সৃষ্টি করে, যার মাধ্যমে সে বাহ্যিক বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে প্রকৃত সত্যকে অনুভব করতে পারে। এই স্তরে পৌঁছানো মানে হল—
-নিজেকে চেনা,
-সৃষ্টিকে শ্রদ্ধা করা,
-এবং স্রষ্টার প্রেমে আত্মার অন্তিম মিলন।

এই সিরর জাগ্রত হয় দীর্ঘ ধ্যান, নিরবতা, জিকির, কোরআনের গভীর তাদাব্বুর এবং সত্যিকার তাওবাহর মাধ্যমে। অনেক সাধকের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, এই স্তরে পৌঁছানোর পর তারা বাহ্যিক জগতের শোরগোল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অন্তরজগতের আলোকে পথ চলতে শুরু করে।

এই স্তরগুলোর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি
আমাদের অধিকাংশ সময় চলে যায় বাহ্যিক বিষয়ের পেছনে — চাকরি, টাকা, সম্পর্ক, স্ট্যাটাস, সামাজিক স্বীকৃতি। অথচ এগুলোর কোনটাই চিরস্থায়ী নয়। চিরস্থায়ী হল আত্মা — যার সাথে সংযোগ থাকলে বাহ্যিক দুঃখ বা সাফল্য কখনো আমাদের শিকড়কে নাড়িয়ে দিতে পারে না। একজন মানুষ যতদিন না তার রূহ ও সিররের দিক চিনবে, ততদিন সে পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারবে না। এই আত্মিক যাত্রা হচ্ছে আত্মশুদ্ধির সিঁড়ি — যেখানে প্রতিটি ধাপ আমাদের এক ধাপ করে আলোর কাছাকাছি নিয়ে যায়।

চেতনার অন্তস্তল: খাফি ও আখফা
রূহ যখন তার নিরবচ্ছিন্ন পথচলায় ক্বলব ও সিরর অতিক্রম করে, তখন সে প্রবেশ করে এক গভীর নিরবতার স্তরে, যার নাম খাফি। খাফি আরবি শব্দ, যার অর্থ “গোপনতম”। এটি এমন এক স্তর, যেখানে জ্ঞান আর বোধের ভাষা স্তব্ধ হয়ে যায়, চিন্তাগুলো রূপ নেয় আলো ও অনুভবের। এখানে আত্মা আর বহির্জগতের কোলাহলে সাড়া দেয় না, বরং গভীর আত্মতরঙ্গের মধ্যে নিমগ্ন থাকে।

খাফি: নিরব সাধনার গভীরতা
খাফি হচ্ছে আত্মার এমন একটি স্তর, যেখানে মানুষ নিজেকে আর বাহ্যিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে চায় না। এখানে থাকে না ‘আমি কে?’, ‘আমি কী করছি?’ — বরং থাকে একধরনের আধ্যাত্মিক আত্মবিস্মরণ, যেখানে ব্যক্তি নিজের অস্তিত্বকেই এক মহামানবিক তরঙ্গে বিলীন করে ফেলে।
খাফি স্তরে মানুষ:
-বাহ্যিক ইন্দ্রিয়ের প্রভাব থেকে মুক্ত,
-আত্মার গভীর স্তব্ধতা অনুভব করে,
-এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে এক নীরব সংলাপে আবদ্ধ হয়।

এই স্তরের সাধকেরা খুব কম কথা বলেন, অনেক গভীরভাবে ভাবেন, এবং প্রতিটি সত্তার ভেতরে আল্লাহর নিদর্শন খুঁজে পান। তারা “অন্তর দিয়ে দেখে”, এবং “নিঃশব্দে শোনে”।

আখফা: সবচেয়ে গোপন — আল্লাহর রহস্যভাণ্ডার
লাতায়েফ-ই-সত্তার সর্বশেষ স্তর হল আখফা, যার অর্থ — "সবচেয়ে গোপন, সবচেয়ে সূক্ষ্ম"। এটি এমন একটি স্থান, যেখানে সাধকের আত্মা সরাসরি আল্লাহর রহস্যভাণ্ডারে প্রবেশ করে — এই স্তরে আল্লাহর ‘তাজাল্লি’ (ঐশী প্রকাশ) আত্মার ওপর পতিত হয়। এটি এমন এক অভিজ্ঞতা, যার বর্ণনা দেয়া যায় না, কেবল অনুভব করা যায়।

আখফা স্তরে পৌঁছানো মানে:
-সমস্ত অহংকে বিলুপ্ত করা,
-নিজের অস্তিত্বকে শূন্য করে ফেলা (ফানা),
-এবং শুধুমাত্র আল্লাহর অস্তিত্বে স্থিতি লাভ করা (বাকা)।

এই স্তরের অভিজ্ঞতা হলো এক পূর্ণ আত্মসমর্পণ, এক নিঃশর্ত প্রেম, এক নিরব স্বস্তি — যেখানে আর কিছু চাওয়ার কিছু থাকে না। সুফিগণ বলেন, “যখন তুমি আর নিজেকে চেনো না, তখনই তুমি তোমার প্রভুকে চিনতে শুরু করো।”

