'জেড-ফোর্স' ছিল এক নম্বর সেক্টরের ফ্রন্ট-ফাইটার মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ, যার কমান্ডার ছিলেন ততকালীন মেজর জিয়াউর রহমান; 'জেড-ফোর্স' ১ নং সেক্টরের অধীনে ছিলেন। 'জেড-ফোর্স' ছিল মুলত: বেংগল রেজিমেন্ট ও ইপিআর সদস্যদের নিয়ে; এঁদের বিরাট ইতিহাস: চট্রগ্রামের কুমিরায় এঁরা পাকি বাহিনীর সাথে প্রথম মুখোমুখী যুদ্ধ করেন ২৭ শে মার্চ; পরের নয় মাস এঁরা এক নম্বর সেক্টরে অনবরত সন্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের শেষ দিকে, এই বাহিনীর একাংশ মেজর মীর শওকত আলীর সাথে ৫ নং সেক্টরে চলে যান; বাকী অংশ ১৬ই ডিসেম্বরের দিন আবার চট্রগ্রাম অভিমুখে বাড়বকুন্ডে ও কুমিরায় ছিলেন; তবে, তখন অফিসিয়েলী নাম 'জেড-ফোর্স' ছিল না।
প্রথমদিকে মেজর জিয়া, মেজর রফিক, মেজর শওকত, ক্যা: মাহফুজ, ক্যা: এনাম, ক্যা: শামসু, ক্যা হামিদ, ক্যা: ভুঁইয়া, ক্যা: অলি 'জেড' এর কমান্ডিং এ ছিলেন; পরে, মেজের রফিক, মেজর শওকত, ক্যা: এনাম, ক্যা: ভুঁইয়া অন্য ফোর্সের কামন্ডিং এ চলে যান। যুদ্ধের মাঝামাঝি যোগদেন ক্যা: আলী ও লে: খালেদ।
'জেড-ফোর্স'এর এক বিচিত্র সংযোজন ছিল তার স্টুডেন্ট প্লাটুন: বিচিত্র বলছি এই প্লাটুনের কম্পোজিশনের কারণে; স্টুডেন্ট প্লাটুন নাম হলেও, এর মাঝে ছিলেন একজন কৃষি-শ্রমিক, একজন বেংগল রেজিমেন্টের হাবিলদার, একজন ইপিআর, একজন ব্যবসায়ী ও একজন চাকুরীজীবি। ৩৮ জনের এই প্লাটুনের বাকীরা ছিলেন মুলত কলেজের ছাত্র: চট্রগ্রামের নিজামপুর কলেজ, সিটি কলেজ, চিটাগং কলেজ ও নাজিহাট কলেজের ছাত্র; ৩ জন ছিলেন স্কুলের ছাত্র; ২২ জন ছিলেন ছাত্রলীগের, ১১ জন ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত; পাঁচজন মোাটামুটি নিরপেক্ষ, কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নন; আমি নিজকে সোস্যালিস্ট মনে করতাম, কিন্তু ছাত্র ইউনিয়নের সাথে আমার কোন যোগসুত্র ছিল না; কলেজে পড়াকালীন আমি 'চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের' লোকদের কিছু কাজ করে দিতাম।
এই বিচিত্র গ্রুপ, আমরা এক সাথে মাত্ভুমির জন্য যুদ্ধ করেছি, সব সময় যুদ্ধের সাথী, একমন-একপ্রাণ, এক মায়ের ছেলে। যুদ্ধে স্টুডেন্ট প্লাটুন ৫ জনকে হারিয়েছেন; আপনজন হারিয়ে আমি এঁদের কাঁদতে দেখছি, রাজনীতি করতে দেখেছি, দেখেছি সময়ের সাথে সাধরণ ছাত্র কি করে করে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য ইস্পাত-কঠিন সৈনিকে পরিণত হয়েছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৫৬