somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবুবুর রহমান টুনু
মান্ধাতার ভাসমান শ্যাওলা এক! ভাসমান এই শ্যাওলাকে ফেসবুক, ইউটিউব, সাউন্ডক্লাউডে পাবেনঃ Kb Mahbub Khan এই নামে। শ্যাওলার সম্বল ছাইপাঁশ লেখা, আবৃত্তি, বাঁশের বাঁশি আর যখন তখন মুখে এক চিলতে হুদাই মার্কা হাসি!

জিজ্ঞেস করুন; মানুষ হিসেবে কেমন!

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)
কেউ প্রেমে পড়লে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করি; বন্ধু, মেয়েটি দেখতে কেমন রে? পরীক্ষার ফল কেমন? ফর্সা না কালো? মেয়েদের বেলাতেও ঠিক একই ব্যাপার ঘটে; ছেলেটি দেখতে কেমন রে? পড়াশুনা নাকি জব? কোথায় পড়ে, কীসে জব করে? এই তোর ও কি জীম করে নিয়মিত? দারুণ বডি করেছে না রে? সেই কাঙ্ক্ষিত প্রেমিক/ প্রেমিকার দেখা মিলবার পর আমাদের সংলাপগুলি গিয়ে দাঁড়ায়; উফ জোশ! দোস্ত তোর জিএফ এর ফিগার তো হেব্বি রে, মনে হয় আগে কোথাও করেছে রিলেশন, চুলগুলো অত ছোট ক্যান? টি শার্ট পরে, ভাই তুই শেষ, এই মেয়ে তো মারাত্মক আধুনিক, তোর পকেট পুরো খালি করে দেবে। মেয়েদের বেলাতেও ভিন্ন কিছু নাই, সেই একই সংলাপ; এই দ্যাখ, ছেলেটি যেন কেমন অগোছালো, মান্ধাতার টাইপের না রে? ভুঁড়িটা দেখেছিস, আমি নিশ্চিত এই ছেলেটা ঘুষখোর! হেয়ার কাট দেখেছিস, জেন্টস পার্লার এর দরজা কখনো কভু দেখেছে বলে মনে হয় না! বান্ধবী, তুই শেষ, এই ছেলে নিশ্চয়ই খুব কিপ্টে হবে রে!এইসব দেখা দেখি, অনুমান, জানাজানি শুধুমাত্র প্রেমের বেলাতেই নয়, কারোর সঙ্গে নতুন পরিচয়, বন্ধুত্ব এবং বিশেষ করে বিয়ের বেলাতে বেশ প্রকট ভাবে ধরা দেয়। এগুলিই ঘটে সাধারণত আমাদের চারপাশে, আমরাই ঘটাই।
দিন বদলের সাথে সাথে আমরা আসলে যতোটা না আধুনিক হচ্ছি, তার থেকে বরং মহামারী হারে মানবিক প্রতিবন্ধী বনে যাচ্ছি। আমাদের মনের চোখ দিন দিন যত বেশী অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বাহিরের চোখ ঠিক ততোটাই দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাচ্ছে।

(২)
একজন মানুষকে ছেলে বা মেয়ে অথবা ভাল ছেলে ভাল মেয়ের দৃষ্টিতে নয়, প্রথমত দেখুন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, মানুষকে বরং মানুষ হিসেবেই দেখুন, তারপর জানুন ছেলেটি বা মেয়েটি মানুষ হিসেবে কেমন। ভেদাভেদ কমে আসবে, পৃথিবীতে ছেলে মেয়ের তুলনায় যেমন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে তেমনই নিজেও মানুষ হবার দিকে ধাবিত হব আমরা। আমাদের তথাকথিত মান্ধাতার ভাবনা অনুযায়ী ভাল ছেলেমেয়ে এবং ভাল মানুষের ভেতর তফাৎ খুঁজতে গেলে, এতোটাই তফাৎ বেড়ে যাবে যে তফাৎ এর তলা খুঁজে পাওয়া যাবে না। একজন ভাল ছেলে মানেই যেমন ভাল মানুষ নয়, তেমনই একজন ভাল মেয়ে মানেই ভাল মানুষ নয়। একজন ভাল ছেলে বলতে একজন ছেলের ভেতর যা যা বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন তা থাকলেই তাকে পরিপূর্ণ ছেলে বলা যায়, ভাল ছেলে বলা যায়। সেই ছেলেটিই যখন মানবিক সকল গুণাবলী সমেত পূর্ণতা পায় তখন তাকে মানুষ বলা যায়, পক্ষান্তরে; ভাল গুণাবলী সমেত পূর্ণতা পেলে পরে তাকে ভাল মানুষ বলা যায়। অনুরূপ মেয়েদের বেলাতেও। ভাবনা থেকে ছেলে মেয়ে, কালো ফর্সা, গরীব ধনী, সুন্দর কুৎসিত এই ভেদগুলি দূর হবে তখন যখন একজন মানুষকে আপনি মানুষ হিসেবেই বিচার করবেন, মানবিক চোখে মানুষ হিসেবে দেখবেন। কারোর বিচার করবার পূর্বে যখন আপনি নিজেকে বিচার করবেন, নিজের ভেতরের মানুষটিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন তখন বিচারকের সংখ্যা কমে আসবে, দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে মানুষের সারী। সেই সারীতে বিচারক পুরুষ অথবা নারীটির ভাববার সময় থাকবে না কে নারী, কে পুরুষ, কে কালো, কে ফর্সা, কার টাকা বেশী, কার কম! মানসপটে একটি প্রশ্নই অঙ্কিত থাকবে; আমি মানুষ তো?
এই একটি প্রশ্ন যেদিন সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিনই নারী এবং পুরুষকে আলাদা করে দেখবার, আলাদা রাখবার, আলাদা করে মানবার এবং সর্বোপরি নিজেদের ছেলে অথবা মেয়ে নামক মান্ধাতারি ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করবার অভিপ্রায় ফুরিয়ে আসবে।

(৩)
কবি ভাস্কর চৌধুরী’র “আমার বন্ধু নিরঞ্জন” কবিতায় পাওয়া প্রশ্ন; অন্য পুরুষ ছিবড়ে খেলে নারীরা বুঝি আরও সুন্দরী হতে থাকে? প্রশ্নের প্রেক্ষিতে নিরঞ্জনের উত্তর আসে-

“মানুষকে এত ক্ষুদ্রার্থে নেবেন না
মানুষ এত বড় যে-
আপনি যদি “মানুষ” শব্দটি একবার উচ্চারণ করেন
যদি অন্তর থেকে করেন উচ্চারণ
যদি বোঝেন এবং উচ্চারণ করেন “মানুষ”
তো আপনি কাঁদবেন”।

সত্যিই তাই, পুরুষ তো পুরুষই, নারীও নারীই; কিন্তু মানুষ...? কোন মানুষ কখনোই কোন নারীর সুন্দরী হবার কারন হিসেবে অন্য পুরুষ ছিবড়ে খাওয়া বলে তাচ্ছিল্য করতে পারেন না, কিন্তু একজন পুরুষ পারেন, একজন নারী কিংবা একজন পুরুষই পারেন অপর নারী অথবা পুরুষের এহেন কোন প্রাপ্তিকে তাচ্ছিল্য করতে। একজন পুরুষ অথবা একজন নারীর ভাবনা হয়; যতক্ষণ সে আমার, ততোক্ষণ সে ভাল, ততোক্ষণ মাত্র সে মানুষ আর দূরে গেলেই সে হয়ে যায় অন্য নারী অথবা অন্য পুরুষ, ততোক্ষণে সে যেন তার মানবিক পরিচয়টা হারিয়ে ফেলে তার একসময়ের প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে। এই কি মানুষের প্রেম? এই কি মানবিক বৈশিষ্ট্য?
এই অমানবিক ভাবনার তাড়নাতেই আজ অমুক মেয়ের তমুক ভিডিও ভাইরাল, ইভটিজিং, ধর্ষণ, আত্মহত্যা এবং ইত্যাদি।
আরও কতদিন? আমরা কবে আমাদের আবরণ ছাপিয়ে আমাদের ভেতরের মানুষটিকে বিচার করতে শিখব? আর কবে নারী পুরুষ ভেদাভেদ নামক রাস্তাটির বুকে পদচ্ছাপ এঁকে মানুষ হব আমরা? নারী পুরুষ বাড়ে, জনসংখ্যা বাড়ে, মানুষ বাড়ে না, মানুষ হবার তাড়নাই যেখানে বাড়বার নাম নাই সেখানে, সেই প্রান্তরে অনাগত প্রজন্মকে মানুষ করব কি করে!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৪
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×