somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা আন্দোলনের নতুন পাঠ

১৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছরের একটা সময় আমরা ফুল হাতে করে হাঁটি, আজিমপুর হয়ে পলাশীর মোড় পার হয়ে শহিদ মিনারে ফুলটা রেখে আসি। আমাদের স্মরণে আসে এইখানে কিছু বোকা লোক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে পুলিশের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এদের বোকামি আমাদের কষ্ট দেয়, আমরা তাই এখানে ফুল দিতে চলে আসি। আমাদের মনে হয়, এরা বোকা হলেও ফুল দেয়া জরুরী, ফুল এদের প্রাপ্য। এদের সাহস ছিল বটে, খালি হাতে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়া চাট্টেখানি কথা না। তাই আমরা ফুল দিই। ফুল দেয়ার পর আমাদের মনে হয়, এরা শুধু বোকাই ছিল। সাহসী আর বোকার মাঝে পার্থক্য আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। আমরা বুঝতে পারি, অস্ত্র হাতে অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়া সাহসের পরিচয় হলেও নিশ্চিত মৃত্যু জেনে অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়া বোকামি। এতে বাহাদুরির কিছু নেই। কিন্তু আমরা ইতোমধ্যে ফুল দিয়ে দিয়েছি, আমাদের আর ফুল ফেরত নেয়ার উপায় থাকেনা। কিন্তু ফুল অজায়গায় পড়ে যাওয়া আমরা ভুলতে পারিনা; ফুলগুলোর জন্য কষ্ট হয়। তাই আমরা এই সমস্ত বোকা লোকদের নিয়ে ভাবতে থাকি, হয়তো আমরা ফুলগুলো নিয়েই ভাবি। কিন্তু আমাদের ভাবনা ফুল হয়ে, ফুল কেনার টাকাতে স্থানান্তরিত হয়, আমরা টাকার কথা ভুলতে পারিনা, আমাদের এই বোকা লোকদের প্রতি রাগ হয়, আর তাই হয়তো আমরা এদের নিয়ে ভাবি। এতে আমাদের লাভ হয়, আমরা এই মৃত বোকা লোকদের আরও ভালো করে চিনে ফেলি।

আমরা দেখতে পাই, এরা আসলে বোকা ছিলনা। এদের আসলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা। পেটে টান পড়লে মানুষ দিগ্বিদিক ভুলে যায়, এরাও ভুলে গিয়েছিল। যেহেতু, সে সময় তাদের চিন্তা করার ফুরসৎ ছিলনা , তাই তাদের আর আমরা বোকা বলতে পারিনা। তাদের বোকা না বলতে পারাই আমাদের হয়তো কষ্ট হয়, আমাদের ফুল কেনার টাকার কথা মনে পড়ে যায়। আমরা বুঝতে পারি, এদের বোকা বলে আমরা টাকার ব্যাথা ভুলতে পারছিলাম। তখন আমাদের মনে হয়, এরা সরকারের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি; এরা ইংরেজি লিখতে কলম ভাঙে, উর্দু বলতে পারেনা, আর আরবি? পাগল নাকি! এরা সালাত আরবি না নামাজ আরবি তাই ঠিক করতে পারেনা, এরা লিখবে আরবি? আর তাই এদের চাকরি হারিয়ে না খেয়ে থাকা অথবা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ বলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা। আমরা জানি, একদিন না খেয়ে থাকা যায়, কিন্তু বছরের পর বছর না খেয়ে থাকা যায়না। আর তাই তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়, এবং আমরা তাদের মহান বলা শুরু করি।অথচ, আমরা আতিউতি করে খুঁজি এদের সত্যিকারের মহত্ব, আমরা ব্যর্থ হই। অবশ্য এই ব্যর্থতা আমাদের কষ্ট দেয়ার বদলে সুখ দেয়; কারণ আমরা আমাদের টাকার কথা ভুলতে পারিনা।

