প্রতিভা-১
ইতিহাস বিজ্ঞান ধারাপাত অঙ্ক’র
একগাদা বই পড়ে ও-পাড়ার শঙ্কর।
মাথা নয় যতটুকু পড়ে বই ততোধিক
সারাদিন পড়াশুনা, চেহারাটা লিকলিক।
রামপাল শিক্ষক তারে যিনি পড়াতেন
প্রতিভাটা দেখে তিনি মাঝে মাঝে ডড়াতেন।
এত জ্ঞান কোথা পেলো এতটুকু ভাণ্ডে?
রামপাল ভাবেন বসে প্রতিদিন সানডে।
প্রতিভা-২
সুকুমার মণ্ডল ঝানু পাকা নকলে
ও পাড়ার ছেলেবুড়ো চিনে তাঁকে সকলে।
টুকটাক কাটাছেঁড়া ছিল তাঁর নলেজে
পাশ করে তাই তিনি চলে যান কলেজে।
কলেজের মোটা বই দেখে বলে বাপরে!
এতসব পড়াশুনা কী যে অভিশাপরে!
মনটারে ঠিক করে কাঁচি লয়ে আফটার
কচাকচ কেটে ফেলে বড় বড় চাপটার।
ছড়াকারের ছড়া
এক.
সুকুমার বড়ুয়া
ঝানু পাকা পড়ুয়া
যতসব কথা বলে
সবকিছু ঘরোয়া।
ছড়া-গড়া মনটা
নেই উৎকণ্ঠা
সপ্তাহে মনে পড়ে
দুই চার ঘণ্টা।
দুই.
ছড়া কাটে ছড়াকার
মুখ ভরা দাঁড়ি তার
পল্টনে লোকটারে
দেখা যায় বার বার।
কী যেন কী নাম তার
পড়ে বই নামতার
এক টাকা পাঁচ সিকে
এক দুই তিন চার।
হতাম যদি
হতাম যদি আমি কোনো গাঁও গেরামের চাষা
মাটির সাথে থাকতো আমার নিগূঢ় ভালোবাসা।
নদীর পারে থাকতো আমার ছোট্ট সোনার গাঁও
উজান-ভাটি স্রোতের টানে চলতো আমার নাও।
মাঠের পাশে থাকতো পাতা মাচান-বাঁধা খড়
বাড়ির পাশে থাকতো আমার ছোট্ট গোয়ালঘর।
গোয়াল ভরা থাকতো গরু আথাল ভরা গাই
সারা গাঁয়ের মানুষ আমায় ডাকতো কৃষান ভাই।
লাঙ্গল কাঁধে মাঠে যেতাম সূর্য ওঠার আগে
স্বপ্ন আমার সফল হয়ে ফুটতো নবীন রাগে।
দাদুর পায়ে খড়ম
দাদুর পায়ে খড়ম
নাকের ডগায় চশমা আঁটা
মেজাজ বড় গরম।
মাথায় বড় পাগড়ি আঁটা
লম্বা বেজায় পাতলা গা’টা
দুই হাতেতেই লাঠি-সোটা
বন্ধু যেন পরম।
বন্ধু তাহার জুটলো আরেক
বয়স তাহার কুড়ি চারেক
মুচকি হেসে ডাকলো বারেক
মেজাজটা তার নরম।
দিন কয়েক হয় মরছে দাদি
তাইতো দাদু করবে সাদি
বন্ধু শুনে খবর আদি
বললো, ছিঃ ছিঃ শরম!
বিদ্রোহী
পিঁপড়েরা সব জোট করেছে
রাজার কাছে বিচার চাই,
দেখছো না তাই এক মিছিলে
চলছে কেমন চলনটাই!
ওদের রাজা বেজায় পাজি
ওদের প্রতি নজর নেই,
রাজা থাকেন তিনতলাতে
ওদের বাসা গাছতলাতেই।
ওরা ফলায় শস্য-ফসল
রাজা করেন হুকুমজারি,
রাজবাড়িতে থাকবে জমা
দেখছো কেমন অত্যাচারী!
নিত্য রাজা খায় যে পোলাও
মাংস চিনি ঘি লুচি
হাভাতে সব শ্রমিকেরা
ওদের বুঝি নেই রুচি!
ওদের রাজা অত্যাচারী
তাই করেছে বিদ্রোহ
দেখছো না তাই এক মিছিলে
কেমন চলার আগ্রহ!
বখেটে
টাকা নেই পকেটে
লোকটা কি বখেটে!
