somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পটল!

২৩ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদ্র: লেকাটিচুরিকরা।কপিরাইটলেককের,আমার্না।

ঠিক মেরুদন্ডের ওপর ক্রিকেট ব্যাটের সজোরে আছড়ে পড়ার পর কেমন একটা অদ্ভুদ বিস্ময় আমাকে ঘিরে থাকে। নি:শ্বাস আটকে আসছে, শরীর টা ভর শূন্য হয়ে যাচ্ছে। ঠিক যেন সমূদ্রে ঢেউ এর সাথে লাফ-ডুব খেলার সময় পানিতে তলিয়ে যাবার মত। তার পর সব চুপচাপ। হটাত জেগে দেখি ফাতুর পটলচেরা চোখ।

দু' দুটো কারনে পিঠের ওপর ক্রিকেট ব্যাটের সজোরে আছড়ে পড়াটা কে নি:সন্দেহে আশীর্বাদ বলবো আমি। দ্বিতীয়ত: ওটার পরই অচেতন হয়ে পরায় আর মিনিট পাঁচেকের বেশি মার খেতে হয়নি সেদিন। আর যেগুলো খেয়েছি, টেরই পাইনি। দুটো দাঁত হারানোর ব্যাথা সহ্য করতে হল না বেশিক্ষন, তাই বা কম কিসে? আর আসল কারনটা হচ্ছে সেন্সলেস হয়ে হাসপাতাল না গেলে বুকের নেমপ্লেটে ফাতেমা লিখা ফাতু কি আর টর্চ মেরে আমার চোখ দেখতে আসতো?

পরদিন মোস্তাক আমাকে বলেছিলো সেন্সলেস হবার পর থেকে সুজিত কালপ্রিটটা একাই মেরেছে। ছ'ফিট লম্বা দামড়ার হাতে মুলি বাশঁ। ভাবলে এখনো গলা শুকিয়ে যায়!

ঘটনার শুরুটা বলি, মার খাবার ঠিক তিরিশ মিনিট আগে, রাত আটটার পরেই হবে। আমার চোখ তখন রুখসানার চোখে। আমরা দুজনে ওদের আর্টিফিসিয়াল লেদারের সোফায় বসা। ওর মুখে মিটিমিটি হাসি। (ফার্স্ট ডেট নাকি?)

আসলে এটা ঠিক শুরু না। শুরুটা নিশ্চয়ই আরো ছত্রিশ ঘন্টা আগে, যখন আমি আর মোস্তাক মনার চা স্টলে বসে বসে ক্যালকুলেটরে মোস্তাক শেয়ার ব্যাবসার লাভ হিসেব করছি। মোস্তাকের একই কথা শেয়ারে না নেমে অন্য ব্যাবসা করাটা আমার ভুল হচ্ছে!

এরকম কথা বলার এক সময় মেইনরোড ইন্ড থেকে মইনের ভাষায় ডার্ককুইন(গায়ের রং কালো, অন্য কিছু না) রুখসানার আগমন। আমাদের পাড়াতেই থাকতো আগে। ওর বাবা মারা যাবার পর পশ্চিমপাড়ায় থাকে। আমাদের এখান থেকে দশটাকা রিক্সা ভাড়া। অন্য দিকে দৃষ্টি দিলাম। সুজিতের পুরানো লাভার। এখন প্রেম না থাকলেও ঝামেলার গন্ধ আছে। সুজিত উঠতি মাস্তান তার উপর কমিশনার হাসানের এক নং সাগরেদ।

দোকানের কাছাকাছি এসে রুখসানা বললো, ভাইয়া আপনাকে দেখি না অনেকদিন! কি করছেন এখন? আমি বললাম এইতো শেয়ারে ব্যাবসায় নামার প্লান করছি। আপাতত পুজি জোগারের জন্য মনার দোকানে পার্টটাইম টি বয়ের কাজ নিয়েছি ।
- কি যে বলেন না ভাইয়া।
- হা হা হা, আসলেই তাই। (এমন ভাব আমিই রসিকতার ডিব্বা)
- ভাইয়া শান্তা আপা (আমার বড় বোন) কেমন আছেন? উনারা আমেরিকায় না?
- হা এখন ফ্লোরিডায় থাকে।
- শুনলাম আপনিও যাচ্ছেন?
- চেস্টা করছি, এখনো প্রসেসিং চলছে। তোমার খবর কি? ভর দুপুরে কোথায় যাচ্ছ?
- আমার মামী অসুস্থ্য, পিজিতে। দেখতে যাচ্ছি।
- ও তাহলে তো দেরী করিয়ে দিলাম!
- না না, আসলে আমি একা খুব বের হই না তো, তাই কিভাবে যাব বুঝতে পারছি না। (স্বপ্নের মত!!!)

