somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Girlfriend এবং Cigarette বনাম আধুনিকতা !!!

১৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যতটুকু ভূমিকা না দিলেই না ততটুকুই লিখছি। Born up Brought up বলতে যা বোঝায় তার পুরোটাই আমার গ্রামে। বিলাশী গল্পের মৃত্যুন্জয়ের মতো পাকা দুই ক্রোশ পথ হেটে স্কুলে না গেলেও, বেশ খানিকটা পথ হেটে ধুলা, কাদা মাড়িয়েই স্কুলে যেতাম। বাবা ছিলেন গ্রামের একটা স্কুলের হেডমাস্টার। অনেক রাগী মানুষ। একান্নবর্তী পরিবারের ছোট ছেলে হওয়ায় আদর এবং শাসন কোনটারই কমতি ছিলনা। HSC পরীক্ষার পর জীবনে প্রথম ঢাকায় আসলাম। Medical কোচিং করার জন্য। কাকতাল আর সৌভাগ্য দুয়ে মিলে প্রথম দিনেই কোচিং সেন্টার এবং থাকার জন্য মেস্ ঠিক হয়ে গেল। পুরো অন্য রকম এক দুনিয়ার সাথে আমার পরিচয় শুরু হল। শহরের প্রতিটা ছেলে-মেয়েকেই আমার কাছে অদ্ভূত মনে হতে লাগলো। কত বড় বড় কানের নিচ পর্যন্ত নেমে আসা জুলফি, থুতনির কাছে ঝুল দাড়ি, ব্যাকব্রাশ করা লম্বা চুল, টাইট ফিটিংস faded জিন্স, সেটারও আবার মাঝখানে মাঝখানে ছেঁড়া আর অদ্ভূত সব শার্ট, T-শার্ট। তাদের কাছে নিজেকে আমার কেমন জানি বেমানান আর মলিন মনে হতে লাগলো। কেননা ফুল শার্টের হাতা ভাঁজ করে পরাটাই তখন পর্যন্ত আমার কাছে সর্বোচ্চ স্টাইল ছিল। যাইহোক প্রথম দিন এক বড় ভাই আমাকে জিঙ্গেস করল-

-কিরে তোর Girlfriend কি করে ?

সরাসরি Girlfriend শব্দটা তখনো শুনে বা বলে অভ্যস্ত নই আমি। স্বভাব সুলভ লাজুক ভঙ্গিতে বললাম-

- আমার Girlfriend নেই।।

আর যাই কোথাই, চারেদিকে অট্রহাসির রোল পড়ল। এক ভাই তো রীতিমতো আমার পুরুষত্ব নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করল। আমিও বিষ্মৃত হলাম। Girlfriend না থাকা যে এত বড় অস্বাভাবিক একটা বিষয় তা আমার জানাই ছিলনা !! যাইহোক নিতান্তই গ্রাম থেকে এসেছি বলে এ যাত্রা ছেড়ে দিল তারা। কিছুক্ষণ পর আরেক ভাই কথার ফাকে cigarette সাধলো আমাকে। আরেক বিপদে পড়লাম আমি। মাথা নিচু করে বললাম-

- আমি cigarette খাই না।

আমার স্পষ্ট মনে আছে, একবার এক টং দোকানে কৌতুহল বশতঃ cigarette এর দর দাম করেছলাম জানতে পেরে আমার বাবা আমাকে যে মার মেরেছিল ততে আমি দুই উপায়েই আমার পরনের প্যান্ট খানি নষ্ট করে ফেলেছিলাম। যাইহোক এবার আর কেউ ছেড়ে কথা বলল না। এক ভাই তো অবাক হয়ে বলল-

