somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোৎস্না নামের মেয়েটি....

১৭ ই আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবা বেঁচে থাকতে বেশ ভালই চলছিল জোৎস্নাদের ছোট সংসার। ক্ষেতে কাজ করে যা টাকা পেত তা দিয়ে দু বেলা ভর পেট খেতে পারতো তারা। সংসারে আছে জোৎস্না তার ছোট ভাই আর মা বাবা। মা কিছু হাঁস মুরগী পালতো তার ডিম বিক্রি করতো আর বাঁশের সরু কঞ্চি দিয়ে ঝুড়ি তৈরী করে তা বিক্রি করতো। এই ভাবে দিন তাদের হেসে খেলে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু বাধসাধলো তখনি যখন জোৎস্নার বাবা পড়লো ভীষন জ্বরে। সে কি জ্বর গায়ে যেন আগুন জ্বলছিল। ডাক্তার দেখাবার আগেই ১ দিনের জ্বরে বাবা মারা গেল। তারপর থেকেই তাদের দিন যেন পালটে গেল। মা ২/৩ বাসা বাড়ীতে কাজ করে কিছু টাকা পেত তা দিয়ে তাদের খাওয়াই হতো না ঠিক মত। সবকিছুর দাম যা বেশী তাতে গ্রামের মানুষ ঘরের জন্য কাজের লোক রাখে না। প্রায় দিনই এখন জোৎস্নারা না খেয়ে থাকে। এর মধ্যে না খেতে পেয়ে অসুখে পড়ে দূর্বল হয়ে ছোট ভাইটাও মারা গেল একদিন। এখন শুধু মা আর জোৎস্না আছে কোন মতে। দিন এভাবেই যাচ্ছিল অতি কষ্টে। এরই মাঝে একদিন সামনের বাড়ির সখিনা আসলো তাদের দেখতে। সখিনা ঢাকা শহরে কাজ করে। সেই পরার্মশ দিল গ্রামে না থেকে ঢাকায় যেয়ে কাজ করতে,তাহলে যদি তাদের ভাগ্য ফিরে।

সখিনার কথা জোৎস্নার মায়ের মনে ধরলো,কোন ভাবে তারা ঢাকায় আসার টাকা যোগাড় করে একদিন ঢাকাতে চলে আসলো সখিনার সাথে। কি বিরাট ঢাকা শহর কত গাড়ি, লাল নীল সব রঙ্গিন বাতি জ্বলে চারিদেকে জোৎস্না যতই দেখে ততোই অবাক হয়। তাদের কে সখিনা ১ দিন তার বাসায় রাখলো, পরেরদিন থেকে কাজের খোঁজ শুরু করে দিল জোৎস্নার মা। মা মেয়ে এক বাসায় কাজ করতে পারলে ভাল হতো কিন্তু মা মেয়ে এক বাসায় রাখবে এমন মানুষ ঢাকা শহরে আছে বলে মনে হয় না। যে বাসাতেই যায় বলে হয় মা কে রাখবে না হলে মেয়ে কে। অযথা আর কি করার মা নিজে এক বাসায় কাজে ঢুকে মেয়ের জন্য কাছেই আরেক বাসায় কাজ ঠিক করলো। সে বাসার সদস্য সংখ্যাও চার, দুই ছেলে মেয়ে আর সাহেব বিবিসাহেব। বাসার মেয়েটা জোৎস্নার থেকে কিছু ছোট ৮/৯ বছরের আর ছেলেটা একদম কোলের। সাহেব বিবিসাহেব খুবই ভাল মানুষ, এমন একটা বাসায় কাজ করতে দিয়ে মেয়েটাকে, মা যেন একটু শান্তিতে আছে। প্রায়ই মেয়ের সাথে দেখা করতে যায় মা, বেগম সাহেব কিছু বলে না, দেখা করতে দেয়। জোৎস্নারও ঐ বাসায় মন টিকে গেছিল, বেগম সাহেবের সাথে কাজে হাত লাগাতো আর বাকি সময় মেয়েটার সাথে খেলা করতো। গ্রামের মেয়ে জোৎস্না ঢাকা শহরে এসেও শাড়ি পরার অভ্যাস ছাড়তে পারেনি। বেগমসাহেব নিজের মেয়ের পুরান কত জামা কাপড় দিল তাও সে পরে না, শাড়িই সারাক্ষণ গায়ে জড়িয়ে থাকে। নিজের চেয়ে লম্বা শাড়ি, হাঁটতে গেলে হোঁচট খায়, তারপরেও ছাড়ে না, তার মা বলেও ছাড়াতে পারেনি। তাই এখন আর কেউ মানা করে না।

বেগমসাহেব একদিন জোৎস্নাকে বললো রান্না ঘরে বাচ্চার ছোট ছোট জামা কাপড় গুলো মেলা আছে চুলার উপরে যা নিয়ে আয়। সেও তাড়াতাড়ি গেল নিয়ে আসার জন্য, কে জানতো ঐখানেই তার মরণ ফাঁদ পাতা ছিল। সে চুলা বন্ধ না করেই তার উপর থেকে কাপড় গুলো নামাতে লাগলো আর তার শাড়ির লম্বা আঁচলে আগুন ধরে গেল। জোৎস্না সেটা খেয়ালই করেনি। হঠাৎ করে গরম আঁচ টের পেয়ে দেখে আগুন, দৌড়ে সামনের উঠানে বের হয়ে চিৎকার করছে আর লাফাচ্ছে , বাতাসের সংস্পর্শে এসে আগুন তার পুরা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে ততোক্ষনে, তার পরনের কাপড়ে আগুন ধরে গেছে সে কাপড় খুলছেও না খালি লাফাচ্ছে। চিৎকার শুনে বের হয়ে এই দৃশ্য দেখে বেগমসাহেব কি করবে তাড়াতাড়ি বালতি করে পানি এনে গায়ে ছিটিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পরে আগুন নিভে গেল ঠিকই কিন্তু আগুনের তাপে তার সম্পূর্ন কচি শরীর ঝলসে গেছিল। সাথে সাথেই তাকে হাসপাতালে নেয়া হলো। বাসার মালিকরা তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। যা লাগে সব করা হয়েছিল কিন্তু বেচারী জোৎস্না ৩ দিনের অসহ্য যন্ত্রনায় কাতর হয়ে মারা গেল। গ্রাম থেকে জোৎস্না দুবেলা ভর পেট খাওয়ার স্বপ্নটুকু নিয়েই ঢাকায় এসেছিল ভাগ্য ফেরাতে, তার সে স্বপ্নও সেদিন তার সাথে বিদায় নিয়েছিল। জোৎস্না নামের এইসব মেয়েদের নিয়তীতে হয়ত এমন পরিনতি থাকাটাই স্বাভাবিক। এমনি আরো হাজার হাজার জোৎস্না কোন না কোন ভাবে প্রতিদিনই এই পৃথিবী থেকে তাদের স্বপ্ন গুলো সাথে নিয়ে বিদায় নিচ্ছে। আমরা তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না।

********************************************************************

**(আমার খুব কাছের একজনের বাসার কাজের মেয়ে ছিল এই জোৎস্না। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন এই ঘটনাটা আমার সামনেই ঘটে ছিল তার আবছা কিছু মনে থাকা স্মৃতি থেকেই মিলিয়ে লিখলাম।)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৭
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×