somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবুবুর রহমান টুনু
মান্ধাতার ভাসমান শ্যাওলা এক! ভাসমান এই শ্যাওলাকে ফেসবুক, ইউটিউব, সাউন্ডক্লাউডে পাবেনঃ Kb Mahbub Khan এই নামে। শ্যাওলার সম্বল ছাইপাঁশ লেখা, আবৃত্তি, বাঁশের বাঁশি আর যখন তখন মুখে এক চিলতে হুদাই মার্কা হাসি!

গার্মেন্টস’র মাইয়া

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(১)
“আমার দু বছর সিনিয়র বড় ভাই, উদীয়মান কবি। বাংলাদেশের প্রথম সারীর বেশ কিছু পত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশ পায়। পড়াশুনা শেষ করেছেন। বেকার বসে থাকেন, কাজ বলতে একটাই ফেসবুকে লেখালেখি। তিনি ফেসবুকে লেখা পোস্ট করেছেন; সাজেদুল মামার দোকানে বসিয়া চা পান করিতেছিলাম, হঠাৎ দেখিতে পাইলাম দূর হইতে অতি সুন্দরী এক রমণী তাহার বক্ষ দুলাইয়া, এলোকশ উড়াইয়া আমার দিকেই আসিতেছে, মুখে মুচকি হাসি মাখিয়া এক পলক তাকাইয়া ফের হেলিয়া দুলিয়া, আমাকে অতিক্রম করিয়া রমণী তাহার পথ ধরিলো। মুহূর্তের তরে যেন মনে হইলো আমিও প্রেমের সাগরে ডুব দিতে যাইতেছি, এই রমণীকে আমার পাইতেই হবে। সাজেদুল মামাকে জিজ্ঞেস করিলাম তাহাকে চিনে কিনা, সাজেদুল মামা উত্তর করিলো; হ চিনিতো, হ্যাঁয় তো ঐ পাশের গারমেন্টে চাহরী করে!
পোস্ট হা হা রিয়েক্টে ভরপুর। পোস্টের নিচের কমেন্টগুলি তো আরও ভয়াবহ, মামা করতেন প্রেম, ফাও খাইতে পারতেন! ভাই এই মালগুলা এমনে হাসি দিয়াই ফাঁসায়! দোস্ত, তোর ফাডা বাঁশের কপাল!”

সাধারণ মানুষদের না হয় একটু পরেই রাখলাম, এই হচ্ছে প্রেক্ষাপট, একজন নারীর প্রতি একজন উদীয়মান কবির অবস্থান। আমাদের দেশে শহর কিংবা গ্রাম, নারীদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা তো বহুদূর, নারী হিসেবে বিবেচনা করতে যেয়েও কেমন যেন এই “নারী” শব্দটিকেই বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। এই যেমন পতিতালয়ে যেসব নারী কাজ করেন জীবিকার তাগিদে, তাদের নারী বলা হয় না, তাদের বলা হয় বেশ্যা, মাগী। পোশাক শিল্পে যারা কাজ করেন তাদের নারী বলা বা মানা হয় না, তাদের বলা হয় গার্মেন্টস’র মাইয়া। আমরা এমনই একটি ঘৃণ্য সমাজে বাস করি যেখানে পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদেরও অনেকখানি পতিতালয়ের নারীদের সঙ্গেই তুলনা করা হয়। এতে যদিও সেই নারী শ্রমিকের কিছু যায় আসে না বা যাওয়া আসার দরকার বলে আমি মনে করিনা, তারপরেও একটা কিন্তু থেকে যায়। কিন্তু; আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, এগুলি কবে বদলাবে? কেন বদলাচ্ছে না?

