somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় বাঙালি, তুমি আর কবে বুঝবে নিজের ভালোটা?

০২ রা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্টেশন লিভ করতে পারবো না এবং ‘চাহিবামাত্র অফিসে হাজিরা দিতে বাধ্য থাকিবো’ এই শর্তে সরকারি ছুটির সাথে সাথে অফিসে আমার ডিভিশনকেও ছুটি দেওয়া হয়েছিলো। এবং ওই ‘চাহিবামাত্র...’ ক্লজ অনুযায়ী গতকাল অফিসে গেলাম।

আমার বাসাটা একটা আবাসিক এলাকার মধ্যে কানাগলির শেষের দিকে। তাই বাসা থেকে নিচে নেমে সামনে না গেলে দুনিয়ার হাল হাকিকত বোঝা মুশকিল আছে। গত কয়েকদিনের সশ্রম বাসাদণ্ডের ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাইরে যাওয়া হয়নি, আমি তাই মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, হেলমেট দিয়ে মুখচোখহাতমাথা ঢেকে ছুটলাম অফিস পানে।

তারপর বলাই বাহুল্য যে রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখে যারপরনাই হতাশ! রাস্তায় রাস্তায় মানুষ, গাড়ি, রিকশা, মোটরসাইকেল, কি নেই? দরিদ্রদের সাহাযার্থে কিছু মানুষ কিছু খাবারদাবার বা স্যানিটাইজার দিচ্ছে, ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য টিসিবির ট্রাকও দেখলাম। সবাখানেই মানুষ গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন জান বাঁচলে সামাজিক দুরত্বের নাম...

বাংলাভাষা বড়ই অদ্ভুত, এ ভাষার মত বিপরীতমূখী প্রবাদ অন্য ভাষায় আছে কি না জানিনা। একদিকে বলা হচ্ছে- ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’ অন্যদিকে বলা হচ্ছে ‘দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’। এই বলছে ‘সকাল দেখে যায় দিন চেনা’ আবার বলছে ‘সব ভালো যার শেষ ভালো তার’। বলা হয় ‘কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলেনা’ আবার বলা হচ্ছে ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারো’। ঠিক একইভাবে ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ এর উল্টো কথা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ লালসালুতে বলেছেন ‘জান না থাকলে ধান দিয়ে কি হবে?’

এত বৈপরীত্যের কারণেই বোধহয় বাঙালির একই যাত্রায় দুনো ফল হয়। করোনার ভয়ে কেউ ঘরে বন্দী, কেউ কেউ রাস্তায়। আমরা বীর বাঙালি, ঘরে আটকা থাকার বান্দা না, দিনে দিনে তাই রাস্তায় বাড়ছে ভীড়। মিজ সাইয়েমা হাসানের মত প্রশাসক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এমনিতে ‘অমুকের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ জাতীয় শ্লোগানগুলো আমাদের জাতীয় শ্লোগান!


সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাকে শুধু ‘ভয়াবহ’ বা ‘মারাত্মক’ শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। প্রতিদিন হাজারের ঘরের নামতা পড়ে পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় ইতালি থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্য, স্পেন এমনকি যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত এখন বলছে যে প্রথমদিকে করোনাকে গুরুত্ব না দেওয়াতেই তাদের এই অবস্থা। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি ও সুবিধা নিয়েও দুদিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন যে সেদেশে যদি মৃতের সংখ্যা ২ লাখের মধ্যেও ধরে রাখা যায়, সেটাই হবে সাফল্য!! পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই ২২ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। এতকিছুর পরও বাঙালির যেনো হুশই হচ্ছে না।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার একমাত্র উপায় যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, আমরা তার ধারও ধারছি না। ভাইরে, আমাদের দেশে গতকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৫৪ জন আর মারা গেছেন ৬ জন। সে আত্মতৃপ্তিতে যদি ঢেকুর তুলতে থাকেন তবে এই তথ্যটাও জেনে রাখুন যে এ বছরের মার্চে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ বা সর্দিকাশি, গলাব্যথা থেকে শুরু করে ব্রঙ্কাইটিস, ব্রঙ্কুইলাইটাস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী গত বছরের মার্চের তুলনায় ১৪ গুণ বেড়েছে!! (প্রথমালো)

এর পাশাপাশি ইদানিং খবরে দেখা যাচ্ছে যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ জ্বর, সর্দিকাশি এবং শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মারা যাচ্ছে। আইইডিসিআর বলছে ওটা করোনা না। এখন আপনি আইইডিসিআর এর বক্তব্যকে শীরোধার্য মনে করে রাস্তায় রোদ খেতে বের হন, পাড়ার চায়ের দোকানে গুলতানি মারেন, আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সমস্যা হলো, আপনি তো অন্যদেরকেও বিপদের মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন! আপনি বীর হতেই পারেন, কিন্তু আমি তো তা নই।

সরকার ভুল করেছে, সঠিক করেছে, কিন্তু কিছু একটা তো করেছে। আপনি কি করেছেন? সরকার এখন ঘরে থাকতে বলেছে, আপনি ঘরে থাকবেন আপনার দায়িত্বে। কিন্তু আপনি তো থাকছেন না, সরকারতো পাছায় বাড়িও দিতে পারছে না, এক কান ধরাতেই দেশ তোলপাড়...


অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের অনেক দেশে কম জনসংখ্যার কারণে এম্নিতেই রাস্তায় মানুষ দেখা যায়না, তবুও তারা লকডাউন করে বসে আছে। অন্যদিকে আমাদের দেশে আয়তনের তুলনায় জনঘনত্ব অনেক বেশি। ফলে ওয়ান পার্সেন্ট মানুষও যদি ঢাকা শহরের রাস্তায় বের হয়, সেটাও অনেক। বল এখন আপনার কোর্টে।

সারাজীবন তো পরের ভুল ধরতে ধরতেই ‘বুইড়া’ হয়ে গেলাম, বহুত চা সিগ্রেটও গিললাম। বিউটি বোর্ডিং থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আড্ডাবাজিও কম হলো না, এবার একটু ক্ষ্যামা দেন। এখনও যদি নিজের ভালোটা না বুঝতে পারেন, তাইলে ভবিষ্যতে আর বুঝার সুযোগও পাবেন না। বইল্যা দিলাম।


ছবি: প্রথম আলো অনলাইন
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৩২
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×