ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ কেবল রাজনৈতিক লড়াই নয়—এটি আজ মুসলিম জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার এক কঠিন লড়াই। যখন ইরান একা দাঁড়িয়ে ইসরায়েলের মতো আগ্রাসী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, তখন বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্র নিঃশব্দ দর্শক। কেন?
মুসলিম মানে কি শুধুই নাম?
আজ মুসলিম পরিচয় একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা কি সত্যিই মুসলিম, নাকি শুধু পরিচয়ের খাতায় নামমাত্র? আমরা যদি মুসলিম হই, তাহলে কেন ইরানের পাশে দাঁড়াতে পারি না—শুধু এ জন্য যে তারা শিয়া?
শিয়া-সুন্নি বিভক্তি: সাম্রাজ্যবাদের কৌশল
ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে, মুসলিম জাহানের বিভক্তির মূল চক্রান্তকারীরা সব সময় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা। তারা জানে, যদি মুসলিমরা এক হয়—শিয়া-সুন্নি বিভেদ ভুলে যায়, তাহলে দুনিয়ার কোনো সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তিই মুসলিমদের থামাতে পারবে না। ব্রিটিশরা “Divide and Rule” নীতি অনুসরণ করে ভারত বিভাজন করেছে, ফ্রান্স-আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যকে টুকরো টুকরো করেছে, আর আজ ইসরায়েল ও পশ্চিমারা শিয়া-সুন্নির মধ্যে ঘৃণা ছড়িয়ে মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করছে।
ইরান: একটি সাহসী মডেল
ইরান আজ শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, একটি আদর্শ। রাজনৈতিক মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু মুসলিম হিসেবে তারা যে আত্মমর্যাদা নিয়ে লড়ছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। শত্রুর মুখে দাঁড়িয়েও আয়াতুল্লাহ খামেনি যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন—তা আজ অনেক তথাকথিত ‘সহি মুসলিম’ রাষ্ট্র প্রধানদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, কীভাবে আদর্শে অটুট থেকে একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়।
কে শিয়া, কে সুন্নি—তা বড় কথা নয়
আল্লাহ একটি কুরআন দিয়েছেন, একটি রাসুল পাঠিয়েছেন, এবং বলেছেন—“তোমরা সবাই এক উম্মাহ, আমারই বান্দা।”
তাহলে আমরা কেন নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হবো? যে যুদ্ধ আজ চলছে, তা মুসলিমদের বিরুদ্ধে—শিয়া বা সুন্নিদের বিরুদ্ধে নয়।
যদি আজ আমরা এক না হই, তাহলে একে একে সবাই মরুভূমিতে হারিয়ে যাবো—সৌদি আরব হোক বা বাংলাদেশ, পাকিস্তান হোক বা মিশর। সৌদি তো আগেই তার ইসলামী মর্যাদা হারিয়েছে—পর্যটন আর প্রমোদ নগরী বানিয়ে এখন তারা ইসলামের উৎসস্থলকে বদলে দিচ্ছে।
সমাধান কী?
১-শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব ভুলে একটাই পরিচয়ে ফিরে যাও—"আমরা মুসলিম"
২-রাজনৈতিক স্বার্থের আগে উম্মাহর স্বার্থ
৩-সম্মিলিত মিলিশিয়া গঠন, তথ্য-যুদ্ধ এবং কূটনৈতিক ঐক্য
৪-ইসলামী শিক্ষার মূলতত্ত্বে ফিরে যাওয়া—সত্য, ন্যায় ও নৈতিকতা
শেষ কথা:
এই যুদ্ধ একদিন শেষ হবে, কিন্তু মুসলিম উম্মাহর এই বিভক্তি যদি চলতেই থাকে, তাহলে আমরা হারাবো শুধু ভূখণ্ড নয়—আমরা হারাবো আত্মপরিচয়, আত্মসম্মান, এবং হারাবো সেই ঐক্য যা একদা উসমানীয় সাম্রাজ্যকে অপরাজেয় করেছিল।
আজ সময় এসেছে নিজেদের প্রশ্ন করার—আমি কি শুধু নামমাত্র মুসলিম, নাকি সত্যিকার অর্থে ঐ উম্মাহর একজন, যাদের আল্লাহ এক করেছে, কুরআন এক করেছে, রাসুল (সা.) এক করেছেন?
আপনার মতামত আমাদের দরকার—শিয়া-সুন্নি বিভাজন ভুলে এক উম্মাহ গঠনের পথ কি সম্ভব? আপনি কীভাবে দেখছেন এই যুদ্ধ এবং মুসলিম জাহানের ভবিষ্যৎ? মন্তব্যে জানিয়ে দিন।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