(২)
একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করবার সূত্রে এবং পোশাক কারখানায় কাজ করেন এমন একটি পরিবারে সাবলেট থাকবার সূত্রে বেশ কিছু ব্যাপার খুব কাছে থেকে দেখেছি। নিজের পরিবার থেকে শুরু করে কর্মস্থল এমনকি বিয়ের পরে স্বামীর বাড়িতেও যে এই পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কি পরিমাণ কষ্ট সইতে হয় তা লিখে শেষ করবার মত নয়। একজন নারী শ্রমিককে ঘুম থেকে উঠতে হয় ভোর ৪ টায়, অফিস করে বাসায় ফিরতে হয় কমপক্ষে রাত ১০ টায়। এসে আবার রান্না করে খেয়ে ঘুমোতে যেতে যেতে রাত ১২ টা। বিশ্বাস করুন আপনি যদি সরাসরি কারখানায় বসে না দেখে থাকেন তাহলে আপনি এক চিলতেও বুঝবেন না যে এই নারীদের কি পরিমাণ কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে হয়। এরা যখন কাজ করে তখন দুনিয়ার কথা মনে থাকে না, মন পরে থাকে সেলাইয়ে আর চোখ স্থির থাকে সুঁইয়ে। চোখের পলক ফেলবার সুযোগটুকুও যেন নেই, একবার একটি সেলাই ভুল হলেই সুপারভাইজার এর মুখে শুনতে হবে নোংরা সব গালি, এমনকি ওভারটাইম এর টাকাও কেটে নেয়া হতে পারে। এতোখানি দৌড়ের মধ্যে যে নারী থাকেন সে নারীর প্রতি আমাদের নোংরা দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিই বড় লজ্জাজনক। আমরা নিজেদের মনে যে নোংরা চিন্তা পুষে তাদেরকেও নোংরা ভাবি, নোংরা বলি, নোংরা বলে বলে সামাজিক অবস্থান এর দিক থেকেও তাদের হেয় করি, সেইসব নোংরামি করা তো অনেক দুরের কথা এরা কাজের চাপে বেশীর ভাগ সময়ই বিকেলের নাশতাটুকুও করবার সময় পায় না।

(৩)
একটি মেয়ের বিয়ের সময় হয়েছে, পরিবার থেকে বিয়ে দেয়া হবে। মেয়ে গার্মেন্টসে চাকরি করে শুনলেই বরপক্ষ যেন দৌড় দেবার পথ খুঁজে পান না। ভাগ্যগুণেও যদি বর পাওয়া গেলো, ভাববেন না যে এমনি এমনি পাওয়া গেছে। মোটা অংকের যৌতুক তো বিয়ের সময় নিচ্ছেই, বিয়েটাই করতেছে বরং বউয়ের আয়ের টাকা পকেটে পুরবার জন্য। এতোদিন মেয়েটির যুদ্ধ ছিল একার জন্য, হয়তোবা একটি পরিবারের জন্য। বিয়ের পর সেটি দাঁড়ায় আরও বিস্তৃত হয়ে, এখানে মেয়েটির নিজের বলে কিছুই থাকে না, তার জীবন হয়ে যায় একটি মেশিন এর মত, ভোরবেলায় যা শুরু হয়ে গভীর রাতে শেষ। এরই ভেতর যে কত শত যুদ্ধ, ঝড়, স্বামী, শ্বশুর শাশুড়ির নোংরা সন্দেহ আরও কতো কি যে মেয়েটিকে পাড়ি দিয়ে সামনে পা ফেলতে হয় তার হিসেবটা অনেক বড়।

এই নারীকে মেশিন এর মত খাটাচ্ছি, তাকে দিয়েই রান্না করাচ্ছি, তাকে দিয়েই বাচ্চা সামলাচ্ছি, বিপদে পড়লে তার অলংকার বেঁচে বিপদ কেটে ফিরছি, কারখানায় আন্দোলন? এর নারীদেরই অগ্রভাগে রাখছি শ্লোগান দেবার জন্য, এই জন্য যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন সহজে পুরুষদের দিকে আঘাত হানতে না পারেন। আন্দোলন সফল হয়ে যদি বেতন বৃদ্ধি পেলো তো সেটা চালান করে দিচ্ছি নিজেদের পকেটে।এতোসবের পরেও গার্মেন্টস এর মেয়ে বলে নিজেদের বোধ থেকে তাদের বর্জন করে চলেছি বেলজ্জার মত। বেহায়ার মত মুখ বেঁকিয়ে বলছি “ওহ, ঐ হালি তো গার্মেন্টস এর মাইয়া!” গার্মেন্টস এর মেয়ে বলে তার প্রেমে পরা যাবে না, গার্মেন্টস এর মেয়ে বলে তাকে বিয়ে করা যাবে না, গার্মেন্টস এর মেয়ে বলে রাস্তাঘাটে তাকে মাল বলে ডাকতে হবে, গার্মেন্টস এর মেয়ে বলে সে সৎ নয়।

একটি বারও কি আমাদের মনে এই বোধ জাগ্রত হয় না যে গার্মেন্টস এর মাইয়ারাও মানুষ? একজন সংগ্রামী নারী, একটি পরিবারের জীবিকা নির্বাহের, বেঁচে থাকবার অন্যতম হাতিয়ার। একজন মা। একটি শক্তিশালী আন্দোলনের অগ্রভাগের অকুতোভয় অগ্রপথিক। একটি দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তভাবে বিনির্মাণের অংশীদার।


দ্রষ্টব্যঃ ছবিটি গুগল থেকে সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×