somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাব্যের অলক্ষ্যে রক্তকরবী

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৌর্য্য! সাত সকালে হচ্ছেটা কি? একটু আগে মাত্র ঘুমিয়েছি! ঘুমাতে তো দিবা!
-কফি তো আর আপনার জন্য বসে থাকবেনা ম্যাম। অনেক ঘুম হয়েছে, এবার না উঠলে কিন্তু পায়ে সুড়সুড়ি দিবো!
নিজে তো মুভি দেখতে গিয়ে অর্ধেক না যেতেই নাক ডাকা শুরু করেছে আর এখন আসছে আমাকে কফি খাইয়ে উদ্ধার করতে!
-যে কফি বানিয়েছি সেটা মহারাণী গোত্রের কেউ খেলে নির্ঘাত একটা মুক্তার মালা নজরানা পেয়ে যেতাম, অবশ্য ফ্রি'র দাম বাঙ্গালী দেয়া শেখেনি।
আমি অবশ্য মুক্তার মালা না দিতে পারলেও মুক্তোদাতেঁর এক পশলা ভেংচি দিতে পারি।
-তাই নাকি? তবে তো মনে হয় তোমার দুই পাটি হলুদ দাঁত ঝামা দিয়ে ঘষতে হবে!
আবার! এই ছেলে! তোমার কি সারাদিন আমাকে পঁচানো ছাড়া আর কোনো কাজ নেই?
-নাহ! সারাদিন বাসায় বসে তোমাকে পঁচাবো বলেই তো বাইরে চাকরি না করে বাসায় বসে ফ্রিল্যান্সিং করি! তাড়াতাড়ি ওঠো তো! বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, খিচুড়ি রেঁধেছি!
বাহ! আমার রান্না করতে হয়না বলে অনেক বাঁচা বেঁচে গিয়েছ! আমি তো করল্লা ছাড়া কিছুই রাঁধতে পারতাম না!
-তাত্তাড়ি না উঠলে কিন্তু আমি একাই সব খেয়ে ফেলবো!
উঠতেছি তো! এবার একটু কৃপা করে হুইলচেয়ারে তুলে দেন, ওয়াশরুম থেকে ঘুরে আসি! নয়তো আবার বলবা মুখ থেকে গন্ধ আসে।
-একা যেতে পারবা তো? পরশু দিনও কিন্তু পড়ে গিয়েছিলে! একটু সাবধান থাকা যায়না?
উপরওয়ালা যার কপালটাতেই অভিশাপের সিল মেরে দিয়েছে তার জন্য এটুকু চোট কিছু নয় গো...
অরনী! আমি না কতো বার বলেছি এসব কথা মুখেও আনবা না!
-হয়েছে বাবা! আবার জ্ঞান দেয়া শুরু না করে তাড়াতাড়ি হুইলচেয়ারটা এনে দাও না!


ইশ! কি চঞ্চলই না ছিলো মেয়েটা। দুরন্তপনার সাথে মিশে যেত কৃষ্ণচূড়ার লাল আর নিষ্পাপ চাউনিতে নির্দ্বিধায় ভুলে যাওয়া যেত চোখের সামনে বিস্তৃত হিমালয়ের অভাব। পরিচয়, পরিণয় এবং বিয়ে সবই মনের প্যাস্টেলে সাদা অতীত আজ। এখনো মনে পড়ে বিয়ের দিনের কথা। পায়ে চিমটি কেটে অরণী বলছিলো "তার ছেড়া উল্লুকের জঙ্গলে চিত্রা হরিণ টিকিয়ে রাখতে পারবে তো?"
রাত তখন দেড়টা হবে।
যে সময়টা আমাদের বাসররাত হবার কথা ছিলো, বিয়ে বাড়ি থেকে দেরি করে বের হওয়াতে হয়ে গেলো মহাসড়কে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত লংড্রাইভ।
বাকিটুকু মন থেকে তাড়াতে চাওয়া বারংবার জিজ্ঞাসা...
সেদিন এক্সিডেন্ট-টা হওয়া কি এতটাই জরুরী ছিলো?
অরণী আমার কাঁধেই ঘুমোচ্ছিলো...
জ্ঞান ফেরার পর অরণীকে আবিষ্কার করলাম আই.সি.ইউ-তে এত্তোগুলো যন্ত্র দিয়ে বাঁধা।
তিনদিন পর যখন অরণী যখন আমাদের মাঝে ফিরে এলো ততক্ষনে সে হারিয়েছে সন্তান জন্ম দেবার ক্ষমতা আর দেহের বাম দিকের অনুভূতি। সেই থেকে ছোট্ট আলয়ে আমাদের সংসার।
পিসির সামনে পেট চালাবার ফুয়েল যোগাতে যেটুকু সময় লাগে তার পরের টুকু অরনীর সাথে খুনসুটি, ঝগড়া আর মান অভিমানে ছবির মতো কেটে যায়। মাঝে মাঝে ভাবি এর চেয়ে সুখী হতে পেরেছেই বা কয়জন। বছরে ৩৬৫ দিনের প্রতিটা সেকেন্ড মনমন্দিরের পূজার প্রসাদ যে আত্নার কক্ষপথে সবেচ্ছাবর্তন করে তার আর চাইবার কি বা বাকি থাকে...


