somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাফায়েতুল ইসলাম
জ্ঞান হবার পর থেকে নিজের পরিচয় খুঁজে বেড়াচ্ছি। প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করি—আমি কে? আমি কী? কোথা থেকে এসেছি? কিছুই জানি না। কখনো নিজেকে শূন্য মনে হয়। মাঝে মাঝে ভাবি, এই জগৎ সংসার কেমন করে শূন্য থেকে শূন্যে মিলিয়ে যায়।

ইরান-আমেরিকা-ইসরায়েল যুদ্ধ: এক নতুন যুগের সূচনা, নাকি পুরনো সাম্রাজ্যবাদের ভিন্ন রূপ?

২৪ শে জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা নতুন কিছু নয়। ইরান আর ইসরায়েলের লড়াই বহু দিনের, তবে এ যাত্রা তা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে — কারণ এবার সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ইরানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে ইরানও ড্রোন হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া ও ইসরায়েল সীমান্তে পাল্টা আঘাতের প্রস্তুতি নিয়েছে। এতে পুরো মধ্যপ্রাচ্য এক অজানা আতঙ্ক আর উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমুখী নীতি:
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন — যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই ইরানকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে চায়, নাকি ইসরায়েলকে তুষ্ট রেখে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়?
সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ বলছে, ইরানের ওপর হামলা মূলত ইসরায়েলকে দেখানোর জন্য — ‘‘তোমার পাশে আমরা আছি!’’ আর ইরানও এই চিত্র ভালো করেই বুঝে হামলার আগে তাদের গোপন পারমাণবিক ও রাসায়নিক সম্পদ নিরাপদ বাঙ্কারে সরিয়ে ফেলেছে। ফলে কোটি কোটি ডলার খরচ করে যে বোমাবর্ষণ হয়েছে, বাস্তবে ইরানের খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। এখানে সাধারণ মানুষের করের টাকা আর বিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র বাণিজ্যই মূল চালিকা শক্তি।

রাশিয়া ও চীনের অবস্থান:
ইউক্রেন যুদ্ধেই রাশিয়া জর্জরিত, তবে তাতে রাশিয়া পুরোপুরি থেমে নেই। গোপনে কূটনৈতিক সমর্থন আর সীমিত অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে ইরানকে শক্তি জোগাচ্ছে। চীনও এই কৌশলগত সমীকরণে নিরবভাবে পাশে আছে, যাতে পশ্চিমা আধিপত্য রাশিয়া-চীন মিলে ব্যালেন্স করতে পারে।

ইরানের শক্তি: ধর্ম, জাতীয়তাবাদ আর আঞ্চলিক জোট:
ইরানের শক্তি কেবল সেনাবাহিনী নয় — বরং তাদের মিলিশিয়া, হিজবুল্লাহ, হুথি, আর অন্যান্য প্রো-ইরানি নেটওয়ার্ক মিলে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে শক্তি বিস্তার করেছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো একক আন্দোলন না থাকলেও আঞ্চলিক ছোট ছোট জোট ইরানকে অদম্য করে তুলেছে।

আয়াতুল্লাহ খামেনি: মধ্যপ্রাচ্যের আদর্শ নেতা
যখন বহু তথাকথিত মুসলিম রাষ্ট্র পশ্চিমা চাপ আর সাম্রাজ্যবাদী নীতির সামনে বারবার মাথা নত করেছে, তখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি প্রমাণ করেছেন কীভাবে ধর্মীয় চেতনা, জাতীয় ঐক্য আর দৃঢ় নেতৃত্ব একত্রে একটি জাতিকে অজেয় করে তোলে। খামেনি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতা নন — তিনি এক আদর্শ, যে আদর্শ মুসলিম বিশ্বকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে একবিংশ শতাব্দীতে ধর্মীয় শক্তি আর আধুনিক রাষ্ট্রশক্তি একসাথে জাগিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে চাপে ফেলা যায়।

আজ ইরান একাই প্রমাণ করেছে যে অস্ত্র, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আর গোপন চক্রান্তের মাঝেও কিভাবে শক্ত ভিত আর আদর্শিক ভিত্তি থাকলে শত্রুপক্ষকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিতে বাধ্য করা যায়। অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর শেখা উচিত — ‘‘শুধু মুখের ইসলাম নয়, নেতৃত্বে আদর্শ আর বাস্তবে আত্মনির্ভরশীলতা কেমন হওয়া উচিত, সেটাই খামেনি দেখিয়ে যাচ্ছেন।’’

পারমাণবিক অধিকার ও বৈশ্বিক রাজনীতি:
ইরান বহুবার বলেছে — আমেরিকা, রাশিয়া, ইসরায়েল যদি পারমাণবিক বোমা রাখতে পারে, তাহলে তাদেরও অধিকার আছে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক শক্তি গড়ে তোলার। আর এই পারমাণবিক খেলার সাথে জড়িয়ে আছে বিশাল অর্থনীতি — ক্ষেপণাস্ত্র, বাঙ্কার, যুদ্ধজাহাজ, প্রতিরক্ষা চুক্তি — সবই বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য, যার টাকা ওঠে আমাদের মতো মানুষের পকেট থেকে।

যুদ্ধবিরতির নাটক:
সবচেয়ে নতুন আপডেট হলো — যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখন ইরানকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিচ্ছে, আর ইরান সেই শর্তে রাজি হয়েছে যে ইসরায়েলকে আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে ‘কূটনৈতিক জয়’ বলছে, কিন্তু বাস্তবে অনেকে এটাকে ইরানের বিজয়ের ইঙ্গিত বলছে। কারণ বহু বছর পর মধ্যপ্রাচ্যের একটি মুসলিম দেশ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী দেশের কণ্ঠ নরম করতে বাধ্য করেছে।

এখন কী হতে পারে?
১️⃣ যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী না-ও হতে পারে। ইসরায়েল নিজেই ঘোষণা করেছে, প্রয়োজনে আবার বড় হামলা হবে।
২️⃣ রাশিয়া ও চীনের গোপন সমর্থন ইরানকে আরও শক্তি জোগাবে।
৩️⃣ যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে পারমাণবিক চুক্তির টেবিলে ইরানকে বসাতে চাইবে।
৪️⃣ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন মুসলিম ঐক্যের কথা উঠতে পারে, যা পশ্চিমা শক্তিগুলো আবার ছলে বলে ভাঙতে চেষ্টা করবে।
৫️⃣ আর্থিক বাজার, জ্বালানি তেল, খাদ্যদ্রব্যের দাম — সবকিছুর ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে।

শেষ কথা:
এই যুদ্ধ কেবল বোমা-বারুদের নয়। এটি তথ্যের যুদ্ধ, অর্থনীতির যুদ্ধ আর মানুষের মানসিকতার উপর প্রভাবের যুদ্ধ। যুদ্ধ থামাতে পারবো না — কিন্তু সত্য জেনে, গুজব এড়িয়ে, প্রতিবাদ জানিয়ে আমাদের অবস্থান জানাতে পারি। যুদ্ধ নয়, শান্তি হোক। সত্য হোক, মিথ্যা নয়। লুণ্ঠন নয়, ন্যায়বিচার হোক এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২৫ দুপুর ১:০৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×