তার ঠিক দু ঘন্টা পরে আমি আর রুখসানা রিক্সায় এলাকায় ফিরছি। কানে বাজছে একটু আগে বলা রুখসানার খ্যান-খ্যানে কথা, 'কাল সন্ধায় একটু বাসায় আসবেন ভাইয়া? ' আসলেই কি একাউন্টিং শিখানো নাকি ফার্স্টডেট? উত্তেজনায় কাপছি রীতিমত! তবে বেশিক্ষন না। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে ঠিক সন্ধা নয় রাত ১২ টা হয়। সুজিতের মটর সাইকেল পাশ দিয়ে গেলো। দেখলো কিনা কে জানে! এলাকা আসার আগেই বিদায় নিয়ে আমি নেমে গেলাম।

তো ঘটনার মিনিট তিরিশেক আগে ফিরে যাই। আমার চোখ রুখসানার চোখে। আর্টিফিসিয়াল লেদারের সোফায় বসা। বাসায় আমরা দুজন। ওর মা হসপিটাল থেকে আসতে আরও ঘন্টা খানেক। এসে পড়লেও সমস্যা নেই, ওর একাউন্টিং পরীক্ষা সামনেই। রুখসানা মিটিমিটি হাসছে। মনে মনে ভাবছি বাসায় গিয়ে ডায়েরিতে ফার্স্ট ডেটটা লিখে রাখবো কিনা! শালার একাউন্টিং টা এতো দিনে কাজে লাগলো!

দরজায় খট খট। কে কে বলে চ্যাচালেও সাড়া দিচ্ছে না। রুখসানার ইশারায় আমি খাতা খুলে আঁকিবুঁকি শুরু করলাম। ও দরজা খুলে দিতেই ষন্ডা মত পাঁচ-ছয়টা লোক হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়লো। ডাকাত। কোনো কথা নেই সপাটে আমার দু' গালে দুটো চড়। রুখসানাকে ধরে রেখেছিলো একজন। হটাৎ রুখসানা নিজের হাত ছিনিয়ে নিয়ে এক দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো। শুনতে পেলাম ও সেখান থেকেই ডাকাত ডাকাত বলে চ্যাচাচ্ছে। দশ সেকেন্ডে ঘর সাফ। এক ছুটে সব বেড়িয়ে গেলো।

মনে মনে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছিলাম এমন সাহসী কাউকে পেয়েছি ভেবে। পরের মুহুর্তেই ঘরে দ্বিতীয় দলের আক্রমন!
- কই কই, পলাইছে সবগুলা? এই বেডা তুই ক্যাডা?

কেউ চিৎকার করলো, 'পাইছি একটারে'!
সাথে সাথে শুরু হলো ঘুষির বন্যা! আমি চিৎকার করে বলছি, আমি রুখসানার পরিচিত! কে শোনে কার কথা! মারতে মারতে বাইরে নিয়ে আসলো। এক চিলতের আলোর মত দেখলাম রুখসানা মুখ। বুঝতে পারলাম তার খারাপ লাগলেও পরিচিত বলার রিস্ক নিতে চাচ্ছে না। কে যেনো বলছে, চিনছি শালারে, আগেও দেখছি! কেউ একজন শার্টের কলার ধরে মাটি থেকে টেনে দাড় করালো। সুজিত! সাথে সাথে শুরু হলো চারদিক থেকে!

একবছর পরের কথা বলি। ফাতুর চোখদুটো আমি আগের মতই ভালোবাসি। রোজ সকালে ঘুমথেকে উঠে ওর চোখ না দেখলে আমার ভালোই লাগে না। ডা: ফাতু বলে, আমাদের বিয়ের বাধাই করা ছবিটা বালিশের পাশে রাখতে। রোজ রোজ একই ঢং নাকি ভালো লাগে না ওর! কিন্তু আমার ভালো লাগে! ওর চোখ দেখেই তো ভুলে গিয়েছি অতীত! রুখসানার রিস্ক না নেয়ার অপরাধ। শেয়ারের লস! আরও যা আছে সব।

বি:দ্র: রুখসানার বাসায় যাবার সময় মোস্তাককে বাইরের টং দোকানে রেখে গিয়েছিলাম। ও নাকি ফ্লেক্সিলোডের দোকান খুজতে যাওয়ায় আমাকে উদ্ধার করায় দেরী করে ফেলেছিলো।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×