বাসে ভাড়া না দিয়েই
চলে আসে ফকেটে।
মালপানি বাঁকাতে
খুব পারে তাকাতে
সারাদিন চলাফেরা
ডেমরা টু ঢাকাতে।
পয়সাটা না দিয়েই গাড়িতে
চট করে চলে এসে বাড়িতে
বয়কে সে ডেকে কয়,
দে কী আছে হাঁড়িতে
সিনেমায় চলে যায়
খেয়ে তাড়াতাড়িতে।
আমরা আছি
ঘুরছে লাটিম ঘুরতে থাকে ঘুরুক
লাগছে আগুন পুড়তে থাকে পুড়ুক।
মরি বাঁচি আমরা আছি
উড়ছে ধোঁয়া উড়তে থাকে উড়ুক।
অস্ত্রপাতি ধরছে যারা ধরুক
লাগছে লড়াই লড়তে থাকে লড়ুক
মরি বাঁচি আমরা আছি
মরছে মানুষ মরতে থাকে মরুক।
অভাব
অভাব অভাব দারুণ অভাব
পালটে গেলো লোকের স্বভাব
রাঘববোয়াল ফস্কে গেলো
চিংড়ি হলো দেশের নবাব।
করছে যে যা করে করুক
মরছে যারা মরে মরুক
চুনপুঁটিরা লেজ নাড়িয়ে
খাচ্ছে আহা মজার কাবাব।
স্বপ্ন
তুই যদি মা রানি হতিস কত্ত ভালো লাগতো!
আমি হতাম রাজকুমারী, চাকর-নফর থাকতো।
আব্বা যেতেন সিংহাসনে, আমি যেতাম তাঁর পেছনে
উজির-নাজির পেয়াদা-পাইক কত্ত ভালোবাসতো!
আমি যখন ছাদের পরে চুল শুকাতাম গোসল করে
দূর থেকে সব গরিব প্রজা আমায় চেয়ে দেখতো।
বলতো সবে রাজার মেয়ে, অনেক ভালো সবার চেয়ে
বল্ না গো মা, এসব কথা কেমন ভালো লাগতো?
বাড়ি ভরা দালান হতো, আব্বা কত ভোজ বসাতো
তখন কি আর ছাদভাঙা এই খড়ের কুটির থাকতো?
হাইজ্যাকার
হাইজ্যাকারের পকেট ভরা একশ টাকার নোট
তাই সে পরে জাপান থেকে তৈরি করা স্যুট।
বাপ যে ওদের কামলা খাটে, নেই পরনে শার্ট
ছেলেগুলো পয়সা কামায়, তাই তো এতো ডাঁট।
বাপের মাথায় টাক পড়েছে, বব কাটানো চুল
ওদের মতো ছেলেগুলোর বাপ হওয়াটাই ভুল।
অবৈধ ইচ্ছে
ইচ্ছে করেই ওরা আমায় মারতে আসে ঐ
অনিচ্ছাতে এখন আমি পালিয়ে যাবো কই?
ইচ্ছে করেই ওরা আমায় দিচ্ছে বহুত গাল
ইচ্ছে করে ওরা আমার ভাঙছে ভাতের থাল।
ইচ্ছে করেই ওরা আমার টানছে ঘরের খুঁটি
ইচ্ছে করে ওরা আমার নিচ্ছে সকল লুটি।
ইচ্ছে ওদের আমার ঘাড়ে থাকবে ওরা চেপে
মুছিয়ে দিবে মিষ্টি হাসি চুনকালিতে লেপে।
ইচ্ছে করেই ওদের সাথে মিষ্টি কথা কই
ইচ্ছে করে তবু ওরা মারতে আসে ঐ।
খাজনাপাতি
পাট কেটেছি ক’দিন হলো, মাত্র ক’টা দিন-
খাজনাপাতি সবই দেবো, সবুর করে নিন।
আজো জমির ধান পাকে নি, চাল-ডাল নেই ঘরে
পাঁচ বছরের কচি মেয়ে ভুগছে কালা জ্বরে।
কৃষানি আজ ক’দিন হলো খায় নি কিছু ভাই
হালের বলদ গেছে মারা, কাঁদছে শুধু তাই।
কলা দিয়ে জাউ রেঁধেছি, মরিচ বেটেছি
এই কটা দিন এমনি করে চালিয়ে যেতেছি।
উলুর পাকে ঘুরছে মাথা, খাটছি সারা দিন
খাজনাপাতি সবই দেবো, সবুর করে নিন।
দুর্ভিক্ষের ছড়া
গল্প শোনো ছোট্ট খুকু, গল্প শুনে হাসতে মানা
ক্ষুধার দেশে খোদার মানুষ ক’দিন হলো খায় নি খানা।
থাকার ঘরের চাল ভেঙেছে, গাছতলাতে বাসা
ভুলেই গেছে দেশের মানুষ মিষ্টি করে হাসা।
পায় নি মানুষ খাবার খেতে একটা রুটি, একটু ডাল
মরছে মানুষ জঠর-জ্বালায়, চাল-বাজারে নেই যে চাল।
দেশের রাজা টানছে গাঁজা, ছড়ান কথার বুলি
রাজপুতনার মোটর গাড়ি উড়ায় পথের ধূলি।
যে দেশে লোক ভাত না পেয়ে পথে-ঘাটে জীবন খোয়ায়
ঠিক সে দেশের রাজপুতেরা প্যারিস থেকে কাপড় ধোয়ায়।