সেদিন আমি আমার অফিসের গাড়িতে করে বাসায় ফিরছি। অফিসে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি (ডিপ্রকৌস) ও ড্রাইভারদের সিবিএ’র মধ্যে একটি মারামারি হয়েছিল, তা নিয়ে সামনের সিটে বসা আমার ড্রাইভারের সাথে কথা হচ্ছিল। ঘটনাটি শুরু হয়েছিলো এক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর দ্বারা অফিসের এক ড্রাইভারের গায়ে হাত তোলাকে কেন্দ্র করে।
ঘটনাটি এরকম, অফিসের এক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কোনো একটি কথা প্রসঙ্গে এক ড্রাইভারের গায়ে হাত তোলে। তার প্রতিক্রিয়ায় অফিসের ড্রাইভাররাও একজোট হয়ে যখন ব্যবস্থা নেয়, তখন হেড অফিস থেকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা লাঠিসোটা নিয়ে এসে আমাদের শাখা অফিসের ড্রাইভারদের উপর হামলা করে। ইফতারের সময়ে এক ড্রাইভারকে একা পেয়ে ডিপ্লোমারা তার উপর হামলা করে তার হাত ভেঙে দেয়।
ড্রাইভার হঠাৎ করে বললো, স্যার, ঐ ডিপ্লোমাটা হলো উপজাতি পাহাড়ি। উপজাতি পাহাড়িরা একটু রগচটা হয় তো, তাই সে এই কা-টি ঘটিয়েছে।
‘পাহাড়ি’ শব্দটি আমার কানে যাওয়া মাত্র একটি ধাক্কার সৃষ্টি করলো হঠাৎ করে। কয়েকদিন আগে মুসলিম মিয়া নামে এক কাঠ ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিলো মারমা পুরুষ মহিলারা। তাদের অদূরে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিলো পুলিশ ও আর্মি। মুসলিম মিয়ার ঘটনাটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছিল, এমনকি ইন্টারনেটেও তাকে পিটিয়ে মারার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিলো।
সেই ভিডিও’র কথা মনে হতেই আমি বললাম, ঐ ডিপ্লোমা তো বাঙালিবিদ্বেষের কারণে, মুসলিমবিদ্বেষের কারণে ড্রাইভারের গায়ে হাত তুলেছে। সে না হয় পাহাড়ি হলো, কিন্তু ডিপ্রকৌসের বাকি সদস্যরা কী মুসলমান নয়? তারা কেন এক উগ্র পাহাড়ি বিধর্মীর পক্ষ হয়ে মুসলমান ড্রাইভারদেরকে আহত করতে এসেছে?
আমার কথাটা ড্রাইভার বোধহয় ঠিক বুঝলো না। সে বললো- স্যার, এখানে তো পাহাড়ি-বাঙালি কোনো ফ্যাক্টর না। ঐ পাহাড়িটা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী দেখে হেড অফিসের অন্যান্য ডিপ্লোমারা তার সমর্থনে তারপক্ষ হয়ে মারামারি করেছে।
ঠিক এভাবেই কিন্তু সাতচল্লিশে বর্তমান ভারতীয় মুসলমানদের পূর্বপুরুষেরা কংগ্রেসী পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে হিন্দুদেরকে ভাই ডেকেছিলো। বিপরীতে মুসলমানদের আলাদা ভূখ-ের দাবি যেসব মুসলমানরা করেছিলো, তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করেছিলো স্রেফ দলীয় ভেদাভেদের কারণে। তার পরিণতি যে কি হয়েছে, তা এই ২০১৪ সালে এসে নতুন করে বলার দরকার নেই।
তবে মুসলমানদের কোনো শিক্ষা হয়নি। ঐ পাহাড়িটা যে আদতে বাঙালিবিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে কাজটা করেছে, তা ডিপ্রকৌস সংশ্লিষ্টরা আমলেই আনেনি উপজাতি পাহাড়িটা তাদের সংগঠনের সদস্য দেখে। এখন আমাদের দেশের আওয়ামী লীগের সমর্থক মন্ত্রী ও আমলারা যারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবি করে, তারাও কিন্তু এভাবেই এই দলীয় পরিচয়কে সর্বস্বজ্ঞান করে এদেশের প্রশাসন থেকে মুসলমান সরিয়ে গণহারে হিন্দু নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছে। পরিণতিতে তাদের নিজেদের পায়ের তলা থেকেই যে মাটি সরে যাচ্ছে, তা নিয়ে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।