সৌর্য্য,মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানো? তুমি আমাকে বিয়ে না করে লাবণ্যকে বিয়ে করলে হয়তো বিয়েটা অপয়া হতো না। সাথে একটা সুন্দরী লাল টুকটুকে ডাক্তার বৌ-ও পেতে!
-সেই কোন কালে এক মেয়েকে একটু আধটু পছন্দ করতাম বলে কি সারাজীবন এটা নিয়ে পেইন দিবা? আর দিনে কতবার বললে বুঝবা ঐটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিলো! তোমার আমার কোনো হাত ছিলোনা ঐখানে!
চাইলেই কি মন থেকে সব তাড়ানো যায় বলো? আমার জন্য তুমি ক্যারিয়ার গড়লে না, সারাদিন কাজের পরও সকালে পটি করা থেকে রাতে চুল আঁচড়াতে পর্যন্ত তোমাকে জ্বালাই আর আমার জন্যই কিনা তোমার বংশে আর কোনো প্রজন্ম আসবে না। সব তো আমারই জন্যে! কেন করো এত করুনা আমাকে?
-হৃদয় কে মন্দির বানিয়ে তোমার পূজাকে করুণা বলে আমার ভালোবাসাকে অপমান না করলেও চলবে? আমার তো তোমাকে নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই! কতজন পায় জীবনের এতটা সময়ের প্রতিমুহুর্ত প্রেয়সীকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে এক প্লেটে দু'জন খেয়ে দিন কাটাবার?
মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানো সৌর্য্য? ঐদিন আমি মরে গেলেই মনে হয় ভালো হতো...
-তবে আমিও তোমার কবরে আমার হাঁসিটা এপিটাফ হিসেবে ঝুলিয়ে আসতাম! আমি তো শুধু তোমাকে চেয়েছিলাম! পেয়েছিও! আমার তো কোনো আফসোস নেই! তবে তুমি কেন এতো কমপ্লেক্সে ভুগছো?
আপাতত আফসোস একটাই যে এতো সুন্দর জ্যোৎস্না রাতেও তুমি আমাকে জ্যোৎস্না না দেখিয়ে ঝাড়ি মেরে যাচ্ছো! নিয়ে চল না একটু বারান্দায়!
-নিয়ে যাব তো বটেই! তবে শাস্তি ছাড়া আবদার মেটানো যাবে না!
কিসের শাস্তি? তুমি না গেলে আমাকে হুইলচেয়ারে উঠিয়ে দাও! একাই যাই! অ্যাই! করো কি??
আমি কি তোমাকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিতে বলেছি???
-যে না আমার চড়ুই পাখি তাকে বারান্দা থেকে তুলে আনতে আবার এত হইচই??
বাহ! রোমান্টিক মেজাজ আপগ্রেড হলো কখন !?
-হুম! জানো? আজ স্বপ্ন দেখেছি ঝর্নার পাশে কাঠের ঘরে আমাদের বাসা। সেখানে ঝর্ণার জল বাষ্প হয়ে জ্যোছনা বিলায় আর তুমি ঘুমিয়ে গেলেই পায়ে সুড়সুড়ি দেই!
স্বেপ্নও ফাইজলামি করা লাগবে তোমার???
-জীবনটাই যখন তুমি হয়ে গিয়েছ সেখানে এক একটা সময় সমীকরণ তো জোনাক জ্বলা অমৃত!
এই না হলে তোমার বাংলায় এ প্লাস পাওয়া সার্থক!

সৌর্য্য অরণীর বাঁ হাতটার উপর ঘুমুচ্ছে। প্যারালাইজড না হলে হয়তো এক্তক্ষনে ব্যথায় হাত সরিয়ে নিতাম কিন্তু আজব এক সুখের ব্যথায় হৃদয়টা মাঝে মাঝে দুমড়ে মুচড়ে যায়। সারাদিনে একজোড়া আত্মায় কতোই না অভিনয় থাকে...দিন শেষে জয় হয় নিসর্গ প্রেমের!
তাতে আফ্রোদিদি বধির কিনা বিবেচ্য নয় মোটেই...
রাত বাড়তে থাকলে অরনী চোখের ভালোবাসার জল জমা হয় সৌর্য্যের ললাটে...
মন্দ কি?

"সেই রাত
ছিলো সংঘাত
আর কাঁচপোকাদের
সংসার।
ছিলো তোমার আমার অভিসার।
ভুলে জল ঘেঁসে একা ফুটপাত
রেখে বৃষ্টির ছাটে কাপা হাত
তুমি আনমনে খুব নির্ভুল
চুলে বিলি কেটে চোখ বহুদূর
আমি একা জানালায় নেশাতুর
শুনি কান পেতে বুকে বেজে ওঠা
ভুল সুর... "

গানটির লিংকঃ Click This Link
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×