সমকামী বিয়েকে আবারও না বলেছে বাংলাদেশ। এ বিয়েকে বৈধতা দেয়ার জন্য জাতিসংঘ থেকে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু এ বিয়েকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় বাংলাদেশে। তাই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। গত পরশু এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন ডিএনএ। ‘বাংলাদেশ রিফিউজেজ টু অ্যাবোলিশ ক্রিমিনালাইজেশন অব কনন্সেয়াল সেম-সেক্স টাইস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ২৪তম নিয়মিত অধিবেশনে ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউয়ে বাংলাদেশকে সমকামী বিয়ের পক্ষে সুপারিশ করে। এতে বাংলাদেশ সরকারকে ৩৭৭ নম্বর সেকশন বাতিল করতে বলা হয়। ওই ধারায় সমকামী বিয়েকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ এ সুপারিশ মেনে নেয়নি। এ নিয়ে দু’বার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলের এ সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করলো বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৯ সালে প্রথম ওই ধারাটি বাতিল করতে সুপারিশ করা হয়েছিল। বর্তমানে জেনেভায় জাতিসংঘ অফিসে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুল হান্নান। সে রিভিউ সেশনে বলেছে, বাংলাদেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সঙ্গে এই সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ তথা ইহুদীসংঘ মূলত সব সময় ৯৭ ভাগ মুসলমান উনাদের দেশ বাংলাদেশকে সম্মানিত পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিরোধী মহা কুফরী সনদ তথা বিশেষত পারিবারিক মূল্যবোধ ভঙ্গকারী সনদে বাধ্য করার চেষ্টা করেছে এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছে। জাতিসংঘের নারীনীতিমালা এর বড় উদাহরণ।
আন্তর্জাতিক সেক্যুলার গোষ্ঠী দীর্ঘদিন থেকেই অর্থ ও জনবল দিয়ে নারীদের অধিকার নষ্ট করার প্রচেষ্টায় আছে। তাদের ঘৃণ্য এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মনোহর সব শিরোনামে বিশ্বে অসংখ্য সেমিনার করছে। এসব কর্ম বাস্তবায়ন তারা বাস্তবায়ন করছে নিজেদের দোসর জাতিসংঘের মাধ্যমে। কিছু দিন পর পরই তারা নারী-অধিকার রক্ষার নাম নিয়ে সেমিনার করে নানান ঘোষণা ও প্রস্তাবনা পেশ করে। জাতিসংঘে গঠন করা হয়েছে- ‘কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেন’ (Commission on the Status of Women)|
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, Appearances are deceptive(বাহ্যিক বেশভূষা হতে পারে ধোঁকা দেয়ার হাতিয়ার।) জাতিসংঘ থেকে ঘোষিত প্রতিটি প্রস্তাবনার আছে চমৎকার শিরোনাম। কিন্তু সামান্যমাত্র বিষয়বিত্তিক অধ্যয়ন করলে এ কথাটি পরিষ্কার হয়- নারীর অধিকার রক্ষা করা তো দূরের কথা, এর ধারাগুলো পৃথিবীতে সম্মানিত পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও মুসলিম মূল্যবোধকে সমূলে মিটিয়ে দিতে চায়। তারা সম্মানিত পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও মুসলিম উনাদের কালচারের বদলে নিয়ে আসতে চায় এক ও অভিন্ন পশ্চিমা নষ্ট কালচার। আমাদের সমাজ বাস্তবতাকে থুড়ি মেরে সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি জীবনব্যবস্থাকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে তারা সদা-তৎপর। এমনকি আমাদের ঐতিহ্যবাহী পরিবারব্যবস্থাতে হস্তক্ষেপ করে স্বামী-স্ত্রী, মা-ছেলে ও বাবা-মেয়ের ব্যক্তিগত লাইফ স্টাইলে সংঘাত সৃষ্টি করছে। আর এসবের পেছনে আছে নান্দনিক এক দর্শন- নারীর উপর থেকে সবধরনের অন্যায়-অবিচারের মূলোৎপাটন।
গেল ৪ থেকে ১৫ মার্চ ২০১৩ কমিশনের নিউইয়র্কস্থ প্রধান কার্যালয়ে Elimination and prevention of all forms of violence against women and girls ‘নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সবধরনের হিংস্রতার প্রতিরোধ ও মূলোৎপাটন’ শীর্ষক এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল এ কমিশনের ৫৭তম বৈঠক। যাতে নানা রকমের মুখরোচক বিল পাস করা হয়। এ দাবিগুলোর প্রধান দাবি ছিল- যুবতী মেয়েদেরকে অবাধ একান্তবাস-স্বাধীনতা প্রদান করা, সমকামীদের অধিকার দেয়া। (নাঊযুবিল্লাহ) আর এগুলোর পেছনে লজিক হলো- জেন্ডার (লিঙ্গ)-নির্ভর হিংস্রতার (Gender-based violence) মূলোৎপাটন। কারণ, জেন্ডারের মধ্যে নারী-পুরুষ সবাই সমান। সুতরাং জেন্ডারের সাম্যতা মানে, সমকামী ও স্বাভাবিক ব্যক্তিদের মধ্যে কোন ফারাক নেই। যেরকম স্বাভাবিক ব্যক্তির একান্তবাস-চর্চার অধিকার আছে। তেমন সমকামী ব্যক্তির তার নিজস¦ পদ্ধতির একান্তবাস -চর্চার অধিকার থাকা উচিত। নারী ও পুরুষের সাথে আচরণে যে কোন ধরণের বৈষম্যকে(Gender-based violence) লিঙ্গ-নির্ভর হিংস্রতা বলে গণ্য করা হবে। সুতরাং ব্যভিচারী ও সমকামীকে শাস্তি প্রদান করা দন্ডনীয় অপরাধ, কারণ এটা ব্যক্তি-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ! (নাঊযুবিল্লাহ)