আরে এই টা তো দেখি, আবাল গ্যাঁইয়া ক্ষেত একটা।

কথাটা শুনে আমার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। আমি বোকার মতো চেয়ে থাকলাম। যেই আমি স্কুলের Frist Boy আর টিচারের ছেলে হওয়ায় গ্রামের প্রায় সব মানুষের কাছেই সম্মান, আদর আর ভদ্র ছেলের সুনাম নিয়ে বড় হয়েছি, সেই আমিই যখন Girlfriend না থাকা আর cigarette না খাওয়ার কারনে নপুংশক, গ্যাঁইয়া ক্ষেত হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করলাম তখন মরে যেতে ইচ্ছে করল। আমার এত দিনের বিদ্যা, বুদ্ধি, শিক্ষা শহুরে আধুনিকতার কাছে এভাবে সম্ভ্রম হারাবে আমি কখনো কল্পনাও করিনি। নিজেকে অনেক ছোট আর নীচ মনে হতে লাগলো। মনে হল এখনই গ্রামে ফিরে যায়। বাবা মার স্বপ্নের কাছে হার মানলাম। তাদের স্বপ্ন ছেলে শহরে গিয়ে লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবে। তাদের মুখ উজ্বল করবে। তারা যদি কখনো জানতো তাদের সেই আদরের ভদ্র ছেলেটি শহরের আধুনিকতার কাছে কতটা অসহায় আজ !!! যাইহোক আরেক ভাই বলল -

-সমস্যা নেই, তোকে এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা আধুনিক আর স্মর্ট বানিয়ে দেব।

তার পর শুরু হল Survival for the fittest. আমার স্মর্ট হওয়ার প্রজেক্ট।
মোড়ের দোকেন থেকে একদিন এক প্যাকেট cigarette কিনে আনলাম। অনেক কষ্টে আগুন ধরিয়ে একটা স্টিক টানতে শুরু করলাম। সেকি বিশ্রী অভিঙ্গতা !! নাক মুখ দিয়ে ধোয়া বেরিয়ে কাশতে কাশতে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্হা। তারপরেও অনেক কষ্টে সভ্যতার স্টিক হাতে নিয়ে
দাড়িয়ে থাকলাম। আর মনে মনে বলতে লাগলাম, আমি স্মর্ট হচ্ছি, আধুনিক হচ্ছি।

একদিন সাহস করে ফুটপাথের এক দোকানে গেলাম আধুনিক পোশাক কিনতে।( নামি শপিং মলে যাবার মতো টাকা আমার ছিলনা) অনেক খুজে একটা আধুনিক জিন্স পেলাম, বেশ টাইট আর কয়েক জায়গায় ছেড়াও ছিল। রুমে এসে পরে একবার ট্রায়াল দিলাম। সভ্যতার শক্ত সুতিগুলো আমার শরীর কে এত টাইট করে ধরে রেখেছে যে আলাদা করে পোশাকের অস্তিত্বই অনুভব করতে পারলাম না। নিজেকে কেমন জানি নগ্ন নগ্ন মনে হতে লাগলো। মনে মনে নিজেকে বোঝালাম হয়তবা নগ্নতাই এখানকার আধুনিকতা ।

তারপর আরেক দিন পরিচিত হলাম আধুনিকতার তরল এক রুপের সাথে। এতদিন শুধু সিনেমাতে গুন্ডাদের খেতে দেখেছি। আজ আমারই পাশের বড় ভাই কে খেতে দেখলাম। খেতে হলো আমাকেও। জোর করে দুই পেগ খেতেই বমি করে পড়ে গেলাম মেঝেতে। তার পর পতন ঘটল আমার সেকেলে পশ্চৎপদতার। টলতে টলতে উঠে দাড়ালাম আমি আরেক পেগ তরল সভ্যতা হাতে নিয়ে। অস্ফূষ্ট মাতাল কণ্ঠে বলে উঠলাম, আমি আধুনিক হচ্ছি, গেঁয়ো থেকে শহুরে সভ্য হচ্ছি।

জানিনা এভাবে প্রতিদিন কত ছেলেমেয়ে আমার মত সভ্য হচ্ছে ? আধুনিক হচ্ছে ? আর জানতেও ইচ্ছে করেনা। এখন আমার স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝখানের দূরত্ব অনেক বেশি হয়ে গেছে। তাইতো কেবলই ফাঁকা লাগে নিজেকে। চারপাশে শুধুই শূন্যতা দেখি... ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×