তখন, আমাদের মনে হয় এদের সাথে আমাদের মশকরা করার দরকার, আমরা মশকরার পথ খুঁজে থাকি। আমরা দেখি, ওরা উর্দু না জানলে আমরা হিন্দি জানি, ওরা ইংরেজি না জানলেও আমরা জানি; অন্তত জানি বলে বিশ্বাস করি। আমরা জানি, ‘জানাটা’ই বড় কথা না, ‘বিশ্বাসটা’ই আসল। আমরা বুঝতে পারি, আমরা হয়তো মশকরার উপায় খুঁজে পেয়েছি। আমরা জানি এই বোকা মানুষদের ভাষাপ্রেম থাকুক কি না থাকুক তা আর যায় আসেনা, কিন্তু লোকে যে ভাবে এদের ভাষাপ্রেম আছে তা এরাও বিশ্বাস করা শুরু করেছে। অন্তত আমরা জানি, এরা বিশ্বাস না করে পারেনা। এরা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি হতে পারে, এরা পেটের দায়ে বন্দুকের সামনে দাঁড়াতে পারে কিন্তু এদের যেহেতু একটা ভাবমুর্তি দাঁড়িয়ে গিয়েছে, এরা সেটাকেই সত্য বলে মেনে নেবেই। আমরা জানি এরা আরবি বর্ণে বাংলা লিখতে চায়নি, আমরা বুঝতে পারি, আমরা বাংলা বর্ণ ব্যবহার না করলে খুব বড় মশকরা করা হবে; আমরা আরবির জায়গায় ইংরেজি বর্ণ ব্যবহার শুরু করি, দুটো বাংলা শব্দের পর ধুম করে ইংরেজি শব্দ বসিয়ে দেয়া আমাদের কাছে জলবৎ তরলং হয়ে যায়, মাঝে মাঝে আমরা হিন্দিও যুক্ত করতে পারি। আমাদের এই মশকরা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিরা সহ্য করতে পারেনা, কিন্তু তাদের কিছু করারও থাকেনা; কেননা তারা মরে গেছে আর আমরা জানি মরা মানুষের নীরবে মশকরা সহ্য করা ছাড়া উপায় থাকেনা।

আমরা অবশ্য আমাদের এই মশকরাই মজা পাই, আমাদের মনে হয়, আমাদের ফুল কেনার টাকার ক্ষতি সুদে আসলে উঠে আসছে। আমরা খুশি হই, আমাদের পুলক লাগে। আমরা বন্ধুদের জানাই, তারাও আমাদের মত খুশি হয়। আমরা বাংলা বর্ণ নির্বাসনে দিয়ে দিই। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিরা নির্বাসনে যায়না, তাদের নির্বাসনের যাওয়ার উপায় থাকেনা, আসলে মরা মানুষদের স্বাধীন ইচ্ছা থাকেনা। তারা কুল কাঠের আগুনে জ্বলতে থাকে। আমরা তাদের দর্শক সারিতে বসিয়ে মঞ্চে নাটক নামিয়ে ফেলি। তারা আমাদের অভিনয় দেখতে বাধ্য হয়। আমাদের মনে হয়, তারা এক সময় ইংরেজদের দর্শক সারিতে বসিয়ে ‘নীল দর্পণ’ দেখিয়ে ছিল, আমরা ইংরেজদের অনুভূতি আগে বুঝতে পারিনি, কিন্তু এখন এই সমস্ত তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিদের দর্শকরূপে পেয়ে ইংরেজদের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি, আমাদের মনে হয়, একদিন এরা মানসিক পীড়ন দেখে খুশি হয়েছিল, আজ আমাদের মানসিক আহ্লাদ দেখে তারা কাল আগুনের কাতুকাতু খাচ্ছে। আমরা আমাদের ফুল কেনার টাকার সুদে আসলে ফেরত পেয়ে স্বর্গ সুখ লাভ করছি।
---- amar vagina prithibir sob ceye sunodor vagina. Khub cute.
------ amar vagina-o khub cute.
……………………………………………..
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৫ রাত ২:৪০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×