somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসল বাঘ বনাম সার্কাসের বাঘ।

০২ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন, আপনি কোন
দল? যেন বেঁচে থাকতে হলে একটা দলে থাকতেই
হবে। তাদের জন্য আমার উত্তর খুব সহজ।
আমি আমার বিবেকের দলে।
আমি পৃথিবীটাকে যেমন দেখতে চাই, আমি তেমন
যারা দেখতে চান, তাদের দলে। তবে শর্ত
একটাই, আমি সবরকম আগ্রাসনের বিপক্ষে,
সন্ত্রাসের বিপক্ষে। আমি মানুষ
এবং আমি আরও বেশি মানুষ হতে চাই। আমার
ধর্ম আছে, জাতীয়তা আছে, সংস্কৃতি আছে।
যেমন অনেকেরই আছে এবং তাদের অনেকের
সঙ্গে আমার মিল নেই। তাই বলে আমি তাদের
কটাক্ষ করি না, আমি আশা করি তারাও
আমাকে কটাক্ষ করবে না।
সন্ত্রাস কি কেবল শারীরিক? মোটেও তা নয়।
সন্ত্রাস মানসিকও হতে পারে। যদি কেউ
আপনাকে মানসিকভাবে মৃত্যুভয়ে, অপমানের
ভয়ে ভীত করে তুলতে পারে, তবে সেটাও
সন্ত্রাস।
মুক্তচিন্তা কতটুকু মুক্ত
কিংবা ধর্মচিন্তা কতটুকু সীমাবদ্ধ? এই জটিল
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমি কেবল
বলতে চাই, মানুষ ততটুকুই স্বাধীনতা ভোগ
করতে পারে, যতটুকুর উপযুক্ত সে হয়েছে।
স্বাধীনচিন্তা ও মত প্রকাশ অবশ্যই
গুরুত্বপূর্ণ, তবে সেটির
প্রকাশভঙ্গি যদি একটি পক্ষকে খেপিয়ে
তোলে, তবে সে বিষয়ে আমাদের
চিন্তা করা দরকার রয়েছে।
আমরা কেন সুন্দরবনে নিরাপত্তাহীনভাবে যাই
না কিন্তু চিড়িয়াখানায় যাই বা সার্কাস
দেখতে যাই? কেন খাঁচাভর্তি বানরের
সামনে আমরা দাঁড়িয়ে থেকে তাদের কলা, বাদাম
ছুড়ে দেই, ঢিল মারি কিন্তু
একটা বা দুটো মুক্ত-স্বাধীন বানরের
উৎপাতে রীতিমতো পলায়ণ করি?
পুরোনো ঢাকার কিছু
অংশে বা দিল্লীতে যারা থাকেন,
তারা বিষয়টি যথেষ্ট ভালো বলতে পারবেন।
আমরা এটা পারি, কারণ, আমরা চিড়িয়াখানার
পরিস্থিতিকে আমাদের
নিয়ন্ত্রণে রেখেছি বলে বিশ্বাস করি, কিন্তু
সুন্দরবন আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই
সার্কাসের বাঘকে ডরাই না, অথচ
একটা পরিচয়হীন কালোবিড়াল দেখে ভয়
পেয়ে যাই।
ইন্টারনেট আমাদের এইরকম একটা অলীক
বাস্তবতা বা ভার্চুয়াল রিয়ালিটির
মুখোমুখি করে দিয়েছে। পশ্চিমে এই
প্রযুক্তি যখন এসেছে, তখন তাদের
শিক্ষা বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে উন্নয়ন
জনসংখ্যার আশি ভাগের বেশির কাছে পৌঁছেছে।
আর আমাদের দেশে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন
এসেছে যখন, তারও দুই দশক
পরে আমরা এখনও
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনও স্থির
সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারিনি। আমাদের শিক্ষার
ব্যপ্তি ও মান, দুটোই প্রশ্ন সাপেক্ষ। এখন
বিনামূল্যে ফেসবুকে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়।
এহেন সময়ে আমরা অনেকেই ব্লগে লিখি ,
ফেসবুক করি, ফেসবুক স্ট্যাটাস বা ব্লগে কিছু
লাইক আর কিছু গালাগাল দেখে ভাবি, এটাই
বোধহয় সমাজের চিত্র। কয়েক হাজার লোক
খুব বলল, দারুন হয়েছে, এগিয়ে চলেন, আর
কয়েক হাজার মা-বাপ তুলে গালাগাল দিল।
এটা গুনেই নিজেকে আকাশ-পাতাল ভেবে বসি।
মনে রাখতে হবে, নেটে বহু মানুষ তার
ব্যক্তিসত্তার বিপরীত আচরণ করেন।
সবচেয়ে ভীতু, নেটে এসে মহা সাহসী পোস্ট
দিচ্ছে। যে বাস্তবে গালি দেয় না, সে ছদ্মনাম
ব্যবহার করে গালাগালের প্রতিযোগিতা করছে।
এটার সঙ্গে বাস্তবের তফাত
কোটি আলোকবর্ষ।
ফেসবুকের নিজের বয়স কত?
