somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন যুদ্ধাপরাধীর সাক্ষাতকার

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তারা অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত এ ধরনের কাজে লিপ্ত রয়েছেন- মুহাম্মদ কামারুজ্জামান

সম্প্রতি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম পঞ্চাশ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের তালিকায় রয়েছে জামায়াতের জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের নাম। প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সচিত্র সময়ে'র সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

প্রশ্ন: সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ঘোষিত তালিকায় আপনার নাম রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
উত্তর: সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নেতৃবৃন্দ সমাজের সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান করি। এখন যারা এই ফোরামে আছেন তাদের মধ্যে অনেকে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ মন্ত্রীও হয়েছেন, আবার এর মধ্যে এমপিও আছেন। যিনি মন্ত্রী ছিলেন তিনি জামায়াতের সমর্থনে গঠিত বিএনপি সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ৩৬ বছর পর তারা কেন বা কী কারণে এ বিষয়টি নিয়ে এত তৎপরতা দেখাচ্ছেন তা আমার বোধগম্য নয়। আরেকটি বিষয় হলো এক আধজন বাদে অধিকাংশ ব্যক্তিই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তারা রাজনৈতিক দলের অধীনে আমাদের সঙ্গে যুগপৎ যুক্ত আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সংসদীয় পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে সংশোধনী এনেছেন। তাদের পক্ষ থেকে ৯১ এর নির্বাচনে আমাদের প্রস্তাব দেয়া হলো যাতে সরকার গঠনে সাহায্য করি। এখন এই ইস্যুটি শুধু রাজনৈতিক কারণেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে শেখ মুজিবুর রহমান একটি ঘোষণা দিলেন, যেখানে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী সামরিক কর্মকার্তাকে একটি চুক্তির মাধ্যমে উনি পাকিস্তানে পাঠিয়েছিলেন। এর দায়িত্বে ছিলেন সাবেক উপদেষ্টা মইনুল হোসেন চৌধুরী। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তারাও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে কথা বলেননি। জিয়াউর রহমান সাহেব দালাল আইন যেটা ছিল সেটা বাতিল করেন। এরপর আদালতে কিছু মামলা ছিল সেগুলোও নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। দালাল আইন বাতিল জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবেই বিবেচিত হয়েছিল। তখনকার জনগণ সেটা মেনে নিয়েছিল। বিশেষ করে মাওলানা ভাষানী, আবুল মুনসুর আহমেদ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ঐক্যের ব্যাপারে ভূমিকা রাখেন। তখনই বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। জনাব এ কে খন্দকার, মীর শওকত, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ সবাই এক সময় মন্ত্রী এমপি ছিলেন। তারা কেউই এ বিষয়টি উত্থাপন করেননি এবং সেটা রাজনৈকি বাস্তবতার কারণে। এখন ওনারা যা করছেন তা একটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করছেন। বিষয়টি আমরা জনগণের ওপরই ছেড়ে দিলাম। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। জনগণের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, শেখ সাহেব যাদের ক্ষমা করেছিলেন তাদের বাইরেও আরও ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ছিল। একমাত্র খালেক মজুমদার ছাড়া তাদের মধ্যে আমাদের কারো নাম ছিল না। সেটাও হাইকোর্টে নিষ্পিত্তি হয়ে গেছে।

প্রশ্ন: যে অভিযোগে আপনাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে সেটা কি আপনারা অস্বীকার করতে চান?
উত্তর: দেখুন, পত্র-পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে কাউকে অভিযুক্ত করা যায় না। এজন্য আপনাকে কোর্টে যেতে হবে। সেখানেই অভিযোগ দায়ের করতে হবে।

প্রশ্ন: স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত আপনাদের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন।
উ: কোন পত্রিকা বলে দিলেই কি যুদ্ধাপরাধী হয়ে গেল। কোন সিভিলিয়ান যুদ্ধাপরাধী হতে পারে না।

প্রশ্ন: কিন্তু ৭১-এ গোলাম আজম এবং নিজামী সাহেবদের কিছু কমেন্টসই বলে দেয় আপনারা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
উ: এ সমস্ত কমেন্টস দিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচার করা যায় না। যুদ্ধাপরাধীর জন্য আলাদা কিছু বিষয় রয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে। কেউ পত্রিকার নাম মেনশন করে বলে দিল আর তাতেই যুদ্ধাপরাধী হয়ে গেল তাতো নয়।

প্রশ্ন: আপনাদের দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা কী?
উ: এটা ওনাদের (সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম) জিজ্ঞেস করেন। ওনারা তো যুদ্ধাপরাধের একটা সংজ্ঞা তৈরি করেছেন। আমরা তো ভিকটিম। আমাদের এসব জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। তারা অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত এ ধরনের কাজে লিপ্ত রয়েছেন। আমি বা আমরা রাজনৈতিক অঙ্গনে যদি অ্যাকটিভ প্লে রোল না করতাম তাহলে এসব অভিযোগ উঠতো না। ১৯৭১ সালে আমি ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র ছিলাম। আমি কীভাবে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলাম?

প্রশ্ন: যেহেতু আপনারা বলছেন এ অভিযোগের ভিত্তি নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এই অভিযোগ করা হচ্ছে। তাহলে আপনারা কি এর বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেবেন?
উ: আমরা এ ব্যাপারে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি না। আমরা যদি কোন অন্যায় কাজ করতাম তাহলে জনগণ আমাদের গ্রহণ করতো না। আমাদের পে জনগণের যে সমর্থন তা যদি না থাকতো তবে মিডিয়া এবং কিছু রাজনৈতিক দলের বৈরি আচরণের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারতাম না। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি এবং জনগণ প্রতিটি নির্বাচনে জামাতকে আরো বেশি করে গ্রহণ করেছে। জনগণই আমাদের অর্থ-সম্পদ দিয়ে সহায়তা করছে। আমরা কাজ করছি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। আমি মনে করি, আমাদের দেশের জনগণ আগামীতে আমাদের সঙ্গে থাকবে ইনশাল্লাহ।
সূত্র: সাপ্তাহিক সচিত্র সময়

পুনশ্চ: এই সাক্ষাতকারের রেশ ধরে সেক্টর কমান্ডার্সের একজন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাতকার অচিরেই ব্লগে প্রকাশ করা হবে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×