বাংলা লেখালেখির জগত ব্রিটিশআমলের পর থেকে কখনোই বাঙালি মুসলমানদের অনুকূলে ছিল না। ছিল না ব্লগস্ফিয়ারও। অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশবিভাগের পর পাকিস্তানী আমলে আমাদের বাংলা ভাষায় ফররুখ আহমদ, গোলাম মোস্তফার মত কবিদের আবির্ভাব হয়েছিল। তৎকালীন সময়টি লেখালেখির জগত মুসলমানদের অনুকূলে থাকলেও ৭১ এর পর পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়ে যায়, কারণ প্রকাশনা সংস্থাগুলো র এর কব্জায় চলে যায়, যেভাবে এদেশের পোষাকশিল্পও তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। সাহিত্যজগত কিরকম লেখা পেশ করবে, তা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ওপর। ব্রিটিশআমলে নজরুলের বিদ্রোহী সত্ত্বাকে কলকাতার ব্রাহ্মণ্যবাদী বেড়ালগুলো কটাক্ষ করতো, কারণ তার কবিতাগুলো ছিল তৎকালীন পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে লেখা। তারপরও নজরুল টিকে আছেন, কারণ বাঙালি মুসলমানদের রক্তে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বীজ থাকলেও বাঙালি হিন্দুর মধ্যে না থাকায় তাদের নিকট নজরুলের শ্যামাসংগীত বাদে বাকিগুলো অপ্রাসঙ্গিক।
খনার বচনের কথা অনেকেই শুনেছেন। খনা ছিল একজন অনার্য নারী। অধিকাংশের মতে তার আদিনিবাস ছিল শ্রীলঙ্কা। তার পান্ডিত্য তৎকালীন আর্য ব্রাহ্মণদের তুলনায় জ্যোতির্বিদ্যায় তার পান্ডিত্য বেড়ে যাওয়ায় তার শ্বশুর আরেক গণিতবিদ ভাস্করাচার্যের নির্দেশে তার জিভ কেটে নেয়া হয়। এখন এই হলো ব্রাহ্মণ্যবাদ। যেখানে অর্থব অযোগ্য ব্রাহ্মণকে জাতে তোলার জন্য যোগ্যতাসম্পন্নকে করা হয় প্রতিহত। একারণে মুসলমানরা ৭০০ বছর প্রত্যক্ষভাবে বাংলা শাসন করলেও, সাহিত্যঙ্গন মুসলমান রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং কবি সাহিত্যিকদের লেখালেখিতে পরিচালিত হলেও তারাই ব্রিটিশআমলে কলকাতাশাসিত ভারতে পিছিয়ে পড়ল! কিন্তু পরবর্তীতে বাঙালি মুসলমানগণ একটি দেশ একটি স্বাধীন ভূখন্ড পেলে তারা আবার দাঁড়াতে সক্ষম হয়। কলকাতার মুসলমানদের চাকরিই দেয়া হয় না। যদি কলকাতার সরকারকে এজন্য অভিযুক্ত করা হয় তারা মুসলমানরা পড়াশোনা করে না বলে পাশ কাটিয়ে যায়। আসলে বিষয়টি হলো ব্রাহ্মণ্যবাদ, যা কলকাতায় আছে সেজন্য সেখানে মুসলমানদের কোন অধিকার নেই। বিপরীতে বাংলাদেশে ব্রাহ্মণ্যবাদী আবর্জনা নেই বলে সেখানে মুসলমানরা স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে।
মুসলমানরা সেখানে পড়াশোনা করতে পারে না। কারণ যেখানে বাংলাদেশে আওয়ামী সরকার আসার পর ৫০ জন হিন্দু শিক্ষক প্রকাশ্যে শ্রেণীকক্ষে দাঁড়িয়ে ইসলামকে কটাক্ষ করেছে, সেখানে কলকাতার পরিস্থিতি কি হতে পারে তা বলাই বাহুল্য। পরিবেশ যেখানে বিষাক্ত, সেখানে বেড়ে ওঠা অসম্ভব।
বাংলা ব্লগস্ফিয়ার তৈরী হয়েছিল হিন্দুত্ববাদের বিষবৃক্ষে পানি ঢালার স্বার্থেই। ভারতের বিভিন্ন ফেসবুক পেজ আমি দেখেছি, সেদেশের হিন্দুরা কিভাবে কথায় কথায় ইসলাম, মুসলিম এবং নবী পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার শানে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাদের কথাবার্তার সাথে সামুব্লগের আসিফ মহিউদ্দীনদের মতো ব্লগারদের কথাবার্তার কোনই তফাৎ নেই। পাকিস্তানী ব্লগারদেরও আমি দেখিনি হিন্দুধর্ম নিয়ে সেভাবে আঘাত করতে।
ব্লগস্ফিয়ারের গত একবছর আগেও যা ঘটেছে তা কল্পনার বাহিরে। ভারতবর্ষের মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব গরল এখানে উদগীরিত হয়েছে ইতিহাস এবং সাহিত্যের নাম ভাঙিয়ে, তা কেবল ভারতের শিবসেনা বজরং দলের ওয়েবসাইটেই স্থান পেতে পারে।
একজন ব্লগার এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। তিনি রাজদরবার।
একটু আগেই বলেছি, যোগ্যকে প্রতিহত করেই অথর্ব নপুংসকেরা তাদের ব্রাহ্মণ তকমা নিয়ে টিকে থাকে। তারপরও রাজা সর্বদা রাজাই থাকবে। এদেশের মুসলমানরা বাজার থেকে চার পাঁচকেজি গোশত কিনে বাড়ি নিতে দ্বিধা করে না, কিন্তু কলকাতার ব্রাহ্মণরা একটি ডিমও পুরোটা খেতে পারে না। আচরণে বংশের পরিচয়। বোঝা যায় কার দেহে রয়েছে দালালির বিষাক্ত বীজ, আর কার দেহে প্রবাহিত সিংহাসনে আসীন সম্রাটের লোহিতসুধা। সে যাই হোক, যে বিপ্লব কান্তির শিবসেনামার্কা কমেন্টগুলোর বিরুদ্ধে কেউ শক্ত প্রতিবাদ করতে পারেনি, সেই বিপ্লব কান্তি কোনরকম আক্রমণ ছাড়াই রাজদরবারের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। যে চীনা নাস্তিক দালালেরা বাঙালি মুসলমানদের মেধার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, কলকাতার নিকট মাথানত করে তারা রাজদরবারের পোস্টের বিরুদ্ধে কোনরকম যুক্তি দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়। এটা তাদের বুঝতে হবে, মানতে হবে যে মুসলমানরাই বাংলা ভাষা এবং ভূমির প্রকৃত রাজা। প্রথমআলোতে সামহোয়্যার ইন ব্লগ নিয়ে প্রতিবেদনে যে নষ্ট কবির নীলমাথার ছবি ছাপা হয়েছিল সেই নষ্ট কবি রাজদরবারের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণে শিবসেনার এজেন্ট হওয়ার দায় মাথায় নিয়ে নতমস্তকে বিদায় হয়। রাজদরবার ভাই, আপনার যোগ্যতাই টোলের মূর্খ সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের নিকট আপনাকে শত্রু করে তুলেছে। তাদের দালালদের নিকট আপনাকে শত্রু করে তুলেছে। আপনাকে সামু ব্যান করেছে তবু আপনি আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। আপনার পোস্টগুলো বেঁচে থাকবে ব্লগীয় ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে অব্যর্থ শমসেরের ন্যায়। যারা আপনাকে ব্যান করিয়েছে তারা মূর্খ অথর্ব। তাদের যোগ্যতার বালাই নেই দেখে তারা আপনাকে ব্যান করিয়েছে।
রাজদরবারের প্রায় সব পোস্টগুলোই আমি গুগল ক্যাশ থেকে সংগ্রহ করেছি। তার কিছু মাস্টারপিস নিয়ে আমার এ সংগ্রহ।
http://www.mediafire.com/?tdc0yebsaulscrc
ইচ্ছা আছে তার গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলো একে একে ব্লগে প্রকাশ করার।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:৫১