কলেজে পড়াকালে অনেককে দেখতাম কলেজ ফাঁকি দিয়ে বাইরে মজা করে বেড়াতো। তাদের দেখে আমার আর বান্ধবিদেরও ইচ্ছা হতো আমরাও ফাঁকি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে মজা করে আসি। কিন্তু আমাদের সাহসের এতই অভাব ছিল যে সেই সুযোগটা কোনোদিনও গ্রহণ করতে পারিনি। তবে যদি কোনোদিন কলেজে যেয়ে দেখতাম কোনো কারণে কলেজ বন্ধ তাহলে সেই সুযোগটাও হাতছাড়া করতাম না আমরা। সেদিন আমাদের যেন ঈদ হয়ে যেত। আমরা সেদিন সারাদিন বান্ধবিরা মিলে ঘুরতাম...কখনো নিউমার্কেট (তখন ঐটাও আমাদের ঘুরার জায়গা ছিল) কখনো লালবাগকেল্লার ভেতরে,কখনো ফাস্টফুডের দোকানে বা কখনো কোনো বান্ধবির বাসায়। ব্যাস আমদের দৌড় এই পর্যন্তই ছিল। অনেক বন্ধু বান্ধবিদেরকে তো দেখতাম তারা কলেজ ফাঁকি দিয়ে মেঘনা ব্রীজ বা কুমিল্লা ঐখান থেকেও ঘুরে এসেছে,আমরা তখন হা হয়ে তাদের গল্পই শুনতাম শুধু...সেটা আমাদের কাছে স্বপ্নই রয়ে গেছে...
একবার এমনই এক কলেজ বন্ধের দিনে আমি আর আমার এক বান্ধবি রিকশা করে নিউমার্কেট যাচ্ছি, সেই রাস্তাটায় তখনো অনেক ভীড় থাকতো গাড়ি আর রিকশার। আমি গল্পে এতটাই মশগুল ছিলাম যে আমার রিকশাটা যেয়ে যখন সামনের রিকশায় হালকা করে ধাক্কা খেল তখন আমি ব্যাগট্যাগ সহ ছিটকে হুমড়ি খেয়ে রিকশা থেকে গেলাম পড়ে। পড়ার পরে তো আমার লজ্জা আর রাগের শেষ নাই...চারিদিকে অনেক রিকশা আর মানুষ আছে সবার সামনে এই কি অবস্থা হলো। আমি রাগের চোটে কোলে ব্যাগ নিয়ে রাস্তার উপরে বসেই রিকশাওয়ালাকে বলা শুরু করলাম...আপনার কোনো ব্যালেন্সই নাই,আপনি দেখেন না সামনে একটা রিকশা দাঁড়ানো,যেয়ে ধাক্কা লাগিয়ে দিলেন (অথচ আমার নিজেরও যে ব্যালেন্স করে বসা উচিৎ তার কোনো খেয়ালই নাই... ) রিকশাওয়ালা হাসে,সেটা দেখে মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। পরে আমার বান্ধবি বলে সোনিয়া ওঠ উঠে আয় গাড়ি চলা শুরু করছে। তখন আমার হুঁশ হলো আরে আমি তো রাস্তাকে বাপের জমি মনে করে তার মাঝখানে বসে বসে চিল্লাচ্ছি... পরে রিকশায় উঠে দেখি হাটু সামান্য ছিলে গেছে...
আরেকবার কলেজে যেয়ে বন্ধ শুনে আমি আরো কয়েকজন মিলে এক বান্ধবির বাসা চলে গেলাম। সারাদিন মজা করে ঠিক কলেজ ছুটির সময়ে বাসায় রওনা দিলাম। বাসায় যেয়ে কলিংবেল দেয়ার পরে আমার আব্বু দরজা খুললো...তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে অগ্নিমূর্তি ধারন করে আছে। আমার তো ভয়ে জান প্রায় যায় যায়। আমাকে জিজ্ঞাষা করে কোথায় ছিলে। আমি আমতা আমতা করে বলি কলেজে। তখন আব্বু চিল্লায়ে উঠে বলে আমি একটু আগেই তোমার কলেজ থেকে আসলাম। আজকে তো কলেজ ছুটি ছিল সারাদিন ছিলে কোথায়। আমার মাথায় বাড়ি...ভয়ের চোটে সত্য শিকার করে নিয়ে বললাম বান্ধবির বাসায় ছিলাম। আব্বুর তো রাগে শরীর কাঁপছিল। বান্ধবির বাসায় ছিলাম কথাটা কতদূর বিশ্বাস করেছিল কে জানে। জেরা করাতে আমি বললাম আমার বান্ধবির বাসায় ফোন করে ওর মায়ের সাথে কথা বলে জানো। তারপরে কি মনে করে বলেছিল আচ্ছা এরকম যেন আর কোনোদিন না হয়। আমিও সেদিন জানে বেঁচে গেছিলাম বলে মনে হয়েছিল আমার।
আব্বুকে যমের মত ভয় পাবার কারনে আমার কোনোদিনও অন্যান্যদের মত একা বন্ধু বান্ধবির সাথে ঘুরে বেড়ানো হয়নি। কলেজ,বাসা আর কোচিং এই ছিল বাইরে যাওয়ার গন্ডী,তাছাড়া আম্মু আব্বুর সংগে বেড়াতে যেতাম... কলেজ বা কোচিং এও প্রায়ই আব্বু দিয়ে আসতো, আবার মাঝে মাঝে নিয়েও আসতো। তবে এই ব্যাপরে আব্বু অনেক কষ্ট করতো বলে আমার মনে হয়। অফিসও করতো আবার আমার পিছনেও। আমার কাছে তখন মনে হতো একটু বেশী কড়াকড়ি এইটা, কোনো স্বাধীনতা নাই আমার.... কিন্তু এখন মনে করি আব্বু যেটা করতো ঠিকই করতো...মেয়েদের বিপদে পড়তে বেশী দেরি লাগে না....তার উপরে মেয়ে যদি আমার মতো একটু গাধা টাইপের হয়,যে সব কিছুকেই খুব সহজ ভাবে নেয় (মানুষে বলে আমি জানি না... )