বরিশাল শহরের একটি স্কুলে গতকাল বৃহস্পতিবার ক্লাস চলাকালে শিশুদের মধ্যে বিনা মূল্যে 'গ্লুকন-ডি' নামক গ্লুকোজ পাউডার বিতরণ করে বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড। এগুলো নষ্ট ও মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এমনকি ওই গ্লুকোজ খেয়ে দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে বিক্ষুব্ধ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা হামলা চালিয়ে ট্রান্সকমের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
ট্রান্সকমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত থেকে আমদানি করা এ গ্লুকোজের প্যাকেটে কেবল উৎপাদনের তারিখ দেওয়া আছে। এক বছর মেয়াদ ধরলে এখনো তা শেষ হতে এক মাসের বেশি বাকি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডর একটি গাড়ি গতকাল সকাল ৯টার দিকে নগরীর পূর্ব বগুড়া (কবি জীবনানন্দ দাশ) রোডের মলি্লকা কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসে। কম্পানির লোকজন শ্রেণীকক্ষ থেকে চেয়ার-টেবিল নিয়ে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। শ্রেণীকক্ষে শিশুদের বিনা মূল্যে দেওয়ার পাশাপাশি এ টেবিল থেকে অভিভাবকদের কাছে গ্লুকন-ডি বিক্রিও করা হচ্ছিল।
শিশু শ্রেণীর ক্লাস ছুটি হওয়ার ১৫ মিনিট বাকি থাকতেই সকাল পৌনে ১০টার দিকে কম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তা গ্লুকন-ডি হাতে শ্রেণীকক্ষে ঢুকে পণ্যের মান নিয়ে শিশুদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বিনা মূল্যে শিশুদের মধ্যে গ্লুকন-ডি বিতরণ করা হচ্ছিল। শ্রেণীকক্ষেই সেটি পরখ করতে গিয়ে একসঙ্গে অনেক শিশু চিৎকার করে ওঠে 'গ্লুকোজ নষ্ট, দুর্গন্ধযুক্ত' বলে। শিশুদের চেঁচামেচি শুনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে সহকারী শিক্ষক নাসরিন সুলতানা হ্যান্ডমাইকযোগে গ্লুকন-ডি শিশুদের না খাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। এরই মধ্যে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আকিব আহমেদ ও পঞ্চম শ্রেণীর অর্চি গ্লুকন-ডি খেয়ে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে দুজন বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সকাল ১০টার দিকে ট্রান্সকমের গাড়িতে হামলা চালায়। শিশুরা তাদের হাতে থাকা গ্লুকন-ডি ট্রান্সকমের গাড়ি লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে। অভিভাবকরাও ইটপাটকেল ছোড়েন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ট্রান্সকমের গাড়িটি তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়।
চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আকিব আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও পঞ্চম শ্রেণীর অর্চি সাংবাদিকদের জানায়, তাদের বিনা মূল্যে গ্লুকন-ডি দেওয়া হয়। মোড়ক খুলে তা দানাবাঁধা ও দুর্গন্ধযুক্ত দেখতে পায় তারা। আংশিক খেয়ে ফেলায় তাদের বমি হয়। পরে অভিভাবকরা তাদের স্কুল থেকে বাড়িতে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তারা সুস্থ রয়েছে বলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইদা বেগম নিশ্চিত করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদা আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, মৌখিক অনুমতি নিয়ে 'ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের লোকজন শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছিল। তাও স্কুল ছুটির পর। শিশুদের বিনা মূল্যে গ্লুকন-ডি দেওয়ার কথাই ছিল না। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ গ্লুকন-ডি দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে ট্রান্সকমের লোকজনকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। তখন উত্তেজিত অভিভাবকরা তাঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছিল।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুয়াল মাসুদ মামুন বলেন, ক্যাম্পাসে ট্রান্সকমের গাড়ি এবং স্কুলের চেয়ার-টেবিল নিয়ে পসরা সাজানো দেখতে পেয়ে তিনি তাঁদের ক্যাম্পাস ছাড়ার জন্য বলেন। পরে অভিভাবকদের মুঠোফোনে খবর পেয়ে বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি বলেন, 'আমি গ্লুকন-ডির একটি মোড়ক খুলে দেখেছি তা নষ্ট, দুর্গন্ধযুক্ত পাউডার, দানা বেঁধে আছে, যা খেলে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হতে পারে।'
বরিশালে ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মেরাজুল রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, গ্লুকন-ডির মোড়কে ভারতীয় মূল্য ২৬ রুপি এবং উৎপাদন তারিখ মে ২০১১ উল্লেখ রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ না থাকলেও উৎপাদন থেকে এক বছর ধরে নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী পণ্যের মেয়াদ এক মাসের বেশি রয়েছে। মৌখিক অনুমতি নিয়েই অন্তত ৭০০ শিক্ষার্থীর মাঝে বিনা মূল্যে গ্লুকন-ডি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'মান ভালো নয়- অভিভাবকদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ তোলা হলে আমরা দ্রুত ক্যাম্পাস ত্যাগ করি। এরই মধ্যে অভিভাবকরা আমাদের গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। গাড়িটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।'
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহিদুজ্জামান বলেন, 'শিশুদের মাঝে বিনা মূল্যে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্লুকন-ডি বিতরণ হচ্ছে- এমন অভিযোগে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা মিলে ট্রান্সকমের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। গাড়িটি থানা হেফাজতে রয়েছে। এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নিলে সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেব।'

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




