ছোট বেলায় কত মজার মজার গল্প, নীতিগল্প শুনেছি।
আমার এক কাজিন তার বাচ্চাকে নিয়ে বিদেশ থেকে বেড়াতে আসে। বাচ্চাটি সে দেশের প্রাইমারী লেভেলে পড়াশুনা করে। একদিন আমি বাচ্চাটিকে এরকম একটা গল্প শুনাই। জানতে চাই তার কেমন লেগেছে। তার উত্তর শুনে একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। সেই সূত্র ধরেই আজকের লেখাটির অবতারণা।
ছোটবেলায় শোনা গল্পগুলির মধ্যে ছিল, সেই শেয়াল আর বাঘের গল্প, যেখানে বাঘ খাঁচার মধ্যে বন্দী থাকে। বাঘের অনুনয়ে একটা মানুষ খাঁচাটি খুলে দিলে বাঘ মানুষটিকে খেয়ে ফেলতে চায়। পরে এক শেয়াল এসে কিভাবে বুদ্ধি করে সেই বাঘটিকে আবার সেই খাঁচার ভেতরে বন্দী করে ফেলে।
অথবা সেই সারস আর শেয়ালের গল্প। শেয়াল কে দাওয়াত দিয়ে, দেয়া হয় এক কলসের ভেতরে রাখা খাবার, যেটা শেয়াল খেতে পারেনা। প্রতিশোধ নিতে শেয়াল পরে সারস কে দাওয়াত দিয়ে খেতে দেয় চিতানো থালায়, যেটা সারস ও খেতে পারে না।
কিংবা সেই সিংহ আর খরগোশের গল্প। কথা থাকে প্রতিদিন সিংহের কাছে একজন করে পশু পাঠানো হবে তার খাবার হিসেবে। কিন্তু একটা খরগোশ কিভাবে সিংহটিকে বোকা বানিয়ে তাকে একটা কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলে।
ফিরে আসি বাচ্চাটির দেয়া উত্তরে। আমি শেয়াল আর সারসের গল্পটি তাকে শুনিয়ে জানতে চেয়েছিলাম এটি তার কেমন লেগেছে। মুহূর্তেই, তেমন কোন চিন্তা না করেই বাচ্চাটি উত্তর দিল "দিস ইজ নট ফেয়ার। টু ফ্রেন্ডস আর চিটিং ইচ-আদার"
আমি একটা ধাক্কার মত খেলাম। সত্যিই তো। এই রকম গল্পের ছলে আমরা আমাদের বাচ্চাদের প্রতারণা, মিথ্যা বলে ধোঁকা দেয়া ইত্যাদি শেখাচ্ছি না তো?
সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি ঢুকে যাবার পেছনে ছোটবেলায় শেখা এইসব গল্পের কোন ভূমিকা নেইতো?
শিশুরা ফুলের মত। তাদের কাছ থেকে কলুষতা তথা সংসারের হিংসা-দ্বেষ, নোংরামী, স্বার্থপরতা, লোভ, প্রতিশোধপরায়নতা, প্রতারণা এগুলো যত দূরে রাখা যাবে, তার সৌরভ তত বেশী স্নিগ্ধ হবে, সমগ্র বাগানকে মোহিত করবে।
শিশু মনস্তত্ত্ব নিয়ে যারা কাজ করেন তারা কি এটা নিয়ে ভেবে দেখেছেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪৭