somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেকালের বিয়ের গহনা নির্ধারণ

১৪ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মোফাত ভাইয়ের মুখ থেকে ধানের দামের ভুল উত্তর এবং সেই ভুলের সপক্ষে সদর জ্যাঠার যুক্তি শোনার পর আর কেউ কোন প্রশ্ন করল না। মোফাত ভাইকে বিদায় দিয়ে বাবা কনে পক্ষকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ছাওয়াল তো দেখলেন, আপনাগো ছাওয়াল নিয়া কোন পছন্দ অপছন্দ থাকলে কইবার পারেন। মেয়ের চাচা বলল, ছাওয়াল আমাগো পছন্দ হইছে, ছাওয়াল নিয়া আমাগো কোন আপত্তি নাই, তবে এখন কথা হইল -- আত্মায় আত্মায় মিল না হইলে আত্মীয়তা হয় না। বিয়া শাদীর ব্যাপার, কথা পেটের ভিতর রাইখা কথা কওয়া ঠিক হইবো না, পরে মন কষাকষি শুরু হইব। আপনারাও তো আমাগো ম্যায়ারে দেখছেন, আপনাগো কোন পছন্দ অপছন্দ থাকলে কইবার পারেন।
সদর জ্যাঠা বললেন, ম্যায়া আমাগো পছন্দ হইছে হেইডা তো হেই দিনই কইয়া আইছি। এহন যদি ছাওয়াল আপনাগো পছন্দ হয়া থাকে তাইলে বিয়ার সমন্ধ নিয়া আলাপ আলোচনা করবার পারেন।
বাবা বললেন, আলাপ আলোচনা কি আর করমু, সম্বন্ধ যদি আল্লায় লেইখা থাকে তাইলে কথা পাকাপাকি করা দরকার। আপনারা ম্যায়ারে কি কি গড়ন (গহনা) দিবার চান?
মেয়ের চাচা বলল, আমরা কিছুই দিবার চাই না। তাতে আপনারা কি কন?
বাবা বলল, তাইলে আর আলোচনা কইরা লাভ কি, আমরাও আপনাগো সমান সমান থাকবার চাই। মেয়ের চাচা বলল, বিয়াই, কেমনে সমান সমান থাকবার চান খোলাসা কইরা কন।
বাবা বলল, আপনারা যহন ম্যায়ারে কিছুই দিবেন না তহন আমরাও কিছু দিমু না। বর্তমান দ্যাশের চল হিসাবে আপনারা যদি ম্যায়ারে খালি হাতে পাঠাইতে পারেন আমরাও খালি হাতেই ম্যায়ারে নিয়া আসমু।
সদর জ্যাঠা বলল, আপনারা যদি কিছুই দিবার না চান তাইলে বোঝা গেল আপনারা সমন্ধ করবার চান না। সমন্ধ না করলে আর আলোচনা কইরা লাভ নাই। তার চেয়ে আপনাগো আমাগো মাঝে যে পুরানা সম্পর্ক আছে হেইডা নিয়াই থাকি। আর যদি আত্মীয়তা করবার চান তাইলে ম্যায়ারে গহনা গাটি কি দিবেন হেই আলোচনায় আসেন।

শুরু হলো গহনা নিয়ে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি তর্কবিতর্ক। ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষের কাছে দাবি করে বসল, কানের জন্য বারো আনা ওজনের স্বর্ণের ঝুমকা, নাকে দুই আনা ওজনের স্বর্ণের বালি (নাকের নথ), হাতে পরার জন্য রুপার কাটা বাজু, বাহুতে পরার জন্য রুপার বাজু বন্ধ, কোমরে দশ ভরি ওজনের রুপার তৈরী বিছা, পায়ে গোল খারু (গোল আকারের পায়ে পরার গহনা)। দাবিকৃত গহনার মধ্যে নাকে ও কানের গহনা ছাড়া বাকি সবই রুপার গহনা হলেও পরিমাণ কিন্তু কম নয়। মেয়ে পক্ষ এতো গহনা দিতে পারবেন না বলে বেকে বসলেন। ছেলে পক্ষও অল্প গহনা নিতে রাজী নয়। বরপক্ষের দাবি শুনে কনে পক্ষও ছেলে পক্ষের কাছে কিছু গহনা দাবি করে বসল। মেয়ের চাচা যে পরিমাণ গহনা দিতে চায় সেটা ছেলে পক্ষ মানতে রাজী হ্েচ্ছ না আবার মেয়ে পক্ষের দাবি অনুযায়ী ছেলের পক্ষ থেকে কনেকে যে পরিমাণ গহনা দিতে চায় সেটাও মেয়ে পক্ষ মানতে রাজী হচ্ছে না। প্রায় এক ঘন্টার মতো পাল্টাপাল্টি তর্কবিতর্কের পর সিদ্ধান্ত হলো, মেয়ের বাবা মেয়েকে ঝুমকার পরিবর্তে আট আনা ওজনের এক জোড়া স্বর্ণের তৈরী কানের মাকরি (পেট ফাপা এক ধরনের কানের দুল) দিবে, স্বর্ণের তৈরী দুই আনা ওজনের নাকের বালি (নাকের নথ), আড়াই ভরি ওজনের লকেটসহ গলায় রুপার মালা, কনে সাজাতে শাড়ি ব্লাউজ পেটিকোটসহ যা যা লাগে সেটাও মেয়ে পক্ষ দিবে।

মেয়ে পক্ষের দাবি অনুযায়ী ছেলে পক্ষও কনেকে কিছু গহনা দিতে রাজী হলো। ছেলে পক্ষের গহনাগুলি হলো, দুই ভরি ওজনের দু’টি রুপার বেকি চুড়ি (হাতে পড়ার জন্য বেসলেটের মতো চ্যাপ্টা বিশেষ ডিজাইনে তৈরী), মেয়েদের হাতের বাহুতে পরার জন্য দুটি রুপার তৈরী বাজুবন্ধ আর দুই পায়ে পড়ার জন্য দুই জোড়া ছড়ড়া (পায়েল জাতীয়)। সর্ব সাকুল্যে ছেলে পক্ষ সাড়ে সাত ভরি রুপার গহনা দিতে রাজী হলো।

উভয় পক্ষের সম্মতিতে গহনা-গাটি ঠিক হওয়ার পর আবার তর্কবিতর্ক শুরু হলো। তবে এই তর্কবিতর্ক অন্য কিছু নিয়ে নয় বিয়ে পরানো উপলক্ষে বরের পক্ষ থেকে কতটুকু পান চিনি নিয়ে যাবে সেইটা নিয়ে। মেয়ের বড় দুলাভাই দাবি করে বসলেন বর যাত্রীর সাথে এক মণ গুড় (সেই সময় অত্র অঞ্চলে জামালপুরের গুড় প্রচলিত ছিল এবং এই গুড়গুলো ষাট তোলায় এক সের হিসাবে ওজন করা হতো), বিশ বিড়া পান (আশিটা পানে এক বিড়া), আর বিশ গা সুপারি (দশটা সুপারিতে এক গা) নিতে হবে। এর কম হলে তারা বিয়ে দিবে না। ছেলে পক্ষ তাদের এই দাবিকে অতিরিক্ত দাবি বলে মন্তব্য করলেন। শুরু হলো দুই পক্ষের তর্কবিতর্ক। এমন তর্কবিতর্ক শুরু হলো যে ঠিক হওয়া বিয়ে ভেঙে যাওয়ার অবস্থা। কেউ হার মানতে চায় না। শেষে দুই পক্ষের বুড়োদের মধ্যস্ততায় একটি সমঝোতা হলো। ঠিক হলো বরের সাথে আধা মণ গুড়, সাত বিড়া পান, আর সাত গা সুপারিসহ বিয়ের বরযাত্রী যাবে। তবে মেয়ের গায়ে হলুদ দেয়ার জন্য একদিন আগেই একটিই তেলাই কাপড় (গায়ে হলুদ দেয়ার জন্য যে কাপড়টি দেয়া হয়) পাঠিয়ে দিতে হবে। কনে সাজানোর জন্য একটি বাসনা সাবান, একটি সুগন্ধি তেলের বোতল, একটি স্লো, একটি পাউডার ও একটি স্যুটকেস দিতে হবে। এভাবেই বিয়ের পান চিনিসহ সব কিছু দুই পক্ষের সমঝোতায় মিটে গেল।

এতো কিছুর পর এখনও একটা সমস্যা রয়েই গেল সেটা হলো বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা। তবে বিয়ের দিন তারিখ নিয়ে তেমন একটা মতোবিরোধ দেখা দিল না। সদর জ্যাঠা সামনের শুক্রবারেই দিন তারিখ দিতে চাইলে মেয়ের চাচা নিষেধ করে বললেন, না বিয়াই আমাগো ঝি জামাইরা আছে, তাগো ছাড়া কিছু করা যাইবো না। ঝি জামাইগো আনা নেয়া, বিয়ার বাজার সদাই, গহনা গাটি তৈরী করা এতো কিছু সাত দিনে সামাল দেয়া যাইবো না, কম কইরা হইলেও দশ পনরো দিন সময় দেয়া লাগবো। আপনারা সামনের শুক্রবারের পরের শুক্রবারে তারিখ দেন।

মেয়ের চাচার কথা মতো সামনের শুক্রবারের পরের শুক্রবার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলো। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হওয়ার পর আর কেউ দেরি করলেন না। কনে পক্ষ একযোগে ঘর থেকে বেরিয়ে বিদায় নিলেন।

(চলবে)
ছবি ঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×