ইসলাম ধর্ম নিয়ে আমার জ্ঞান সীমিত, সনাতন ধর্ম নিয়ে জ্ঞান মোটামুটি শূন্যের কোঠায়। তাও যেহেতু প্রতিদিন নিজেরটা সহ অন্য ধর্মের গ্রন্থগুলো ঘেটে দেখা হয়, সামনের কুরবানী নিয়ে কিছু কথা জানাতে ইচ্ছা করছে (আবার গালি খাবো, আবার আমার মা এবং বউ অভিমান করবে কেনো এসব লিখে নিজের বিপদ আরো বড়াচ্ছি বলে), সমস্যা হলো আমার কাছে কিছু ভালো না লাগলে আমি বলেই ফেলি।
পবিত্র কুরআন এ আল্লাহপাক কুরবানী নিয়ে ইরশাদ করেছেন একাধিকবার। এর মধ্যে কয়েকটি আয়াত তুলে ধরলাম-
এ সব (কোরবানির) পশুর মধ্যে এক নির্দিষ্টকালের জন্য তোমাদের জন্য নানা উপকার আছে; তারপর ওদের (কোরবানির) জায়গা প্রাচীন ঘরের [কা’বার] কাছে । আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য (কোরবানির) নিয়ম করে দিয়েছি যাতে আমি তাদের জীবনের উপকরণ হিসাবে যেসব চতুষ্পদ পশু দিয়েছি সেগুলি জবাই করার সময় আল্লাহর নাম নেয় । তোমাদের উপাস্য তো একমাত্র আল্লাহ্ । সুতরাং তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর ও সুসংবাদ দাও বিনীতদের, যাদের হৃদয় আল্লাহর নাম করা হলে ভয়ে কাঁপে, যারা তাদের বিপদ-আপদে ধৈর্য ধরে ও নামাজ কায়েম করে আর আমি তাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি তার থেকে ব্যয় করে । আর উটকে তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি । তোমাদের জন্য ওতে মঙ্গল রয়েছে । সুতরাং সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে ওদেরকে জবাই করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম নাও । যখন ওরা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তোমরা তা থেকে খাও, আর খাওয়াও তাকে যে চায় না; আর যে চায় তাকেও । এভাবে আমি ওদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর । আল্লাহর কাছে ওদের মাংস বা রক্ত পৌছায় না, বরং তোমাদের ধর্মনিষ্ঠা পৌছায় । এভাবে তিনি এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথপ্রদর্শন করেছেন । সুতরাং তুমি সৎকর্মপরায়ণদের সুসংবাদ দাও ।--২২ সুরা হজঃ ৩৩-৩৭
আল্লাহর পবিত্র কাবাগৃহ, পবিত্র মাস, কোরবানির জন্য কা’বায় পাঠানো পশু ও গলায় মার্কামারা মালাপরানো পশু মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারিত করেছেন । এ এজন্য যে তোমরা যেন জানতে পার যা-কিছু আকাশে ও পৃথিবীতে আছে তা আল্লাহ্ জানেন, আর আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ --৫ সুরা মায়িদাঃ ৯৭
ধর্ম বৈচিত্র ও পরধর্মসহিষ্ণুতা নিয়ে কয়েকটি আয়াত তুলে ধরছি-
আর তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের ডাকে তাদেরকে তোমরা গাল দেবে না, কেননা, তারা (সীমালঙ্ঘন করে) অজ্ঞানতাবশত আল্লাহকেও গাল দেবে। এভাবে প্রত্যেক জাতির চোখে তাদের কার্যকলাপ শোভন করেছি। তারপর তাদের প্রতিপালকের কাছে তারা ফিরে যাবে। তারপর তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকার্য সম্বন্ধে তাদের জানিয়ে দিবেন। - ৬ সুরা আনআম : ১০৮।
তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বিশ্বাস করতো। তাহলে কী তুমি বিশ্বাসী হওয়ার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে?-১০ সুরা ইউনুস : ৯৯।
উপরের আয়াতগুলো এবং এ সংক্রান্ত হাদীস পড়ে আমার মনে হয়েছে কুরবানির উদেশ্য শুধু নিজে খাওয়া না বরং একই সাথে দুস্থ্য দরিদ্রদের (ধর্ম বর্ণ নির্বেশেষে, যাদের মধ্যে সনাতন ধর্মেরও থাকতে পারে) জন্য কিছু অংশ দান করা। গরুই কোরবানি দিতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নাই।পরধর্মসহিষ্ণুতার কথা মাথায় রেখে বলছি এবারের কুরবানীতে আমি গরু কুরবানী দিবো না এবং কুরবানির দিনটিতে গরুর মাংস খাবো না, যেহেতু একই সময় পবিত্র শারদীয় দুর্গোত্সব চলছে। যেহেতু গরু আমাদের ধর্মে নিষিদ্ধ নয় অন্য সময়ের কথা প্রতিশ্রুতি দিতে পারছিনা। আর একাধিক ছাগল কোরবানি দিবো ইনশাল্লাহ এবং ধর্ম বর্ণ নির্বেশেষে কিছু অংশ দান করবো।
আমার প্রার্থনা:
"আমি আমার প্রতিপালকের মুখাপেক্ষী হলাম এবং ঘোষণা করলাম- হে আমার প্রভু আমার থেকে শ্রেষ্ঠতর শিক্ষকের মাধ্যমে তোমার আয়াত আমার স্বল্প জ্ঞানে যাই উপলব্ধি দিচ্ছে আমি তাই করছি এবং আমার দেশে বসবাসরত অন্য ধর্মের উত্সবের প্রতি সম্মান জানাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হে আমার প্রতিপালক যারা গরুকে তাদের ধর্মের গুরুত্যপূর্ণ যায়গা দিয়েছেন, তাদের পবিত্র উত্সবের সময় তাদের হৃদয়কে রক্তাক্ত করার থেকে নিজেকে বিরত রাখছি। আমায় ক্ষমা করো যদি আমার উপলব্ধিতে ভুল থাকে, আমি তোমার পানে নতজানু এবং আমি তোমার কৃপা প্রার্থী। আমার এই লেখায় যদি কেউ বিপথগামী হয় তবে সেই দ্বায়িত্যও আমার। হে আমার প্রেম নিশ্চই তুমি আমার অন্তর জানো এবং জানো আমি সরল এবং সোজা পথের সন্ধান এ আছি।"
আমার সনাতন ধর্মের বন্ধুদের বলছি আমার তরফ থেকে আপনাদের ঈদ মুবারক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমি ছাগলের বা কোনও অন্য পশুর ব্যবসার সাথে প্রতক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত নাই। গরুর ব্যবসায়ীদের প্রতি আমার কোনও ক্ষোভ নাই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