একটি প্রযুক্তি যার মালিকানা ব্যক্তিগত
এবং যা জুকারবার্গের খেয়ালখুশির ওপর
নির্ভরশীল এবং খুবই পশ্চিমা নীতিবোধ
প্রভাবিত, তার সঙ্গে আমাদের সমাজ,
নীতিবোধ ও সংস্কৃতির তফাত আছে।
আমরা এখনও আদাব, সালাম, নমস্কার
দিয়ে কথা বলি। বয়স বিবেচনা করি।
যে কাউকে হাই বলা আমাদের রীতি নয়।
আমরা এখনও পরিবারে বসবাস করি। আমাদের
এখানে এখনও ধর্ম ও সামাজিক বিধিনিষেধ
অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অর্জিত জ্ঞান নয়,
বরং অন্য সব অশিক্ষা ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন
সমাজের মতো আমরা অনেক ক্ষেত্রে কেবলই
আবেগ ও অন্ধবিশ্বাসে তাড়িত।
ধরা যাক, আমি সুন্দরবনে দাঁড়িয়ে স্ট্যাটাস
দিলাম, 'বাঘের ভয়ে আছি, তারপরেও বাঘের
মতোই বাঁচি।' লাইক আসবে হাজার হাজার।
অনেকে লিখবে, এগিয়ে যান, এমন সাহসই
তো চাই, আপনার সাথে আছি, আবার
পরিবেশবাদী লিখবে, বাঘকে বিপন্ন করছেন
কেন? যে আপনাকে পছন্দ করে না, সে লিখবে,
তুই তো বিলাই, তোকে দেখলে বাঘ
লজ্জা পাবে।
এদের মধ্যে অধিকাংশই আপনার জীবন
সম্পর্কে জানে না, আপনার কাজ ও
পরিস্থিতি নিয়ে ধারণা নেই। হয়তো সে তখন
আছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের
কোনও দেশে বা কানাডায়। সিডনি থেকে লিখছে,
'আগুন ধরাও অমুকের বাড়িতে'
অথবা মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড
থেকে লিখছে, সে আপনার পাশেই আছে।এই
বিশ্বব্যাপী ভক্তদের ও শত্রুদের বাইরে এখনও
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের বসবাস।
এমনকি যারা নেট ব্যবহার করেন, তারাও কেবল
চুপচাপ শেয়ার দেন আর পড়েন, নিজে কিছু বলেন
না।তাই ভ্যাংকুভার কিংবা ওয়াশিংটন
থেকে পাওয়া উৎসাহে যখন
আপনি বাঘমামাকে মামা ভেবে বনের
ভেতরে ঢুকবেন, তখন আপনার বাঘমামার
পেটে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ।
আপনি পেটে চলে যাওয়ার পর, তারাই বলবে,
লোকটা সাহসী ছিল, বোকা ছিল, পাগল ছিল,
কাঁদবে, হাসবে, আপনার
স্মরণে শোকসভা করবে, আপনার
পিণ্ডি চটকাবে, তারপর আপনার সঙ্গে তার শেষ
ছবি পোস্ট
দিয়ে আরেকজনকে একইভাবে বাঘের
পেটে চলে যেতে উৎসাহ দেবে।
ব্লগে গালিগালাজ, খেপিয়ে তোলার প্রচেষ্টায়
হটাৎ রেগে যাওয়া, আপত্তিকর কার্টুন
কিংবা মন্তব্য, মা-বাবাকে তুলে অসম্মান খুব
সহজ, কিন্ত সমাজের ওপর এর প্রভাব
সুদূরপ্রসারী। একটা সময় ছিল, যখন টেলিভিশন-
সিনেমায় সেন্সর নিয়ে আমরা অনেক
আপত্তি করতাম। তারপরেও কিন্ত এখন আবার
পৃথিবী উল্টো ভাবছে। সব কনটেন্ট বা বিষয়
সবার জন্য নয়। কিছু ছবি শুধু বড়দের, কিছু
বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে দেখতে হয় আর কিছু
সবার জন্য উন্মুক্ত। ইন্টারনেটে এমন কিছু
না থাকায় , চাইলেই যে কোনও
কনটেন্টে যে কেউ প্রবেশাধিকার পেয়ে যায়।
তার গ্রহণ করার মতো, বুঝতে পারার
মতো জ্ঞান নেই অথচ সে বিচার করতে শুরু
করে এমন কারও লেখা বা বক্তব্য যার কাজ,
অবদান ও শিক্ষা তার চাইতে বহুগুনে বেশি।
সে অজ্ঞ, কিন্তু সকলের
সঙ্গে গলা মিলিয়ে চিৎকার করতে শুরু করে।
সম্মানিত মানুষকে অসম্মান করে বিকৃত আনন্দ
উপভোগ করে।
একটা লেখা, একটি লাইন, একটি কাজের
ব্যাখ্যা বা আসল বিষয় না জেনে, কেবল সেই
এক মুহূর্ত দিয়ে বিচার শুরু করে হয়তো একজন
নিবেদিতপ্রাণ মানুষের। সত্য মিথ্যা যাচাই
না করেই একদল লাঠি হাতে তার
নিধনে নেমে যায়। পরিচয় লুকিয়ে রেখে যে এসব
কাজ নেটে করছে সে হয়তো আপনারই কোনও
বন্ধু। মানবিক বিকৃতিকে সীমিত রাখা,
চাপিয়ে রাখার জন্য সমাজ ও পরিবার বিরাট
ভূমিকা পালন করে। ইন্টারনেটে পরিচয় গোপন
রেখে বিকৃত আলাপ, কুতর্ক, মানসিক অত্যাচার,
গালিগালাজ, অসম্মান এসব আমাদের আসল
বাস্তবতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ফলে যে হাজার লোক আপনাকে বাঘ
বানিয়ে জঙ্গলে পাঠালো, বাঘের
সামনে পড়লে তারা আর আপনার
পাশে থাকছে না।
আমাদের এখন গভীরভাবে ভাবতে হবে, শিক্ষার
মান না বাড়িয়ে, সামাজিক
প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী না করে, যথাযথ
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না করে, কেবল
ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তার কি আসলেই
আশানুরূপ সুফল দিতে পারবে? বর্জ্য
ব্যবস্থপনা ছাড়া শিল্পায়ন যেমন ক্ষতিকর,
নিয়ন্ত্রণহীন ডিজিটাল
বিস্তারকি তেমনি হিংসা ও বিদ্বেষের বর্জ্য
দিয়ে আমাদের চিন্তার জগতকে বিপণ্ণ
করছে না তো?
আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কতটুকু নেওয়ার
যোগ্যতা অর্জন করেছি। তারপর
নেওয়া দরকার। তিনমাসের শিশুকে গরুর মাংস
খেতে দিলে সে অসুস্থ হয়ে যাবে, আবার পাঁচ
বছরেরটিকে না দিলে সে প্রোটিন পাবে না। তাই
নিজেদের উপযুক্ততা যাচাই না করে প্রযুক্তির
যথেচ্ছ ব্যবহার ক্রমাগত আমাদের বিভ্রান্ত
করবে। দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ
থেকে উৎসারিত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক
পরিকল্পনা ছাড়া শুধু প্রযুক্তির উন্নয়ন
একটি অন্ধ, অসহনশীল সমাজ সৃষ্টি করব।
যেখানে সবাই অনমনীয় ও বৈরী। দেরি যা হওয়র
হয়ে গেছে, সচেতন হতে হবে এখনই।

লেখক: চিকিৎসক, টিভি ব্যক্তিত্: আব্দুন নুর তুষার।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×