মনে পড়ছে ছোট বেলায় দৈনিক পত্রিকা পড়ার কথা। অপেক্ষায় বসে থাকতাম হকার এর জন্য। এখনও তার অবয়ব মনে করতে পারি। এটা সেই সময়কালের কথা, যখন টিভি চ্যানেল মানেই ছিল বিটিভি, মোবাইলফোন ধরনের জিনিস সাইন্স ফিক্শনে ছিল, কম্পিওটর/ইন্টারনেট সাইন্সফিকশনেও এমনভাবে ছিল না। বাসায় পত্রিকা পড়তাম ইত্তেফাক, সেইসাথে মাঝেমধ্যে বিচিত্রা/ক্রীড়াজগত/ক্রীড়ালোক। সম্ভঃবত সাধারন আকার ছিল ৮ পৃষ্ঠা। খুটিয়ে খুটিয়ে পড়তাম। সম্পূর্ণ সাদাকালো। ক্রীড়া অংশটুকু বেশি ভাল লাগত। এখনকার মত যত্রতত্র বিষয় নিয়ে বোধহয় প্রতিদিন মহাহেডলাইন হতনা। পড়া শেষ হলে আরো কিছুদিন যত্নকরে রেখে দেয়া হত, তারপর পুরানো পত্রিকা হিসেবে বিক্রী করে দেয়া। হয়ত পাশের বাসায় অন্যএকটি পত্রিকা রাখত, তারা কখনও কখনও আমাদেরটা নিয়ে যেত, আমরাও হয়ত আরেকজনেরটা পড়তাম। অনেকের ভ্রমন এর সময় অপরিচিতদের কাছে পত্রিকা চেয়ে পড়ার একটা প্রবণতা ছিল।
লন্ডনে সকালে পাতালরেল ষ্টেশনগুলোতে একটি ফ্রি দৈনিক পত্রিকা (মেট্রো) পাওয়া যায় শনি/রবিবার ব্যতিত। বেশ জনপ্রিয়। সেন্ট্রাল লন্ডনে দুপুর ৩ টার পর ২ টা ভিন্ন দৈনিক (দ্য লন্ডন পেপার এবং লন্ডন লাইট) ফ্রি পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতিটি পৌর এলাকার স্থানিয় সাপ্তাহিক/মাসিক পত্রিকা রয়েছে যেগুলো এলাকাভেদে ফ্রি বাসায় দিয়ে যায়। লোকজন এখানে সেখানে ভ্রমন করার সময় পত্রিকা কেনে এবং পড়ে, অনেক ক্ষেত্রেই পড়া শেষ হলে বাস/ট্রেন এই ফেলে রেখে যায়। অন্য কেও হয়ত আবার পড়ল এবং রেখে গেল। দ্য ইভনিং ষ্ট্যান্ডার্ড পত্রিকাটি দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকটি সংস্করণ বের হয় এবং সাধারনতঃ ব্যস্ততম এলাকায় ছোট ষ্টল থেকে বিক্রী করা হয়। পত্রিকার সাথে প্রায়ই অনেক কিছু ফ্রি দেয়া হয়, যেমনঃ ছাতা, কফি, বিয়ার, ফিল্মডিভিডি, সংগীত সিডি, বই, ম্যাগাজিন ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
সময় এবং সংস্কৃতি ভেদে দৈনিক পত্রিকা অনেক বৈচিত্রময়। কিন্তু এখনও এর আবেদন অটুট। প্রিন্টমিডিয়া অস্তিত্বের যুদ্ধকরে যাচ্ছে ইলেকট্রনিকমিডিয়ার সাথে। নিজেকে সময়োপযোগী করার জন্য অনেক পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। দৈনিক পত্রিকা টিকে থাকবে কিনা, অথবা কিভাবে টিকবে, সেটা সময়ই বলে দিবে। কিন্তু আমার এবং সম্ভঃবত আপনাদের অনেকের জীবনেই দৈনিক পত্রিকা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল/রয়েছে।