somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিদক্ষ কর্মী যেভাবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে...

১৮ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে- এই লাইনের ভাবসম্প্রসারণ করাটা মোটামুটিভাবে সবার শিক্ষাজীবনে বাধ্যতামূলক ছিলো। এর মাধ্যমে কিশোর মনে ধারণা দেওয়া হয় যে আপতকালীন বিপদাপদে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বিপদ দীর্ঘস্থায়ী নয়। শীঘ্রই এ বিপদ শেষ হয়ে সুদিন আসবে। যেমনটা মেঘের আড়াল থেকে সূর্য এসে সবকিছু আলোকিত করে দেয়।

কিন্তু সূর্যের উপস্থিতি সবসময় ইতিবাচক হয় না। বিশেষ করে কোনো প্রতিষ্ঠান, যেখানে দলবদ্ধভাবে কাজ করতে হয়। সেখানে কিছু কর্মী সূর্যের মত বিরাজ করে এবং একটা সময় তারাই প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে দৃশ্যমান হয়।

যেকোনো প্রতিষ্ঠানে যখন নতুন একটা ব্যাচ রিক্রুট করা হয়, তখন ওই ব্যাচের শতকরা ২০ থেকে ৩০জন হয় ইফিশিয়েন্ট, মোটামুটি ৫০ থেকে ৬০জন হয় গড়পড়তা আর ১০ থেকে ১৫জন হয় বিলো অ্যাভারেজ। বাকি ৫জন বা তার থেকে কম শতাংশ হয় হাইলি এফিশিয়েন্ট বা অতিদক্ষ। বলা ভালো দক্ষ এবং অতি উৎসাহী।

সাধারণভাবে এই অতিদক্ষ কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যাসেট হিসেবে কদর পায়। এরা খুবই দ্রুত কাজ শিখে নিতে পারে এবং প্রথমদিকে নিজের দক্ষতা প্রমাণে যেকোনো কাজেই লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে নাক বাড়িয়ে দেয়। এতে করে প্রতিষ্ঠানও আস্তে আস্তে তাদের উপরে নির্ভরশীল হতে থাকে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের উপরে দায়িত্বও বাড়তে থাকে। এ ক্ষেত্রে সকল প্রতিষ্ঠানের উর্ব্ধতন কর্তাদের একটা অমীয় বাণী আছে ‘তোমার বস তোমাকে বেশি কাজ দেয়, তার মানে এই না যে তোমার বস তোমাকে অপছন্দ করে, বরং তোমাকে কাজ দিয়ে ভরসা পায়, তোমার উপরে নির্ভর করে’....। প্রথম প্রথম এ কথা শুনে সে গর্বিত হয় এবং সে গর্বই এক সময় তাকে ‘হনু’তে রূপান্তরিত করে।

এই ‘হনু’ হওয়াটাই শেষ বিচারে প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর দু’ধারি তলোয়ার হয়ে দাড়ায়। একদিকে যেহেতু সকল দায়িত্ব এই গুটি কয়েকের উপরে বর্তাতে থাকে, সেহেতু অন্য সহকর্মীরা, যারা একটু ধীরে শেখে বা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অতি উৎসাহী নয়, তারা কাজের সুযোগ পায় কম, ফলে শেখার সুযোগও কমতে থাকে। যার দরুণ আস্তে আস্তে সে আইসোলেটেড হয়ে অকার্যকর কর্মীতে পরিণত হয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য বার্ডেন হয়ে দাঁড়ায়। আবার এই অতি উৎসাহী শ্রেণি যেহেতু কাজে ভালো হয়, প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্য-অপ্রাপ্য বিভিন্ন সুবিধাও তারা পেতে থাকে। ফলে অন্যরা তাকে ঈর্ষা করতে শুরু করে এবং নিজের অক্ষমতা ঢেকে একই রকম গুরুত্ব ও সুবিধা পাওয়ার জন্য উর্ব্ধতন কর্তাদের তোষণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সোজা বাংলায় যাকে ‘তেল দেওয়া’ বলে। অন্যদিকে, নিজেদের অতি আত্মবিশ্বাসের ফলে এই লোকেরা টিম তৈরীতে আগ্রহী হয় না এবং নতুন কোনো আইডিয়া গ্রহণে বা অন্যকে প্রাপ্য প্রশংসা দিতে অনুদার হয়ে থাকে। এ সব কারণে প্রতিষ্ঠানের এন্টায়ার পরিবেশ নষ্ট হয়।