আধ্যাত্মিক উন্নয়নের উদ্দেশ্য
এই ছয়টি স্তর — নফস, ক্বলব, রূহ, সিরর, খাফি, আখফা — এগুলো কোনো বাহ্যিক চর্চা নয়। এগুলো এক ধরণের আত্মিক ভ্রমণ, যা কেবল ধৈর্য, জিকির, মুরাকাবা (ধ্যান), তাকওয়া এবং নিরন্তর আত্মসমালোচনার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই এই স্তরগুলোর সম্ভাবনা থাকে। শুধু দরকার — আত্মসচেতনতা ও অভ্যন্তরীণ জাগরণ। সমাজের, ধর্মের বা জাতির উর্ধ্বে উঠে আত্মার এই যাত্রা মানুষকে নিয়ে যায় এমন এক জায়গায় — যেখানে শান্তি, প্রেম ও আল্লাহর প্রেমই একমাত্র সত্য।

অবসাদের অতলে ভালোবাসার দীপ্তি
অন্যের অবস্থার সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া গেলেও, জীবনের প্রকৃত যুদ্ধ আমরা একাই লড়ি। একাকিত্ব, দুঃখ, নিঃসঙ্গতা, পরস্পরের অবহেলা — এসব অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়, কারা আসলে আমাদের আপন আর কারা কেবল সময়ের বন্ধু। যখন আমরা কষ্টে থাকি, তখন কেউ পাশে না থাকলেও নিজেকে ভরসা দিতে শিখি। এই শিক্ষাই সবচেয়ে মূল্যবান। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ অনেক সময় ভেঙে পড়ে, আবার কেউ কেউ গড়ে উঠে ভেতরের আগুন দিয়ে।

আমি বিশ্বাস করি — বিবর্তন শুধু বাইরের নয়, আত্মার ভেতরেই ঘটে। একজন মানুষ ইচ্ছাশক্তি দিয়ে শুধু তার ভাগ্যই নয়, তার শরীর, মন, এমনকি চেহারার অভিব্যক্তি পর্যন্ত বদলে দিতে পারে। সে তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে পারে, তার সংবেদনশীলতা এবং অনুভব করার ক্ষমতা রূপান্তর করতে পারে। এই রূপান্তর কোনো দৈব ব্যাপার নয়, বরং এক সুদীর্ঘ তালিমের ফল — আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য, প্রত্যাখ্যানের পরেও বিশ্বাস ধরে রাখার সাধনা।

এই পরিশুদ্ধির পথটি অবশ্য সহজ নয়। অনেক সময় এই পথের মাঝে পড়ে এমনসব অভিজ্ঞতা আসে, যা মানসিকভাবে দুর্বিষহ ও জটিল। আমরা মনে করি হয়তো সব শেষ, কিন্তু ঠিক তখনই নিজের উপলব্ধির মধ্যে থেকে জন্ম নেয় এক নতুন আলো। আমার নিজের জীবনেই বহু দ্বন্দ্ব, সংকট, এবং আত্মসংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আমি হাঁটছি। কখনো ভেঙে পড়েছি, কখনো চুপ করে সব সয়ে গেছি। বহুপ্রিয় সম্পর্কের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি, বহু চেনা-জানা পথ থেকে সরে গেছি। আমি ক্লান্ত, নিঃস্ব, কিন্তু এখনো আশা হারাইনি। এই ক্লান্তি আমায় ত্যাগ করেনি, আবার এই ক্লান্তির মধ্যেই আমি সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছি।

আমরা অনেক সময় ভাবি ভালোবাসা পরাজিত হয়েছে। আসলে হয়তো ভালোবাসাই আমাদের অবসাদ জয় করেছে। ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে গেলে সেই অনুভূতিকে একা বহন করতে হয়, ত্যাগ করতে হয়, ক্ষত বয়ে নিতে হয়। ভালোবাসা কখনো শুধু আনন্দ নয় — এটা একধরনের আত্মিক দায়িত্ব, যা বয়ে নিয়ে যেতে হয় প্রহরের পর প্রহর।

উপসংহার: পুনর্জন্মের আলোকছায়া
এই লেখা, এই আত্মজিজ্ঞাসার পথ ছিল শুধুমাত্র নিজেকে খুঁজে পাওয়ার একটি অভ্যন্তরীণ প্রয়াস। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই আছে কিছু না-বলা কথা, কিছু না-শোনা ব্যথা, কিছু অসমাপ্ত গল্প। কিন্তু সেইসব গল্পই আমাদের গড়ে তোলে, আমাদের চেতনার প্রতিটি ধাপে বিবর্তনের ছাপ রেখে যায়।

জীবনের শেষ কথা কখনোই পরাজয় নয় — বরং প্রত্যেকটি পতনের মধ্যে থাকে এক নতুন উত্তরণের বীজ।
সেই বীজ বাঁচে তখনই, যখন আমরা স্বীকার করি যে ক্লান্তি, দুঃখ, এবং একাকীত্ব — এগুলোও জীবনের অংশ।
যখন আমরা জীবনের গভীরে নেমে যাই — তখনই জন্ম নেয় আত্মার মোক্ষ, রুহের মুক্তি, ভালোবাসার পূর্ণতা।

সৃষ্টির প্রকৃত প্রশান্তি আমাদের সকলের জন্য অপেক্ষা করছে — শুধু সাহস করে একবার চোখ তুলে তাকানো দরকার। ঝুঁকি নিতে হয়, ছেঁড়া ভোরে হাঁটতে হয়, ক্লান্ত হৃদয়ে কিছু চুমুক রেখে এগিয়ে যেতে হয়। আত্মার মুক্তি সেইখানেই — নিরব রাত্রির ভেতরে ভালোবাসার ছায়া বুনে।

এই আত্মিক যাত্রা কখনো শেষ হয় না। এটি প্রতিটি নিঃশ্বাসে শুরু হয়, প্রতিটি সিদ্ধান্তে গড়ে ওঠে, এবং প্রতিটি ভালোবাসায় পূর্ণতা পায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৪২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×