বিলে পাশকৃত দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি ধারা হলো :
১. অভিভাবকত্বের পরিবর্তে ((Guardianship)) অংশীদারিত্ব পদ্ধতির বাস্তবায়ন। পরিবারের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ, স্বামী-স্ত্রী উভয়েই সমান দায়িত্ব আদায় করা। অর্থাৎ ঘরের রান্না-বান্নার কাজ, বাজার খরচ, সন্তানদের দেখভাল করা ও গৃহস্থালীর সব কাজ-কর্ম জামাই-বউ দুজনে ভাগাভাগি করে করতে হবে। (নাঊযুবিল্লাহ)
২. বিবাহ আইনে সবরকমের বৈষম্যের উৎপাটন। যেমন- বহুবিবাহ, মোহর প্রদান, পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সরবরাহ, পোশাক-পরিচ্ছদ ক্রয় করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা তথা আহার, বাসস্থান ইত্যাদি কাজের একক দায়িত্ব থেকে পুরুষকে অব্যাহতি দিয়ে নারীকেও সমান দায়িত্ব প্রদান করা। মুসলমান নারীর অন্য ধর্মের পুরুষের সাথে বিয়ের অধিকার প্রদান করা । (নাঊযুবিল্লাহ)
৩. উত্তরাধিকার আইনে সাম্যতা বজায় রাখা। (নাঊযুবিল্লাহ)
৪. ভ্রমণ, চাকরি, গর্ভপাতে ঘটানো ইত্যাদি কাজে স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতির বিষয়টির অবসান ঘটানো। (নাঊযুবিল্লাহ)
৫. তালাক দেয়ার ক্ষমতাকে পুরুষের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বিচার ব্যবস্থার হাতে অর্পণ করা। (নাঊযুবিল্লাহ)
৬. স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে সম্ভ্রমহরণ ও নারী-টিজিংয়ের অভিযোগ তোলার অধিকার প্রদান করা। একজন সম্ভ্রমহরণকারী ও একান্তবাস-হয়রানিকারীকে যে শাস্তি দেয়া হয়, স্বামীকেও সমান শাস্তি প্রদান করা। (নাঊযুবিল্লাহ)
৭. মেয়েদেরকে অবাধ একান্তবাস-চর্চার অনুমতি প্রদান করা। সাথে সাথে নারীদেরকে নিজস¦ একান্তবাস-সঙ্গী বাছাই করতে বিষয়টি তাদের পছন্দের উপর ছেড়ে দেয়া। মানে একান্তবাস-সঙ্গী স্বাভাবিক হবে না একই লিঙ্গের সমকামী হবে- এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আটারো বছরের নিচে বিয়েকে আইন করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। (নাঊযুবিল্লাহ)
৮. কিশোরী মেয়েদের গর্ভপাতের সরঞ্জাম সুলভে সরবরাহ করা। তাদেরকে নিরাপদভাবে তা ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া। একান্তবাস-অধিকার, অপছন্দনীয় ভ্রুণের গর্ভপাত করাকে বৈধতা প্রদান করা। (নাঊযুবিল্লাহ)
৯. অবিবাহিত লাইফ পার্টনারকে স্বামীর মর্যাদা প্রদান করা। বৈধ-অবৈধ সন্তানের ক্ষেত্রে আলাদা কোন পরিভাষা ব্যবহার না করা। আইনের ক্ষেত্রে দুজনকে সমানভাবে ব্যবহার করা। অর্থাৎ যেভাবে একজন বৈধ সন্তান উত্তরাধিকারী হয়, তেমনিভাবে একজন জারজকে বৈধ উত্তরাধিকারী গণ্য করে সম্পত্তি বণ্টনে তার অংশ প্রদান করা। (নাঊযুবিল্লাহ)
১০. সমকামীদেরকে সবধরনের অধিকার প্রদান এবং তাদেরকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ও সেফগার্ড সরবরাহ করা। পতিতাদেরকে যথাযথ সেফটি প্রদান করা। (নাঊযুবিল্লাহ)
বেশ বেশ। জাতিসংঘের এই প্রেসক্রিপশন মানলে কয়েকদিন পর দেখা যাবে যে, আপনার ছেলে রফিক এসে বলবে-” আব্বু আমার বন্ধু শাহীনকে আমি খুব ভালোবাসী ওকে আমি বিয়ে করতে চাই।” নাউযুবিল্লাহ!
এখন গেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ”গে সেক্স/গে ম্যারেজ ইজ দ্য হিউম্যান রাইট”
কয়েকদিন পর গেলানোর চেষ্টা করা হবে “ইনসেষ্ট ম্যারেজ ইজ দ্য হিউম্যান রাইট”
তখন কেমন লাগবে আপনাদের? কেমন লাগবে যখন প্রোপাগান্ডা মেশিনগুলোর কল্যাণে সর্বত্র ইনসেষ্ট ম্যারেজের বৈধতার জন্য উন্মত্ত শ্লোগান তোলা হবে? খোলা মাঠে মগজ ধোলাই এর সরাসরি এফেক্ট স্বরুপ দেখা যাবে কথিত প্রণিতব্য আইনের ভিত্তিতে অমুক তার আপন মেয়েকে বিয়ে করেছে???” তখন কি বিষয়টা খুব সহনীয় হবে???
রুখে দাড়ানোর এখনই সময়। যদি আপনার ভবিষ্যত প্রজন্মকে কুকুর শৃগাল শ্রেণীতে রুপান্তরিত হতে দেখতে না চান।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৩০