somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ধরে দিবানি’র মাশরাফি

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই ছিল ডানপিটে ধাঁচের। কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যের শুরুতেও বজায় থাকা সেই পাগলামীর কারণে ড্রেসিং রুমের সিনিয়ররা আদর করে ডাকতো ‘পাগলা’ নামে। পাগলা কখন যে কি করে বসে, কোন ঠিক নেই। অসংখ্যবার ইনিংসে ধ্বসের মধ্যেও লেজের দিকে নেমে পাগুলে ব্যাটিং করে স্কোরকে নিয়ে গিয়েছে সম্মানজনক পর্যায়ে।

এই পাগলাই ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে এক ‘পাগলা বাণী’ দিয়ে বসল। তখনকার ক্রিকেট বিশ্বে এই কথার গুরুত্ব কতটুকু ছিল বোঝা মুশকিল, কিন্তু ভারত ম্যাচের পর থেকে পাগলার এই বাক্য বিরানব্বুয়ে ইমরানের সেই অমর বাক্যের মত চিরন্তন হয়ে গেল।

যাঁরা বিরানব্বুয়ের বিশ্বকাপ মনে করতে পারেন, তাঁদের নিশ্চয় মনে আছে, প্রায় প্রতিটা ম্যাচে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ার শংকায় থাকা পাকিস্তান খেলতে নামলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ইমরান টস করতে নামলেন বাঘের ছবি আঁকা একটা সাদা টি শার্ট পরে।
ভাষ্যকার জিজ্ঞাসা করলেন, কি খবর ইমরান, বাঘের ছবি দেখছি?
ইমরান বললেন, আমি ছেলেদের বলেছি কর্নার্ড টাইগার এর মত খেলতে, তুমি জান কর্নার্ড টাইগার ইজ এ্য ডেঞ্জারাস থিং.. .. তো সেদিন পাকিস্তান টিম কর্নার্ড টাইগারের মতই খেললো এবং অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিল। এর পরের ইতিহাস সবারই জানা।

ইমরানের এই স্পিচটাই ক্রিকেট ইতিহাসে ‘কর্নার্ড টাইগার’ থিওরি হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে।

ইমরানের মত করেই যেন আমাদের পাগলা ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত ম্যাচের আগে বললেল, ‘যদি উইকেটে কিছু থাকে আর আামরা টসে জিতে ওদেরকে ব্যাটে পাঠাতে পারি, তা হলে‘ভারতকে ধরে দিবানি’। এবং তারপরের ইতিহাসও সবার জানা। নিজে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতকে হারাতে নেতৃত্বই দিলেন সদ্য কৈশোরত্তীর্ণ এই পাগলা। তার বোলিং তোপের মুখে ভারত করতে পেরেছিল মাত্র ১৯১ রান।

আজকের দিনে যখন বাংলাদেশ অহরহ বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে প্রায় বলে কয়েই জিতে যাচ্ছে, তখন সেদিনের সে জয় এবং তারও চেয়ে বেশি সেই ধরে দিবানি’র ধমকানির মাহাত্ম্য বোঝা সহজ নয়। মনে রাখতে হবে, এটা ছিল উপমহাদেশীয় পিচের একেবারে বিপরীত পিচে হওয়া এমন এক বিশ্বকাপ, যার আগের বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ নাকানি চুবানি খেয়ে পর্যদুস্থ হয়েছিল। অন্যদিকে ভারত ছিল বরাবরের মতই দর্পেভরা এক মহাতারকার দল।

পাগলার মত আরো দুয়েকজন তরুণের নেতৃত্বে আসা এই জয় দিয়েই বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের স্থান পোক্ত করে নেয়। আর তখন থেকেই শুরু হয় ভারতের বাংলাদেশ ফোবিয়া। এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে ভারত শুধুমাত্র দলের মহাতারকাদের উপর ভরসা করতে পারে না, ফিল্ড আম্পায়ার, টিভি আম্পায়ারের সাহায্যও লাগে তাদের।

আমাদের এই পাগলার নাম মাশরাফি বিন মোর্তাজা কৌশিক।

কলোনিয়াল এফেক্টের প্রভাবে সাধারণভাবে বাংলাদেশীদের চিরসঙ্গী যে হীনমন্যতা, তা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে হুঙ্কার ছাড়তে শেখে, তার পেছনে মাশরাফি এন্ড হিজ ইয়ং বিগ্রেড এর অবদান শতভাগ। এখন যে আমরা বলেকয়ে হারাতে পারি বিভিন্ন দলকে, সেই সংস্কৃতি তৈরীতেও মানসিক শক্তিটা ওই মাশরাফিই।

ক্যারিয়ারের শুরুতে পাগলা হিসেবে পরিচিত হলেও ক্রমেই মাশরাফির মধ্যে একজন সত্যিকারের নেতার ছায়া ফুটে উঠতে থাকে, যে দেশের জন্য নিবেদিত এবং দল ও টিমমেটদের প্রতি দায়িত্বশীল। আজকে তাই টি টোয়েন্টি থেকে তাঁর বিদায়ের ঘোষণায় হাহাকার ওঠে দেশজুড়ে আর সাকিব, তামিম বা নবাগত মিরাজ মোসাদ্দেকরা আলাদা করে বলে প্রেরণাময়ী এক ক্যাপ্টেনের কথা।

এখন বাংলার ছেলেরা মেয়েরা মাশরাফি হতে চায়।


কিন্তু আমরা বাঙালিরা কখনোই গুণীদের মর্যাদা দিতে পারিনি। জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের জন্য লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা যেমন এখনো সঠিক মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে পারিনি, তারই ধারাবাহিকতা টেনে নিয়ে যাচ্ছি শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সবখানেই। ক্রীড়াক্ষেত্রেতো অসম্মানিত করাটা একটা ঐতিহ্যই হয়ে দাড়িয়েছে।

যে মাশরাফির অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দল আজ নতুন বাংলাদেশ, আজ আমরা তাঁকে চাপে ফেলে, কুটকৌশলে মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই ক্রিকেটের একটা ফরম্যাট থেকে অবসরে যেতে বাধ্য করলাম। মাত্র ৩৪ বছর! বিশ্ব ক্রিকেটে বেশ কয়েকজন আছেন, যাদের অভিষেকই হয়েছে ৩৪ এর আশেপাশে। টি টোয়েন্টি হয়ত মূল ক্রিকেটে খুব বেশি প্রভাবশালী নয়, হয়ত মাশরাফি একদিবসীয় ক্রিকেটে খেলে যাবেন আরো কিছু দিন। তবু কেন এমন একজনকে অভিমান নিয়ে বিদায় বলতে হবে?

সার্জারির পর সার্জারির ধকল নিয়েও দেশের জন্য নিবেদিত অধিনায়কের বর্তমান দায়িত্বশীল অবয়বের পেছনে এখনও সেই ‘পাগলা’র ছায়া রয়ে গেছে বলে মনে হয়। এ জন্যই হয়ত এত অভিমান, এক বাষ্পরুদ্ধতা। তবুও তিনিতো শুধু ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন নন, তিনিতো জনগণের ক্যাপ্টেন। এখনও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অপরিহার্য সদস্য।

কেন অবসরে গেলেন, আমাদেরতো এখনও অনেককেই ‘ধরে দেওয়া’ বাকি আছে ক্যাপ্টেন!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:০০
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×