somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিলন তিথি।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই শহরের এক নিশ্ছিদ্র দোতলা বাড়িতে আমার বসবাস।আমি ছাড়াও এখানে বসবাস করে আরো দুই প্রাণী। সুখ এবং দুঃখ।তারা আমার প্রতিবেশী। আমার ঘর একতলার উত্তর পশ্চিম কোণে।দক্ষিন-পশ্চিম কোণে দুঃখের ঘর আর উত্তর পূর্বে থাকে সুখ।প্রতিবেশী হিসেবে তাঁরা মোটেই ভাল নয়। সুখ-দুঃখ সারাদিন ঝগড়া করেই সময় কাটিয়ে দেই।মাঝখানে পড়ে থাকি আমি।মাঝে মাঝে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আমি ও তাদের মাঝে আত্মপ্রকাশ করি।কিন্তু কোনমতেই তাদের পোষ মানাতে পারি না।তাঁরা নিজেদের স্থানে অটল।আমি ব্যার্থ হয়ে সেখান থেকে ফিরে আসি। আমার কারোর বাসায় গিয়ে একটুখানি গল্প করার ফুরসত মেলে না।তবে মাঝে মাঝে সুখ দুঃখ আসে আমার বাসায়।।গল্প করি একসাথে।মাঝে মাঝে একই বিছানায় শুয়ে স্বপ্ন দেখি,কল্পনা আঁকি।কোন এক দিন গরম গরম সিঙারা আর ধোঁয়া উঠা চায়ের সাথে আমাদের মিলন তিথি বেশ জমে ওঠে।



দুঃখ কখনো কখনো আমার সাজানো ঘরে হানা দেয়।আমি প্রতিবেশী হিসেবে তাকে অপছন্দ করলেও সে ঠিকঠাক আমার ঘরে আসন পেতে বসে।তাকে ঘিরে আবর্তিত হওয়া ঘটনাগুলো ক্রমান্বয়ে বলতে থাকে।সে কখন কার সাজানো স্বপ্নগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে,কার মাথার ছাদ কেড়েছে,কোন মায়ের মুখ থেকে সন্তানের জন্য গড়া হাসি তুলে নিয়েছে,প্রেমিকার জন্য নিয়ে যাওয়া প্রেমিকের হাতের ফুল বাসি করে দিয়েছে,আররো কত কি।কথাগুলো বলে দুঃখ ভয়ঙ্কর অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে।আমি ভয় পেয়েযাই।আমি তার ওই বিষাক্ত নীল হাসি দেখে নিজেকে তার থেকে আড়াল করি।নিঃশব্দ পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে যাই,দরজা খুলে দিই।দুঃখ বুঝতে পেরে সশব্দ পায়ে দুড়মুড়িয়ে বের হয়ে যায় আমার ঘর থেকে।আর বের হওয়ার সময় আমার চোখে তার চোখ থেকে বেড়িয়ে আসা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয়।আমার চোখ জ্বালাপোড়া করে। আমি কিছু দেখতে পাই না।জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে থাকি।তারপর সুখ এসে আমাকে টেনে তোলে।চোখে মুখে জলের ছিটে দেয়।আমি আবার দেখতে পাই।
সুখ ও মাঝে সাঝে তার নিজের গল্প করে আমার সাথে।আমি ই নাকি এই মহল্লার তার প্রিয় বন্ধু।সে গল্প করে।আমি তার গল্পে হারিয়ে যাই।এইতো সেদিন বলছিলো পাশের মহল্লার রেহানা বেগমের ছোট ছেলেটা লিউকোমিয়ায় ভুগছিল।ছেলেটি মড়ার মত বিছানায় পড়ে থাকে।সুখ যায় মাঝে মাঝে সেখানে।তাদেরকে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়,নতুন করে পথ চলার স্বপ্ন দেখায়।সুখের কোন এক আত্মীয়ের মেয়ে কৈশোরেই কোন এক মানুষরূপী হায়েনার হাতে ধর্ষিত হয়।সেই মেয়ে এতো অল্প বয়সেই বেঁচে থাকার সব সদিচ্ছা হারিয়ে ফেলে।সুখের সেখানেও যাতায়াত আছে।ওই মেয়েকে কষ্ট ভোলায় সাহায্য করে।নতুন উদ্যমে পথ চলতে স্বপ্ন দেখায়,সমস্ত প্রতিকূলতার সাথে টিকে থেকে কিভাবে মাথা উঁচু করে চলতে হয় সেই প্রেরণা যোগায়।সে আরো কত গল্প,কত কথকতা। আমি সুখের গল্প শুনে উচ্ছ্বসিত হই।হৃদয় মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য জেগে ওঠে।নতুন করে যুদ্ধ করার প্রেরণা পাই,বেঁচে থাকার স্বাদ জাগে,স্বপ্ন দেখার লোভ হয়।আমি স্বপ্নে মসগুল হয়ে যাই।সুখের মত স্বপ্নে,সুখস্বপ্নে।
যত কিছুই হোক সুখ দুঃখ আমার প্রতিবেশী। আমি তাদের ছাড়া বাঁচতে পারি না।দুঃখ যেমন আমাকে অতলে ফেলে রেখে চলে যায়,তেমনি সুখ আমাকে সেই অতল থেকে কিভাবে ধবধবে সাদা মুক্তো খুঁজে আনতে হয় সেই পথ চিনিয়ে দেয়।।র তাঁরা আমার জীবন ঘিরে আবর্তিত হয়,আমি তাদের। আমরা একে অপরকে ছাড়া কখনো বাঁচতে পারি না,পারছি না,বোধহয় পারবো ও না।হয়তো তাদের ছাড়া বেঁচে থাকাটা আমার জন্য অর্থহীন হয়ে যাবে।তাই সুখ দুঃখের হাত ধরেই আমি আমার গন্তব্যে নিঃশব্দে পৌঁছে যেতে চাই,ধরতে চাই অদেখা স্বপ্নগুলো,ছুঁতে চাই স্বপ্ন ঘিরে বেড়ে উঠা কঠোর বাস্তবতাটুকু।
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×