সবচেয়ে ক্ষতিকর হয় যখন কোনো কারণে প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের কর্মীর অনুপস্থিতি অনিবার্য হয়ে পড়ে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক পারফর্মেন্সের ফলে এ সব যায়গায় প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিংয়ের চেয়ে ব্যক্তি-ব্র্যান্ডিং জোরালো হয় এবং নির্দিষ্ট বিভাগে ‘সেকেন্ড লাইন কমান্ড’ তৈরী হয় না। ফলে ওই কর্মীর অনুপস্থিতিতে ওই বিভাগে যে ধ্বস সৃষ্টি হয়, তা সামলাতে বেশ সময় লেগে যায়। যার ফলে প্রতিষ্ঠানকে সাফার করতে হয়।



আমার বাবা-মা দুজনেই সরকারী চাকুরীজীবি ছিলেন। এ কারণেই কিনা জানিনা, কিন্তু কর্মজীবন শুরুর কাছাকাছি আসার সময় থেকেই আমার একটা চিন্তা ছিলো যে প্রচলিত নয়টা-পাঁচটা অফিসের চাকুরী করবো না। সে লক্ষে এগিয়েও গিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় থেকেই একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থায় অপ্রচলিত কর্মসময়ভিত্তিক কাজে জড়িয়ে গিয়েছিলাম যেটা দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বাড়তে বাড়তে আমার মাস্টার্স শেষ হওয়ার সাথে সাথে পূর্ণকালীন হয়েও গিয়েছিলো।

কিন্তু আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় এনে বছর দুয়েক পর ওই সংস্থা ছেড়ে দিয়ে প্রচলিত এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়ে ‘সভ্য’ হলাম। আমার কাজ করা বিজ্ঞাপনী সংস্থায় উপরে বর্ণিত এক্স-ফ্যাক্টরগুলো কার্যকর ছিলো না, আমি অন্তত দেখিনি। সে হিসেবে নতুন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীজীবনের আগে আমার এ বিষয়ে খুব একটা ধারণা ছিলো না। আমিও খুব সুন্দর মত ভেবেছিলাম- আগামী দশ বছরে এই প্রতিষ্ঠানে আমি এই করবো, সেই করবো, আমিও এক ‘হনু’ হব...।

কিন্তু এই দশবছরে দেখলাম আমি আসলে প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে ‘বিলো অ্যাভারেজ’ এর চেয়েও নিম্নমানের। বর্তমান কর্পোরেট সংস্কৃতিতে ‘তোষণনীতি’ই যে মূলনীতি সেটা আমি বুঝতে চাই না কোনোভাবেই।

এরকম এক কর্পোরেট অফিসের ফ্লোর ম্যানেজার প্রত্যেকদিন সকালে কাজ শুরুর আগে ফ্লোরের সবাইকে ডেকে একটা কৌতুক বলেন। তার উদ্দেশ্যটা সুন্দর- সবাই যেনো হাসিখুশিভাবে অফিসের দিনটা শুরু করে। যেহেতু তিনি ফ্লোর ম্যানেজার, সেহেতু নিয়ম অনুযায়ী বাকি সবাই তাঁর অখাদ্য কৌতুক শুনেও হেসে এ-ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ে।
এমনই একদিন ফজলু হাসছে না দেখে বজলু কনুই দিয়ে চোখা একটা খোচা দিয়ে বললো, কি রে হাসছিস না যে?
বজলু গম্ভীর গলায় বললো- আমার আর হাসা লাগবে না, আমি অন্য সেকশনে ট্রান্সফার হয়ে গেছি!!

এটা একটা কৌতুক। আমার সমস্যা হলো, বদলী না হলেও এ রকম ক্ষেত্রে আমার হাসিতো আসেই না, উল্টে এইসব ছ্যাবলামি দেখে রাগে শরীর কিড়কিড় করে। চোখেমুখে তা প্রকাশও পেয়ে যায়। ফলাফলও হাতেনাতেই দেখছি। গত দশবছরে দুইবার ফ্লোর আর একবার ভবন বদলালেও চেয়ার সেই আগেরটাই রয়ে গেছে!!!

এইটা আমার চাকুরির দশবছরপুর্তি পোস্ট। গত কয়েকদিনের ধারা অনুযায়ী করোনা ভাইরাস ব্যতিরেকে অন্যকিছুর উপরে পোস্ট দেওয়া মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে বলে ইন্টারন্যাশনাল ব্লগার্স ফাউন্ডেশন ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু কি করবো, আমি তো যেখানে হাসতে হয়, সেখানে হাসতে পারি না।

এখন চাকরগীরির দশবছর পুর্তি উপলক্ষে সবাই আমাকে মিষ্টি পাঠান।

ছবি কৃতজ্ঞতা: যতারীতি ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৪৩
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×